1 ফিলিস্তিনীরা যুদ্ধের জন্য সৈন্য জমায়েত করে নিয়ে এহুদা-গোষ্ঠীর এলাকার সোখোতে গেল। তারা গিয়ে সোখো ও অসেখা গ্রামের মাঝামাঝি এফস্দম্মীম গ্রামে ছাউনি ফেলল।
2 তালুত ও বনি-ইসরাইলরা জমায়েত হয়ে এলা উপত্যকায় ছাউনি ফেলল এবং ফিলিস্তিনীদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্য সাজাল।
3 এক দিকের পাহাড়ে দাঁড়াল ফিলিস্তিনীরা এবং অন্য দিকের পাহাড়ে দাঁড়াল বনি-ইসরাইলরা। তাদের মাঝখানে রইল এলা উপত্যকা।
4 ফিলিস্তিনীদের পক্ষ থেকে জালুত নামে এক বীর যোদ্ধা তাদের সৈন্যদল থেকে বের হয়ে আসল। সে ছিল গাৎ শহরের লোক। লম্বায় সে ছিল সাড়ে ছয় হাত।
5 তার মাথায় ছিল একটা ব্রোঞ্জের টুপী আর গায়ে ছিল মাছের আঁশের মত তৈরী ব্রোঞ্জের জামা, যার ওজন ছিল ষাট কেজি।
6 তাঁর হাঁটু থেকে গোড়ালী পর্যন্ত ব্রোঞ্জ দিয়ে ঢাকা ছিল, আর তার কাঁধে ঝুলানো ছিল ব্রোঞ্জের তলোয়ার।
7 তার বর্শার ডাঁটিটা ছিল তাঁতীদের বীমের মত আর সেটার লোহার ফলাটার ওজন ছিল সাত কেজি দু’শো গ্রাম। তার ঢাল বহনকারী তার আগে আগে চলত।
8 জালুত দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ইসরাইলের সৈন্যদলকে বলল, “কেন তোমরা যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজাতে এসেছ? আমি একজন ফিলিস্তিনী আর তোমরা তো মাত্র তালুতের চাকর। তোমাদের পক্ষ থেকে তোমরা একজনকে বেছে নাও; সে আমার কাছে নেমে আসুক।
9 যদি সে আমার সংগে যুদ্ধ করে আমাকে মেরে ফেলতে পারে তাহলে আমরা তোমাদের চাকর হব; কিন্তু যদি আমি তাকে মেরে ফেলতে পারি তবে তোমরা আমাদের চাকর হয়ে চাকরের কাজ করবে।”
10 সেই ফিলিস্তিনী আরও বলল, “আমি আজ ইসরাইলের সৈন্যদলকে টিটকারি দিয়ে বলছি, আমার সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তোমরা একজন লোক দাও।”
11 তার এই সব কথা শুনে তালুত ও অন্যান্য বনি-ইসরাইলরা ভীষণ ভয় পেলেন।
12 দাউদের পিতা ইয়াসি এহুদা এলাকার ইফ্রাথা, অর্থাৎ বেথেলহেম গ্রামে বাস করতেন। তাঁর আটটি ছেলে ছিল। তালুতের রাজত্বের সময়ে তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন।
13 ইয়াসির ছেলেদের মধ্যে প্রথম তিনজন তালুতের সংগে যুদ্ধে গিয়েছিল। যে তিনজন যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের মধ্যে বড়টির নাম ইলীয়াব, দ্বিতীয়টির নাম অবীনাদব এবং তৃতীয়টির নাম শম্ম।
14 তাঁর ছেলেদের মধ্যে দাউদই ছিলেন সবার ছোট। প্রথম তিনজন তালুতের সংগে গিয়েছিল,
15 কিন্তু দাউদ তালুতের কাছেও থাকতেন, আবার তাঁর বাবার ভেড়া চরাবার জন্য বেথেলহেমেও যেতেন।
16 সেই ফিলিস্তিনী চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন সূর্য উঠবার ও ডুববার সময় এগিয়ে এসে নিজেকে দেখাত।
17 একদিন ইয়াসি তাঁর ছেলে দাউদকে বললেন, “তুমি তোমার ভাইদের জন্য এই আঠারো কেজি ভাজা শস্য আর এই দশটা রুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি সৈন্য-ছাউনিতে তাদের কাছে যাও,
18 আর এই দশ তাল পনীর তাদের হাজারপতির জন্য নিয়ে যাও। তোমার ভাইয়েরা কেমন আছে তা দেখে এস আর তাদের কাছ থেকে কোন একটা চিহ্ন নিয়ে এস।
19 তালুত ও তোমার ভাইয়েরা আর সমস্ত ইসরাইলীয় সৈন্যেরা এলা উপত্যকায় আছে এবং ফিলিস্তিনীদের সংগে যুদ্ধ করছে।”
20 দাউদ খুব ভোরে উঠেই অন্য একজন রাখালের হাতে তাঁর ভেড়ার পালের ভার দিলেন। তারপর ইয়াসির হুকুম মত তিনি সব জিনিস নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। তিনি যখন ছাউনির কাছে পৌঁছালেন তখন ইসরাইলীয় সৈন্যেরা সারি বেঁধে যুদ্ধের হাঁক দিতে দিতে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
21 বনি-ইসরাইলরা ও ফিলিস্তিনীরা যুদ্ধ করবার জন্য মুখোমুখি তাদের সৈন্য সাজাল।
22 তখন দাউদ তাঁর জিনিসগুলো মাল-রক্ষকের কাছে রেখে দৌড়ে সৈন্যদলের মধ্যে ঢুকে ভাইদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কেমন আছে।
23 তিনি যখন ভাইদের সংগে কথা বলছিলেন তখন গাৎ শহরের সেই ফিলিস্তিনী বীর জালুত তার সৈন্যদল থেকে বের হয়ে আগের মতই কথা বলতে লাগল, আর দাউদ তা শুনলেন।
24 এদিকে ইসরাইলীয় সৈন্যেরা সবাই ঐ লোকটিকে দেখে ভীষণ ভয়ে তার সামনে থেকে পালিয়ে গেল।
25 বনি-ইসরাইলরা বলাবলি করছিল, “ঐ যে লোকটা বার বার বের হয়ে আসে, ওকে তোমরা দেখেছ তো? সে বনি-ইসরাইলদের টিটকারি দিতে আসে। ঐ লোকটিকে যে মেরে ফেলতে পারবে বাদশাহ্ তাকে প্রচুর ধন-সম্পত্তি দেবেন। তাঁর মেয়েকেও তিনি তার সংগে বিয়ে দেবেন আর ইসরাইল দেশে তার পরিবারকে খাজনা ও বাদশাহ্র অন্যান্য দাবি-দাওয়া থেকে রেহাই দেবেন।”
26 যে লোকেরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল দাউদ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “যে এই ফিলিস্তিনীকে মেরে ফেলে বনি-ইসরাইলদের উপর থেকে এই অসম্মান দূর করবে তার প্রতি কি করা হবে? এই খৎনা-না-করানো ফিলিস্তিনীটা কে, যে জীবন্ত আল্লাহ্র সৈন্যদলকে টিটকারি দেয়?”
27 তাতে লোকেরা যা বলাবলি করছিল সেইমতই তাঁকে জানানো হল যে, সেই ফিলিস্তিনীকে যে হত্যা করবে তার জন্য কি কি করা হবে।
28 দাউদের বড় ভাই ইলীয়াব লোকদের সংগে তাঁর কথাবার্তা শুনে রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি বললেন, “তুই কেন এখানে এসেছিস? মরুভূমিতে ভেড়াগুলো কার কাছে রেখে এসেছিস? তোর দেমাক আর মনের দুষ্টামির কথা আমার জানা আছে। তুই যুদ্ধ দেখতে এসেছিস, তাই না?”
29 দাউদ বললেন, “বাঃ, আমি কি করলাম? আমি তো কেবল একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছি।”
30 এই বলে তিনি অন্য লোকের কাছে গিয়ে তাকে সেই একই কথা জিজ্ঞাসা করলেন আর লোকেরা তাঁকে আগের মতই জবাব দিল।
31 দাউদ যা বলছিলেন তা অন্যেরা শুনে তালুতকে জানাল। তখন তালুত তাঁকে ডেকে পাঠালেন।
32 দাউদ তালুতকে বললেন, “ঐ ফিলিস্তিনীটাকে দেখে কারও ঘাবড়াবার দরকার নেই। আপনার এই গোলাম গিয়ে তার সংগে যুদ্ধ করবে।”
33 তালুত বললেন, “তুমি ঐ ফিলিস্তিনীটার সংগে কি করে যুদ্ধ করবে? তুমি তো মাত্র সেদিনকার ছেলে, আর ঐ ফিলিস্তিনীটা অল্প বয়স থেকেই যোদ্ধা।”
34-35 দাউদ তালুতকে বললেন, “আপনার এই গোলাম তার বাবার ভেড়ার পাল চরায়। যখনই কোন সিংহ বা ভল্লুক এসে পাল থেকে ভেড়া ধরে নিয়ে যেত তখনই আমি তার পিছনে পিছনে দৌড়ে গিয়ে তাকে মেরে তার মুখ থেকে ভেড়াটাকে রক্ষা করতাম। সে উঠে যখন আমাকে রুখে দাঁড়াত তখন আমি তার দাড়ি ধরে আঘাত করে তাকে মেরে ফেলতাম।
36 সিংহ, ভল্লুক দুই-ই আপনার এই গোলামের হাতে মারা পড়েছে, আর এই খৎনা-না-করানো ফিলিস্তিনীটার দশাও ঐগুলোর মত হবে, কারণ সে জীবন্ত আল্লাহ্র সৈন্যদলকে টিটকারি দিয়েছে।”
37 দাউদ আরও বললেন, “মাবুদ, যিনি আমাকে সিংহ আর ভল্লুকের থাবা থেকে রক্ষা করেছেন, তিনিই আমাকে ঐ ফিলিস্তিনীটার হাত থেকেও রক্ষা করবেন।”তখন তালুত দাউদকে বললেন, “তবে যাও, মাবুদ তোমার সংগে থাকুন।”
38 এই বলে তালুত তাঁর নিজের পোশাক দাউদকে পরিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথায় দিলেন ব্রোঞ্জের টুপী আর গায়ে দিলেন যুদ্ধের সাজ।
39 দাউদ তাঁর পোশাকের উপরে তালুতের তলোয়ারটা বেঁধে হাঁটতে চেষ্টা করলেন, কারণ আগে তিনি তা কখনও করেন নি।তিনি তালুতকে বললেন, “এই সব পরে আমি যেতে পারব না, কারণ এর আগে আমি কখনও তা করি নি।” এই বলে তিনি সেগুলো খুলে ফেললেন।
40 তারপর তাঁর লাঠিখানা তিনি হাতে নিলেন এবং ছোট্ট পাহাড়ী নদীর মধ্য থেকে পাঁচটা মসৃণ পাথর বেছে নিয়ে তাঁর চামড়ার থলির মধ্যে রাখলেন। এই রকম থলি রাখালেরা ব্যবহার করত। তারপর তাঁর ফিংগাটা নিয়ে তিনি সেই ফিলিস্তিনীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন,
41 আর সেই ফিলিস্তিনীও দাউদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তার ঢাল বহনকারী ঢাল নিয়ে তার সামনে সামনে আসছিল।
42 সেই ফিলিস্তিনী দাউদের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখে তাকে তুচ্ছ করল, কারণ দাউদের বয়স অল্প ছিল। তাঁর গায়ের রং লাল্চে এবং চেহারা সুন্দর ছিল।
43 জালুত দাউদকে বলল, “আমি কি কুকুর যে, তুই লাঠি নিয়ে আমার কাছে আসছিস্?” সে তার দেব-দেবীর নাম করে দাউদকে বদদোয়া দিতে লাগল।
44 সে দাউদকে আরও বলল, “এগিয়ে আয়; আমি তোর গায়ের গোশ্ত আকাশের পাখী আর বুনো পশুদের খেতে দিই।”
45 তখন দাউদ সেই ফিলিস্তিনীকে বললেন, “তুমি আমার কাছে আসছ তলোয়ার, বর্শা আর ছোরা নিয়ে, কিন্তু আমি তোমার কাছে যাচ্ছি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন, ইসরাইলীয় সৈন্যদলের মাবুদের নাম নিয়ে, যাঁকে তুমি টিটকারি দিয়েছ।
46 মাবুদ আজকের দিনেই তোমাকে আমার হাতে তুলে দেবেন। আমি তোমাকে আঘাত করব আর তোমার মাথা কেটে নেব। আজকেই আমি ফিলিস্তিনী সৈন্যদের লাশ আকাশের পাখী ও দুনিয়ার পশুদের খেতে দেব। তা দেখে দুনিয়ার সবাই জানতে পারবে যে, বনি-ইসরাইলদের পক্ষে আল্লাহ্ বলতে একজন আছেন।
47 যে সমস্ত লোক আজ এখানে রয়েছে তারাও জানতে পারবে যে, মাবুদ কোন তলোয়ার বা বর্শা দিয়ে উদ্ধার করেন না, কারণ এই যুদ্ধ মাবুদের; আর তিনি আমাদের হাতে তোমাদের তুলে দেবেন।”
48 ঐ ফিলিস্তিনী যখন দাউদকে আক্রমণ করবার জন্য এগিয়ে আসতে লাগল তখন দাউদও তার কাছে যাবার জন্য বিপক্ষের সৈন্যদলের দিকে দৌড়ে গেলেন,
49 আর তাঁর থলি থেকে একটা পাথর নিয়ে ফিংগাতে বসিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে সেই ফিলিস্তিনীর কপালে সেটা ছুঁড়ে মারলেন। পাথরটা তার কপালে বসে গেলে সে মুখ থুব্ড়ে মাটিতে পড়ে গেল।
50-51 তখন দাউদ দৌড়ে গিয়ে সেই ফিলিস্তিনীর পাশে দাঁড়ালেন এবং তারই তলোয়ার খাপ থেকে টেনে বের করে নিয়ে তাকে হত্যা করলেন এবং তার মাথাটা কেটে নিলেন। এইভাবে দাউদ শুধু একটা ফিংগা আর একটা পাথর দিয়ে সেই ফিলিস্তিনীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর হাতে কোন তলোয়ার না থাকলেও তিনি সেই ফিলিস্তিনীকে আঘাত করেছিলেন এবং তাকে হত্যা করেছিলেন।ফিলিস্তিনীরা যখন দেখল যে, তাদের প্রধান বীর মরে গেছে তখন তারা পালাতে শুরু করল।
52 তখন ইসরাইল আর এহুদার লোকেরা চিৎকার করে উঠল এবং গয় ও ইক্রোণের দরজা পর্যন্ত ফিলিস্তিনীদের তাড়া করে নিয়ে গেল। ফিলিস্তিনীদের আহত লোকেরা গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত শারয়িমের পথে পথে পড়ে রইল।
53 পরে বনি-ইসরাইলরা ফিলিস্তিনীদের পিছনে তাড়া করা বন্ধ করে ফিরে এসে তাদের ছাউনি লুট করতে লাগল।
54 দাউদ সেই ফিলিস্তিনী জালুতের মাথাটা জেরুজালেমে নিয়ে গেলেন, আর তার অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের পোশাক তিনি নিজের তাম্বুতে রাখলেন।
55 দাউদকে সেই ফিলিস্তিনীর সংগে যুদ্ধ করতে যেতে দেখে তালুত তাঁর সেনাপতি অবনেরকে বলেছিলেন, “আচ্ছা অবনের, এই যুবকটি কার ছেলে?”জবাবে অবনের বলেছিলেন, “মহারাজ, আপনার প্রাণের কসম খেয়ে বলছি যে, আমি জানি না।”
56 তখন বাদশাহ্ বলেছিলেন, “তুমি খোঁজ নাও যুবকটি কার ছেলে।”
57 তারপর দাউদ সেই ফিলিস্তিনীকে মেরে ফিরে আসতেই অবনের তাঁকে নিয়ে তালুতের কাছে গেলেন। তাঁর হাতে তখন জালুতের মুণ্ডটা ছিল।
58 তালুত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যুবক, তুমি কার ছেলে?”দাউদ বললেন, “আমি বেথেলহেম গ্রামের আপনার গোলাম ইয়াসির ছেলে।”