পয়দায়েশ 19 MBCL

দু’জন ফেরেশতা ও হযরত লুত (আঃ)

1 সেই দিনই সন্ধ্যাবেলায় সেই দু’জন ফেরেশতা সাদুম শহরে গিয়ে পৌঁছালেন। লুত তখন শহরের সদর দরজার কাছে বসে ছিলেন। তাঁদের দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং মাটিতে উবুড় হয়ে সালাম জানিয়ে বললেন,

2 “দেখুন, আর এগিয়ে না গিয়ে আপনারা দয়া করে আপনাদের এই গোলামের ঘরে আসুন এবং হাত-পা ধুয়ে নিয়ে রাতটুকু কাটান। খুব ভোরে উঠেই না হয় আবার চলতে শুরু করবেন।”জবাবে তাঁরা বললেন, “না, আমরা এই শহর-চকেই রাত কাটাব।”

3 কিন্তু লুত যখন খুব সাধাসাধি করতে লাগলেন তখন তাঁরা তাঁর সংগে গিয়ে তাঁর বাড়ীতে ঢুকলেন। পরে লুত খামিহীন রুটি সেঁকে তাঁদের জন্য একটা মেজবানীর আয়োজন করলেন, আর তাঁরাও খাওয়া-দাওয়া করলেন।

4 কিন্তু তাঁরা শুতে যাবার আগেই সাদুম শহরের সব জোয়ান ও বুড়োরা এসে বাড়ীটা ঘেরাও করল।

5 তারা লুতকে ডেকে বলল, “আজ রাতে যে দু’জন লোক তোমার এখানে এসেছে তারা কোথায়? তাদের বের করে আমাদের কাছে নিয়ে এস। আমরা ঐ দু’জন পুরুষের সংগে জেনা করব।”

6 তখন লুত দরজার বাইরে লোকদের সামনে গেলেন এবং তাঁর পিছনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন,

7 “ভাইয়েরা আমার, আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা এই রকম খারাপ কাজ কোরো না।

8 দেখ, আমার দু’টি মেয়ে আছে। তারা কখনও কোন পুরুষের সংগে থাকে নি। তাদের আমি তোমাদের কাছে বের করে নিয়ে আসছি। তাদের সংগে তোমরা যা খুশী কর, কিন্তু এই লোকদের উপর কিছু কোরো না, কারণ তাঁরা আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।”

9 কিন্তু তারা বলল, “যা, যা, পথ থেকে সরে দাঁড়া!” তারা আরও বলল, “লোকটা আমাদের এখানে এসেছে বিদেশী হিসাবে, আর তারপর থেকে আমাদের উপর কেবল মোড়লি করে বেড়াচ্ছে। এখন আমরা ওদের চেয়েও তোর সংগে আরও খারাপ ব্যবহার করব।” এই বলে তারা এগিয়ে গিয়ে ঘরের দরজাটা ভেংগে ফেলবার উদ্দেশ্যে লুতকে ভীষণভাবে ঠেলতে লাগল।

10 তখন সেই দু’জন লোক হাত বাড়িয়ে লুতকে ঘরের ভিতরে টেনে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।

11 তারপর তাঁরা আলোর ঝলক দিলেন, আর তাতে দরজার বাইরে দাঁড়ানো জোয়ান ও বুড়ো লোকেরা হঠাৎ চোখে আর দেখতে পেল না। ফলে সেই লোকগুলো দরজা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে পড়ল।

হযরত লুত (আঃ)-এর সাদুম শহর ত্যাগ

12 পরে সেই দু’জন লোক লুতকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই শহরে তোমার জামাই, ছেলে, মেয়ে কিংবা আর কোন আত্মীয়-স্বজন আছে কি? তাদের সবাইকে নিয়ে এই জায়গা থেকে তুমি বের হয়ে যাও,

13 কারণ এই এলাকা ধ্বংস করে ফেলবার জন্য আমরা তৈরী হয়ে আছি। এই এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে মাবুদের কাছে এত ভীষণ হৈ চৈ হচ্ছে যে, তিনি তা ধ্বংস করবার জন্য আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন।”

14 তখন লুত বাইরে গিয়ে যারা তাঁর জামাই হবে তাদের বললেন, “তোমরা তাড়াতাড়ি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাও, কারণ মাবুদ এই শহরটা ধ্বংস করবার জন্য তৈরী হয়ে আছেন।” কিন্তু তারা মনে করল তিনি তামাশা করছেন।

15 সকাল হলে পর সেই ফেরেশতারা লুতকে তাগাদা দিয়ে বললেন, “শীঘ্র কর। তোমার স্ত্রী এবং তোমার দুই মেয়ে যারা এখানে আছে তাদের নিয়ে বের হয়ে যাও। তা না হলে যে গজব এই শহরের উপর নেমে আসছে তুমিও তার মধ্যে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।”

16 লুত কিন্তু যাই-যাচ্ছি করতে লাগলেন। কিন্তু মাবুদের রহমত তাঁর উপর ছিল বলে সেই দু’জন তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের হাত ধরে টেনে শহরের বাইরে নিয়ে আসলেন।

17 সবাইকে বের করে নিয়ে আসবার পর সেই দু’জনের একজন বললেন, “বাঁচতে চাও তো পালাও। পিছনে তাকিয়ো না এবং এই সমভূমির কোন জায়গায় থেমো না। পাহাড়ে পালিয়ে যাও; তা না হলে তোমরাও মারা পড়বে।”

18 তখন লুত বললেন, “না, না।

19 দেখুন, আপনার এই গোলামের উপর আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর আমার প্রাণ রক্ষা করে আপনি আমার জন্য যা করবার তার চেয়েও বেশী করেছেন। কিন্তু আমি পাহাড়ে পালিয়ে যেতে পারব না। তার আগেই হয়তো এই বিপদ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে আর আমি মারা যাব।

20 দেখুন, পালিয়ে যেতে হলে ঐ ছোট গ্রামটাই তো কাছে। প্রাণ বাঁচাবার জন্য আমাকে ওখানে পালিয়ে যেতে দিন। গ্রামটা মোটেই বড় নয়।”

21 ফেরেশতা তাঁকে বললেন, “আমি তোমার এই অনুরোধ রাখলাম। যে গ্রামটার কথা তুমি বললে সেটা আমি ধ্বংস করব না।

22 কিন্তু তাড়াতাড়ি করে সেখানে পালিয়ে যাও। তুমি সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারছি না।” লুতের কথার জন্যই সেই গ্রামটার নাম হল সোয়র (যার মানে “ছোট”)।

সাদুম ও আমুরার ধ্বংস

23 লুত যখন সোয়রে গিয়ে পৌঁছালেন তখন সূর্য উঠে গেছে।

24 তার পরেই মাবুদ আসমান থেকে সাদুম ও আমুরার উপর গন্ধক ও আগুনের বৃষ্টি শুরু করলেন।

25 তিনি সেই শহর দু’টি, সমস্ত সমভূমিটা, শহরের সমস্ত লোক এবং সেখানকার জমির উপর জন্মেছে এমন সব কিছু ধ্বংস করে দিলেন।

26 লুতের স্ত্রী লুতের পিছনে পড়ে পিছন দিকে ফিরে তাকালেন, আর তাতে তিনি লবণের একটা থাম হয়ে গেলেন।

27 পরের দিন ইব্রাহিম খুব ভোরে উঠে সেই জায়গায় গেলেন যেখানে আগের দিন তিনি মাবুদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

28 তিনি নীচে সাদুম, আমুরা এবং সমস্ত সমভূমিটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, প্রকাণ্ড চুলা থেকে যেমন ধোঁয়া ওঠে তেমনি সেই সব এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠছে।

29 এইভাবে লুত যেখানে বাস করতেন আল্লাহ্‌ সেই সমভূমির শহরগুলো ধ্বংস করবার সময় ইব্রাহিমের কথা ভেবে লুতকে ঐখানকার বিপদের মাঝখান থেকে সরিয়ে এনেছিলেন।

হযরত লুত (আঃ)-এর দু’জন মেয়ের গুনাহ্‌

30 সোয়রে থাকতে সাহস হল না বলে লুত তাঁর মেয়ে দু’টিকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে পাহাড়ী এলাকায় চলে গেলেন। সেখানে একটা গুহায় তাঁরা থাকতে লাগলেন।

31 পরে একদিন বড় মেয়েটি ছোট মেয়েটিকে বলল, “বাবা তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। এই এলাকায় এমন কোন পুরুষ লোক নেই যিনি এসে দুনিয়ার নিয়ম মত আমাদের বিয়ে করতে পারেন।

32 চল, আমরা আমাদের বাবাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করে তাঁর কাছে যাই। তাতে বাবার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বংশ রক্ষা করতে পারব।”

33 সেই কথামত সেই দিন রাতের বেলা তারা তাদের পিতাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করল। তারপর বড় মেয়েটি তার পিতার সংগে শুতে গেল, কিন্তু কখন সে শুলো আর কখনই বা উঠে গেল লুত তা টেরও পেলেন না।

34 পরের দিন বড়টি ছোটটিকে বলল, “দেখ, কাল রাতে আমি বাবার সংগে শুয়েছিলাম। চল, আজ রাতেও তাঁকে তেমনি করে মাতাল করি, তারপর তুমি গিয়ে তাঁর সংগে শোবে। তাহলে বাবার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বংশ রক্ষা করতে পারব।”

35 এইভাবে তারা সেই রাতেও তাদের পিতাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করল এবং ছোট মেয়েটি বাবার সংগে শুতে গেল। মেয়েটি কখন যে তাঁর কাছে শুলো এবং কখনই বা উঠে গেল তিনি তা টেরও পেলেন না।

36 এইভাবে লুতের দুই মেয়েই তাদের পিতার দ্বারা গর্ভবতী হল।

37 পরে বড় মেয়েটির একটি ছেলে হলে সে তার নাম রাখল মোয়াব (যার মানে “বাবার কাছ থেকে”)। এই মোয়াবই এখনকার মোয়াবীয়দের আদিপিতা।

38 পরে ছোট মেয়েটিরও একটি ছেলে হল, আর সে তার নাম রাখল বিন্‌-অম্মি (যার মানে “আমার বংশের সন্তান”)। সে এখনকার অম্মোনীয়দের আদিপিতা।

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50