1 বুড়ো বয়সে ইসহাকের চোখে দেখবার ক্ষমতা এত কমে গেল যে, শেষে তিনি আর দেখতেই পেতেন না। একদিন তিনি তাঁর বড় ছেলে ইস্কে ডেকে বললেন, “বাবা আমার।”ইস্ জবাব দিলেন, “এই যে আমি।”
2 ইসহাক বললেন, “দেখ, আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি; কবে যে মারা যাই তা বলতে পারি না।
3 তুমি এক কাজ কর; তোমার অস্ত্র, অর্থাৎ তীর-ধনুক নিয়ে শিকার করবার জন্য মাঠে যাও আর আমার জন্য কিছু শিকার করে আন।
4 তারপর আমার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করে আমার কাছে নিয়ে এস, যাতে তা খেয়ে মারা যাবার আগে আমি তোমাকে দোয়া করে যেতে পারি।”
5 ইসহাক যখন তাঁর আদরের ছেলে ইসের সংগে কথা বলছিলেন তখন রেবেকা তা শুনছিলেন। তাই ইস্ যখন শিকার করতে গেলেন,
6 তখন রেবেকাও তাঁর আদরের ছেলে ইয়াকুবকে বললেন, “দেখ, আমি শুনলাম, তোমার বাবা তোমার ভাই ইস্কে বলেছেন,
7 ‘তুমি আমার জন্য কিছু শিকার করে এনে ভাল খাবার তৈরী কর। তা খেয়ে আমি মারা যাবার আগে মাবুদকে সাক্ষী রেখে তোমাকে দোয়া করে যেতে চাই।’
8 তাই বাবা, আমি তোমাকে এখন যা করতে বলি তুমি ঠিক তা-ই কর।
9 তুমি এখনই গিয়ে ছাগলের পাল থেকে দু’টা মোটাসোটা বাচ্চা এনে আমাকে দাও। আমি তা দিয়ে তোমার বাবার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করে দেব।
10 পরে তুমি তা তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাবে যেন তা খেয়ে তিনি মারা যাবার আগে তোমাকে দোয়া করেন।”
11 তখন ইয়াকুব তাঁর মাকে বললেন, “কিন্তু আমার ভাই ইসের শরীর তো লোমে ভরা, আর আমার গায়ে লোম নেই।
12 বাবা হয়তো আমার গায়ে হাত বুলাবেন আর ভাববেন আমি তাঁর সংগে ঠাট্টা করছি। ফলে দোয়ার বদলে আমি নিজের উপর বদদোয়াই ডেকে আনব।”
13 কিন্তু তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাবা, তোমার সেই বদদোয়া আমার উপরে পড়ুক। তুমি কেবল আমার কথা শোন আর গিয়ে দু’টা ছাগলের বাচ্চা আমাকে এনে দাও।”
14 কাজেই ইয়াকুব গিয়ে ছাগলের বাচ্চা এনে তাঁর মাকে দিলেন, আর রেবেকা ইয়াকুবের পিতার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করলেন।
15 তারপর তিনি তাঁর বড় ছেলের সবচেয়ে ভাল জামা-কাপড় নিয়ে তাঁর ছোট ছেলেকে পরিয়ে দিলেন; কাপড়গুলো ঘরেই ছিল।
16 ইয়াকুবের হাতে ও গলায় যেখানে লোম ছিল না সেখানে তিনি ছাগলের বাচ্চার চামড়া জড়িয়ে দিলেন।
17 তারপর নিজের তৈরী সেই ভাল খাবার ও রুটি ইয়াকুবের হাতে তুলে দিলেন।
18 ইয়াকুব তাঁর পিতার কাছে গিয়ে ডাকলেন, “বাবা।”জবাবে ইসহাক বললেন, “এই যে আমি। তুমি কে, বাবা?”
19 ইয়াকুব তাঁর পিতাকে বললেন, “আমি তোমার বড় ছেলে ইস্। তুমি আমাকে যা করতে বলেছিলে আমি তা করেছি। এখন তুমি উঠে বস আর আমার শিকার করে আনা গোশ্ত খাও যাতে তুমি আমাকে দোয়া করতে পার।”
20 জবাবে ইসহাক তাঁর ছেলেকে বললেন, “বাবা, তুমি কি করে এত তাড়াতাড়ি শিকার পেয়ে গেলে?”জবাবে ইয়াকুব বললেন, “পেলাম তোমার মাবুদ আল্লাহ্র পরিচালনায়।”
21 তখন ইসহাক ইয়াকুবকে বললেন, “আমার কাছে এস বাবা, যাতে তোমার গায়ে হাত দিয়ে আমি বুঝতে পারি তুমি সত্যিই আমার ছেলে ইস্ কিনা।”
22 ইয়াকুব তাঁর পিতা ইসহাকের আরও কাছে গেলেন। ইসহাক তাঁর গায়ে হাত দিয়ে দেখে বললেন, “গলার স্বরটা ইয়াকুবের বটে, কিন্তু হাত দু’টা তো ইসের।”
23 ইয়াকুবের হাত তাঁর ভাই ইসের মতই লোমে ভরা ছিল বলে ইসহাক তাঁকে চিনতে পারলেন না। যাহোক, তিনি তাঁকে দোয়া করবার জন্য তৈরী হলেন।
24 তবুও তিনি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি সত্যিই আমার ছেলে ইস্?”ইয়াকুব বললেন, “জ্বী, বাবা।”
25 ইসহাক বললেন, “তাহলে তোমার শিকার-করা গোশ্তের কিছুটা আমার কাছে নিয়ে এস, যাতে আমি তা খেয়ে তোমাকে দোয়া করে যেতে পারি।”তখন ইয়াকুব ইসহাকের কাছে খাবার নিয়ে গেলেন, আর ইসহাক তা থেকে খেলেন। এর পর ইয়াকুব তাঁকে আংগুর-রস দিলেন আর ইসহাক তা খেলেন।
26 তারপর তাঁর পিতা ইসহাক তাঁকে বললেন, “বাবা, কাছে এসে তুমি আমাকে চুম্বন কর।”
27 তখন ইয়াকুব কাছে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করলেন, আর ইসহাক তাঁর গায়ের কাপড়ের গন্ধ পেয়ে তাঁকে এই বলে দোয়া করলেন:“এই তো আমার ছেলের গন্ধ,মাবুদের দোয়া-করা জমির মতই এই গন্ধ।
28 আল্লাহ্ যেন তোমাকে আকাশের শিশির দেন,আর তোমার জমিতে উর্বরতা দেন;তাতে তুমি প্রচুর ফসল আর নতুন আংগুর-রস পাবে।
29 বিভিন্ন জাতি তোমার সেবা করুক,আর সব লোক তোমাকে মাটিতে উবুড় হয়ে সম্মান দিক।তোমার গোষ্ঠীর লোকদের তুমি প্রভু হও,তারা তোমাকে মাটিতে উবুড় হয়ে সম্মান দিক।যারা তোমাকে বদদোয়া দেবেতাদের উপর বদদোয়া পড়ুক;যারা তোমাকে দোয়া করবেতাদের উপরে দোয়া নেমে আসুক।”
30 ইসহাক ইয়াকুবকে দোয়া করা শেষ করলেন। ইয়াকুব তাঁর পিতা ইসহাকের সামনে থেকে যেতে না যেতেই তাঁর ভাই ইস্ শিকার করে ঘরে ফিরে আসলেন।
31 তিনিও ভাল খাবার তৈরী করে তাঁর পিতার কাছে এনে বললেন, “আব্বা, উঠে বসে তোমার ছেলের শিকার করে আনা গোশ্ত খেয়ে আমাকে দোয়া কর।”
32 তাঁর পিতা তাঁকে বললেন, “তুমি কে?”ইস্ বললেন, “আমি তোমার বড় ছেলে ইস্।”
33 এই কথা শুনে ইসহাকের গায়ে ভীষণ কাঁপুনি ধরে গেল। তিনি বললেন, “তবে যে আমার কাছে শিকারের গোশ্ত নিয়ে এসেছিল সে কে? তুমি আসবার আগেই আমি তা খেয়েছি এবং তাকে দোয়াও করেছি, আর সেই দোয়ার ফল সে পাবেই।”
34 ইস্ তাঁর পিতার কথা শুনে এক বুক-ফাটা কান্নায় ভেংগে পড়লেন। তারপর তিনি তাঁর পিতাকে বললেন, “আব্বা, আমাকে, আমাকেও দোয়া কর।”
35 ইসহাক বললেন, “তোমার ভাই এসে ছলনা করে তোমার পাওনা দোয়া নিয়ে গেছে।”
36 ইস্ বললেন, “তার এই ইয়াকুব নামটা দেওয়া ঠিকই হয়েছে, কারণ এই নিয়ে দু’বার সে আমাকে আমার জায়গা থেকে সরিয়ে দিল। বড় ছেলে হিসাবে আমার যে অধিকার তা সে আগেই নিয়ে নিয়েছে আর এবার আমার দোয়াও নিয়ে গেল।”ইস্ আরও বললেন, “আমার জন্য কি কোন দোয়াই রাখ নি?”
37 জবাবে ইসহাক বললেন, “দেখ, আমি তাকে তোমার প্রভু করেছি এবং তার গোষ্ঠীর সবাইকে তার গোলাম করেছি। আমি তার জন্য ফসল ও নতুন আংগুর-রসের ব্যবস্থা করেছি। এর পর বাবা, আমি তোমার জন্য আর কি করতে পারি?”
38 তখন ইস্ তাঁর পিতাকে কাকুতি-মিনতি করে বললেন, “আব্বা, তোমার কাছে কি ঐ একটা দোয়াই ছিল? আব্বা, তুমি আমাকে, আমাকেও দোয়া কর।” এই বলে ইস্ গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলেন।
39 তখন তাঁর পিতা বললেন,“যে জমিতে তুমি বাস করবেসেই জমি উর্বর হবে না;সেখানে আকাশের শিশিরও পড়বে না।
40 তলোয়ারই হবে তোমার জীবন,তুমি তোমার ভাইয়ের গোলাম হয়ে থাকবে।কিন্তু যখন তুমি অধৈর্য হয়ে উঠবেতখন তুমি তোমার ঘাড় থেকেতার জোয়াল ঠেলে ফেলে দেবে।”
41 ইয়াকুব তাঁর পিতার কাছ থেকে দোয়া লাভ করেছিলেন বলে ইস্ তাঁকে হিংসা করতে লাগলেন। তিনি মনে মনে বললেন, “আমার বাবার জন্য শোক করবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তার পরেই আমি আমার ভাই ইয়াকুবকে খুন করব।”
42 রেবেকা তাঁর বড় ছেলে ইসের এই সব কথা জানতে পেরে লোক পাঠিয়ে ছোট ছেলে ইয়াকুবকে ডেকে এনে বললেন, “শোন, তোমার ভাই ইস্ তোমাকে হত্যা করবার আশায় নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
43-44 সেইজন্য বাবা আমার, তুমি আমার কথা শোন। তুমি হারণ শহরে আমার ভাই লাবনের কাছে পালিয়ে যাও আর তোমার ভাইয়ের রাগ না পড়া পর্যন্ত তাঁর কাছেই থাক।
45 কিছু দিন পরে যখন তার রাগ পড়ে যাবে এবং সে ভুলে যাবে তুমি তার বিরুদ্ধে কি করেছ, তখন আমি লোক পাঠিয়ে তোমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনব। কেন আমি একই দিনে তোমাদের দু’জনকে হারাব?”
46 পরে রেবেকা ইসহাককে বললেন, “এই হিট্টীয় মেয়েগুলোর জন্য আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না। এর উপর ইয়াকুবও যদি এই দেশের কোন হিট্টীয় মেয়েকে বিয়ে করে তবে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ?”