1 আমরা যা পাব বলে আশা করে আছি তা যে আমরা পাবই এই নিশ্চয়তাই হল ঈমান। আর সেই ঈমানের দ্বারা আমরা নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারি যে, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি না তা আসলে আছে।
2 ঈমানের জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষেরা আল্লাহ্র প্রশংসা পেয়েছিলেন।
3 ঈমানের দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ্র মুখের কথাতে এই দুনিয়া সৃষ্ট হয়েছিল। তাতে বুঝা যায়, যা আমরা দেখতে পাই তা কোন দেখা জিনিস থেকে সৃষ্ট হয় নি।
4 ঈমানের জন্য কাবিলের চেয়ে হাবিলের কোরবানী আল্লাহ্র চোখে আরও ভাল ছিল। তাঁর ঈমানের জন্যই আল্লাহ্ তাঁর কোরবানী কবুল করে তাঁর বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, তিনি ধার্মিক। যদিও হাবিল মারা গেছেন তবুও তাঁর ঈমানের মধ্য দিয়েই তিনি এখনও কথা বলছেন।
5 ঈমানের জন্যই ইনোক মারা যান নি; তাঁকে বেহেশতে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ্ তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ইনোককে নিয়ে যাবার আগে আল্লাহ্ এই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, ইনোক তাঁকে সন্তুষ্ট করেছেন।
6 ঈমান ছাড়া আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব, কারণ আল্লাহ্র কাছে যে যায়, তাকে ঈমান আনতে হবে যে, আল্লাহ্ আছেন এবং যারা তাঁর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওনা পায়।
7 যা তখনও দেখা যায় নি সেই বিষয়ে আল্লাহ্ নূহ্কে সাবধান করেছিলেন। নূহ্ আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন বলে আল্লাহ্র কথায় ঈমান এনে একটা জাহাজ তৈরী করেছিলেন, যেন তাঁর পরিবার রক্ষা পায়। নূহ্ তাঁর ঈমানের দ্বারাই দুনিয়াকে দোষী বলে প্রমাণ করেছিলেন এবং আল্লাহ্র কাছে ধার্মিক বলে গ্রহণযোগ্য হবার অধিকার পেয়েছিলেন, যা কেবল ঈমানের ফলেই পাওয়া যায়।
8 আল্লাহ্ যখন ইব্রাহিমকে ডেকেছিলেন তখন ঈমানের জন্যই তিনি আল্লাহ্র কথার বাধ্য হয়েছিলেন এবং সম্পত্তি হিসাবে যে জায়গাটা তাঁর পাবার কথা ছিল সেই জায়গায় তিনি গিয়েছিলেন। যদিও তখন বুঝতে পারেন নি তিনি কোথায় যাচ্ছেন তবুও তিনি রওনা হয়েছিলেন।
9 আল্লাহ্ যে দেশ ইব্রাহিমকে দেবার ওয়াদা করেছিলেন তিনি ঈমানের জন্যই বিদেশী হিসাবে সেখানে বাস করেছিলেন। তাঁর সংগে যাঁরা সেই একই ওয়াদার দোয়ার ভাগী ছিলেন সেই ইসহাক ও ইয়াকুবের মত করে তিনিও তাম্বুতে তাম্বুতে বাস করতেন;
10 কারণ যে শহর চিরস্থায়ী তিনি সেই শহরের অপেক্ষায় ছিলেন। সেই শহরের নক্শা তৈরী ও গেঁথে তুলবার কাজ আল্লাহ্ই করেছেন।
11 যদিও সারার সন্তান হবার বয়স পার হয়ে গিয়েছিল তবুও ঈমানের জন্যই তিনি ইব্রাহিমের সন্তান গর্ভে ধরবার শক্তি পেয়েছিলেন, কারণ তিনি ঈমান এনেছিলেন, যিনি ওয়াদা করেছেন তিনি বিশ্বাসযোগ্য।
12 এইজন্য বয়সের দরুন অকেজো শরীর নিয়েও ইব্রাহিম আসমানের তারার মত এবং সাগর পারের বালুকণার মত অসংখ্য সন্তানের পিতা হয়েছিলেন।
13 এই সব লোকেরা ঈমানের মধ্যে জীবন কাটিয়ে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ্ তাঁদের যা দেবার ওয়াদা করেছিলেন তা তাঁরা পান নি, কিন্তু দূর থেকে তা দেখেছিলেন এবং খুশীও হয়েছিলেন। এই দুনিয়াতে যে তাঁরা বিদেশী এবং পরদেশে বাসকারী তা তাঁরা স্বীকারও করেছিলেন।
14 যাঁরা তা স্বীকার করেন তাঁরা পরিষ্কার ভাবে বুঝান যে, তাঁরা নিজেদের জন্য একটা দেশের তালাশ করছেন।
15 যে দেশ থেকে তাঁরা বের হয়ে এসেছিলেন যদি সেই দেশের কথা তাঁরা চিন্তা করতেন তবে তো সেই দেশে ফিরে যাবার সব সুযোগই তাঁরা পেতেন।
16 কিন্তু তাঁরা আরও ভাল একটা দেশের, অর্থাৎ বেহেশতের তালাশ করছিলেন। সেইজন্যই আল্লাহ্ নিজেকে তাঁদের আল্লাহ্ বলতে লজ্জা বোধ করেন না, কারণ তিনি তাঁদেরই জন্য একটা শহর তৈরী করেছিলেন।
17 ইব্রাহিমকে পরীক্ষা করবার সময় তিনি আল্লাহ্র উপর ঈমানের জন্যই ইসহাককে কোরবানী দিয়েছিলেন। যাঁর কাছে আল্লাহ্ ওয়াদা করেছিলেন তিনিই তাঁর অদ্বিতীয় ছেলেকে কোরবানী দিতে যাচ্ছিলেন।
18 এ সেই ছেলে যাঁর বিষয়ে আল্লাহ্ বলেছিলেন, “ইসহাকের বংশকেই তোমার বংশ বলে ধরা হবে।”
19 ইব্রাহিম তাঁকে কোরবানী দিতে রাজী হলেন, কারণ তাঁর ঈমান ছিল যে, আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করতে পারেন। আর বলতে কি, ইব্রাহিম তো মৃত্যুর দুয়ার থেকেই ইসহাককে ফিরে পেয়েছিলেন।
20 ঈমান এনেই ইসহাক ভবিষ্যতের জন্য ইয়াকুব ও ইস্কে দোয়া করেছিলেন।
21 ঈমান এনেই ইয়াকুব ইন্তেকাল করবার সময় ইউসুফের দুই ছেলেকে দোয়া করেছিলেন আর লাঠির উপর ভর করে আল্লাহ্র এবাদত করেছিলেন।
22 ঈমান এনেই ইউসুফ ইন্তেকাল করবার সময়ে মিসর দেশ থেকে বনি-ইসরাইলদের চলে যাবার কথা বলেছিলেন এবং তাঁর মৃতদেহ কি করতে হবে তা-ও বলেছিলেন।
23 মূসার জন্মের পর তাঁর মা-বাবা ঈমান এনেই তিন মাস তাঁকে লুকিয়ে রেখেছিলেন, কারণ তাঁরা দেখেছিলেন ছেলেটি সুন্দর আর তাঁরা বাদশাহ্র হুকুমের ভয় করলেন না।
24 ঈমানের জন্যই মূসা বড় হবার পর চাইলেন না, কেউ তাঁকে ফেরাউনের মেয়ের ছেলে বলে ডাকে।
25 তিনি গুনাহের অস্থায়ী আনন্দ বাদ দিয়ে আল্লাহ্র বান্দাদের সংগে অত্যাচার ভোগ করাই বেছে নিলেন।
26 তিনি মিসরের ধন-সম্পত্তির চেয়ে মসীহের জন্য অপমানিত হওয়ার মূল্য অনেক বেশী মনে করলেন, কারণ তাঁর চোখ ছিল পুরস্কারের দিকে।
27 আল্লাহ্র উপর তাঁর ঈমানের জন্যই তিনি বাদশাহ্র রাগের ভয় না করে মিসর দেশ ছেড়েছিলেন, কারণ যাঁকে দেখা যায় না তাঁকে যেন দেখতে পাচ্ছেন সেইভাবে তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন।
28 তিনি ঈমান এনেই উদ্ধার-ঈদ এবং রক্ত ছিটাবার নিয়ম পালন করেছিলেন, যাতে যে ধ্বংসকারী ফেরেশতা প্রথম সন্তানদের হত্যা করবেন তিনি বনি-ইসরাইলদের না ধরেন।
29 ঈমান এনেই বনি-ইসরাইলরা শুকনা মাটির উপর দিয়ে হেঁটে যাবার মত করে লোহিত সাগর পার হয়েছিল কিন্তু মিসরীয়রা তা করতে গিয়ে ডুবে মরল।
30 ঈমান এনেই বনি-ইসরাইলরা সাত দিন ধরে জেরিকো শহরের দেয়ালের চারদিকে ঘুরলে পর তা পড়ে গেল।
31 ঈমানের জন্যই রাহব বেশ্যা জেরিকো শহরে বাসকারী অবাধ্য লোকদের সংগে ধ্বংস হন নি, কারণ তিনি সেই গোয়েন্দাদের বন্ধুর মত গ্রহণ করেছিলেন।
32 এর বেশী আমি আর কি বলব? গিদিয়োন, বারক, শামাউন, যিপ্তহ, দাউদ, শামুয়েল আর নবীদের কথা বলবার সময় আমার নেই।
33 ঈমানের দ্বারাই তাঁরা রাজ্য জয় করেছিলেন, ন্যায়বিচার করেছিলেন, আল্লাহ্র ওয়াদার পূর্ণতা লাভ করেছিলেন, সিংহদের মুখ বন্ধ করেছিলেন,
34 ভীষণ আগুনের তেজ কমিয়ে দিয়েছিলেন, ছোরার আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, দুর্বল হয়েও শক্তিশালী হয়েছিলেন, যুদ্ধে শক্তি দেখিয়েছিলেন এবং বিদেশী সৈন্যদলগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
35 স্ত্রীলোকেরা তাঁদের মৃত লোকদের আবার জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন। অন্যেরা নিজের ইচ্ছায় জেল থেকে খালাস না নিয়ে নির্যাতন ভোগ করেছিলেন, যেন তাঁরা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে আরও ভাল জীবনের অধিকারী হন।
36 আবার অন্যেরা ঠাট্টা-তামাশা ও ভীষণ মারধর, এমন কি, হাতকড়া ও জেল খাটা পর্যন্ত সহ্য করেছিলেন।
37 লোকে তাঁদের পাথর মেরেছিল, করাত দিয়ে দু’টুকরা করে কেটেছিল এবং ছোরা দিয়ে খুন করেছিল। তাঁরা অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার পেয়েছিলেন, আর অভাবে পড়ে ভেড়া ও ছাগলের চামড়া পরে ঘুরে বেড়াতেন।
38 তাঁরা মরুভূমিতে মরুভূমিতে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় এবং গর্তে গর্তে পালিয়ে বেড়াতেন। এই লোকদের স্থান দেবার যোগ্যতা দুনিয়ার ছিল না।
39 ঈমানের জন্যই তাঁরা সবাই প্রশংসা পেয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ্ যা দেবার ওয়াদা করেছিলেন তা তাঁরা পান নি;
40 কারণ আল্লাহ্ আমাদের জন্য আরও ভাল কিছু ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি ঠিক করেছিলেন যে, আমাদের বাদ দিয়ে তাঁদের পূর্ণতা দান করা হবে না।