1-2 সাহাবীরা যাতে সব সময় মুনাজাত করে এবং নিরাশ না হয় সেই শিক্ষা দেবার জন্য ঈসা তাঁদের এই উদাহরণটা বললেন: “কোন এক শহরে একজন বিচারক ছিলেন। তিনি আল্লাহ্কে ভয় করতেন না এবং মানুষকেও গ্রাহ্য করতেন না।
3 সেই শহরে একজন বিধবা ছিল। সে বারবার এসে তাঁকে বলত, ‘ন্যায়বিচার করে আমার বিপক্ষের বিরুদ্ধে রায় দিন।’
4 সেই বিচারক কিছু দিন পর্যন্ত কিছুই করলেন না। কিন্তু শেষে তিনি মনে মনে বললেন, ‘যদিও আমি আল্লাহ্কে ভয় করি না এবং মানুষকেও গ্রাহ্য করি না,
5 তবুও এই বিধবা আমাকে বিরক্ত করছে বলে আমি তার পক্ষে ন্যায়বিচার করব। তা না হলে সে বারবার আসবে আর তাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ব।’ ”
6 এর পর ঈসা আরও বললেন, “ন্যায় বিচারক না হলেও তিনি কি বললেন তা ভেবে দেখ।
7 তাহলে যারা আল্লাহ্কে দিন রাত ডাকে, আল্লাহ্ কি তাঁর সেই বাছাই-করা বান্দাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করবেন না? তিনি কি তা করতে দেরি করবেন?
8 আমি তোমাদের বলছি, তিনি তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করতে দেরি করবেন না। কিন্তু ইব্ন্তেআদম যখন আসবেন তখন কি তিনি দুনিয়াতে ঈমান দেখতে পাবেন?”
9 যারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে অন্যদের তুচ্ছ করত তাদের শিক্ষা দেবার জন্য ঈসা এই কথা বললেন:
10 “দু’জন লোক মুনাজাত করবার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দসে গেলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরীশী ও অন্যজন খাজনা-আদায়কারী।
11 সেই ফরীশী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই মুনাজাত করলেন, ‘হে আল্লাহ্, আমি তোমাকে শুকরিয়া জানাই যে, আমি অন্য লোকদের মত ঠগ, অসৎ ও জেনাকারী নই, এমন কি, ঐ খাজনা-আদায়কারীর মতও নই।
12 আমি সপ্তায় দু’বার রোজা রাখি এবং আমার সমস্ত আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ তোমাকে দিই।’
13 সেই সময় সেই খাজনা-আদায়কারী কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আসমানের দিকে তাকাবারও তার সাহস হল না; সে বুক চাপ্ড়ে বলল, ‘হে আল্লাহ্! আমি গুনাহ্গার; আমার প্রতি মমতা কর।’
14 “আমি তোমাদের বলছি, সেই খাজনা-আদায়কারীকে আল্লাহ্ ধার্মিক বলে গ্রহণ করলেন আর সে বাড়ী ফিরে গেল। কিন্তু সেই ফরীশীকে তিনি ধার্মিক বলে গ্রহণ করলেন না। যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে এবং যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।”
15 লোকেরা ছোট ছেলেমেয়েদের ঈসার কাছে নিয়ে আসল যেন তিনি তাদের উপর হাত রাখেন। সাহাবীরা এ দেখে সেই লোকদের বকুনি দিতে লাগলেন।
16 কিন্তু ঈসা সেই ছেলেমেয়েদের নিজের কাছে ডেকে নিলেন। তারপর তিনি সাহাবীদের বললেন, “ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিও না; কারণ আল্লাহ্র রাজ্য এদের মত লোকদেরই।
17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট ছেলেমেয়ের মত আল্লাহ্র শাসন মেনে না নিলে কেউ কোনমতেই আল্লাহ্র রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।”
18 সমাজের একজন নেতা ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হুজুর, আপনি একজন ভাল লোক। আমাকে বলুন, কি করলে আমি অনন্ত জীবন লাভ করতে পারব?”
19 ঈসা তাঁকে বললেন, “আমাকে ভাল বলছেন কেন? একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউই ভাল নয়।
20 আপনি তো হুকুমগুলো জানেন, ‘জেনা কোরো না, খুন কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, তোমার পিতা-মাতাকে সম্মান কোরো।’ ”
21 সেই নেতা বললেন, “ছোটবেলা থেকে আমি এই সব পালন করে আসছি।”
22 এই কথা শুনে ঈসা তাঁকে বললেন, “এখনও একটা কাজ আপনার বাকী আছে। আপনার যা কিছু আছে বিক্রি করে গরীবদের বিলিয়ে দিন, তাহলে আপনি বেহেশতে ধন পাবেন। তারপর এসে আমার উম্মত হন।”
23 এই কথা শুনে সেই নেতা খুব দুঃখিত হলেন, কারণ তিনি খুব ধনী ছিলেন।
24 সেই নেতার দিকে তাকিয়ে ঈসা বললেন, “ধনীদের পক্ষে আল্লাহ্র রাজ্যে ঢোকা কত কঠিন!
25 ধনীর পক্ষে আল্লাহ্র রাজ্যে ঢুকবার চেয়ে বরং সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সহজ।”
26 ঈসার এই কথা যারা শুনল তারা বলল, “তাহলে কে নাজাত পেতে পারে?”
27 ঈসা বললেন, “মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব আল্লাহ্র পক্ষে তা সম্ভব।”
28 তখন পিতর বললেন, “আমরা তো সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আপনার সাহাবী হয়েছি।”
29 ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যারা আল্লাহ্র রাজ্যের জন্য বাড়ী-ঘর, স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবা বা ছেলেমেয়ে ছেড়ে এসেছে,
30 তারা প্রত্যেকে এই যুগেই অনেক বেশী পাবে এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন লাভ করবে।”
31 ঈসা তাঁর বারোজন সাহাবীকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন, “দেখ, আমরা জেরুজালেমে যাচ্ছি। ইব্ন্তেআদমের বিষয়ে নবীরা যা যা লিখে গেছেন তা সবই পূর্ণ হবে।
32 তাঁকে অ-ইহুদীদের হাতে দেওয়া হবে। লোকে তাঁকে ঠাট্টা ও অপমান করবে এবং তাঁর গায়ে থুথু দেবে।
33 ভীষণভাবে চাবুক মারবার পরে তারা তাঁকে হত্যা করবে, আর তৃতীয় দিনে তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।”
34 সাহাবীরা কিন্তু এই সব বিষয় কিছুৃই বুঝলেন না। সেই কথার অর্থ তাঁদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল বলে ঈসা যে কি বলছিলেন তা তাঁরা বুঝলেন না।
35 ঈসা যখন জেরিকো শহরের কাছে আসলেন তখন একজন অন্ধ লোক পথের ধারে বসে ভিক্ষা করছিল।
36 অনেক লোকের গলার আওয়াজ শুনে সে ব্যাপার কি তা জিজ্ঞাসা করল।
37 লোকেরা তাকে জানাল যে, নাসরতের ঈসা ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছেন।
38 তখন সে চিৎকার করে বলল, “দাউদের বংশধর ঈসা, আমাকে দয়া করুন!”
39 যে লোকেরা ভিড়ের সামনে ছিল তারা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল। কিন্তু সে আরও চিৎকার করে বলল, “দাউদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন।”
40 ঈসা থামলেন এবং সেই অন্ধকে তাঁর কাছে আনতে বললেন। সে কাছে আসলে পর তিনি বললেন,
41 “তুমি কি চাও? তোমার জন্য আমি কি করব?”সে বলল, “হুজুর, আমি যেন দেখতে পাই।”
42 ঈসা তাকে বললেন, “আচ্ছা, তা-ই হোক। তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ।”
43 লোকটি তখনই দেখতে পেল এবং আল্লাহ্র প্রশংসা করতে করতে ঈসার পিছনে পিছনে চলল। এ দেখে সমস্ত লোক আল্লাহ্র প্রশংসা করল।