1 বাদশাহ্ সোলায়মান ফেরাউনের কন্যা ছাড়া আরও অনেক বিদেশী রমণী, অর্থাৎ মোয়াবীয়া, অম্মোণীয়া, ইদোমীয়া, সীদোনীয়া ও হিত্তীয়া রমণীকে মহব্বত করতেন।
2 যে জাতিদের বিষয়ে মাবুদ বনি-ইসরাইলদের বলেছিলেন, তোমরা তাদের কাছে যেও না এবং তাদেরকে তোমাদের কাছে আসতে দিও না, কেননা তারা নিশ্চয়ই তোমাদের হৃদয়কে তাদের দেবতাদের পিছনে চলে বিপথগামী করবে, সোলায়মান তাদেরই প্রতি প্রেমাসক্ত হলেন।
3 সাত শত রমণী তাঁর পত্নী ও তিন শত তাঁর উপপত্নী ছিল; তাঁর সেই স্ত্রীরা তাঁর হৃদয়কে বিপথগামী করলো।
4 ফলে এরকম ঘটলো, সোলায়মানের বৃদ্ধ বয়সে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর হৃদয়কে অন্য দেবতাদের পশ্চাতগামী করে বিপথগামী করলো; তাঁর পিতা দাউদের অন্তঃকরণ যেমন ছিল, তেমনি তাঁর আল্লাহ্ মাবুদের ভক্তিতে তাঁর অন্তঃকরণ একাগ্র ছিল না।
5 কিন্তু সোলায়মান সীদোনীয়দের দেবী অষ্টারত ও অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য দেবতা মিল্কমের অনুগামী হলেন।
6 এভাবে সোলায়মান মাবুদের দৃষ্টিতে যা মন্দ তা-ই করলেন; তাঁর পিতা দাউদের মত সমপূর্ণভাবে মাবুদের অনুগামী হলেন না।
7 সেই সময়ে সোলায়মান জেরুশালেমের সম্মুখস্থ পর্বতে মোয়াবের ঘৃণ্য দেবতা কমোশ ও অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য দেবতা মোলাকের জন্য উচ্চস্থলী নির্মাণ করলেন।
8 তাঁর যত বিদেশী স্ত্রী যার যার দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাত ও পশু কোরবানী করতো, তাদের সকলের জন্য তিনি তা-ই করলেন।
9 অতএব মাবুদ সোলায়মানের প্রতি ক্রুদ্ধ হলেন; কেননা তাঁর অন্তঃকরণ ইসরাইলের আল্লাহ্ মাবুদের দিকে না থেকে বিপথগামী হয়েছিল, যিনি দু’বার তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন,
10 এই বিষয়ে মাবুদ তাঁকে হুকুম দিয়েছিলেন, যেন তিনি অন্য দেবতাদের অনুগামী না হন; কিন্তু মাবুদ যা হুকুম দিয়েছিলেন, তা তিনি পালন করলেন না।
11 অতএব মাবুদ সোলায়মানকে বললেন, তোমার তো এই ব্যবহার, তুমি আমার নিয়ম ও আমার হুকুম করা সমস্ত বিধি পালন কর নি; এই কারণ আমি অবশ্য তোমা থেকে রাজ্য চিরে নিয়ে তোমার গোলামকে দেব।
12 তবুও তোমার পিতা দাউদের জন্য তোমার বর্তমান কালে তা করবো না, কিন্তু তোমার পুত্রের হাত থেকে তা চিরে নেব।
13 যা হোক, সারা রাজ্য চিরে নেব না; কিন্তু আমার গোলাম দাউদের জন্য ও আমার মনোনীত জেরুশালেমের জন্য তোমার পুত্রকে এক বংশ দেব।
14 পরে মাবুদ সোলায়মানের এক জন বিপক্ষ সৃষ্টি করলেন; তিনি ইদোমীয় হদদ; ইদোমের রাজবংশে তাঁর জন্ম হয়।
15 দাউদ যখন ইদোমে ছিলেন, আর সেনাপতি যোয়াব নিহতদেরকে দাফন করতে উঠে গিয়েছিলেন ও ইদোমের প্রত্যেক পুরুষকে আঘাত করেছিলেন;
16 [কারণ যতদিন যোয়াব ইদোমের সমস্ত পুরুষকে উচ্ছিন্ন না করলেন, ততদিন অর্থাৎ, ছয় মাস পর্যন্ত তিনি ও সমস্ত ইসরাইল ইদোমে ছিলেন;]
17 সেই সময় ঐ হদদ ও তাঁর সঙ্গে তাঁর পিতার গোলাম কয়েকজন ইদোমীয় পুরুষ মিসরে পালিয়ে গিয়েছিলেন; তখন হদদ নিতান্ত বালক ছিলেন;
18 তাঁরা মাদিয়ান থেকে পারণে যান; পরে পারণ থেকে লোক সঙ্গে নিয়ে মিসরে গিয়ে মিসরের বাদশাহ্ ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হন; তিনি তাঁকে একটি বাড়ি এবং তাঁর জন্য খাদ্য দেন ও তাঁকে ভূমি দান করেন।
19 আর হদদ ফেরাউনের কাছে অতিশয় অনুগ্রহ পান এবং ফেরাউন তাঁর সঙ্গে নিজের শ্যালিকার অর্থাৎ তহ্পনেষ রাণীর বোনের বিয়ে দেন।
20 আর তহ্পনেষের বোন তাঁর জন্য গনুবৎ নামে একটি পুত্র প্রসব করেন এবং তহ্পনেষ ফেরাউনের বাড়িতে তার স্তন্য ত্যাগ করান, আর গনুবৎ ফেরাউনের বাড়িতে ফেরাউনের পুত্রদের মধ্যে ছিল।
21 পরে যখন হদদ মিসরে শুনলেন যে, দাউদ তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রাগত হয়েছেন ও সেনাপতি যোয়াবের মৃত্যু হয়েছে, তখন হদদ ফেরাউনকে বললেন, আমাকে বিদায় করুন, আমি স্বদেশে যাই।
22 ফেরাউন তাঁকে বললেন, আমার এখানে তোমার কিসের অভাব হয়েছে যে তুমি স্বদেশে যেতে চাইছো। তিনি বললেন, অভাব হয় নি, তবুও কোন ভাবে আমাকে বিদায় করুন।
23 আল্লাহ্ সোলায়মানের আর এক জন বিপক্ষ উৎপন্ন করলেন; তিনি ইলিয়াদার পুত্র রষোণ; সেই ব্যক্তি সোবার বাদশাহ্ হদদেষর নামক তাঁর প্রভুর কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
24 আর যে সময়ে দাউদ সোবার লোকদের আক্রমণ করেন, সেই সময় তিনি নিজের কাছে লোক সংগ্রহ করে দলপতি হয়েছিলেন। পরে তাঁরা দামেস্কে গিয়ে সেখানে বাস করলেন এবং দামেস্কে রাজত্ব করলেন।
25 হদদের কৃত অপকার ছাড়াও তিনি সোলায়মানের সমস্ত জীবনকাল ইসরাইলের বিপক্ষ ছিলেন এবং ইসরাইলের সঙ্গে শত্রুতা করেছিলেন, আর অরামে রাজত্ব করলেন।
26 আর সরেদানীবাসী ইফ্রয়ীমীয় নবাটের পুত্র ইয়ারাবিম সোলায়মানের গোলাম ছিলেন; তাঁর মায়ের নাম ছিল সরূয়া; তিনি বিধবা ছিলেন; সে ব্যক্তিও বাদশাহ্র বিরুদ্ধে গেলেন।
27 বাদশাহ্র বিরুদ্ধে তাঁর যাবার কারণ এই— সোলায়মান মিল্লো গাঁথছিলেন ও তাঁর পিতা দাউদের নগরের ভগ্নস্থান মেরামত করে দিচ্ছিলেন।
28 আর ইয়ারাবিম বলবান বীর ছিলেন এবং সোলায়মান এই যুবকটিকে কর্মদক্ষ দেখে তাকে ইউসুফ-কুলের সমস্ত কর্মাধীন লোকের নেতা করেন।
29 সেই সময় ইয়ারাবিম জেরুশালেমের বাইরে গেলে শীলোনীয় অহিয় নবী পথে তাঁর দেখা পেলেন; অহিয় নতুন পোশাক পরা ছিলেন এবং মাঠে কেবল তাঁরা দু’জন ছিলেন।
30 তখন অহিয় তাঁর গায়ের নতুন পোশাকখানি ধরে ছিঁড়ে বারো খণ্ড করলেন।
31 আর তিনি ইয়ারাবিমকে বললেন, দশ খণ্ড তুমি নাও, কেননা ইসরাইলের আল্লাহ্ মাবুদ এই কথা বলেন, দেখ আমি সোলায়মানের হাত থেকে রাজ্য চিরে নেব ও দশ বংশ তোমাকে দেব।
32 কিন্তু আমার গোলাম দাউদ এবং ইসরাইলের সমস্ত বংশের মধ্য থেকে আমার মনোনীত জেরুশালেম নগরের জন্য অবশিষ্ট এক বংশ ওর থাকবে।
33 কারণ তারা আমাকে ত্যাগ করে সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরত, মোয়াবের দেব কমোশ ও অম্মোনীয়দের দেব মিল্কমের কাছে ভূমিতে উবুড় হয়েছে; ওর পিতা দাউদের মত তারা আমার দৃষ্টিতে যা ভাল, তা করতে এবং আমার বিধি ও অনুশাসনগুলো পালন করতে আমার পথে চলে নি।
34 তবুও আমি ওর অধিকার থেকে সমস্ত রাজ্য নেব না, কিন্তু আমার মনোনীত গোলাম যে দাউদ আমার হুকুম ও সমস্ত বিধি পালন করতো, তার জন্য ওকে সারা জীবন বাদশাহ্র পদে রাখবো।
35 কিন্তু ওর পুত্রের হাত থেকে রাজ্য নেব এবং তোমাকে দেব, দশ বংশ দেব।
36 আর আমার নাম স্থাপনার্থে আমার মনোনীত যে জেরুশালেম নগর, তন্মধ্যে আমার সম্মুখে যেন আমার গোলাম দাউদের প্রদীপ নিত্য থাকে, এজন্য ওর পুত্রকে এক বংশ দেব।
37 আর আমি তোমাকে গ্রহণ করবো, তাতে তুমি তোমার প্রাণের সমস্ত বাসনা অনুসারে রাজত্ব করবে, ইসরাইলের বাদশাহ্ হবে।
38 আর যদি তুমি আমার গোলাম দাউদের মত আমার সমস্ত হুকুমে কান দাও এবং আমার বিধি ও হুকুম পালন করার জন্য আমার পথে চল ও আমার দৃষ্টিতে যা ভাল, তা কর, তবে আমি তোমার সহবর্তী থাকব এবং যেমন দাউদের জন্য গেঁথেছি, তেমনি তোমার জন্যও একটি সুদৃঢ় কুল গাঁথব এবং ইসরাইলকে তোমার হাতে দেব।
39 আর এই কারণ আমি দাউদের বংশকে অবনত করবো, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়।
40 অতএব সোলায়মান ইয়ারাবিমকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন; কিন্তু ইয়ারাবিম মিসর দেশে মিসরের বাদশাহ্ শীশকের কাছে পালিয়ে গেলেন এবং সোলায়মানের মৃত্যু পর্যন্ত মিসরে থাকলেন।
41 সোলায়মানের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত এবং তাঁর সমস্ত কাজ ও জ্ঞানের বিবরণ কি সোলায়মানের কর্মবৃত্তান্ত কিতাবে লেখা নেই?
42 সোলায়মান জেরুশালেমে চল্লিশ বছর সমস্ত ইসরাইলের উপর রাজত্ব করলেন।
43 পরে সোলায়মান তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রাগত হলেন ও তাঁর পিতা দাউদের নগরে তাঁকে দাফন করা হল এবং তাঁর পুত্র রহবিয়াম তাঁর পদে বাদশাহ্ হলেন।