দানিয়েল 8 SBCL

ভেড়া ও ছাগলের বিষয়ে দর্শন

1 রাজা বেল্‌শৎসরের রাজত্বের তৃতীয় বছরে আমি দানিয়েল আর একটা দর্শন পেলাম।

2 সেই দর্শনে আমি নিজেকে এলম প্রদেশের শূশনের দুর্গে দেখতে পেলাম। সেই দর্শনের মধ্যে আমি ঊলয় খালের পারে ছিলাম।

3 আমি তাকিয়ে একটা পুরুষ ভেড়াকে খালের পারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তার দু’টা লম্বা শিং ছিল। একটা শিং অন্যটার চেয়ে লম্বা এবং সেটা পরে উঠেছিল।

4 আমি দেখলাম ভেড়াটা পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে গুঁতা মারল। তার সামনে কোন পশুই টিকতে পারল না এবং তার হাত থেকে উদ্ধার করতে পারে এমন কেউ ছিল না। সে যা খুশী তা-ই করত এবং সে শক্তিশালী হয়ে উঠল।

5 আমি যখন এই বিষয় ভাবছিলাম তখন হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে একটা ছাগল মাটি না ছুঁয়ে সেখানে ছুটে আসল; তার দুই চোখের মাঝখানে চোখে পড়বার মত একটা শিং ছিল।

6 দুই শিংয়ের যে ভেড়াকে আমি খালের ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম ছাগলটা ভয়ংকর বেগে তার দিকে দৌড়ে গেল।

7 আমি দেখলাম ছাগলটা সেই ভেড়াটাকে ভীষণভাবে আঘাত করে তার শিং দু’টা ভেংগে ফেলল। তার সামনে ভেড়াটার দাঁড়াবার কোন ক্ষমতা রইল না; ছাগলটা তাকে মাটিতে ফেলে পায়ে মাড়াতে লাগল। তার হাত থেকে ভেড়াটাকে উদ্ধার করতে পারে এমন কেউ ছিল না।

8 ছাগলটা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল, কিন্তু সে যখন তার শক্তির চূড়ায় উঠল তখন তার বড় শিংটা ভেংগে গেল এবং তার জায়গায় চার দিকে চারটা চোখে পড়বার মত শিং উঠল।

9 সেই শিংগুলোর একটা থেকে আর একটা শিং উঠল; সেটা প্রথমে ছোট ছিল কিন্তু পরে দক্ষিণ, পূর্ব ও সুন্দর দেশের দিকে বড় হতে লাগল।

10 সেটা বড় হতে হতে স্বর্গের তারাগুলো পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাল এবং কতগুলো তারা মাটিতে ফেলে সেগুলোকে পায়ে মাড়াল।

11 সে নিজেকে সেই তারাগুলোর কর্তার সমান বলে দাবি করল। তাঁর উদ্দেশ্যে করা প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠান সে বন্ধ করে দিল এবং উপাসনা-ঘরটাও অপবিত্র করা হল।

12 তার পাপের ফলে সেই তারাগুলো ও প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠান তার হাতে গিয়ে পড়ল। সে সত্যকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলল এবং যা কিছু করল তাতেই সফল হল।

13 তারপর আমি একজন পবিত্র স্বর্গদূতকে কথা বলতে শুনলাম এবং আর একজন পবিত্র স্বর্গদূত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দর্শনে যা দেখানো হল তা কত দিন ধরে চলবে? কত দিন ধরে প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠানের বদলে সর্বনাশা পাপের জিনিস থাকবে? কত দিন ধরে উপাসনা-ঘর ও তারাগুলোকে পায়ে মাড়ানো হবে?”

14 তিনি বললেন, “দুই হাজার তিনশো সন্ধ্যা ও সকাল ধরে এই সব চলবে। তারপর উপাসনা-ঘরটা আবার শুচি করা হবে।”

দর্শনের অর্থ

15 আমি দানিয়েল যখন দর্শনটা দেখে বুঝবার চেষ্টা করছিলাম তখন মানুষের মত দেখতে একজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।

16 আমি একজন মানুষের স্বর শুনলাম; সেই স্বর ঊলয় খালের মধ্য থেকে ডেকে বলল, “গাব্রিয়েল, এই দর্শনের অর্থ এই লোকটিকে বুঝিয়ে দাও।”

17 আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তিনি সেই জায়গার কাছে আসলে পর আমি ভয় পেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, এই দর্শনটা যে শেষকালের বিষয়ে তা তুমি বুঝে নাও।”

18 তিনি যখন আমার সংগে কথা বলছিলেন তখন আমি উবুড় অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। তিনি আমাকে ছুঁয়ে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

19 তিনি বললেন, “ক্রোধের সময়ের শেষের দিকে যা ঘটবে তা আমি তোমাকে বলছি, কারণ দর্শনটা হল শেষকালের নির্দিষ্ট করা সময়ের বিষয়ে।

20 তুমি দুই শিংয়ের যে ভেড়া দেখেছ তা হল মাদীয় ও পারসীক রাজারা।

21 সেই লোমশ ছাগল হল গ্রীস রাজ্য এবং তার দু’চোখের মাঝখানের বড় শিং হল সেই রাজ্যের প্রথম রাজা।

22 ভেংগে ফেলা শিংয়ের জায়গায় সেই চারটা শিং হল চারটি রাজ্য যা সেই জাতির মধ্য থেকে বের হবে কিন্তু সেই রাজ্যগুলোর রাজাদের প্রথম রাজার মত ক্ষমতা থাকবে না।

23 “তাদের রাজত্বের শেষের দিকে যখন পাপের মাত্রা পূর্ণ হবে তখন একজন ভীষণ নিষ্ঠুর ও চালাক রাজা উঠবে।

24 সে খুব বলবান হবে, কিন্তু নিজের শক্তিতে নয়। সে ভীষণভাবে ধ্বংস করবে এবং সে যা করবে তাতেই সফল হবে। সে শক্তিশালী লোকদের ও ঈশ্বরের লোকদের ধ্বংস করবে।

25 তার চালাকির জন্য সে ছলনা করে সফলতা লাভ করবে এবং নিজেকে সবচেয়ে বড় মনে করবে। লোকে যখন নিজেদের নিরাপদ মনে করবে তখন সে অনেককে ধ্বংস করবে এবং শাসনকর্তাদের কর্তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। শেষে সে ধ্বংস হবে, কিন্তু মানুষের শক্তিতে নয়।

26 “তোমাকে সন্ধ্যা ও সকালের উৎসর্গের বিষয়ে যে দর্শন দেখানো হয়েছে তা সত্যি, কিন্তু এই দর্শনটা সীলমোহর করে রাখ, কারণ সেটা ভবিষ্যতে অনেক পরে হবে।”

27 আমি দানিয়েল ক্লান্ত হয়ে পড়লাম এবং অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন শুয়ে রইলাম। তারপর আমি উঠে রাজার কাজ করতে গেলাম। আমি সেই দর্শন দেখে খুব চিন্তিত হয়েছিলাম, কারণ সেই দর্শনের অর্থ আমি বুঝতে পারলাম না।

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12