1 দুই দিন পরে ঈদুল ফেসাখ ও খামিহীন রুটির ঈদ; এমন সময়ে প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা কিভাবে তাঁকে কৌশলে ধরে হত্যা করতে পারে তারই চেষ্টা করছিল।
2 কেননা তারা বললো, ঈদের সময়ে নয়, পাছে লোকদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়।
3 ঈসা যখন বৈথনিয়াতে কুষ্ঠ রোগী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন, তখন তিনি ভোজনে বসলে এক জন স্ত্রীলোক শ্বেত পাথরের পাত্রে বহুমূল্য খাঁটি জটামাংসীর তেল নিয়ে আসল। সে পাত্রটি ভেঙ্গে তাঁর মাথায় তেল ঢেলে দিল।
4 কিন্তু উপস্থিত কোন কোন ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে পরস্পর বললো, তেলের এরকম অপব্যয় হল কেন?
5 এই তেল তো বিক্রি করলে তিন শত সিকিরও বেশি পাওয়া যেত এবং তা দরিদ্রদেরকে দান করা যেত। আর তারা সেই স্ত্রীলোকটির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করলো।
6 কিন্তু ঈসা বললেন, একে থাকতে দাও, কেন একে দুঃখ দিচ্ছো? এ আমার প্রতি সৎকাজ করলো।
7 কেননা দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সব সময়ই আছে; তোমরা যখন ইচ্ছা কর, তাদের দয়া দেখাতে পার; কিন্তু আমাকে সব সময় পাবে না।
8 এ যা করতে পারতো, তা-ই করলো; আগে এসে আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে আমার দেহে সুগন্ধি তেল ঢেলে দিলো।
9 আর আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, সারা দুনিয়ায় যে কোন স্থানে সুসমাচার তবলিগ করা হবে, সেই স্থানে এর স্মরণার্থে এর এই কাজের কথাও বলা যাবে।
10 পরে ঈষ্কোরিয়োতীয় এহুদা, সেই বারো জনের মধ্যে এক জন, প্রধান ইমামদের কাছে গেল, যেন তাদের হাতে ঈসাকে ধরিয়ে দিতে পারে।
11 তারা শুনে আনন্দিত হল এবং তাকে টাকা দিতে স্বীকার করলো; তখন সে কোন্ সুযোগে তাঁকে ধরিয়ে দেবে, তারই চেষ্টা করতে লাগল।
12 খামিহীন রুটির ঈদের প্রথম দিন, যেদিন ঈদুল ফেসাখের ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী করা হত, সেদিন তাঁর সাহাবীরা তাঁকে বললেন, আমরা কোথায় গিয়ে আপনার জন্য ঈদুল ফেসাখের মেজবানী প্রস্তুত করবো? আপনার ইচ্ছা কি?
13 তখন তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্য থেকে দুই জনকে পাঠিয়ে দিলেন, বললেন, তোমরা নগরে যাও, এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়বে, যে এক কলসী পানি নিয়ে আসছে; তারই পিছনে পিছনে যেও;
14 আর সে যে বাড়িতে প্রবেশ করে, সেই বাড়ির মালিককে বলো, হুজুর বলছেন, যেখানে আমি আমার সাহাবীদের সঙ্গে ঈদুল ফেসাখের মেজবানী ভোজন করতে পারি, আমার সেই মেহমান-শালা কোথায়?
15 তাতে সেই ব্যক্তি তোমাদেরকে উপরের একটি সুসজ্জিত প্রশস্ত কুঠরী দেখিয়ে দেবে, সেই স্থানে আমাদের জন্য ভোজ প্রস্তুত করো।
16 পরে সাহাবীরা প্রস্থান করে নগরে গেলেন, আর তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনি দেখতে পেলেন; পরে তাঁরা ঈদুল ফেসাখের মেজবানী প্রস্তুত করলেন।
17 পরে সন্ধ্যা হলে তিনি সেই বারো জনের সঙ্গে উপস্থিত হলেন।
18 তাঁরা বসে ভোজন করছেন, এমন সময়ে ঈসা বললেন, আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, তোমাদের এক জন আমাকে ধরিয়ে দেবে, সে আমার সঙ্গে ভোজন করছে।
19 তখন তাঁরা দুঃখিত হলেন এবং একে একে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, সে কি আমি?
20 তিনি তাঁদেরকে বললেন, এই বারো জনের মধ্যে এক জন, যে আমার সঙ্গে ভোজনপাত্রে হাত ডুবাচ্ছে, সেই।
21 কেননা ইবনুল-ইনসানের বিষয়ে যেমন লেখা আছে, তেমনি তিনি যাচ্ছেন; কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে ইবনুল-ইনসানকে ধরিয়ে দেয়। সেই মানুষের জন্ম না হলে তার পক্ষে ভালই ছিল।
22 তাঁরা ভোজন করছেন, এমন সময়ে তিনি রুটি নিয়ে দোয়াপূর্বক ভাঙ্গলেন এবং তাঁদেরকে দিলেন, আর বললেন, তোমরা নেও, এ আমার শরীর।
23 পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে শুকরিয়াপূর্বক তাঁদেরকে দিলেন এবং তাঁরা সকলেই তা থেকে পান করলেন।
24 আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, এ আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের জন্য ঢেলে দেওয়া হয়।
25 আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যেদিন আমি আল্লাহ্র রাজ্যে নতুন ভাবে তা পান না করি, সেদিন পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস আর কখনও পান করবো না।
26 পরে তাঁরা গজল গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পর্বতে গেলেন।
27 তখন ঈসা তাঁদেরকে বললেন, তোমরা সকলে আমাকে নিয়ে মনে বাধা পাবে; কেননা লেখা আছে,“আমি পালরক্ষককে আঘাত করবো,তাতে মেষেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়বে।”
28 কিন্তু পুনরুত্থিত হলে পর আমি তোমাদের আগে গালীলে যাব।
29 পিতর তাঁকে বললেন, যদি সকলের মনে বাধা আসেও, তবুও আমার মনে বাধা আসবে না।
30 ঈসা তাঁকে বললেন, আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমিই আজ, এই রাত্রে, মোরগ দু’বার ডাকবার আগে, তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে।
31 কিন্তু তিনি আরও জোর দিয়ে বলতে লাগলেন, যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করবো না। অন্য সকলেও তেমনি বললেন।
32 পরে তাঁরা গেৎশিমানী নামক একটি স্থানে আসলেন; আর তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন, আমি যতক্ষণ মুনাজাত করি, তোমরা এখানে বসে থাক।
33 পরে তিনি পিতর, ইয়াকুব ও ইউহোন্নাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন এবং মনে অত্যন্ত যন্ত্রণা পেতে ও উদ্বিগ্ন হতে লাগলেন।
34 তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত হয়েছে; তোমরা এখানে থাক, আর জেগে থাক।
35 পরে তিনি কিঞ্চিৎ আগে গিয়ে ভূমিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং এই মুনাজাত করলেন, যদি হতে পারে, তবে যেন সেই সময় তাঁর কাছ থেকে চলে যায়।
36 তিনি বললেন, আব্বা, পিতা, তোমার পক্ষে সকলই সম্ভব; আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, তোমার ইচ্ছামত হোক।
37 পরে তিনি এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, শিমোন, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো? এক ঘণ্টাও কি জেগে থাকতে তোমার শক্তি হল না?
38 তোমরা জেগে থাক ও মুনাজাত কর যেন পরীক্ষায় না পড়; রূহ্ ইচ্ছুক বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।
39 আর তিনি পুনরায় গিয়ে সেই কথা বলে মুনাজাত করলেন।
40 পরে তিনি আবার এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন; কারণ তাঁদের চোখ বড়ই ভারী হয়ে পড়েছিল, আর তাঁকে কি উত্তর দেবেন, তা তাঁরা বুঝতে পারলেন না।
41 পরে তিনি তৃতীয়বার এসে তাঁদেরকে বললেন, এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ ও বিশ্রাম করছো; যথেষ্ট হয়েছে; সময় উপস্থিত, দেখ, ইবনুল-ইনসানকে গুনাহ্গারদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
42 উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে ধরিয়ে দিচ্ছে, সে কাছে এসে গেছে।
43 আর তিনি যখন কথা বলছেন, তৎক্ষণাৎ এহুদা, সেই বারো জনের এক জন আসল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে প্রধান ইমামদের, আলেমদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে আসলো।
44 যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে আগে তাদেরকে এই সঙ্কেত বলেছিল, আমি যাকে চুম্বন করবো, সে-ই ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাকে ধরে সাবধানে নিয়ে যাবে।
45 সে এসে তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে গিয়ে বললো, রব্বি; আর তাঁকে আগ্রহপূর্বক চুম্বন করলো।
46 তখন তারা তাঁর উপরে হস্তক্ষেপ করে তাঁকে ধরলো।
47 কিন্তু যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে এক জন তাঁর তলোয়ার খুলে মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটি কান কেটে ফেললো।
48 তখন ঈসা তাদেরকে বললেন, যেমন দস্যু ধরতে যায়, তেমনি কি তোমরা তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে আসলে?
49 আমি প্রতিদিন বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমাদের কাছে থেকে উপদেশ দিয়েছি, তখন তো আমায় ধরলে না; কিন্তু পাক-কিতাবের কালাম সফল হওয়া আবশ্যক।
50 তখন সাহাবীরা সকলে তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
51 আর এক জন যুবক উলঙ্গ শরীরে একখানি চাদর জড়িয়ে তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল;
52 তারা তাকে ধরলো, কিন্তু সে সেই চাদরখানি ফেলে উলঙ্গই পালিয়ে গেল।
53 পরে তারা ঈসাকে মহা-ইমামের কাছে নিয়ে গেল; তাঁর সঙ্গে প্রধান ইমামেরা, প্রাচীনবর্গরা ও আলেমেরা সকলে সমবেত হল।
54 আর পিতর দূরে থেকে তাঁর পিছনে পিছনে ভিতরে মহা-ইমামের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত গেলেন এবং পদাতিকদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন।
55 তখন প্রধান ইমামেরা ও সমস্ত মহাসভা ঈসাকে হত্যা করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য খোঁজ করলো, কিন্তু পেল না।
56 কেননা অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল বটে, কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
57 পরে কয়েক জন দাঁড়িয়ে তাঁর বিপক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বললো,
58 আমরা ওকে এই কথা বলতে শুনেছি, আমি এই হাতের তৈরি এবাদতখানা ভেঙ্গে ফেলবো, আর তিন দিনের মধ্যে এমন আর একটি এবাদতখানা নির্মাণ করবো যা হাতের তৈরি নয়।
59 এতেও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
60 তখন মহা-ইমাম মধ্যস্থানে দাঁড়িয়ে ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কোন উত্তরই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এরা কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?
61 কিন্তু তিনি নীরব রইলেন, কোন জবাব দিলেন না। আবার মহা-ইমাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সেই মসীহ্, পরমধন্যের পুত্র?
62 ঈসা বললেন, আমি সেই; আর তোমরা ইবনুল-ইনসানকে পরাক্রমের ডান পাশে বসে থাকতে ও আসমানের মেঘসহ আসতে দেখবে।
63 তখন মহা-ইমাম নিজের কাপড় ছিঁড়ে বললেন, আর সাক্ষীর আমাদের কি প্রয়োজন?
64 তোমরা তো কুফরী শুনলে; তোমাদের কি বিবেচনা হয়? তারা সকলে তাঁকে দোষী করে বললো এ মৃত্যুর যোগ্য।
65 তখন কেউ কেউ তাঁর গাঁয়ে থুথু দিতে লাগল এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মারতে লাগল, আর বলতে লাগল, ভবিষ্য-দ্বাণী বল্ না? পরে পদাতিকরা প্রহার করতে করতে তাঁকে গ্রহণ করলো।
66 পিতর যখন নিচে প্রাঙ্গণে ছিলেন, তখন মহা-ইমামের এক জন বাঁদী আসল;
67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখে তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করে বললো, তুমিও তো সেই নাসারতীয় ঈসার সঙ্গে ছিলে।
68 কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, তুমি যা বলছো, তা আমি জানিও না, বুঝিও না। পরে তিনি বের হয়ে ফটকের কাছে গেলেন, আর মোরগ ডেকে উঠলো।
69 কিন্তু বাঁদী তাঁকে দেখে, যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদেরকেও বলতে লাগল, এই ব্যক্তি তাদের এক জন।
70 তিনি আবার অস্বীকার করলেন। কিছু সময় পরে, যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, আবার তারা পিতরকে বললো, সত্যিই তুমি তাদের এক জন, কেননা তুমি গালীলীয় লোক।
71 কিন্তু তিনি বদদোয়াপূর্বক শপথ করে ও কসম খেয়ে বলতে লাগলেন, তোমরা যে ব্যক্তির কথা বলছো তাকে আমি চিনি না।
72 তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় বার মোরগ ডেকে উঠলো; তাতে ঈসা এই যে কথা বলেছিলেন, ‘মোরগ দু’বার ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে,’ তা পিতরের মনে পড়লো এবং তিনি সেই বিষয় চিন্তা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।