1 পরে তাঁরা সমুদ্রের ওপারে গেরাসেনীদের দেশে উপস্থিত হলেন।
2 তিনি নৌকা থেকে বের হলে তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি কবর-স্থান থেকে তাঁর সম্মুখে আসল, তাকে নাপাক রূহে পেয়েছিল।
3 সে কবরের মধ্যে বাস করতো এবং কেউ তাকে শিকল দিয়েও আর বেঁধে রাখতে পারতো না।
4 কেননা লোকে বার বার তাকে বেড়ী ও শিকল দিয়ে বাঁধতো, কিন্তু সে শিকল ছিঁড়ে ফেলতো এবং বেড়ী ভেঙ্গে খণ্ডবিখণ্ড করতো; কেউ তাকে বশ করতে পারতো না।
5 আর সে দিনরাত সব সময় কবরে ও পর্বতে থেকে চিৎকার করতো এবং পাথর দিয়ে নিজেই নিজেকে আঘাত করতো।
6 সে দূর থেকে ঈসাকে দেখে দৌড়ে আসল, তাঁকে সেজ্দা করলো এবং উচ্চরবে চেঁচিয়ে বললো,
7 হে ঈসা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র পুত্র, আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি? আমি আপনাকে আল্লাহ্র কসম দিচ্ছি, আমাকে যাতনা দেবেন না।
8 কেননা তিনি তাকে বলেছিলেন, হে নাপাক রূহ্, এই ব্যক্তি থেকে বের হও।
9 তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? জবাবে সে বললো, আমার নাম বাহিনী,
10 কারণ আমরা অনেকে আছি। পরে সে বিস্তর ফরিয়াদ করলো, যেন তিনি তাদেরকে সেই অঞ্চল থেকে পাঠিয়ে না দেন।
11 সেই স্থানে পর্বতের পাশে একটি বড় শূকরের পাল চরছিল।
12 আর তারা ফরিয়াদ করে বললো, ঐ শূকরগুলোর মধ্যে প্রবেশ করতে আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন।
13 তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন সেই নাপাক রূহ্রা বের হয়ে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করলো; তাতে সেই শূকর-পাল, কমবেশ দুই হাজার শূকর, মহাবেগে দৌড়ে ঢালু পার দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়লো এবং সাগরে ডুবে মারা গেল।
14 তখন যারা সেগুলোকে চরাচ্ছিল, তারা পালিয়ে গিয়ে নগরে ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে সংবাদ দিল। তখন কি ঘটেছে তা দেখবার জন্য লোকেরা সেখানে আসল।
15 তারা ঈসার কাছে এসে দেখতে পেল যে, সেই বদ-রূহে পাওয়া ব্যক্তি, যাকে বাহিনীতে পেয়েছিল, সে কাপড় পরে সুস্থ মনে বসে আছে; তাতে তারা ভয় পেল।
16 আর ঐ বদ-রূহে পাওয়া লোকটির ও শূকর-পালের ঘটনা যারা দেখেছিল, তারা তাদেরকে সমস্ত বৃত্তান্ত বললো।
17 তখন তারা তাদের সীমানা থেকে প্রস্থান করতে তাঁকে ফরিয়াদ করতে লাগল।
18 পরে তিনি নৌকায় উঠছেন, এমন সময়ে যে ব্যক্তিকে বদ-রূহে পেয়েছিল, সে তাঁকে ফরিয়াদ করলো, যেন তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে।
19 কিন্তু তিনি তাকে অনুমতি দিলেন না, বরং বললেন, তুমি বাড়িতে তোমার আত্মীয়দের কাছে চলে যাও এবং প্রভু তোমার জন্য যে যে মহৎ কাজ করেছেন ও তোমার প্রতি যে করুণা করেছেন তা তাদেরকে জানও।
20 তখন সে প্রস্থান করে, ঈসা তার জন্য যে যে মহৎ কাজ করেছিলেন তা দিকাপলিতে তবলিগ করতে লাগল; তাতে সকলেই আশ্চর্য জ্ঞান করলো।
21 পরে ঈসা যখন নৌকায় করে পুনরায় পারে গেলেন তখন তাঁর কাছে বিস্তর লোকের জমায়েত হল; তখন তিনি সমুদ্র-তীরে ছিলেন।
22 আর সমাজের নেতাদের মধ্যে যায়ীর নামে এক জন এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়লেন,
23 এবং অনেক ফরিয়াদ করে বললেন, আমার মেয়েটি মারা যেতে বসেছে, আপনি এসে তার উপরে হাত রাখুন, যেন সে সুস্থ হয়ে বাঁচে।
24 তখন তিনি তার সঙ্গে চললেন এবং অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চললো ও তাঁর উপরে চাপাচাপি করে পড়তে লাগল।
25 আর একটি স্ত্রীলোক বারো বছর থেকে প্রদর রোগে আক্রান্ত হয়েছিল,
26 অনেক চিকিৎসকের দ্বারা অনেক কষ্ট ভোগ করেছিল এবং সর্বস্ব ব্যয় করেও কোনরূপ সুস্থ হয় নি, বরং আরও অসুস্থ হয়েছিল।
27 সে ঈসার বিষয় শুনে ভিড়ের মধ্যে তাঁর পিছনের দিকে এসে তাঁর কাপড় স্পর্শ করলো।
28 কেননা সে বললো, আমি যদি কেবল তাঁর কাপড় স্পর্শ করতে পারি, তবেই সুস্থ হবো।
29 আর তৎক্ষণাৎ তার রক্তস্রাব শুকিয়ে গেল; আর সে যে ঐ রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে তা তার শরীরে টের পেল।
30 ঈসা তৎক্ষণাৎ অন্তরে জানতে পেলেন যে, তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে, তাই ভিড়ের মধ্যে মুখ ফিরিয়ে বললেন, কে আমার কাপড় স্পর্শ করলো?
31 তাঁর সাহাবীরা বললেন, আপনি দেখছেন, লোকেরা আপনার উপরে চাপাচাপি করে পড়ছে, তবু বলছেন, কে আমাকে স্পর্শ করলো?
32 কিন্তু কে এই কাজ করেছিল, তাকে দেখবার জন্য তিনি চারদিকে দৃষ্টিপাত করলেন।
33 তাতে সেই স্ত্রীলোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, তার প্রতি কি করা হয়েছে জানাতে, তাঁর সম্মুখে উবুড় হয়ে পড়লো, আর সমস্ত সত্যি ঘটনা তাঁকে বললো।
34 তখন তিনি তাকে বললেন, হে কন্যে, তোমার ঈমান তোমাকে রক্ষা করলো, শান্তিতে চলে যাও ও তোমার রোগ থেকে মুক্ত থাক।
35 তিনি এই কথা বলছেন, ইতোমধ্যে মজলিস-খানার নেতার বাড়ি থেকে লোক এসে বললো, আপনার কন্যার মৃত্যু হয়েছে, হুজুরকে আর কেন কষ্ট দিচ্ছেন?
36 কিন্তু ঈসা সে কথা শুনতে পেয়ে মজলিস-খানার নেতাকে বললেন, ভয় করো না, কেবল ঈমান আনো।
37 আর পিতর, ইয়াকুব এবং ইয়াকুবের ভাই ইউহোন্না, এই তিন জন ছাড়া তিনি আর কাউকেও তাঁর সঙ্গে যেতে দিলেন না।
38 পরে তাঁরা সমাজের নেতার বাড়িতে আসলেন, আর তিনি দেখলেন, কোলাহল হচ্ছে, লোকেরা ভীষণ কান্নাকাটি ও মাতম করছে।
39 তিনি ভিতরে গিয়ে তাদেরকে বললেন, তোমরা কোলাহল ও রোদন করছো কেন? বালিকাটি মারা যায় নি, ঘুমিয়ে রয়েছে।
40 এতে তারা তাঁকে উপহাস করলো; কিন্তু তিনি সকলকে বের করে দিয়ে, বালিকার পিতামাতাকে এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে যেখানে বালিকাটি ছিল সেখানে প্রবেশ করলেন।
41 পরে তিনি বালিকার হাত ধরে তাকে বললেন, টালিথা কুমী; অনুবাদ করলে এর অর্থ এই, বালিকা, তোমাকে বলছি, উঠ।
42 তাতে বালিকাটি তৎক্ষণাৎ উঠে বেড়াতে লাগল, কেননা তার বয়স বারো বছর ছিল। এতে তারা বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হল।
43 পরে তিনি তাদেরকে এই দৃঢ় হুকুম দিলেন, যেন কেউ এই ঘটনার কথা জানতে না পারে, আর কন্যাটিকে কিছু আহার দিতে হুকুম করলেন।