1 মাবুদ তখন নবী নাথনকে দাউদের কাছে পাঠালেন। তিনি দাউদের কাছে গিয়ে বললেন, “কোন এক শহরে দু’জন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল ধনী আর অন্যজন গরীব।
2 ধনী লোকটির অনেক গরু ও ভেড়া ছিল।
3 কিন্তু সেই গরীব লোকটির আর কিছুই ছিল না, ছিল কেবল একটা বাচ্চা-ভেড়ী। সে সেটা কিনে পালন করছিল। সেটা তার ও তার ছেলেমেয়েদের সংগে থেকে বড় হয়ে উঠতে লাগল। গরীব লোকটি যা খেত বাচ্চা-ভেড়ীটাও তা-ই খেত আর তার পাত্র থেকেই সে পানি খেত। তার কোলের কাছে সে শুয়ে থাকত। সে তার কাছে তার মেয়ের মতই ছিল।
4 একদিন একজন মেহমান সেই ধনী লোকটির কাছে আসল। কিন্তু ধনী লোকটি সেই মেহমানের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নিজের গরু বা ভেড়া নিতে চাইল না। তার বদলে সে সেই গরীব লোকটির বাচ্চা-ভেড়ীটা নিয়ে তার মেহমানের জন্য খাবার তৈরী করল।”
5 এই কথা শুনে দাউদ সেই ধনী লোকটির উপর রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি নবী নাথনকে বললেন, “আল্লাহ্র কসম, যে লোকটি এই কাজ করেছে তাকে মেরে ফেলাই উচিত।
6 সে একটুও দয়া না করে এই কাজ করেছে বলে তাকে ঐ ভেড়ার বাচ্চাটার চারগুণ দাম দিতে হবে।”
7 তখন নবী নাথন দাউদকে বললেন, “আপনিই সেই লোক। ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্ এই কথা বলছেন, ‘আমিই ইসরাইলের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করেছি এবং তালুতের হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করেছি।
8 তোমার মালিকের সব কিছু আমি তোমাকে দিয়েছি আর তার স্ত্রীদেরও আমি তোমার কাছে দিয়েছি। ইসরাইল ও এহুদার সমস্ত গোষ্ঠীর লোকদের ভার আমি তোমাকে দিয়েছি। এই সব যদি তোমার পক্ষে যথেষ্ট না হত তবে আমি তোমাকে আরও অনেক কিছু দিতাম।
9 তবে মাবুদের চোখে যা খারাপ তা করে কেন তুমি তাঁর কথা তুচ্ছ করলে? তুমি হিট্টীয় উরিয়াকে মেরে ফেলেছ এবং তার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী করে নিয়েছ, আর অম্মোনীয়দের দিয়ে তুমি উরিয়াকে মেরে ফেলেছ।
10 তুমি আমাকে তুচ্ছ করেছ এবং হিট্টীয় উরিয়ার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের স্ত্রী করেছ, সেইজন্য তোমার পরিবার কখনও খুনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।’
11 “মাবুদ আরও বলছেন, ‘আমি তোমার পরিবার থেকেই তোমার জন্য বিপদ নিয়ে আসব। তোমার চোখের সামনেই আমি তোমার স্ত্রীদের নিয়ে তোমার নিজের লোককে দেব। সে সকলের চোখের সামনে তাদের নিয়ে শোবে।
12 তুমি সেই কাজ করেছ গোপনে কিন্তু আমি এই কাজ করব সকলের সামনে, সমস্ত বনি-ইসরাইলদের চোখের সামনে।’ ”
13 তখন দাউদ নাথনকে বললেন, “আমি মাবুদের বিরুদ্ধে গুনাহ্ করেছি।”জবাবে নাথন বললেন, “মাবুদ আপনার গুনাহ্ মাফ করলেন; আপনি মারা যাবেন না।
14 কিন্তু এই কাজ করে আপনি মাবুদের শত্রুদের কুফরী করবার একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছেন। সেইজন্য আপনার যে ছেলেটি জন্মেছে সে অবশ্যই মারা যাবে।”
15 নাথন নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। পরে উরিয়ার স্ত্রীর গর্ভে দাউদের যে ছেলেটির জন্ম হয়েছিল মাবুদের আঘাতে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।
16 তখন দাউদ ছেলেটির জন্য আল্লাহ্র কাছে মিনতি করতে লাগলেন। তিনি রোজা রাখলেন এবং তাঁর ঘরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে রাত কাটাতে লাগলেন।
17 রাজবাড়ীর উঁচু পদের কর্মচারীরা তাঁকে মাটি থেকে উঠাবার জন্য তাঁর কাছে গেলেন, কিন্তু তিনি রাজী হলেন না এবং তাঁদের সংগে খাওয়া-দাওয়াও করলেন না।
18 অসুখের সাত দিনের দিন ছেলেটি মারা গেল। ছেলেটি যে মারা গেছে সেই কথা দাউদকে জানাতে তাঁর সেই কর্মচারীদের সাহস হল না। তাঁরা বললেন, “ছেলেটি যখন বেঁচে ছিল তখন আমরা তাঁকে বললেও তিনি আমাদের কথা কানে তোলেন নি। এখন আমরা কেমন করে বলব যে, ছেলেটি মারা গেছে? বললে হয়তো তিনি নিজের কোন ক্ষতি করে বসবেন।”
19 কর্মচারীদের মধ্যে এই কানাকানি দেখে দাউদ বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “ছেলেটি কি মারা গেছে?”জবাবে তাঁরা বললেন, “জ্বী, মারা গেছে।”
20 দাউদ তখন মাটি থেকে উঠে গোসল করে তেল মাখলেন এবং কাপড়-চোপড় বদলে তিনি মাবুদের ঘরে গিয়ে সেজদায় পড়ে তাঁর এবাদত করলেন। তারপর নিজের ঘরে ফিরে এসে খাবার আনবার হুকুম দিলেন। পরে তাঁর সামনে খাবার রাখা হলে তিনি খেলেন।
21 এতে তাঁর সেই কর্মচারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি এই রকম করলেন কেন? ছেলেটি বেঁচে থাকতে আপনি রোজা রাখলেন ও কাঁদলেন, কিন্তু সে যখন মারা গেল তখন আপনি উঠে খাওয়া-দাওয়া করলেন।”
22 দাউদ বললেন, “ছেলেটি বেঁচে থাকতে আমি রোজা রেখেছি আর কেঁদেছি, কারণ আমি ভেবেছিলাম, কি জানি মাবুদ আমাকে রহমত দান করবেন আর তাতে সে বেঁচে যাবে।
23 কিন্তু এখন যখন সে মারাই গেল তখন আমি আর কি জন্য রোজা রাখব? আমি কি তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারব? আমাকেই তার কাছে যেতে হবে। সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না।”
24-25 দাউদ তাঁর স্ত্রী বৎশেবাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং তিনি আবার তাঁর সংগে শুলেন। পরে তাঁর একটি ছেলে হল। দাউদ তাঁর নাম রাখলেন সোলায়মান। মাবুদ ছেলেটিকে মহব্বত করতেন বলে তাঁর নাম যিদীদীয় রাখবার জন্য নবী নাথনকে পাঠিয়ে দিলেন।
26 এদিকে যোয়াব অম্মোনীয়দের রাজধানী রব্বা শহরটা হামলা করে দখল করে নিলেন।
27 যোয়াব দাউদের কাছে লোক পাঠিয়ে এই কথা বললেন, “আমি রব্বা শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যেখানে খাবার পানি জমা করে রাখা হয় সেই এলাকাটা দখল করে নিয়েছি।
28 আপনি বাকী সৈন্যদের জমায়েত করে নিয়ে শহরটা হামলা করে দখল করুন। তা না হলে আমাকেই শহরটা দখল করতে হবে আর তাতে আমার নামেই শহরটার নাম হবে।”
29 তখন দাউদ সমস্ত সৈন্যদের জমায়েত করে নিয়ে রব্বা শহরে গেলেন এবং শহরটা হামলা করে দখল করে নিলেন।
30 তিনি সেখানকার বাদশাহ্র মাথা থেকে তাজটা খুলে নিলেন। সেটা ঊনচল্লিশ কেজি সোনা দিয়ে তৈরী ছিল আর তাতে দামী পাথর বসানো ছিল। তাজটা দাউদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হল। দাউদ সেই শহর থেকে অনেক লুটের মাল নিয়ে গেলেন।
31 তিনি শহরের লোকদের বের করে আনলেন এবং করাত, লোহার খন্তা ও কুড়াল দিয়ে তাদের কাজ করালেন। তিনি তাদের ইট তৈরীর কাজে লাগালেন। অম্মোনীয়দের সমস্ত শহরে তিনি তা-ই করলেন। এর পর দাউদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে জেরুজালেমে ফিরে গেলেন।