1 জেরুজালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও আলেম ঈসার কাছে এসে বললেন,
2 “পুরানো দিনের আলেমদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে আপনার সাহাবীরা তা মেনে চলে না কেন? খাওয়ার আগে তারা হাত ধোয় না।”
3 জবাবে ঈসা বললেন, “যে নিয়ম চলে আসছে তার জন্য আপনারাই বা কেন আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করেন?
4 আল্লাহ্ বলেছেন, ‘মা-বাবাকে সম্মান কোরো’ এবং ‘যার কথায় মা-বাবার প্রতি অসম্মান থাকে তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে।’
5 কিন্তু আপনারা বলে থাকেন, যদি কেউ তার মা কিংবা বাবাকে বলে, ‘আমার যে জিনিসের দ্বারা তোমার সাহায্য হতে পারত, তা আল্লাহ্র কাছে দেওয়া হয়েছে,’
6 তবে পিতা-মাতাকে তার আর সম্মান করবার দরকার নেই। আপনাদের এই সব চলতি নিয়মের জন্য আপনারা আল্লাহ্র কালাম বাতিল করেছেন।
7 ভণ্ডেরা! আপনাদের সম্বন্ধে ইশাইয়া নবী ঠিক কথাই বলেছিলেন যে,
8 এই লোকেরা মুখেই আমাকে সম্মান করে,কিন্তু তাদের দিল আমার কাছ থেকে দূরে থাকে।
9 তারা মিথ্যাই আমার এবাদত করে;তাদের দেওয়া শিক্ষা মানুষের তৈরী কতগুলো নিয়ম মাত্র।
10 পরে ঈসা লোকদের ডেকে বললেন, “আমার কথা শুনুন এবং বুঝুন।
11 মুখের ভিতরে যা যায় তা মানুষকে নাপাক করে না, কিন্তু মুখের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে নাপাক করে।”
12 তখন তাঁর সাহাবীরা এসে তাঁকে বললেন, “ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে যে অপমান বোধ করেছেন, তা কি আপনি জানেন?”
13 জবাবে তিনি বললেন, “যে চারা আমার বেহেশতী পিতা লাগান নি তার প্রত্যেকটাকে উপ্ড়ে ফেলা হবে। তাদের কথা ছেড়ে দাও।
14 অন্ধদের পথ দেখাবার কথা তাঁদেরই, কিন্তু তাঁরা নিজেরাই অন্ধ। অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাতে গেলে দু’জনই গর্তে পড়ে।”
15 তখন পিতর ঈসাকে বললেন, “আপনি যে দৃষ্টান্ত দিলেন তা আমাদের বুঝিয়ে দিন।”
16-17 ঈসা বললেন, “তোমরা কি এখনও অবুঝ রয়েছ? তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা পেটের মধ্যে ঢোকে এবং শেষে বের হয়ে যায়?
18 কিন্তু যা মুখের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে তা অন্তর থেকে আসে, আর সেগুলোই মানুষকে নাপাক করে।
19 অন্তর থেকেই খারাপ চিন্তা, খুন, সব রকম জেনা, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বের হয়ে আসে।
20 এই সবই মানুষকে নাপাক করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ নাপাক হয় না।”
21 পরে ঈসা সেই জায়গা ছেড়ে টায়ার ও সিডন এলাকায় চলে গেলেন।
22 সেখানকার একজন কেনানীয় স্ত্রীলোক এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে হুজুর, দাউদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন। ভূতে ধরবার দরুন আমার মেয়েটি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।”
23 ঈসা কিন্তু তাকে একটা কথাও বললেন না। তখন তাঁর সাহাবীরা এসে তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে বিদায় করে দিন, কারণ ও আমাদের পিছনে পিছনে চিৎকার করছে।”
24 জবাবে ঈসা বললেন, “আমাকে কেবল বনি-ইসরাইলদের হারানো ভেড়াদের কাছেই পাঠানো হয়েছে।”
25 সেই স্ত্রীলোকটি কিন্তু ঈসার কাছে এসে তাঁর সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, “হুজুর, আমার এই উপকারটা করুন।”
26 ঈসা বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ফেলা ভাল নয়।”
27 সে বলল, “ঠিক কথা, হুজুর; তবুও মালিকের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরা পড়ে তা কুকুরেই খায়।”
28 তখন ঈসা তাকে বললেন, “সত্যিই তোমার বিশ্বাস খুব বেশী। তুমি যেমন চাও তেমনই হোক।” আর তখনই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।
29 পরে ঈসা সেই জায়গা ছেড়ে গালীল সাগরের পার দিয়ে চললেন এবং একটা পাহাড়ে উঠে সেখানে বসলেন।
30 তখন লোকেরা খোঁড়া, অন্ধ, নুলা, বোবা এবং আরও অনেককে সংগে নিয়ে তাঁর কাছে আসল। তারা ঐ সব লোকদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন।
31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলা সুস্থ হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে এবং অন্ধ দেখতে পাচ্ছে, তখন তারা আশ্চর্য হল এবং বনি-ইসরাইলদের আল্লাহ্র প্রশংসা করতে লাগল।
32 এর পর ঈসা তাঁর সাহাবীদের ডেকে বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ আজ তিন দিন হল এরা আমার সংগে সংগে আছে, আর এদের কাছে কোন খাবার নেই। এই অবস্থায় আমি এদের বিদায় দিতে চাই না; হয়তো বা তারা পথে অজ্ঞান হয়ে পড়বে।”
33 সাহাবীরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়াবার মত রুটি আমরা কোথায় পাব?”
34 ঈসা তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কয়টা রুটি আছে?”সাহাবীরা বললেন, “সাতটা রুটি আর কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”
35-36 লোকদের মাটিতে বসতে হুকুম দিয়ে ঈসা সেই সাতটা রুটি আর মাছগুলো নিলেন। পরে তিনি আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানিয়ে সেগুলো ভাঙ্গলেন ও সাহাবীদের হাতে দিলেন, আর সাহাবীরা তা লোকদের দিলেন।
37 লোকেরা সবাই পেট ভরে খেল, আর যে টুকরাগুলো পড়ে রইল সাহাবীরা তা তুলে নিয়ে সাতটা টুকরি পূর্ণ করলেন।
38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া চার হাজার পুরুষ ছিল।
39 এর পর ঈসা লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদন এলাকায় গেলেন।