1 সেই সময়ে সাহাবীরা ঈসার কাছে এসে বললেন, “বেহেশতী রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে?”
2 তখন ঈসা একটা শিশুকে ডেকে তাঁদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে বললেন,
3 “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি তোমরা মন ফিরিয়ে শিশুদের মত না হও তবে কোনমতেই বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।
4 যে কেউ এই শিশুর মত নিজেকে নম্র করে সে-ই বেহেশতী রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
5 আর যে কেউ এর মত কোন শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে।
6 “আমার উপর ঈমানদার এই ছোটদের মধ্যে কাউকে যদি কেউ গুনাহের পথে নিয়ে যায় তবে তার গলায় একটা বড় পাথর বেঁধে তাকে সাগরের গভীর পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভাল।
7 ঘৃণ্য দুনিয়া! গুনাহের পথে নিয়ে যাবার জন্য কত উসকানিই না তোমার মধ্যে আছে! অবশ্য সেই সব উসকানি আসবেই; তবুও ঘৃণ্য সেই লোক, যার মধ্য দিয়ে সেই উসকানি আসে!
8 “তোমার হাত কিংবা পা যদি তোমাকে গুনাহের পথে টানে তবে তা কেটে ফেলে দাও। দুই হাত ও দুই পা নিয়ে চিরকালের আগুনে পড়বার চেয়ে বরং নুলা বা খোঁড়া হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল।
9 তোমার চোখ যদি তোমাকে গুনাহের পথে টানে তবে তা উপ্ড়ে ফেলে দাও। দুই চোখ নিয়ে জাহান্নামের আগুনে পড়বার চেয়ে বরং কানা হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল।
10 “দেখো, তোমরা যেন এই ছোটদের মধ্যে একজনকেও তুচ্ছ না কর। আমি তোমাদের বলছি, বেহেশতে তাদের ফেরেশতারা সব সময় আমার বেহেশতী পিতার মুখ দেখছেন।
11 “যা হারিয়ে গেছে তা উদ্ধার করবার জন্য ইব্ন্তেআদম এসেছেন।
12 তোমরা কি মনে কর? ধর, একজন লোকের একশোটা ভেড়া আছে। সেগুলোর মধ্যে যদি একটা ভুল পথে চলে যায় তবে সে কি নিরানব্বইটা পাহাড়ের ধারে রেখে সেই ভেড়াটা খুঁজতে যায় না?
13 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি সে সেটা পায় তবে যে নিরানব্বইটা ভুল পথে যায় নি, তাদের চেয়ে যেটা ভুল পথে চলে গিয়েছিল তার জন্য সে আরও বেশী আনন্দ করে।
14 ঠিক সেইভাবে, তোমাদের বেহেশতী পিতার ইচ্ছা নয় যে, এই ছোটদের মধ্যে একজনও নষ্ট হয়।
15 “তোমার ভাই যদি তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় করে তবে তার কাছে গিয়ে যখন আর কেউ থাকবে না তখন তার দোষ দেখিয়ে দিয়ো। যদি সে তোমার কথা শোনে তবে তুমি তো তোমার ভাইকে ফিরে পেলে।
16 কিন্তু যদি সে না শোনে তবে অন্য দু’একজনকে তোমার সংগে নিয়ে যেয়ো, যেন দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথায় এই সব বিষয় সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
17 যদি সে তাদের কথা না শোনে তবে জামাতকে বোলো। সে যদি জামাতের কথাও না শোনে তবে সে তোমার কাছে অ-ইহুদী বা খাজনা-আদায়কারীর মত হোক।
18 “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা দুনিয়াতে যা বাঁধবে তা বেহেশতেও বেঁধে রাখা হবে, আর যা খুলবে তা বেহেশতেও খুলে দেওয়া হবে।
19 “আমি তোমাদের আরও বলছি, তোমাদের মধ্যে দু’জন যদি একমত হয়ে কোন বিষয়ে মুনাজাত করে তবে আমার বেহেশতী পিতা তোমাদের জন্য তা করবেন,
20 কারণ যেখানে দুই বা তিনজন আমার নামে জমায়েত হয় সেখানে আমি তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকি।”
21 তখন পিতর এসে ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করলে আমি কতবার তাকে মাফ করব? সাত বার কি?”
22 ঈসা তাঁকে বললেন, “কেবল সাত বার নয়, কিন্তু আমি তোমাকে সত্তর গুণ সাত বার পর্যন্ত মাফ করতে বলি।
23 “দেখ, বেহেশতী রাজ্য এমন একজন বাদশাহ্র মত যিনি তাঁর কর্মচারীদের কাছে হিসাব চাইলেন।
24 তিনি যখন হিসাব নিতে শুরু করলেন তখন তাদের মধ্য থেকে এমন একজন কর্মচারীকে আনা হল, বাদশাহ্র কাছে যার লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ ছিল।
25 তার ঋণ শোধ করবার ক্ষমতা ছিল না। তখন সেই মালিক হুকুম করলেন যেন সেই লোককে এবং তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে আর তার যা কিছু আছে সমস্ত বিক্রি করে পাওনা আদায় করা হয়।
26 তাতে সেই কর্মচারী মাটিতে পড়ে মালিকের পা ধরে বলল, ‘হুজুর, আমার উপর ধৈর্য ধরুন, আপনাকে আমি সমস্তই শোধ করে দেব।’
27 তখন মালিক মমতা করে সেই কর্মচারীকে ছেড়ে দিলেন এবং তার ঋণ মাফ করে দিলেন।
28 “পরে সেই কর্মচারী বাইরে গিয়ে তার একজন সংগী-কর্মচারীকে দেখতে পেল। তার কাছে সেই সংগী-কর্মচারীটির প্রায় একশো টাকা ঋণ ছিল। সেই কর্মচারী তার সংগীর গলা টিপে ধরে বলল, ‘তুই যে টাকা ধার করেছিস্ তা শোধ কর্।’
29 “সংগী-কর্মচারীটি তখন তার পায়ে পড়ে তাকে অনুরোধ করে বলল, ‘আমার উপর ধৈর্য ধর, আমি সব শোধ করে দেব।’
30 কিন্তু সে রাজী হল না বরং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে জেলখানায় আটক রাখল।
31 “এই সব ঘটনা দেখে তার অন্য সংগী-কর্মচারীরা খুব দুঃখিত হল। তারা গিয়ে তাদের মালিকের কাছে সব কথা জানাল।
32 তখন মালিক সেই কর্মচারীকে ডেকে বললেন, ‘দুষ্ট কর্মচারী! তুমি আমাকে অনুরোধ করেছিলে বলে আমি তোমার সব ঋণ মাফ করেছিলাম।
33 আমি যেমন তোমাকে দয়া করেছিলাম তেমনি তোমার সংগী-কর্মচারীকে দয়া করা কি তোমার উচিত ছিল না?’
34 পরে তার মালিক রাগ করে তার সমস্ত ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কষ্ট দেবার জন্য জেলখানার লোকদের হাতে তুলে দিলেন।
35 “ঠিক সেইভাবে, তোমরা প্রত্যেকে যদি তোমাদের ভাইকে অন্তর দিয়ে মাফ না কর তবে আমার বেহেশতী পিতাও তোমাদের উপর এই রকম করবেন।”