1 পরে মোয়াবীয়রা ও অম্মোনীয়রা এবং তাদের সঙ্গে কয়েকজন মায়োনীয় লোক যিহোশাফটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এল।
2 তখন কিছু সংখ্যক লোক এসে যিহোশাফটকে এই সংবাদ দিল, সাগরের ওপারস্থ অরাম থেকে বিপুল সংখ্যক লোক আপনার বিরুদ্ধে আসছে; দেখুন, তারা হৎসসোন-তামরে, অর্থাৎ ঐন্-গদীতে আছে।
3 তাতে যিহোশাফট ভয় পেয়ে মাবুদের অন্বেষণ করতে মনস্থ করলেন এবং এহুদার সর্বত্র রোজা ঘোষণা করিয়ে দিলেন।
4 আর এহুদার লোকেরা মাবুদের কাছে সাহায্য যাচ্ঞা করার জন্য একত্র হল; এহুদার সমস্ত নগর থেকে লোকেরা মাবুদের খোঁজ করতে এল।
5 পরে যিহোশাফট মাবুদের গৃহে নতুন প্রাঙ্গণের সম্মুখে এহুদা ও জেরুশালেমের সমাজের মাঝখানে দাঁড়ালেন,
6 আর বললেন, হে আমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্ মাবুদ, তুমি কি বেহেশতের আল্লাহ্ নও? তুমি কি জাতিদের সমস্ত রাজ্যের মালিক নও? আর শক্তি ও পরাক্রম তোমারই হাতে, তোমার বিপক্ষে দাঁড়াতে কারো সাধ্য নেই।
7 হে আমাদের আল্লাহ্, তুমিই কি তোমার লোক ইসরাইলের সম্মুখ থেকে দেশবাসীদের অধিকারচ্যুত কর নি? এবং তোমার বন্ধু ইব্রাহিমের বংশকে চিরকালের জন্য কি এই দেশ দাও নি?
8 আর তারা এই দেশে বাস করেছে এবং এই দেশে তোমার নামের জন্য একটি পবিত্র স্থান নির্মাণ করে বলেছে,
9 তলোয়ার বা বিচারসিদ্ধ দণ্ড, বা মহামারী, বা দুর্ভিক্ষস্বরূপ অমঙ্গল যখন আমাদের প্রতি ঘটবে, তখন আমরা এই গৃহের সম্মুখে, তোমারই সম্মুখে দণ্ডায়মান হব কেননা এই গৃহে তোমার নাম আছে এবং আমাদের সঙ্কটে আমরা তোমার কাছে কান্নাকাটি করবো, তাতে তুমি তা শুনে আমাদের নিস্তার করবে।
10 আর এখন দেখ, অম্মোনীয় ও মোয়াবীয়রা এবং সেয়ীর পর্বত-নিবাসীরা— যাদের দেশে তুমি ইসরাইলকে মিসর দেশ থেকে আসার সময়ে প্রবেশ করতে দাও নি; কিন্তু ইসরাইল ওদের কাছ থেকে অন্য পথে গিয়েছিল, ওদেরকে বিনষ্ট করে নি;
11 দেখ ওরা আমাদের কিরূপ অপকার করছে; তুমি যা আমাদেরকে ভোগ করতে দিয়েছ, তোমার সেই অধিকার থেকে আমাদেরকে তাড়িয়ে দিতে আসছে।
12 হে আমাদের আল্লাহ্ তুমি কি ওদের বিচার করবে না? আমাদের বিরুদ্ধে ঐ যে বড় দল আসছে, ওদের বিরুদ্ধে আমাদের তো নিজের কোন সামর্থ নেই; কি করতে হবে, তাও আমরা জানি না; আমরা কেবল তোমার দিকে চেয়ে আছি।
13 এভাবে শিশু, স্ত্রীলোক ও সন্তানদের সঙ্গে সমস্ত এহুদা মাবুদের সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হল।
14 আর সমাজের মধ্যে যহসীয়েল নামে এক জন লেবীয়ের উপরে মাবুদের রূহ্ আসলেন। তিনি আসফ-বংশজাত মত্তনিয়ের সন্তান যিয়েলের সন্তান বনায়ের সন্তান জাকারিয়ার পুত্র।
15 তখন তিনি বললেন, হে সমগ্র এহুদা, হে জেরুশালেম-নিবাসী সমস্ত লোক, আর হে বাদশাহ্ যিহোশাফট, শোন, মাবুদ তোমাদেরকে এই কথা বলেন, তোমরা ঐ বিশাল লোক জমায়েত দেখে ভয় কোরো না কিংবা নিরাশ হোয়ো না, কেননা এই যুদ্ধ তোমাদের নয় কিন্তু আল্লাহ্র।
16 তোমরা আগামীকাল ওদের বিরুদ্ধে নেমে যাও; দেখ, তারা সীস নামক আরোহণ-স্থান দিয়ে আসছে; তোমরা যিরূয়েল মরুভূমির সম্মুখে উপত্যকার অন্তভাগে তাদের পাবে।
17 এবার তোমাদের যুদ্ধ করতে হবে না; হে এহুদা ও জেরুশালেম, তোমরা শ্রেণীবদ্ধ হও, দাঁড়িয়ে থাক, আর তোমাদের সহবর্তী মাবুদ যে নিস্তার করবেন, তা দেখ। তোমরা ভয় কোরো না কিংবা নিরাশ হোয়ো না; আগামীকাল তাদের বিরুদ্ধে যাত্রা কর; কেননা মাবুদ তোমাদের সহবর্তী।
18 তখন যিহোশাফট ভূমিতে অধোমুখ হয়ে সেজ্দা করলেন এবং সমস্ত এহুদা ও জেরুশালেম-নিবাসীরা মাবুদের সম্মুখে সেজ্দা পড়ে মাবুদের মাবুদের এবাদত করলো।
19 পরে কহাৎ-বংশজাত ও কারুন-বংশজাত লেবীয়েরা অতি উচ্চৈঃস্বরে ইসরাইলের আল্লাহ্ মাবুদের প্রশংসা করতে উঠে দাঁড়ালো।
20 পরে তারা প্রত্যুষে উঠে তকোয় মরুভূমিতে যাত্রা করলো; তাদের যাত্রাকালে যিহোশাফট দাঁড়িয়ে বললেন, হে এহুদা, হে জেরুশালেম-নিবাসীরা, আমার কথা শোন; তোমরা তোমাদের আল্লাহ্ মাবুদের উপর বিশ্বাস কর, তাতে সুস্থির হবে; তাঁর নবীদের উপর বিশ্বাস কর, তাতে কৃতকার্য হবে।
21 আর তিনি লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে লোক নিযুক্ত করলেন, যেন তারা সৈন্যশ্রেণীর অগ্রভাগে গিয়ে মাবুদের উদ্দেশে কাওয়ালী ও পবিত্র শোভায় প্রশংসা করে এবং এই কথা বলে, “মাবুদের প্রশংসা-গজল কর, কেননা তাঁর অটল মহব্বত অনন্তকাল স্থায়ী”।
22 যখন তারা আনন্দ গান ও প্রশংসা করতে আরম্ভ করলো, তখন মাবুদ এহুদার বিরুদ্ধে আগত অম্মোনীয় ও মোয়াবীয়দের ও সেয়ীর পর্বতীয় লোকদের বিরুদ্ধে লুকিয়ে থাকা সৈন্যদের নিযুক্ত করলেন; তাতে তারা পরাজিত হল।
23 আর অম্মোনীয়রা ও মোয়াবীয়রা নিঃশেষে হত্যা ও বিনাশ করার জন্য সেয়ীর পর্বত-নিবাসীদের বিরুদ্ধে উঠলো, আর সেয়ীর-নিবাসীদেরকে সংহার করার পর পরস্পর এক জন অন্যের বিনাশ সাধনে সাহায্য করলো।
24 তখন এহুদার লোকেরা মরুভূমিতে উঁচু পাহারা-ঘরে উপস্থিত হয়ে লোক সমারোহের প্রতি দৃষ্টিপাত করলো, আর দেখ, ভূমিতে কেবলমাত্র লাশ পড়ে আছে, কেউই পালিয়ে বাঁচতে পারে নি।
25 তখন যিহোশাফট ও তাঁর লোকেরা তাদের লুট করতে গিয়ে তাদের মধ্যে শবের সঙ্গে প্রচুর ধন-সম্পদ ও বহুমূল্য রত্ন দেখতে পেলেন; তাঁরা নিজেদের জন্য এত ধন সংগ্রহ করলেন যে, সমস্ত নিয়ে যেতে পারলেন না; সেই লুণ্ঠিত বস্তু এত বেশি ছিল যে, তা নিয়ে যেতে তাঁদের তিন দিন লাগল।
26 আর চতুর্থ দিনে তাঁরা বরাখা-উপত্যকায় সমাগত হলেন; কেননা সেই স্থানে তারা মাবুদের প্রশংসা করলো, এই কারণ আজ পর্যন্ত সেই স্থান বরাখা [শুকরিয়া] উপত্যকা নামে খ্যাত।
27 পরে এহুদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক এবং তাদের অগ্রভাগে গমনকারী যিহোশাফট আনন্দপূর্বক জেরুশালেমে যাবার জন্য ফিরে গেলেন, কেননা মাবুদ তাঁদের দুশমনদের বিরুদ্ধে তাঁদেরকে বিজয়ী করেছিলেন।
28 আর তাঁরা নেবল, বীণা ও তূরী বাজাতে বাজাতে জেরুশালেমে এসে মাবুদের গৃহে গেলেন।
29 আর মাবুদ ইসরাইলের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, এই জনরব অন্য দেশীয় সকল রাজ্যের লোকে শুনলে আল্লাহ্ থেকে ভয় তাদের উপরে নেমে এলো।
30 এভাবে যিহোশাফটের রাজ্য সুস্থির হল, তাঁর আল্লাহ্ সমস্ত দিক থেকেই তাঁকে বিশ্রাম দিলেন।
31 যিহোশাফট এহুদার উপরে রাজত্ব করলেন; তিনি পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে রাজত্ব করতে আরম্ভ করেন; এবং পঁচিশ বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। তাঁর মায়ের নাম অসূবা, তিনি শিল্হির কন্যা।
32 যিহোশাফট তাঁর পিতা আসার পথে চলতেন, সেই পথ থেকে ফিরতেন না, মাবুদের দৃষ্টিতে যা নায্য তা-ই করতেন।
33 তবুও সমস্ত উচ্চস্থলী দূরীকৃত হল না এবং লোকেরা তখনও তাঁদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্র প্রতি নিজ নিজ অন্তঃকরণ সুস্থির করলো না।
34 যিহোশাফটের অবশিষ্ট কাজের বৃত্তান্ত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, ইসরাইলের বাদশাহ্দের ইতিহাস-পুস্তকের অন্তর্গত হনানির পুত্র যেহূর কিতাবে লেখা আছে।
35 পরে এহুদার বাদশাহ্ যিহোশাফট ইসরাইলের বাদশাহ্ অহসিয়ের সঙ্গে যোগ দিলেন, সেই ব্যক্তি দুরাচারী ছিলেন;
36 তিনি তর্শীশে যাবার জাহাজ নির্মাণার্থে তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন, আর তাঁরা ইৎসিয়োন-গেবরে সেই জাহাজগুলো নির্মাণ করলেন।
37 তখন মারেশা-নিবাসী দোদাবাহূর পুত্র ইলীয়েষর যিহোশাফটের বিরুদ্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রচার করলেন, আপনি অহসিয়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, এজন্য মাবুদ আপনার সমস্ত কাজ ভেঙে ফেললেন। আর ঐ সমস্ত জাহাজ ভেঙ্গে গেল, তর্শীশে যেতে পারল না।