1 এর পরে এই ঘটনা হল; দাউদের পুত্র অবশালোমের তামর নামে সুন্দরী একটি বোন ছিল; দাউদের পুত্র অম্নোন তাকে ভালবাসল।
2 অম্নোন এমন আকুল হল যে, তার বোন তামরের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লো, কেননা সে কুমারী ছিল এবং অম্নোন তার প্রতি কিছু করা দুঃসাধ্য বোধ করলো।
3 কিন্তু দাউদের ভাই শিমিয়ের পুত্র যোনাদব নামে অম্নোনের এক জন বন্ধু ছিল; সে খুবই চালাক ছিল।
4 সে অম্নোনকে বললো, রাজপুত্র। তুমি দিন দিন এমন রোগা হয়ে যাচ্ছ কেন? আমাকে কি বলবে না? অম্নোন তাকে বললো, আমি আমার ভাই অবশালোমের বোন তামরকে ভালবাসি।
5 যোনাদব বললো, তুমি তোমার পালঙ্কের উপরে শয়ন করে অসুখের ভান কর; পরে তোমার পিতা তোমাকে দেখতে আসলে তাঁকে বলো, মেহেরবানী করে আমার বোন তামরকে আমার কাছে আসতে হুকুম করুন, সে আমাকে রুটি খেতে দিক; এবং আমি দেখে যেন তার হাতে ভোজন করি, এজন্য আমার সাক্ষাতেই খাদ্য প্রস্তুত করুক।
6 পরে অম্নোন অসুস্থতার ভান করে পড়ে রইলো; তাতে বাদশাহ্ তাকে দেখতে আসলে অম্নোন বাদশাহ্কে বললো, আরজ করি, আমার বোন তামর এসে আমার সাক্ষাতে কয়েকটি পিঠা প্রস্তুত করে দিক; আমি তার হাতে ভোজন করবো।
7 তখন দাউদ তামরের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে বললেন, তুমি একবার তোমার ভাই অম্নোনের বাড়িতে গিয়ে তাকে কিছু খাদ্য প্রস্তুত করে দাও।
8 অতএব তামর তার ভাই অম্নোনের বাড়িতে গেল; তখন সে শুয়ে ছিল। পরে তামর সুজি নিয়ে ছেনে তার সাক্ষাতে পিঠা প্রস্তুত করে পাক করলো;
9 আর তাওয়া নিয়ে গিয়ে তার সম্মুখে ঢেলে দিল, কিন্তু সে ভোজনে অসম্মত হল। অম্নোন বললো, আমার কাছ থেকে সকল লোক বাইরে যাক। তাতে সকলে তার কাছ থেকে বাইরে গেল।
10 তখন অম্নোন তামরকে বললো, খাদ্য সামগ্রী এই কুঠরীর মধ্যে আন; আমি তোমার হাতে ভোজন করবো। তাতে তামর তার তৈরি ঐ পিঠা নিয়ে কুঠরীর মধ্যে তার ভাই অম্নোনের কাছে গেল।
11 পরে সে তাকে ভোজন করাতে তার কাছে তা আনলে অম্নোন তাকে ধরে বললো, হে আমার বোন, এসো, আমার সঙ্গে শয়ন কর।
12 সে জবাবে বললো, হে আমার ভাই, না, না আমার ইজ্জত নষ্ট করো না, ইসরাইলের মধ্যে এমন কাজ করা উচিত নয়; তুমি এই মূঢ়তার কাজ করো না।
13 আমি কোথায় আমার কলঙ্ক বহন করবো? আর তুমিও ইসরাইলের মধ্যে এক জন মূঢ়ের সমান হবে। অতএব আরজ করি, বরং বাদশাহ্র কাছে বল, তিনি তোমার হাতে আমাকে দিতে অসম্মত হবেন না।
14 কিন্তু অম্নোন তার কথা শুনতে চাইল না; নিজে তামরের চেয়ে বলবান হওয়াতে তার ইজ্জত নষ্ট করলো, তার সঙ্গে শয়ন করলো।
15 পরে অম্নোন তাকে ভীষণ ঘৃণা করতে লাগল; বস্তুত সে তাকে যেরকম মহব্বত করেছিল, তার চেয়ে বেশি ঘৃণা করতে লাগল; আর অম্নোন তাকে বললো, ওঠ, চলে যাও।
16 সে তাকে বললো, তা করো না, কেননা আমার সঙ্গে কৃত তোমার প্রথম দোষের চেয়ে আমাকে বের করে দেওয়া, এই মহাদোষ আরও মন্দ। কিন্তু অম্নোন তার কথা শুনতে চাইল না।
17 সে তার পরিচারক যুবককে ডেকে বললো, একে আমার কাছ থেকে বের করে দাও, পরে দরজায় খিল লাগিয়ে দাও।
18 সেই কন্যার গায়ে লম্বা কাপড় ছিল, কেননা কুমারী রাজকন্যারা ঐ রকম কাপড় পরতো। অম্নোনের পরিচারক তাকে বের করে দিয়ে পরে দ্বারে খিল লাগিয়ে দিল।
19 তখন তামর নিজের মাথায় ভস্ম দিল এবং তার গায়ের ঐ লম্বা কাপড় ছিঁড়ে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
20 আর তার সহোদর অবশালোম তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তোমার ভাই অম্নোন কি তোমার ইজ্জত নষ্ট করেছে? কিন্তু এখন হে আমার বোন চুপ থাক, সে তোমার ভাই; তুমি এই বিষয়ে বিমনা হয়ো না। সেদিন থেকে তামর বিষণ্নভাবে তার ভাই অবশালোমের বাড়িতে থাকতে লাগল।
21 কিন্তু বাদশাহ্ দাউদ এসব কথা শুনে অতিশয় ক্রুদ্ধ হলেন।
22 আর অবশালোম অম্নোনকে কাছে ভাল-মন্দ কিছুই বললো না, কেননা তার সহোদরা তামরের ইজ্জত নষ্ট করাতে অবশালোম অম্নোনকে ঘৃণা করতে লাগল।
23 সমপূর্ণ দু’বছর পরে আফরাহীমের নিকটস্থ বাল্-হাৎসোরে অবশালোমের ভেড়া পালের লোমকাটা হচ্ছিল; এবং অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে দাওয়াত করলো।
24 আর অবশালোম বাদশাহ্র কাছে এসে বললো, দেখুন, আপনার এই গোলামের ভেড়ার পালের লোমকাটা হচ্ছে; অতএব আরজ করি, বাদশাহ্ ও বাদশাহ্র গোলামেরা আপনার গোলামের সঙ্গে আগমন করুন।
25 বাদশাহ্ অবশালোমকে বললেন, হে আমার পুত্র, তা নয়, আমরা সকলে যাব না, পাছে তোমার ভারস্বরূপ হই। যদিও সে পীড়াপীড়ি করলো, তবু বাদশাহ্ যেতে সম্মত হলেন না, কিন্তু তাকে দোয়া করলেন।
26 তখন অবশালোম বললো, যদি তা না হয়, তবে আমার ভাই অম্নোনকে আমাদের সঙ্গে যেতে দিন; বাদশাহ্ তাকে বললেন, সে কেন তোমার সঙ্গে যাবে?
27 কিন্তু অবশালোম তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে বাদশাহ্ অম্নোন ও তার সঙ্গে সমস্ত রাজপুত্রকে যেতে দিলেন।
28 পরে অবশালোম তার ভৃত্যদের এই হুকুম দিল, দেখো, আঙ্গুর-রসে অম্নোনের অন্তর প্রফুল্ল হলে যখন আমি তোমাদের বলবো, অম্নোনকে মার, তখন তোমরা তাকে হত্যা করো, ভয় পেয়ো না। আমি কি তোমাদের হুকুম দেই নি? তোমরা সাহস কর, বলবান হও।
29 পরে অবশালোমের ভৃত্যরা অম্নোনের প্রতি অবশালোমের আদেশমত কাজ করলো। তখন রাজপুত্ররা সকলে উঠে নিজ নিজ ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে গেল।
30 তারা পথে ছিল, এমন সময়ে দাউদের কাছে এই সংবাদ এলো যে, অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে হত্যা করেছে, তাদের এক জনও অবশিষ্ট নেই।
31 তখন বাদশাহ্ উঠে তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ভূমিতে লম্বমান হয়ে পড়লেন এবং তাঁর গোলামেরা সকলে নিজ নিজ কাপড় ছিঁড়ে তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে রইলো।
32 তখন দাউদের ভাই শিমিয়ের পুত্র যোনাদব বললো, আমার মালিক মনে করবেন না যে, সমস্ত রাজকুমার নিহত হয়েছে; কেবল অম্নোন মারা পড়েছে, কেননা যেদিন সে অবশালোমের বোন তামরের ইজ্জত নষ্ট করেছে, সেদিন থেকে অবশালোম কর্তৃক এটা স্থির হয়েছিল।
33 অতএব সমস্ত রাজপুত্র মারা গেছে ভেবে আমার মালিক বাদশাহ্ শোক করবেন না; কেবল অম্নোন মারা গেছে।
34 কিন্তু অবশালোম পালিয়ে গিয়েছিল। আর যুবক প্রহরী চোখ তুলে নিরীক্ষণ করলো, আর দেখ, পর্বতের পাশ থেকে তার পিছনের দিকের পথ দিয়ে অনেক লোক আসছে।
35 আর যোনাদব বাদশাহ্কে বললো, দেখুন রাজপুত্ররা আসছে, আপনার গোলাম যা বলেছিল, তা-ই ঠিক হল।
36 তার কথা শেষ হওয়া মাত্র, দেখ, রাজপুত্ররা উপস্থিত হয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং বাদশাহ্ ও তাঁর সমস্ত গোলামও ভীষণভাবে কাঁদতে লাগলেন।
37 কিন্তু অবশালোম পালিয়ে গশূরের বাদশাহ্ অম্মীহূরের পুত্র তল্ময়ের কাছে গেল, আর দাউদ প্রতিদিন তাঁর পুত্রের জন্য শোক করতে লাগলেন।
38 অবশালোম পালিয়ে গশূরে গিয়ে সেই স্থানে তিন বছর প্রবাস করলো।
39 পরে বাদশাহ্ দাউদ অবশালোমের কাছে যাবার আকাঙক্ষা প্রকাশ করলেন; কেননা অম্নোন মারা গেছে জেনে তিনি তার বিষয়ে সান্ত্বনা পেয়েছিলেন।