1 এর অনেক দিন পরে, বৃষ্টি না হওয়ার তৃতীয় বছরের সময় সদাপ্রভু এলিয়কে বললেন, “তুমি গিয়ে আহাবকে দেখা দাও। আমি দেশে বৃষ্টি পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
2 কাজেই এলিয় আহাবকে দেখা দিতে গেলেন।তখন শমরিয়াতে ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছিল।
3 আহাব ওবদিয়কে ডেকে পাঠালেন। রাজবাড়ীর দেখাশোনার ভার ওবদিয়ের উপরে ছিল। সদাপ্রভুর উপর ওবদিয়ের ভক্তিপূর্ণ বিশ্বাস খুব বেশী ছিল।
4 ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর নবীদের মেরে ফেলছিলেন তখন ওবদিয় একশোজন নবীকে নিয়ে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে দু’টা গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাঁদের খাবার ও জলের যোগান দিতেন।
5 ওবদিয় আসলে পর আহাব তাঁকে বললেন, “তুমি দেশের সব ফোয়ারা ও উপত্যকার কাছে যাও। ঘোড়া আর খচ্চরগুলোর প্রাণ রক্ষার জন্য হয়তো কিছু ঘাস পাওয়া যাবে। তাতে আমাদের কোন পশুকে মেরে ফেলতে হবে না।”
6 তাঁরা দু’জন ঘুরে দেখবার জন্য দেশটা ভাগ করে নিলেন। আহাব নিজে গেলেন এক দিকে আর ওবদিয় গেলেন অন্য দিকে।
7 ওবদিয় পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় এলিয়ের সংগে তাঁর দেখা হল। ওবদিয় তাঁকে চিনতে পেরে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “আমার প্রভু এলিয়, এ কি সত্যিই আপনি?”
8 উত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমিই। তুমি তোমার মনিবকে গিয়ে জানাও যে, এলিয় এখানে আছেন।”
9 ওবদিয় বললেন, “আমি কি অন্যায় করেছি যে, আপনি আপনার দাস আমাকে মেরে ফেলবার জন্য আহাবের হাতে তুলে দিচ্ছেন?
10 আপনার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, এমন কোন জাতি বা রাজ্য নেই যেখানে আমার মনিব আপনার খোঁজে লোক পাঠান নি। সেই সব জাতি বা রাজ্য যখনই ঘোষণা করেছে যে, আপনি সেখানে নেই তখনই তিনি তাদের দিয়ে এই শপথ করিয়ে নিয়েছেন যে, তারা সত্যিই আপনাকে খুঁজে পায় নি।
11 আর এখন আপনি আমাকে আমার মনিবের কাছে গিয়ে বলতে বলছেন যে, এলিয় এখানে আছেন।
12 আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেলে সদাপ্রভুর আত্মা আপনাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন যা আমি জানব না। আমি গিয়ে আহাবকে বললে পর যদি তিনি আপনাকে খুঁজে না পান তবে তিনি আমাকে মেরে ফেলবেন। কিন্তু অল্প বয়স থেকেই আপনার দাস আমি সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে আসছি।
13 ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর নবীদের মেরে ফেলছিলেন তখন আমি কি করেছি তা কি আমার প্রভু শোনেন নি? সদাপ্রভুর নবীদের একশোজনকে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে দু’টা গুহায় লুকিয়ে রেখেছি এবং তাদের খাবার ও জলের যোগান দিয়েছি।
14 আর আপনি এখন আমাকে আমার মনিবের কাছে গিয়ে বলতে বলছেন যে, এলিয় এখানে আছেন। তিনি তো আমাকে মেরে ফেলবেন।”
15 এলিয় বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি, অর্থাৎ সর্বক্ষমতার অধিকারী জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি আজই আহাবের সামনে নিশ্চয় উপস্থিত হব।”
16 তখন ওবদিয় আহাবের সংগে দেখা করে কথাটা তাঁকে বললেন আর আহাব এলিয়ের সংগে দেখা করতে গেলেন।
17 এলিয়কে দেখে আহাব বললেন, “হে ইস্রায়েলের কাঁটা, এ কি তুমি?”
18 উত্তরে এলিয় বললেন, “আমি কাঁটা নই, কিন্তু আপনি ও আপনার বাবার বংশের লোকেরাই ইস্রায়েলের কাঁটা। আপনারা সদাপ্রভুর আদেশ ত্যাগ করে বাল দেবতাদের পিছনে গিয়েছেন।
19 এখন লোক পাঠিয়ে ইস্রায়েলের সবাইকে কর্মিল পাহাড়ে আমার কাছে জড়ো করুন। ঈষেবলের টেবিলে বাল দেবতার যে চারশো পঞ্চাশজন নবী এবং আশেরার চারশোজন নবী খাওয়া-দাওয়া করে তাদের নিয়ে আসুন।”
20 তখন আহাব ইস্রায়েলের সব জায়গায় খবর পাঠিয়ে দিলেন এবং কর্মিল পাহাড়ে ঐ নবীদের জড়ো করলেন।
21 এলিয় লোকদের সামনে গিয়ে বললেন, “আর কতদিন তোমরা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলবে? যদি সদাপ্রভুই ঈশ্বর হন তবে তাঁর সেবা কর, আর যদি বাল দেবতাই ঈশ্বর হন তবে তাঁর সেবা কর।” কিন্তু লোকেরা কোন উত্তর দিল না।
22 তখন এলিয় তাদের বললেন, “সদাপ্রভুর নবীদের মধ্যে কেবল আমিই বাকী আছি, কিন্তু বাল দেবতার নবী রয়েছে সাড়ে চারশো জন।
23 এখন আমাদের জন্য দু’টা ষাঁড় নিয়ে আসা হোক। ওরা নিজেদের জন্য একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে কাঠের উপর রাখুক, কিন্তু তাতে আগুন না দিক। আমি অন্য ষাঁড়টা নিয়ে কেটে প্রস্তুত করে কাঠের উপরে রাখব কিন্তু তাতে আগুন দেব না।
24 তারপর ওরা ওদের দেবতাকে ডাকবে আর আমি ডাকব সদাপ্রভুকে। যিনি আগুন পাঠিয়ে এর উত্তর দেবেন তিনিই ঈশ্বর।”এই কথা শুনে সবাই বলল, “আপনি ভালই বলেছেন।”
25 এলিয় বাল-দেবতার নবীদের বললেন, “তোমরা একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে প্রথমে সেটা কেটে প্রস্তুত করে নাও, কারণ তোমরা সংখ্যায় অনেক। তারপর তোমরা তোমাদের দেবতাকে ডাক, কিন্তু আগুন দেবে না।”
26 যে ষাঁড়টা তাদের দেওয়া হল তারা সেটা কেটে প্রস্তুত করে নিল।তারপর তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাল দেবতাকে ডাকতে লাগল। তারা জোরে জোরে বলতে লাগল, “হে বালদেব, আমাদের উত্তর দাও।” কিন্তু কোন সাড়া মিলল না, কেউ উত্তর দিল না। যে বেদী তারা তৈরী করেছিল তার চারপাশে তারা নাচতে লাগল।
27 দুপুর বেলা এলিয় তাদের ঠাট্টা করে বললেন, “জোরে চিৎকার কর, সে তো দেবতা। হয়তো সে গভীর চিন্তা করছে, না হয় পায়খানায় গেছে, না হয় পথে চলেছে। হয়তো সে ঘুমাচ্ছে, তাকে জাগাতে হবে।”
28 কাজেই তারা আরও জোরে চিৎকার করতে লাগল এবং তাদের নিয়ম অনুসারে দেহে রক্তের ধারা বয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ছোরা ও কাঁটা দিয়ে নিজেদের আঘাত করতে থাকল।
29 দুপুর গড়িয়ে গেল আর বিকাল বেলার পশু-উৎসর্গের সময় পর্যন্ত ভাবে-ধরা লোকের মত তারা আবোল-তাবোল বলতেই থাকল। কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না, কেউ উত্তর দিল না, কেউ মনোযোগও দিল না।
30 তখন এলিয় সমস্ত লোকদের বললেন, “তোমরা আমার কাছে এস।” তারা তাঁর কাছে গেল। এলিয় সদাপ্রভুর ভেংগে-পড়া বেদী মেরামত করে নিলেন।
31 তিনি যাকোবের ছেলেদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য একটা করে বারোটা পাথর নিলেন। এই যাকোবকেই সদাপ্রভু বলেছিলেন, “তোমার নাম হবে ইস্রায়েল।”
32 সেই পাথরগুলো দিয়ে এলিয় সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং তার চারপাশে এমন নালা কাটলেন যার মধ্যে বারো কেজি বীজে ভরা একটা থলি বসানো যায়।
33 তারপর তিনি বেদীর উপরে কাঠ সাজিয়ে ষাঁড়টা টুকরা টুকরা করে সেই কাঠের উপর রাখলেন এবং তাদের বললেন, “তোমরা চারটা কলসী জলে ভরে এই পোড়ানো-উৎসর্গের মাংস ও কাঠের উপরে ঢেলে দাও।”
34 তারপর তিনি বললেন, “আবার কর।” লোকেরা তা-ই করল।তিনি আদেশ দিলেন, “তৃতীয়বার কর।” তারা তৃতীয়বার তা-ই করল।
35 তখন বেদীর উপর থেকে জল গড়িয়ে নালা ভরতি হয়ে গেল।
36 বিকালের উৎসর্গের সময় হলে পর নবী এলিয় সামনে এগিয়ে এসে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, অব্রাহাম, ইস্হাক ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আজকে তুমি জানিয়ে দাও যে, ইস্রায়েলের মধ্যে তুমিই ঈশ্বর এবং আমি তোমার দাস, আর তোমার আদেশেই আমি এই সব করেছি।
37 হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দাও, উত্তর দাও, যাতে এই সব লোকেরা জানতে পারে যে, হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর আর তুমিই তাদের মন ফিরিয়ে এনেছ।”
38 তখন উপর থেকে সদাপ্রভুর আগুন পড়ে উৎসর্গের মাংস, কাঠ, পাথর ও মাটি পুড়িয়ে ফেলল এবং নালার জলও শুষে নিল।
39 এ দেখে লোকেরা সবাই মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে বলল, “সদাপ্রভুই ঈশ্বর, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।”
40 তখন এলিয় তাদের এই আদেশ দিলেন, “বাল দেবতার নবীদের ধর। তাদের একজনকেও পালিয়ে যেতে দিয়ো না।” তখন লোকেরা তাদের ধরে ফেলল। এলিয় তাদের কীশোন উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদের মেরে ফেললেন।
41 তারপর এলিয় আহাবকে বললেন, “আপনি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করুন, কারণ ভীষণ বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে।”
42 এতে আহাব খাওয়া-দাওয়া করতে গেলেন, কিন্তু এলিয় গিয়ে কর্মিল পাহাড়ের উপরে উঠলেন। তিনি মাটিতে হাঁটু পেতে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ রাখলেন।
43 পরে তিনি তাঁর চাকরকে বললেন, “তুমি গিয়ে সাগরের দিকে চেয়ে দেখ।”সে গিয়ে দেখে বলল, “ওখানে কিছু নেই।” সাতবার এলিয় তাকে ফিরে গিয়ে দেখতে বললেন।
44 সপ্তম বারে চাকরটি এসে বলল, “মানুষের হাতের মত ছোট একটা মেঘ সমুদ্র থেকে উঠছে।”তখন এলিয় তাকে বললেন, “তুমি গিয়ে আহাবকে বল যেন তিনি তাঁর রথ ঠিক করে নিয়ে চলে যান, নাহলে বৃষ্টি তাঁকে যেতে বাধা দেবে।”
45 এর মধ্যে আকাশ মেঘে কালো হয়ে গেল, বাতাস উঠল এবং ভীষণ বৃষ্টি এসে গেল। আহাব রথে করে যিষ্রিয়েলে রওনা হলেন।
46 তখন সদাপ্রভুর শক্তি এলিয়ের উপর আসল। তিনি তাঁর কাপড়খানা কোমর-বাঁধনিতে গুঁজে নিয়ে আহাবের আগে আগে দৌড়ে যিষ্রিয়েলে গেলেন।