1 এক দিন শিষ্য-নবীরা ইলীশায়কে বললেন, “দেখুন, যে জায়গায় আমরা আপনার সংগে বসে আলোচনা করি সেই জায়গাটা আমাদের জন্য খুবই ছোট।
2 আপনি অনুমতি দিলে আমরা যর্দন নদীর কাছে গিয়ে প্রত্যেকে একটা করে খুঁটি যোগাড় করে নিয়ে সেখানে আমাদের জন্য একটা থাকবার জায়গা তৈরী করব।”তিনি বললেন, “আচ্ছা, যাও।”
3 তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “আপনিও আপনার দাসদের সংগে চলুন।”উত্তরে ইলীশায় বললেন, “আচ্ছা, চল।”
4 এই বলে তিনি তাঁদের সংগে গেলেন।তাঁরা যর্দনের কাছে গিয়ে গাছ কাটতে লাগলেন।
5 তাঁদের মধ্যে একজন যখন গাছ কাটছিলেন তখন তাঁর কুড়ালের লোহার ফলাটা জলের মধ্যে পড়ে গেল। তিনি চিৎকার করে বললেন, “হায়, হায়! হে আমার প্রভু, ওটা যে আমি ধার করে এনেছিলাম।”
6 তখন ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করলেন, “ওটা কোথায় পড়েছে?” তিনি জায়গাটা দেখিয়ে দিলে পর ইলীশায় একটা কাঠ কেটে নিয়ে সেখানে ছুঁড়ে ফেললেন এবং তাতে লোহার ফলাটা ভেসে উঠল।
7 তখন তিনি বললেন, “ওটা তুলে নাও।” তাই লোকটি হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিলেন।
8 সেই সময় অরামের রাজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তিনি তাঁর সেনাপতিদের সংগে পরামর্শ করে বললেন, “অমুক অমুক জায়গায় আমি ছাউনি ফেলব।”
9 তখন ঈশ্বরের লোক ইস্রায়েলের রাজাকে বলে পাঠালেন, “সাবধান, অমুক জায়গায় যাবেন না, কারণ অরামীয়েরা সেখানে যাচ্ছে।”
10 এতে ইস্রায়েলের রাজা ঈশ্বরের লোকের নির্দেশ-করা জায়গাটায় লোক পাঠিয়ে লোকদের সাবধান করে দিলেন। এইভাবে রাজা বারবার নিজেকে রক্ষা করতেন।
11 এতে অরামের রাজা ভীষণ রেগে গেলেন। তাঁর সেনাপতিদের ডেকে তিনি বললেন, “বল, আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষে রয়েছে?”
12 তাঁর সেনাপতিদের মধ্যে একজন বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাদের মধ্যে কেউই না; কিন্তু আপনি শোবার ঘরে যে কথা বলেন সেই কথা পর্যন্ত ইস্রায়েলের নবী ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে বলে দেন।”
13 তখন রাজা এই আদেশ দিলেন, “সে কোথায় আছে তোমরা গিয়ে তা খুঁজে বের কর যাতে লোক পাঠিয়ে আমি তাকে ধরে আনতে পারি।” পরে খবর আসল যে, তিনি দোথনে আছেন।
14 রাজা তখন ঘোড়া, রথ ও একটা বড় সৈন্যদল সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। তারা রাতের বেলায় গিয়ে শহরটা ঘেরাও করল।
15 পরের দিন ভোরে ঈশ্বরের লোকের চাকর উঠে যখন বাইরে গেল তখন সে দেখতে পেল ঘোড়া ও রথ নিয়ে একদল সৈন্য শহর ঘেরাও করে ফেলেছে। সেই চাকর তখন বলল, “হায়, হায়! হে আমার প্রভু, আমরা কি করব?”
16 উত্তরে নবী বললেন, “ভয় কোরো না। যারা আমাদের সংগে আছে তারা ওদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী।”
17 তারপর ইলীশায় এই প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, তার চোখ খুলে দাও যেন সে দেখতে পায়।” তখন সদাপ্রভু সেই চাকরের চোখ খুলে দিলেন। সে চেয়ে দেখতে পেল ইলীশায়ের চারপাশে পাহাড়গুলো আগুনের রথ ও ঘোড়ায় ভরা।
18 শত্রুরা যখন ইলীশায়ের দিকে নেমে আসছিল তখন তিনি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, “এই লোকগুলোকে তুমি আলোর ঝলকে অন্ধ করে দাও।” ইলীশায়ের প্রার্থনা অনুসারে সদাপ্রভু তাদের অন্ধ করে দিলেন।
19 ইলীশায় তাদের বললেন, “এটা সেই রাস্তাও নয় এবং সেই শহরও নয়। তোমরা আমার পিছনে পিছনে এস; যে লোকের খোঁজ তোমরা করছ আমি তার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব।” এই বলে তিনি শমরিয়াতে তাদের নিয়ে গেলেন।
20 শহরে ঢুকবার পর ইলীশায় বললেন, “হে সদাপ্রভু, এবার ওদের চোখ খুলে দাও যেন ওরা দেখতে পায়।” তখন সদাপ্রভু তাদের চোখ খুলে দিলেন আর তারা দেখতে পেল যে, তারা শমরিয়ার মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
21 ইস্রায়েলের রাজা তাদের দেখে ইলীশায়কে বললেন, “পিতা, আমি কি ওদের মেরে ফেলব?”
22 উত্তরে তিনি বললেন, “না, ওদের মারবেন না। আপনার নিজের তলোয়ার ও ধনুক দিয়ে আপনি যাদের বন্দী করেছেন তাদের কি মেরে ফেলবেন? ওদের আপনি খাবার ও জল দিন, যাতে তারা খেয়েদেয়ে তাদের মনিবের কাছে ফিরে যেতে পারে।”
23 কাজেই রাজা তাদের জন্য একটা বড় ভোজের আয়োজন করলেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করলে পর তিনি তাদের বিদায় করে দিলেন আর তারা তাদের মনিবের কাছে ফিরে গেল। এতে অরামের সৈন্যদল ইস্রায়েলের রাজ্যের মধ্যে লুটপাট করা বন্ধ করে দিল।
24 এর কিছুকাল পরে অরামের রাজা বিন্হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল জড়ো করলেন এবং তাদের নিয়ে গিয়ে শমরিয়া ঘেরাও করলেন।
25 তখন শহরে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এই ঘেরাও এতদিন ধরে চলল যে, একটা গাধার মাথা পর্যন্ত প্রায় এক কেজি রূপাতে এবং এক কেজির চার ভাগের এক ভাগ কবুতরের পায়খানা সাত গ্রাম রূপায় বিক্রি হতে লাগল।
26 ইস্রায়েলের রাজা একদিন যখন শহরের দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে তাঁকে বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন।”
27 উত্তরে রাজা বললেন, “সদাপ্রভু যদি সাহায্য না করেন তবে আমি কোথা থেকে তোমাকে সাহায্য করব? খামার থেকে, না আংগুর মাড়াইয়ের যন্ত্র থেকে?”
28 তারপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে?”স্ত্রীলোকটি বলল, “এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও, কাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’
29 কাজেই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছি। পরের দিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও।’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।”
30 স্ত্রীলোকটির কথা শুনে রাজা তাঁর পোশাক ছিঁড়লেন। তিনি তখনও দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। তাতে লোকেরা দেখতে পেল যে, তাঁর পোশাকের তলায় তিনি ছালার চট পরে আছেন।
31 তিনি বললেন, “আজ যদি শাফটের ছেলে ইলীশায়ের মাথা তাঁর কাঁধের উপর থাকে তবে ঈশ্বর যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন!”
32 ইলীশায় তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন আর তাঁর সংগে ছিলেন বৃদ্ধ নেতারা। রাজা একজন লোককে ইলীশায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু লোকটা সেখানে পৌঁছাবার আগেই ইলীশায় বৃদ্ধ নেতাদের বললেন, “আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না সেই খুনী আমার মাথা কেটে ফেলবার জন্য কিভাবে একজন লোককে পাঠাচ্ছে? দেখুন, লোকটা আসলে পর আপনারা দরজাটা বন্ধ করে দেবেন এবং তার সামনে দরজাটা বন্ধই রাখবেন। তার পিছন পিছন কি তার মনিবের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে না?”
33 ইলীশায় তখনও কথা বলছেন এমন সময় সেই লোকটি তাঁর কাছে আসল। তারপর রাজা এসে বললেন, “এই বিপদ সদাপ্রভুর কাছ থেকেই এসেছে। তবে সদাপ্রভুর জন্য আর আমি দেরি করব কেন?”