1 এর পর গিলিয়দের ইস্রায়েলীয়েরা এবং দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত সমস্ত জায়গার ইস্রায়েলীয়েরা সবাই বের হয়ে আসল এবং মিসপাতে সদাপ্রভুর কাছে জড়ো হল।
2-3 এই কথা বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের কানে গেল। ঈশ্বরের যে লোকেরা জড়ো হয়েছিল সেই দলের মধ্যে ছিল ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠী-নেতারা সবাই এবং চার লক্ষ পদাতিক সৈন্য। তারা জানতে চাইল যে, সেই জঘন্য ব্যাপারটা কি করে ঘটেছিল।
4 তখন লেবি-গোষ্ঠীর ঐ লোকটি, অর্থাৎ মেরে ফেলা স্ত্রীলোকটির স্বামী বলল, “আমি ও আমার উপস্ত্রী রাত কাটাবার জন্য বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে গিয়েছিলাম।
5 রাতের বেলা গিবিয়ার লোকেরা আমার খোঁজে এসে বাড়ীটা ঘেরাও করল। তারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু তার বদলে তারা আমার উপস্ত্রীকে নিয়ে জোর করে তার সংগে ব্যভিচার করল, আর তাতে সে মারা গেল।
6 ইস্রায়েলের মধ্যে তারা এমন লমপটতা এবং খারাপ কাজ করেছে বলে আমি আমার উপস্ত্রীকে কেটে টুকরা টুকরা করে ইস্রায়েলীয়দের ভাগে পড়া প্রত্যেকটি জায়গায় একটা করে টুকরা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
7 এখন হে ইস্রায়েলীয়েরা, আপনারা সকলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আপনাদের রায় দিন।”
8 এতে সমস্ত লোক একসংগে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, “আমরা কেউ বাড়ী যাব না; আমাদের মধ্যে একজনও ফিরে যাবে না।
9 আমরা গুলিবাঁট করে গিবিয়ার লোকদের বিরুদ্ধে যাব।
10 ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেক একশো জন থেকে দশ, হাজার থেকে একশো এবং দশ হাজার থেকে এক হাজার জন লোক বেছে নেব। তারা গিয়ে সৈন্যদের জন্য খাবার-দাবার নিয়ে আসবে; আর আমরা বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে গিয়ে ইস্রায়েল জাতির মধ্যে তারা যে সব জঘন্য কাজ করেছে তার উচিত শাস্তি দেব।”
11 কাজেই ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরা সবাই একসংগে জড়ো হয়ে গিবিয়ার বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়াল।
12 তারা বিন্যামীন এলাকার সব জায়গায় লোক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে পাঠাল, “তোমাদের মধ্যে এ কি জঘন্য কাজ করা হয়েছে?
13 গিবিয়ার ঐ সব দুষ্ট লোকদের তোমরা আমাদের হাতে তুলে দাও যাতে আমরা তাদের মেরে ফেলে ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এই জঘন্যতা দূর করে দিতে পারি।”কিন্তু বিন্যামীনীয়েরা তাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের কথায় কান দিল না।
14 তারা ঐ সব ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তাদের শহর ও গ্রামগুলো থেকে বের হয়ে গিবিয়াতে গিয়ে জড়ো হল।
15 সেই দিনই তারা তাদের শহর ও গ্রামগুলো থেকে ছাব্বিশ হাজার সৈন্য জড়ো করল। এছাড়া তাদের সংগে ছিল গিবিয়ার সাতশো বাছাই করা সৈন্য।
16 সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে সাতশো বাঁহাতি দক্ষ লোক ছিল যারা চুল লক্ষ্য করে ফিংগা দিয়ে ঠিক চুলটির উপরেই পাথর মারতে পারত।
17 বাকী ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের সংখ্যা ছিল চার লক্ষ। তারা সকলেই ছিল যুদ্ধে পাকা।
18 তারা বৈথেলে গিয়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে জানতে চাইল বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তাদের মধ্যে কে আগে যাবে। উত্তরে সদাপ্রভু জানালেন যে, যিহূদা-গোষ্ঠী আগে যাবে।
19 পরের দিন সকালে উঠে ইস্রায়েলীয়েরা গিবিয়ার কাছে ছাউনি ফেলল।
20 তারপর তারা বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়ে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য সাজাল।
21 বিন্যামীনীয়েরা গিবিয়া থেকে বের হয়ে আসল এবং সেই দিন বাইশ হাজার ইস্রায়েলীয়কে মেরে ফেলল।
22-23 তখন ইস্রায়েলীয়েরা গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে বলল, “আমরা কি আমাদের ভাই বিন্যামীনীয়দের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করতে যাব?”উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “যাও।” এতে ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা সাহসে বুক বেঁধে প্রথম দিন যে জায়গায় যুদ্ধ করেছিল আবার সেখানে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত হল।
24 দ্বিতীয় দিনে তারা বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল।
25 এইবার বিন্যামীনীয়েরা তাদের বাধা দেবার জন্য গিবিয়া থেকে বের হয়ে এসে আরও আঠারো হাজার ইস্রায়েলীয়কে মেরে ফেলল। তারা সবাই ছিল তলোয়ারধারী সৈন্য।
26 তখন ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত লোক বৈথেলে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে বসে কাঁদতে লাগল। তারা সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করল এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল।
27-28 সেই সময়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা-সিন্দুক বৈথেলেই ছিল, আর হারোণের নাতি, অর্থাৎ ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে সেবার কাজ করতেন। সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা সেখানে সদাপ্রভুর ইচ্ছা জানবার জন্য জিজ্ঞাসা করল, “আমরা আমাদের ভাই বিন্যামীন-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করতে যাব কি যাব না?”সদাপ্রভু উত্তর দিলেন, “যাও, কারণ কালকে আমি তোমাদের হাতে তাদের তুলে দিতে যাচ্ছি।”
29 তখন ইস্রায়েলীয়েরা গিবিয়ার চারপাশে সৈন্যদের লুকিয়ে রাখল।
30 তৃতীয় দিনে বাকী সৈন্যেরা বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধের জন্য আগের মত করেই গিবিয়ার কাছে সৈন্য সাজাল।
31 ইস্রায়েলীয়দের বাধা দেবার জন্য বিন্যামীনীয়েরা বেরিয়ে এসে শহর থেকে দূরে গেল। তারা আগের মতই ইস্রায়েলীয়দের মেরে ফেলতে লাগল। তাতে মাঠের উপর এবং যে রাস্তা দু’টার একটা বৈথেলের দিকে এবং অন্যটা গিবিয়ার দিকে চলে গেছে তার উপর প্রায় ত্রিশজন লোক মারা পড়ল।
32 এতে বিন্যামীনীয়েরা বলতে লাগল, “আমরা ওদের আগের মতই হারিয়ে দিচ্ছি,” আর ইস্রায়েলীয়েরা বলল, “এস, আমরা পিছু হটে গিয়ে শহরের কাছ থেকে ওদের সরিয়ে রাস্তার উপর নিয়ে যাই।”
33 তারপর ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা তাদের জায়গা থেকে সরে গিয়ে বাল্-তামরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। এদিকে ইস্রায়েলীয়দের লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরা তাদের জায়গা, অর্থাৎ মারে-গেবা ছেড়ে বেরিয়ে আসল।
34 তখন ইস্রায়েলীয়দের দশ হাজার বাছাই করা লোক গিবিয়ার সামনের দিকে আক্রমণ চালাল, আর তাতে ভীষণভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল; কিন্তু বিন্যামীনীয়েরা বুঝতে পারল না যে, তারা প্রায় সর্বনাশের মুখে এসে পড়েছে।
35 সদাপ্রভু সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের কাছে বিন্যামীন-গোষ্ঠীকে হার মানালেন এবং তারা পঁচিশ হাজার একশো বিন্যামীনীয় লোককে মেরে ফেলল। তারা সবাই ছিল তলোয়ারধারী সৈন্য।
36 এর পরে বিন্যামীনীয়েরা বুঝতে পারল যে, তারা হেরে গেছে।গিবিয়ার কাছে যে সৈন্যদের লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের উপর নির্ভর করেই ইস্রায়েলীয়েরা বিন্যামীনীয়দের সামনে হটে গিয়েছিল।
37 সেই লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরা গিবিয়ার উপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার সমস্ত লোকদের মেরে ফেলল।
38-39 সেই লুকিয়ে থাকা সৈন্যদের সংগে অন্যান্য ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা এই চিহ্ন ঠিক করেছিল যে, তারা শহর থেকে মেঘের মত করে ধূমা উপরের দিকে উঠতে দেখলে যুদ্ধের জন্য ঘুরে দাঁড়াবে।যখন বিন্যামীনীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের ত্রিশজনকে মেরে ফেলেছিল তখন তারা বলেছিল, “আমরা প্রথম বারের যুদ্ধে যেমন তাদের হারিয়ে দিয়েছিলাম এবারও তা-ই করছি।”
40 কিন্তু তাদের শহর থেকে যখন থামের মত হয়ে ধূমা উঠতে লাগল তখন তারা ঘুরে দেখল যে, গোটা শহর থেকে ধূমা আকাশে উঠে যাচ্ছে।
41 সেই সময়েই ইস্রায়েলীয়েরা ঘুরে দাঁড়াল আর তাতে বিন্যামীনীয়েরা খুব ভয় পেল। তারা বুঝতে পারল যে, তাদের উপর সর্বনাশ এসে পড়েছে।
42 কাজেই তারা ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে মরু-এলাকার দিকে পালাতে লাগল, কিন্তু যুদ্ধ থেকে রেহাই পেল না। অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা শহর ও গ্রাম থেকে বের হয়ে এসে সেখানেই তাদের মেরে ফেলল।
43 তারা বিন্যামীনীয়দের তাড়া করে ঘিরে ফেলল এবং গিবিয়ার পূর্ব দিকে তাদের বিশ্রামের জায়গায় তাদের শেষ করে দিল।
44 এতে আঠারো হাজার বিন্যামীনীয় মারা পড়ল; তারা সবাই ছিল শক্তিশালী যোদ্ধা।
45 যখন বাকী বিন্যামীনীয়েরা ঘুরে মরু-এলাকার রিম্মোণ পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল তখন ইস্রায়েলীয়েরা পথের মধ্যেই তাদের পাঁচ হাজার লোককে মেরে ফেলল। তার পরেও তারা গিদোম পর্যন্ত বিন্যামীনীয়দের তাড়া করে নিয়ে গেল এবং আরও দু’হাজার লোককে মেরে ফেলল।
46 সেই দিন মোট পঁচিশ হাজার বিন্যামীনীয় সৈন্য মারা পড়ল। তারা সবাই ছিল ভাল যোদ্ধা।
47 কিন্তু বিন্যামীনীয়দের ছ’শো লোক ঘুরে মরু-এলাকার রিম্মোণ পাহাড়ে পালিয়ে গিয়ে চার মাস সেখানে রইল।
48 এর মধ্যে ইস্রায়েলীয়েরা ফিরে বিন্যামীনীয়দের বাকী লোকদের সবাইকে মেরে ফেলল এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে পশু আর অন্যান্য যাদের পেল সবাইকে শেষ করে দিল। তারা যে সব শহর ও গ্রামে গেল তার সবগুলোতেই আগুন লাগিয়ে দিল।