1 যিরুব্বালের ছেলে অবীমেলক শিখিমে তাঁর মামাদের কাছে গিয়ে তাদের এবং তাঁর মায়ের বংশের অন্য সবাইকে বললেন,
2 “শিখিমের সমস্ত বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করুন কোন্টা তাদের পক্ষে ভাল- যিরুব্বালের সত্তরজন ছেলে তাদের শাসনকর্তা হবে, নাকি একজন লোক হবে? ভুলে যাবেন না আমি আপনাদেরই রক্ত-মাংস।”
3 অবীমেলকের মামারা শিখিমের লোকদের এই সব কথা বলবার পরে তাদের মধ্যে অবীমেলকের পক্ষে থাকবার একটা ঝোঁক দেখা গেল। তারা বলল যে, অবীমেলক তাদের আত্মীয়।
4 তারা বাল্বরীতের মন্দির থেকে তাঁকে সত্তর টুকরা রূপা দিল। অবীমেলক তা দিয়ে কতগুলো বাজে দুঃসাহসী লোক ভাড়া করলেন। এরা তাঁর সংগী হল।
5 অফ্রাতে তিনি তাঁর বাবার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর সত্তরজন ভাইদের প্রত্যেককে, অর্থাৎ যিরুব্বালের ছেলেদের প্রত্যেককে একই পাথরের উপরে মেরে ফেললেন। কিন্তু যিরুব্বালের সবচেয়ে ছোট ছেলে যোথম লুকিয়ে থেকে বেঁচে গেল।
6 তারপর শিখিম ও বৈৎ-মিল্লোর সমস্ত লোক একত্র হয়ে শিখিমের থামের কাছে এলোন গাছটার পাশে গিয়ে অবীমেলককে রাজা করল।
7 যোথমকে এই কথা জানানো হল। সে তখন গরিষীম পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার করে লোকদের বলল, “শিখিমের লোকেরা, আমার কথা শুনুন, তাতে ঈশ্বরও আপনাদের কথা শুনবেন।
8 গাছেরা সবাই একদিন নিজেদের জন্য একজন রাজাকে অভিষেক করবার উদ্দেশ্যে বের হল। তারা জলপাই গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’
9 কিন্তু জলপাই গাছ উত্তরে বলল, ‘আমার যে তেলে ঈশ্বর ও মানুষ সম্মানিত হন তা বাদ দিয়ে কি আমি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’
10 এর পর গাছগুলো ডুমুর গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’
11 কিন্তু ডুমুর গাছ উত্তরে বলল, ‘আমি আমার এই ভাল ও মিষ্টি ফল দেওয়া বাদ দিয়ে কি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’
12 এর পর গাছগুলো আংগুর লতাকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’
13 কিন্তু উত্তরে আংগুর লতা বলল, ‘আমার ফলের যে রসে ঈশ্বর ও মানুষ আনন্দ পান তা বাদ দিয়ে কি আমি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’
14 শেষে সব গাছগুলো কাঁটাঝোপকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’
15 তখন কাঁটাঝোপ তাদের বলল, ‘যদি সত্যিই তোমরা আমাকে তোমাদের রাজা হিসাবে অভিষেক করতে চাও তবে তোমরা এসে আমার ছায়ায় আশ্রয় নাও। তা যদি না কর তবে যেন কাঁটাঝোপ থেকে আগুন বেরিয়ে এসে লেবাননের এরস গাছগুলো পুড়িয়ে দেয়।’
16 “তবে শুনুন, অবীমেলককে রাজা করে আপনারা কি বিশ্বস্ততা ও সততার কাজ করেছেন? আপনারা কি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি ভাল এবং উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন?
17 আমার বাবা তো তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য যুদ্ধ করে মিদিয়নীয়দের হাত থেকে আপনাদের রক্ষা করেছেন।
18 কিন্তু আজ আপনারা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন। একই পাথরের উপরে তাঁর সত্তরজন ছেলের প্রত্যেককে খুন করেছেন আর তাঁর দাসীর ছেলে অবীমেলককে শিখিমের লোকদের উপরে রাজা করেছেন, কারণ সে আপনাদের আত্মীয়।
19 কিন্তু আজ যদি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি আপনারা বিশ্বস্ততা ও সততার কাজ করে থাকেন তবে অবীমেলক যেন আপনাদের আনন্দের কারণ হয় এবং আপনারাও যেন তার আনন্দের কারণ হন!
20 কিন্তু তা যদি আপনারা না করে থাকেন তবে অবীমেলকের মধ্য থেকে যেন আগুন বের হয়ে এসে আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের পুড়িয়ে দেয়; আর আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের মধ্য থেকেও যেন আগুন বের হয়ে এসে অবীমেলককে পুড়িয়ে দেয়।”
21 এর পর যোথম পালিয়ে বের্ নামে একটা জায়গায় চলে গেল। সে তার ভাই অবীমেলকের ভয়ে সেখানেই বাস করতে লাগল।
22 অবীমেলক তিন বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করলেন।
23 তারপর ঈশ্বর অবীমেলক ও শিখিমের লোকদের মধ্যে একটা মন্দ আত্মা পাঠিয়ে দিলেন। তাতে শিখিমের লোকেরা অবীমেলকের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
24 ঈশ্বরই এটা করলেন যাতে যিরুব্বালের সত্তরজন ছেলের উপর রক্তপাতের যে অন্যায় করা হয়েছে তার দরুন তাদের ভাই অবীমেলকের উপর এবং তাদের মেরে ফেলবার কাজে তাঁর ও তাঁর সাহায্যকারী শিখিমের লোকদের উপর প্রতিশোধ নেওয়া হয়।
25 শিখিমের লোকেরা অবীমেলকের বিরুদ্ধে পাহাড়ের উপরে কিছু লোক রাখল, আর তারা লুকিয়ে থেকে সেই পথে যারা যেত তাদের লুটপাট করত। কথাটা অবীমেলককে জানানো হল।
26 সেই সময় এবদের ছেলে গাল তার ভাইদের সংগে নিয়ে শিখিমে আসল আর শিখিমের লোকেরা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করল।
27 তারা নিজেদের ক্ষেতে গিয়ে আংগুর তুলে মাড়াই করল এবং উৎসব করল। তারা তাদের দেবতার মন্দিরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে অবীমেলককে অভিশাপ দিল।
28 এবদের ছেলে গাল বলল, “অবীমেলক কে যে, আমরা শিখিমের লোকেরা তার অধীন হয়ে থাকব? সে কি যিরুব্বালের ছেলে নয়? সবূল কি তার সেনাপতি নয়? তোমরা বরং শিখিমের বাবা হমোরের বংশধরদের অধীনে থাক। কেন আমরা অবীমেলকের অধীনে থাকব?
29 যদি কেবল লোকেরা আমার হুকুম মেনে চলত তবে আমি অবীমেলককে দূর করে দিতাম। তাকে বলা যেত, ‘তোমার সৈন্য-সামন্ত সব ডেকে নিয়ে বের হয়ে এস।’ ”
30 এবদের ছেলে গালের সেই কথা শিখিমের শাসনকর্তা সবূলের কানে গেল এবং তিনি খুব রেগে গেলেন।
31 তিনি গোপনে অবীমেলককে এই কথা বলে পাঠালেন, “এবদের ছেলে গাল ও তার ভাইয়েরা শিখিমে এসে আপনার বিরুদ্ধে সেখানকার লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে।
32 কাজেই আপনি ও আপনার লোকেরা রাতের বেলায় এসে মাঠের মধ্যে ওৎ পেতে বসে থাকুন।
33 সকালে সূর্য উঠবার সময় আপনি শহরের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাবেন। গাল ও তার লোকেরা যখন আপনার বিরুদ্ধে বের হয়ে আসবে তখন আপনি যা করবার তা করবেন।”
34 কাজেই অবীমেলক ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদল রাতের বেলায় বের হয়ে চার দলে ভাগ হয়ে শিখিমের কাছে লুকিয়ে রইল।
35 শহর থেকে বেরিয়ে এবদের ছেলে গাল ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় অবীমেলক ও তাঁর সৈন্যেরা তাদের লুকানো জায়গা থেকে বের হয়ে আসল।
36 গাল তাদের দেখে সবূলকে বলল, “দেখুন, পাহাড়ের উপর থেকে কত লোক নেমে আসছে।”সবূল উত্তরে বললেন, “তুমি পাহাড়ের ছায়াগুলোকে মানুষ বলে ভাবছ।”
37 কিন্তু গাল আবার বলল, “দেখুন, লোকগুলো আসছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড় থেকে, আর গণকদের গাছের দিক থেকে আরও একদল লোক আসছে।”
38 তখন সবূল তাকে বললেন, “এখন কোথায় তোমার সেই বড় বড় কথা? তুমি বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে যে, আমরা তার অধীনে থাকব?’ এই সব লোকদেরই তো তুমি তুচ্ছ করেছিলে। এখন বের হয়ে তাদের সংগে যুদ্ধ কর।”
39 তখন গাল শিখিমের লোকদের পরিচালনা করে নিয়ে গিয়ে অবীমেলকের সংগে যুদ্ধ করল।
40 অবীমেলক গালকে তাড়া করলেন, তাতে সে পালিয়ে গেল। পালাবার পথে তার দলের অনেকেই আঘাত পেয়ে শহরের ফটক পর্যন্ত সারা পথে পড়ে রইল।
41 অবীমেলক অরূমাতে রয়ে গেলেন আর সবূল শিখিম থেকে গাল ও তার ভাইদের তাড়িয়ে বের করে দিলেন।
42 পরের দিন শিখিমের লোকেরা বের হয়ে মাঠে যাচ্ছিল, আর সেই খবর অবীমেলককে জানানো হল।
43 তখন অবীমেলক তাঁর লোকদের তিন দলে ভাগ করলেন এবং তারা মাঠে ওৎ পেতে রইল। শহর থেকে লোকদের বের হয়ে আসতে দেখে তিনি তাদের আক্রমণ করলেন।
44 অবীমেলক ও তাঁর দলের লোকেরা সামনের দিকে ছুটে গিয়ে শহরে ঢুকবার পথে দাঁড়াল। মাঠের মধ্যে যারা ছিল অন্য দুই দল সৈন্য তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের মেরে ফেলল।
45 সারাদিন ধরে আক্রমণ চালিয়ে অবীমেলক শহরটা অধিকার করে নিয়ে সেখানকার লোকদের মেরে ফেললেন। তারপর শহরটা ধ্বংস করে তার উপর তিনি লবণ ছিটিয়ে দিলেন।
46 এই খবর শুনে শিখিমের দুর্গের লোকেরা এল-বরীৎ দেবতার মন্দিরের ভিতরের ঘরে গিয়ে ঢুকল।
47-48 অবীমেলক যখন শুনলেন যে, লোকেরা সেখানে গিয়ে জড়ো হয়েছে তখন তাঁর লোকদের নিয়ে তিনি সল্মোন পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন। তিনি কুড়াল নিলেন এবং গাছ থেকে একটা ডাল কেটে নিয়ে কাঁধের উপরে তুললেন। তারপর তিনি তাঁর লোকদের আদেশ দিলেন, “তোমরা আমাকে যা করতে দেখলে তোমরাও তাড়াতাড়ি তা-ই কর।”
49 কাজেই সকলে গাছ থেকে ডাল কেটে নিয়ে অবীমেলকের পিছনে পিছনে চলল। তারপর তারা সেই ভিতরের ঘরের উপরে সেগুলো জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিল। এতে শিখিমের দুর্গের সমস্ত লোক পুড়ে মারা গেল। সেখানে প্রায় এক হাজার পুরুষ এবং স্ত্রীলোক ছিল।
50 এর পর অবীমেলক তেবেসে গিয়ে তা ঘেরাও করে দখল করে নিলেন।
51 শহরের মধ্যে ছিল একটা শক্ত দুর্গ; শহরের সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রীলোক সেখানে পালিয়ে গেল। তারা দুর্গে ঢুকে সেখানকার দরজা বন্ধ করে ছাদে গিয়ে উঠল।
52 অবীমেলক সেই দুর্গের কাছে গিয়ে সেটা আক্রমণ করলেন; কিন্তু দুর্গটাতে আগুন লাগাবার জন্য যখন তিনি দুর্গের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন,
53 তখন একজন স্ত্রীলোক যাঁতার উপরের পাথরটা অবীমেলকের মাথার উপর ফেলে তাঁর মাথাটা ফাটিয়ে দিল।
54 অবীমেলক তাড়াতাড়ি করে তাঁর অস্ত্রবহনকারী যুবককে বললেন, “তোমার তলোয়ার বের করে আমাকে মেরে ফেল যাতে ওরা বলতে না পারে, ‘একজন স্ত্রীলোকের হাতে সে মারা পড়েছে।’ ” কাজেই সেই যুবক তাঁকে তলোয়ার দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল আর তিনি মারা গেলেন।
55 অবীমেলক মারা গেছেন দেখে ইস্রায়েলীয়েরা বাড়ী ফিরে গেল।
56 সত্তরজন ভাইকে মেরে ফেলে অবীমেলক তাঁর বাবার প্রতি যে অন্যায় করেছিলেন ঈশ্বর এইভাবেই তার পাওনা শাস্তি দিলেন।
57 শিখিমের লোকেরা যে সব অন্যায় করেছিল তার পাওনা শাস্তি ঈশ্বর তাদেরও দিলেন। এইভাবে যিরুব্বালের ছেলে যোথমের অভিশাপ তাদের উপর পড়েছিল।