1 ইফ্রয়িমের লোকেরা গিদিয়োনকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি আমাদের সংগে এই রকম ব্যবহার করলেন কেন? মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ার সময় আপনি কেন আমাদের ডাকেন নি?” এইভাবে তারা গিদিয়োনকে খুব কড়া কড়া কথা বলল।
2 উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের তুলনায় আমি আর তেমন কি করেছি? ইফ্রয়িম যে পড়ে থাকা আংগুর কুড়িয়ে এনেছে তা কি অবিয়েষরের তোলা সমস্ত আংগুরের চেয়ে অনেক ভাল নয়?
3 ঈশ্বর তোমাদের হাতে মিদিয়নীয়দের নেতা ওরেব ও সেবকে তুলে দিয়েছেন। তোমাদের তুলনায় আমি আর কি বেশী করতে পেরেছি?” এতে গিদিয়োনের বিরুদ্ধে তাদের রাগ পড়ে গেল।
4 গিদিয়োন ও তাঁর তিনশো লোক মিদিয়নীয়দের তাড়া করতে করতে যর্দনের কাছে এসে নদীটা পার হয়ে গেল। তখন তারা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,
5 তাই গিদিয়োন সুক্কোতের লোকদের বললেন, “আমার সৈন্যদের কিছু রুটি খেতে দাও; তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি এখনও মিদিয়নীয়দের রাজা সেবহ ও সল্মুন্নের পিছনে তাড়া করছি।”
6 কিন্তু সুক্কোতের নেতারা বলল, “কেন আমরা তোমার সৈন্যদের রুটি খেতে দেব? সেবহ ও সল্মুন্নের কেটে ফেলা হাত কি তোমার হাতের মুঠোয় এসে গেছে?”
7 উত্তরে গিদিয়োন বললেন, “যখন সদাপ্রভু সেবহ ও সল্মুন্নকে আমার হাতে তুলে দেবেন তখন তোমাদের এই কথার জন্য আমি মরু-এলাকার কাঁটা ও কাঁটাগাছের আঘাতে তোমাদের গায়ের মাংস ছিঁড়ে ফেলব।”
8 গিদিয়োন সেখান থেকে পনূয়েলে উঠে গেলেন এবং সেখানকার লোকদের কাছেও রুটি চাইলেন। কিন্তু সুক্কোতের লোকেরা যা বলেছিল তারাও উত্তরে তা-ই বলল।
9 তখন গিদিয়োন পনূয়েলের লোকদের বললেন, “আমি যখন জয় করে ফিরে আসব তখন এই দুর্গটা চুরমার করে দেব।”
10 সেবহ ও সল্মুন্ন প্রায় পনেরো হাজার সৈন্যের একটা দল নিয়ে কর্কোরে ছিলেন। পূর্ব দেশের সৈন্যদের মধ্যে কেবল এরাই তখন বাকী ছিল এবং এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য মারা পড়েছিল।
11 নোবহ ও যগ্বিহের পূর্ব দিকে তাম্বুবাসী লোকদের পথ ধরে গিদিয়োন হঠাৎ গিয়ে সেই সৈন্যদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তখন তারা নিশ্চিন্ত মনে ছিল।
12 সেবহ ও সল্মুন্ন নামে মিদিয়নীয়দের সেই দু’জন রাজা পালিয়ে গেলেন। কিন্তু গিদিয়োন তাড়া করে গিয়ে তাঁদের ধরে ফেললেন, আর তাঁদের গোটা সৈন্যদল গিদিয়োনের দরুন ভীষণ ভয় পেল।
13 এর পর যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন হেরস নামে উঠে যাবার পথ দিয়ে যুদ্ধ থেকে ফিরলেন।
14 তিনি পথে সুক্কোতের একজন যুবককে ধরে প্রশ্ন করতে লাগলেন। যুবকটি সুক্কোতের সাতাত্তরজন প্রধান লোক ও বৃদ্ধ নেতার নাম লিখে দিল।
15 পরে গিদিয়োন সুক্কোতে গিয়ে সেখানকার লোকদের বললেন, “এই দেখ সেবহ ও সল্মুন্ন। এদের জন্যই তোমরা আমাকে ঠাট্টা করে বলেছিলে, ‘কেন আমরা তোমার ক্লান্ত সৈন্যদের রুটি খেতে দেব? সেবহ ও সল্মুন্নের কেটে ফেলা হাত কি তোমার হাতের মুঠোয় এসে গেছে?’
16 গিদিয়োন সুক্কোতের বৃদ্ধ নেতাদের ধরলেন এবং মরু-এলাকার কাঁটা ও কাঁটাগাছের ঘা মেরে তাদের শাস্তি দিলেন।
17 তিনি পনূয়েলের দুর্গটা ভেংগে দিলেন এবং সেখানকার লোকদের মেরে ফেললেন।
18 তারপর তিনি সেবহ ও সল্মুন্নকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাবোরে কি রকমের লোক আপনাদের হাতে মারা পড়েছে?”তাঁরা উত্তর দিলেন, “আপনার মত লোক, প্রত্যেকেই রাজপুত্রের মত।”
19 গিদিয়োন বললেন, “ওরা ছিল আমার ভাই, আমার মায়ের পেটের ভাই। জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আপনারা যদি তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতেন তবে আমি আপনাদের মেরে ফেলতাম না।”
20 এর পর তিনি তাঁর বড় ছেলে যেথরকে বললেন, “ওদের মেরে ফেল।” কিন্তু যেথরের বয়স অল্প ছিল বলে সে ভয় পেয়ে তলোয়ারই বের করল না।
21 তখন সেবহ ও সল্মুন্ন বললেন, “আপনি নিজেই এসে আমাদের মেরে ফেলুন, কারণ যেমন মানুষ তেমনি তার কাজ।” কাজেই গিদিয়োন নিজে এগিয়ে গিয়ে তাঁদের মেরে ফেললেন এবং তাঁদের উটের গলা থেকে চন্দ্রহারগুলো খুলে নিলেন।
22 পরে ইস্রায়েলীয়েরা গিদিয়োনকে বলল, “আপনি মিদিয়নীয়দের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন, সেইজন্য আপনি ও আপনার বংশধরেরাই আমাদের শাসনকর্তা হন।”
23 গিদিয়োন তাদের বললেন, “আমরা কেউ তোমাদের শাসনকর্তা হব না- আমিও না, আমার ছেলেও না; সদাপ্রভুই হবেন তোমাদের শাসনকর্তা।”
24 তিনি আরও বললেন, “তবে আমার একটা অনুরোধ আছে। তোমাদের লুটের ভাগ থেকে তোমরা প্রত্যেকে আমাকে একটা করে কানের গহনা দাও।” তিনি এই কথা বললেন, কারণ মিদিয়নীয়েরা ছিল ইশ্মায়েলের বংশের লোক এবং তখনকার দিনে ইশ্মায়েলীয়দের কানে সোনার গহনা পরবার চল ছিল।
25 উত্তরে তারা বলল, “আমরা খুশী হয়েই তা দেব।” কাজেই তারা একটা কাপড় পাতল এবং প্রত্যেকে তার লুটের জিনিস থেকে তার উপর একটা করে কানের গহনা ফেলল।
26 তাতে যে পরিমাণ সোনা তিনি পেলেন তার ওজন গিয়ে দাঁড়াল প্রায় বিশ কেজি পাঁচশো গ্রাম। এছাড়া তাঁর পাওয়া চন্দ্রহার, পদক, মিদিয়নীয় রাজাদের পরনের বেগুনে পোশাক কিম্বা উটের গলার হার এর মধ্যে ধরা হয় নি।
27 গিদিয়োন সেই সব সোনা দিয়ে একটা এফোদ তৈরী করে তাঁর নিজের গ্রাম অফ্রাতে রাখলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সকলে সেখানে সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে এফোদের পূজায় নিজেদের বিকিয়ে দিল। সেটাই হয়ে দাঁড়াল গিদিয়োন ও তাঁর পরিবারের জন্য একটা ফাঁদ।
28 এইভাবেই ইস্রায়েলীয়েরা মিদিয়নীয়দের দমন করে রাখল; তারা আর মাথা তুলতে পারল না। গিদিয়োনের জীবনের বাকী চল্লিশ বছর দেশে শান্তি ছিল।
29 সেই যুদ্ধের পরে যোয়াশের ছেলে যিরুব্বাল বাড়ী ফিরে গেলেন।
30 তাঁর অনেকগুলো স্ত্রী ছিল বলে তাঁর নিজেরই সত্তরজন ছেলে ছিল।
31 শিখিমে তাঁর একজন উপস্ত্রী ছিল। তার ঘরেও তাঁর একটি ছেলে হয়েছিল। গিদিয়োন তাঁর নাম দিয়েছিলেন অবীমেলক।
32 যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন বুড়ো বয়সে মারা গেলেন। অবীয়েষ্রীয়দের অফ্রাতে তাঁর বাবা যোয়াশের কবরে তাঁকে কবর দেওয়া হল।
33 গিদিয়োনের মৃত্যুর পর পরই ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে বাল দেবতাদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিল। তারা বাল্বরীৎকে নিজেদের দেবতা করে নিল।
34 যিনি তাদের চারপাশের সমস্ত শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ভুলে গেল।
35 যিরুব্বাল, অর্থাৎ গিদিয়োন তাদের যে সব মংগল করেছিলেন সেই অনুসারে তাঁর পরিবারের প্রতি তারা বিশ্বস্ততা দেখায় নি।