1-2 মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা যাঁরা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও ঈশ্বরের সুখবর প্রচার করেছেন, তাঁরা আমাদের কাছে সব কিছু জানিয়েছেন, আর তাঁদের কথামতই অনেকে সেই সব বিষয়গুলো পরপর লিখেছেন।
3 সেই সব বিষয় সম্বন্ধে প্রথম থেকে ভালভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে আপনার জন্য তা একটা একটা করে লেখা আমিও ভাল মনে করলাম।
4 এর ফলে আপনি যা জেনেছেন তা সত্যি কি না জানতে পারবেন।
5 হেরোদ যখন যিহূদিয়া প্রদেশের রাজা ছিলেন সেই সময়ে পুরোহিত অবিয়ের দলে সখরিয় নামে যিহূদীদের একজন পুরোহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল ইলীশাবেত। তিনিও ছিলেন পুরোহিত হারোণের একজন বংশধর।
6 তাঁরা দু’জনেই ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক ছিলেন। প্রভুর সমস্ত আদেশ ও নিয়ম তাঁরা নিখুঁতভাবে পালন করতেন।
7 তাঁদের কোন ছেলেমেয়ে হয় নি কারণ ইলীশাবেত বন্ধ্যা ছিলেন। এছাড়া তাঁদের বয়সও খুব বেশী হয়ে গিয়েছিল।
8 একবার নিজের দলের পালার সময় সখরিয় পুরোহিত হিসাবে ঈশ্বরের সেবা করছিলেন।
9 পুরোহিতের কাজের চলতি নিয়ম অনুসারে গুলিবাঁট দ্বারা তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেন তিনি প্রভুর উপাসনা-ঘরের পবিত্র স্থানে গিয়ে ধূপ জ্বালাতে পারেন।
10 ধূপ জ্বালাবার সময় বাইরে অনেক লোক প্রার্থনা করছিল।
11 এমন সময় ধূপ-বেদীর ডানদিকে প্রভুর একজন দূত হঠাৎ এসে সখরিয়কে দেখা দিলেন।
12 স্বর্গদূতকে দেখে তাঁর মন অস্থির হয়ে উঠল এবং তিনি ভয় পেলেন।
13 স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “সখরিয়, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমার প্রার্থনা শুনেছেন। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেতের একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম রেখো যোহন।
14 সে তোমার জীবনে মহা আনন্দের কারণ হবে এবং তার জন্মের দরুন আরও অনেকে আনন্দিত হবে,
15 কারণ প্রভুর চোখে সে মহান হবে। সে কখনও আংগুর-রস বা কোন রকম মদ খাবে না এবং মায়ের গর্ভে থাকতেই সে পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হবে।
16 ইস্রায়েলীয়দের অনেককেই সে তাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে আনবে।
17 নবী এলিয়ের মত মনোভাব ও শক্তি নিয়ে সে প্রভুর আগে আসবে। সে বাবার মন সন্তানের দিকে ফিরাবে এবং অবাধ্য লোকদের মনের ভাব বদলে ঈশ্বরভক্ত লোকদের মনের ভাবের মত করবে। এইভাবে সে প্রভুর জন্য এক দল লোককে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।”
18 তখন সখরিয় স্বর্গদূতকে বললেন, “কিভাবে আমি তা বুঝব? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রীর বয়সও অনেক বেশী হয়ে গেছে।”
19 স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “আমার নাম গাব্রিয়েল; আমি ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। তোমার সংগে কথা বলবার জন্য ও তোমাকে এই সুখবর দেবার জন্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন।
20 দেখ, আমার কথা সময়মতই পূর্ণ হবে, কিন্তু তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর নি বলে বোবা হয়ে থাকবে। যতদিন না এই সব ঘটে ততদিন তুমি কথা বলতে পারবে না।”
21 এদিকে লোকেরা সখরিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। উপাসনা-ঘরের পবিত্র স্থানে তাঁর দেরি হচ্ছে দেখে তারা ভাবতে লাগল।
22 পরে সখরিয় যখন বের হয়ে আসলেন তখন লোকদের সংগে কথা বলতে পারলেন না। এতে লোকেরা বুঝতে পারল পবিত্র স্থানে তিনি কোন দর্শন পেয়েছেন। তিনি লোকদের কাছে ইশারায় কথা বলতে থাকলেন এবং বোবা হয়ে রইলেন।
23 পুরোহিতের কাজের পালা শেষ হবার পরে সখরিয় বাড়ী চলে গেলেন।
24 এর পরে তাঁর স্ত্রী ইলীশাবেত গর্ভবতী হলেন এবং পাঁচ মাস পর্যন্ত বাড়ী ছেড়ে বাইরে গেলেন না। তিনি বললেন,
25 “এটা প্রভুরই কাজ। মানুষের কাছে আমার লজ্জা দূর করবার জন্য তিনি এখন আমার দিকে চোখ তুলে চেয়েছেন।”
26-27 ইলীশাবেতের যখন ছয় মাসের গর্ভ তখন ঈশ্বর গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রামের মরিয়ম নামে একটি কুমারী মেয়ের কাছে গাব্রিয়েল দূতকে পাঠালেন। রাজা দায়ূদের বংশের যোষেফ নামে একজন লোকের সংগে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়েছিল।
28 স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “প্রভু তোমার সংগে আছেন এবং তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।”
29 এই কথা শুনে মরিয়মের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল। তিনি ভাবতে লাগলেন এই রকম শুভেচ্ছার মানে কি।
30 স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “মরিয়ম, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন।
31 শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে।
32 তিনি মহান হবেন। তাঁকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। প্রভু ঈশ্বর তাঁর পূর্বপুরুষ রাজা দায়ূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন।
33 তিনি যাকোবের বংশের লোকদের উপরে চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।”
34 তখন মরিয়ম স্বর্গদূতকে বললেন, “এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয় নি।”
35 স্বর্গদূত বললেন, “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এইজন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে।
36 দেখ, এই বুড়ো বয়সে তোমার আত্মীয়া ইলীশাবেতের গর্ভেও ছেলের জন্ম হয়েছে। লোকে বলত তার ছেলেমেয়ে হবে না, কিন্তু এখন তার ছয় মাস চলছে।
37 ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছুই নেই।”
38 মরিয়ম বললেন, “আমি প্রভুর দাসী, আপনার কথামতই আমার উপর সব কিছু হোক।” এর পরে স্বর্গদূত মরিয়মের কাছ থেকে চলে গেলেন।
39 তারপর মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে যিহূদিয়া প্রদেশের একটা গ্রামে গেলেন। গ্রামটা পাহাড়ী এলাকায় ছিল।
40 মরিয়ম সেখানে সখরিয়ের বাড়ীতে ঢুকে ইলীশাবেতকে শুভেচ্ছা জানালেন।
41-42 ইলীশাবেত যখন মরিয়মের কথা শুনলেন তখন তাঁর গর্ভের শিশুটি নেচে উঠল। তিনি পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে জোরে জোরে বললেন, “সমস্ত স্ত্রীলোকদের মধ্যে তুমি ধন্যা এবং তোমার যে সন্তান হবে সেই সন্তানও ধন্য।
43 আমার প্রভুর মা আমার কাছে এসেছেন, এ কেমন করে সম্ভব হল?
44 যখনই আমি তোমার কথা শুনলাম তখনই আমার গর্ভের শিশুটি আনন্দে নেচে উঠল।
45 তুমি ধন্যা, কারণ তুমি বিশ্বাস করেছ যে, প্রভু তোমাকে যা বলেছেন তা পূর্ণ হবে।”
46 তখন মরিয়ম বললেন,“আমার হৃদয় প্রভুর প্রশংসা করছে;
47 আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়েআমার অন্তর আনন্দে ভরে উঠছে,
48 কারণ তাঁর এই সামান্যা দাসীর দিকেতিনি মনোযোগ দিয়েছেন।এখন থেকে সব লোক আমাকে ধন্যা বলবে,
49 কারণ শক্তিমান ঈশ্বর আমার জন্যকত না মহৎ কাজ করেছেন।তিনি পবিত্র।
50 যারা তাঁকে ভক্তি করেতাদের প্রতি তিনি করুণা করেন,বংশের পর বংশ ধরেই করেন।
51 তিনি হাত বাড়িয়ে মহাশক্তির কাজ করেছেন;যাদের মন অহংকারে ভরাতাদের তিনি চারদিকে দূর করে দিয়েছেন।
52 সিংহাসন থেকে রাজাদের তিনি নামিয়ে দিয়েছেন,কিন্তু সাধারণ লোকদের তুলে ধরেছেন।
53 যাদের অভাব আছে,ভাল ভাল জিনিস দিয়েতিনি তাদের অভাব পূরণ করেছেন,কিন্তু ধনীদের খালি হাতে বিদায় করেছেন।
54-55 তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছেযে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,সেইমতই তিনি তাঁর দাসইস্রায়েলকে সাহায্য করেছেন।অব্রাহাম ও তাঁর বংশের লোকদের উপরেচিরকাল করুণা করবার কথা তিনি মনে রেখেছেন।”
56 প্রায় তিন মাস ইলীশাবেতের কাছে থাকবার পর মরিয়ম নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন।
57 সময় পূর্ণ হলে পর ইলীশাবেতের একটি ছেলে হল।
58 তাঁর উপর প্রভুর প্রচুর করুণার কথা শুনে প্রতিবেশীরা ও আত্মীয়েরা তাঁর সংগে আনন্দ করতে লাগল।
59 যিহূদীদের নিয়ম মত আট দিনের দিন তারা ছেলেটির সুন্নত করাবার কাজে যোগ দিতে আসল। তারা ছেলেটির নাম তার বাবার নামের মত সখরিয় রাখতে চাইল,
60 কিন্তু তার মা বললেন, “না, এর নাম যোহন রাখা হবে।”
61 তারা ইলীশাবেতকে বলল, “আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তো কারও ঐ নাম নেই।”
62 তারা ইশারা করে ছেলেটির বাবার কাছ থেকে জানতে চাইল তিনি কি নাম দিতে চান।
63 সখরিয় লিখবার জিনিস চেয়ে নিয়ে লিখলেন, “ওর নাম যোহন।”এতে তারা সবাই অবাক হল,
64 আর তখনই সখরিয়ের মুখ ও জিভ্ খুলে গেল এবং তিনি কথা বলতে ও ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন।
65 এ দেখে প্রতিবেশীরা সবাই ভয় পেল, আর যিহূদিয়ার সমস্ত পাহাড়ী এলাকার লোকেরা এই সব বিষয়ে বলাবলি করতে লাগল।
66 যারা এই সব কথা শুনল তারা প্রত্যেকেই মনে মনে তা ভাবতে লাগল আর বলল, “বড় হয়ে এই ছেলেটি তবে কি হবে!” তারা এই কথা বলল, কারণ প্রভুর শক্তি এই ছেলেটির উপর দেখা গিয়েছিল।
67 পরে ছেলেটির পিতা সখরিয় পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে নবী হিসাবে এই কথা বলতে লাগলেন,
68 “ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা হোক,কারণ তিনি তাঁর নিজের লোকদের দিকেমনোযোগ দিয়েছেন আর তাদের মুক্ত করেছেন।
69 তিনি আমাদের জন্যতাঁর দাস দায়ূদের বংশ থেকেএকজন শক্তিশালী উদ্ধারকর্তা তুলেছেন।
70 এই কথা তাঁর পবিত্র নবীদের মুখ দিয়েতিনি অনেক দিন আগেই বলেছিলেন।
71 তিনি শত্রুদের হাত থেকেআর যারা ঘৃণা করে তাদের সকলের হাত থেকেআমাদের রক্ষা করেছেন।
72 তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের করুণা করবার জন্যআর তাঁর পবিত্র ব্যবস্থা, অর্থাৎ তাঁর শপথপূর্ণ করবার জন্য আমাদের রক্ষা করেছেন।
73-75 সেই শপথ তিনি আমাদের পূর্বপুরুষঅব্রাহামের কাছে করেছিলেন।তিনি শত্রুদের হাত থেকেআমাদের উদ্ধার করেছেনযেন যতদিন বেঁচে থাকিপবিত্র ও সৎভাবে তাঁর সামনে দাঁড়িয়েনির্ভয়ে তাঁর সেবা করতে পারি।
76 সন্তান আমার,তোমাকে মহান ঈশ্বরের নবী বলা হবে,কারণ তুমি তাঁর পথ ঠিক করবার জন্যতাঁর আগে আগে চলবে।
77-78 তুমি তাঁর লোকদের জানাবে,কিভাবে আমাদের ঈশ্বরের করুণার দরুনপাপের ক্ষমা পেয়েপাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়।তাঁর করুণায় স্বর্গ থেকে এক উঠন্ত সূর্যআমাদের উপর নেমে আসবেন,
79 যাতে অন্ধকারে ও মৃত্যুর ছায়ায় যারা বসে আছেতাদের আলো দিতে পারেন,আর শান্তির পথে আমাদের চালাতে পারেন।”
80 পরে যোহন বেড়ে উঠতে লাগলেন এবং অন্তরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলেন। ইস্রায়েলীয়দের সামনে খোলাখুলিভাবে উপস্থিতির আগ পর্যন্ত তিনি মরু-এলাকায় ছিলেন।