1-2 যীশু পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে যর্দন নদী থেকে চলে গেলেন। পবিত্র আত্মার পরিচালনায় তিনি চল্লিশ দিন ধরে মরু-এলাকায় ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সেই সময় শয়তান তাঁকে লোভ দেখিয়ে পাপে ফেলবার চেষ্টা করতে থাকল। এই চল্লিশ দিন যীশু কিছুই খান নি; সেইজন্য এই দিনগুলো কেটে যাবার পর তাঁর খিদে পেল।
3 তখন শয়তান যীশুকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এই পাথরটাকে রুটি হয়ে যেতে বল।”
4 যীশু শয়তানকে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না।’ ”
5-6 এর পরে শয়তান তাঁকে একটা উঁচু জায়গায় নিয়ে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে জগতের সব রাজ্যগুলো দেখিয়ে বলল, “এই সবের অধিকার ও সেগুলোর জাঁকজমক আমি তোমাকে দেব, কারণ এই সব আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমার যাকে ইচ্ছা আমি তাকেই তা দিতে পারি।
7 এখন তুমি যদি আমাকে প্রণাম করে তোমার প্রভু বলে স্বীকার কর তবে এই সবই তোমার হবে।”
8 যীশু তাকে উত্তর দিলেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে।’ ”
9 তখন শয়তান যীশুকে যিরূশালেমে নিয়ে গেল আর উপাসনা-ঘরের চূড়ার উপরে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়,
10 কারণ পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে,তিনি তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেনযেন তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন।
11 তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেনযাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।”
12 যীশু তাকে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।’ ”
13 সমস্ত রকম লোভ দেখানো শেষ করে শয়তান অল্প সময়ের জন্য যীশুর কাছ থেকে চলে গেল।
14 পরে যীশু পবিত্র আত্মার শক্তিতে পূর্ণ হয়ে গালীল প্রদেশে ফিরে গেলেন। যীশুর খবর সেই এলাকার সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।
15 সেখানকার ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে যীশু শিক্ষা দিতে আরম্ভ করলেন। তখন সবাই তাঁর প্রশংসা করতে লাগল।
16 এর পরে যীশু নাসরতে গেলেন। এখানেই তিনি বড় হয়েছিলেন। তিনি নিজের নিয়ম মত বিশ্রামবারে সমাজ-ঘরে গেলেন, তারপর শাস্ত্র পাঠ করবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন।
17 তাঁর হাতে নবী যিশাইয়ের লেখা বইখানা দেওয়া হল। গুটিয়ে-রাখা বইখানা খুলেই তিনি সেই জায়গাটা পেলেন যেখানে লেখা আছে,
18 “প্রভুর আত্মা আমার উপরে আছেন,কারণ তিনিই আমাকে নিযুক্ত করেছেনযেন আমি গরীবদের কাছে সুখবর প্রচার করি।তিনি আমাকে বন্দীদের কাছে স্বাধীনতার কথা,অন্ধদের কাছে দেখতে পাবার কথাঘোষণা করতে পাঠিয়েছেন।যাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে,তিনি আমাকে তাদের মুক্ত করতে পাঠিয়েছেন।
19 এছাড়া প্রভু আমাকে ঘোষণা করতে পাঠিয়েছেন যে,এখন তাঁর দয়া দেখাবার সময় হয়েছে।”
20 তারপর তিনি বইখানা আবার গুটিয়ে কর্মচারীর হাতে দিয়ে বসে পড়লেন। সমাজ-ঘরের প্রত্যেকটি লোকের চোখ তাঁর উপরে পড়ল।
21 তখন যীশু লোকদের বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা আজ আপনারা শুনবার সংগে সংগেই তা পূর্ণ হল।”
22 লোকেরা সবাই তাঁর প্রশংসা করল এবং তাঁর মুখে এই সব সুন্দর সুন্দর কথা শুনে আশ্চর্য হল। তারা বলল, “এ কি যোষেফের ছেলে নয়?”
23 যীশু তাদের বললেন, “আপনারা এই চলতি কথাটা নিশ্চয়ই আমাকে বলবেন, ‘ডাক্তার, নিজেকে সুস্থ কর।’ আরও বলবেন, ‘কফরনাহূমে যে সব কাজ করবার কথা আমরা শুনেছি সেই সব এখন নিজের গ্রামেও করে দেখাও।’ ”
24 তিনি আরও বললেন, “আমি আপনাদের সত্যি বলছি, কোন নবীকেই তাঁর নিজের গ্রামের লোক গ্রাহ্য করে না।
25 এই কথা সত্যি যে, এলিয়ের সময়ে যখন সাড়ে তিন বছর বৃষ্টি হয় নি এবং সমস্ত দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন ইস্রায়েল দেশে অনেক বিধবা ছিল।
26 কিন্তু তাদের কারও কাছে এলিয়কে পাঠানো হয় নি, কেবল সীদোন এলাকার সারিফত গ্রামের বিধবা স্ত্রীলোকটির কাছে পাঠানো হয়েছিল।
27 নবী ইলীশায়ের সময়ে ইস্রায়েল দেশে অনেক চর্মরোগী ছিল, কিন্তু তাদের কাউকে সুস্থ করা হয় নি, কেবল সিরিয়া দেশের নামানকেই সুস্থ করা হয়েছিল।”
28 এই কথা শুনে সমাজ-ঘরের সমস্ত লোক রেগে আগুন হল।
29 তারা উঠে যীশুকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে নিয়ে চলল, আর তাঁকে নীচে ফেলে দেবার জন্য তাদের গ্রামটা যে পাহাড়ের গায়ে ছিল সেই পাহাড়ের চূড়ায় তাঁকে নিয়ে গেল।
30 কিন্তু তিনি সেই লোকদের মধ্য দিয়েই চলে গেলেন।
31 পরে যীশু গালীল প্রদেশের কফরনাহূম শহরে গেলেন এবং বিশ্রামবারে লোকদের শিক্ষা দিলেন।
32 তাঁর শিক্ষায় লোকেরা আশ্চর্য হল, কারণ তিনি এমন লোকের মত কথা বলছিলেন যাঁর অধিকার আছে।
33 সেই সমাজ-ঘরে এমন একটি লোক ছিল যাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল। সে চিৎকার করে বলল,
34 “ওহে নাসরত গ্রামের যীশু, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে; আপনিই তো ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।”
35 যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” সেই মন্দ আত্মা তখন লোকটিকে সকলের মাঝখানে আছড়ে ফেলল এবং তার কোন ক্ষতি না করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল।
36 এতে সবাই আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, “এ কেমন কথা! অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে তিনি মন্দ আত্মাদের আদেশ দেন আর তারা বের হয়ে যায়!”
37 সেই এলাকার সব জায়গায় যীশুর কথা ছড়িয়ে পড়ল।
38 এর পরে যীশু সমাজ-ঘর ছেড়ে শিমোনের বাড়ীতে গেলেন। শিমোনের শাশুড়ীর খুব জ্বর হয়েছিল। তাঁকে ভাল করবার জন্য যীশুকে অনুরোধ করা হল।
39 তখন যীশু শিমোনের শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে জ্বরকে ধমক দিলেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল, আর তিনি তখনই উঠে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
40 বেলা ডুবে যাবার সময়ে লোকেরা সব রোগীদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল। তারা নানা রকম রোগে ভুগছিল। যীশু তাদের প্রত্যেকের গায়ে হাত দিয়ে তাদের সুস্থ করলেন।
41 অনেক লোকের মধ্য থেকে মন্দ আত্মাও বের হয়ে গেল। সেই মন্দ আত্মাগুলো চিৎকার করে বলল, “আপনি ঈশ্বরের পুত্র।” তিনি যে মশীহ তা তারা জানত। এইজন্য তিনি ধমক দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দিলেন।
42 ভোরবেলায় যীশু সেই জায়গা ছেড়ে একটা নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। লোকেরা তাঁর খোঁজ করতে করতে তাঁর কাছে গেল এবং যাতে তিনি তাদের কাছ থেকে চলে না যান সেইজন্য তাঁকে তাদের কাছে ধরে রাখতে চেষ্টা করল।
43 তখন যীশু তাদের বললেন, “আরও অনেক জায়গায় আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে হবে, কারণ এরই জন্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন।”
44 এর পরে তিনি যিহূদীদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে প্রচার করতে থাকলেন।