1 যীশু লোকদের কাছে এই সব কথা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন।
2 সেখানে একজন রোমীয় শত-সেনাপতির দাস অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিল। এই দাসকে সেই সেনাপতি খুব ভালবাসতেন।
3 তিনি যীশুর বিষয় শুনে যিহূদীদের কয়েকজন বৃদ্ধনেতাকে যীশুর কাছে অনুরোধ করতে পাঠালেন যেন তিনি এসে তাঁর দাসকে সুস্থ করেন।
4 সেই নেতারা যীশুর কাছে এসে তাঁকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “আপনি যাঁর জন্য এই কাজ করবেন তিনি এর উপযুক্ত,
5 কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন এবং আমাদের সমাজ-ঘর তিনিই তৈরী করিয়ে দিয়েছেন।”
6 তখন যীশু তাঁদের সংগে চললেন। তিনি সেই বাড়ীর কাছে আসলে পর সেই সেনাপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু, আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়ীতে ঢোকেন তার যোগ্য আমি নই।
7 সেইজন্য আপনার কাছে যাবার উপযুক্তও আমি নিজেকে মনে করি নি। আপনি কেবল মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস ভাল হয়ে যাবে।
8 আমি এই কথা জানি, কারণ আমাকেও অন্যের কথামত চলতে হয় এবং সৈন্যেরাও আমার কথামত চলে। আমি একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অন্যজনকে ‘এস’ বললে সে আসে, আর আমার দাসকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে।”
9 এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন এবং যে সব লোকেরা ভিড় করে তাঁর পিছনে আসছিল তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি আপনাদের বলছি, ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখি নি।”
10 সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন তারা তাঁর ঘরে ফিরে গিয়ে সেই দাসকে সুস্থ দেখতে পেল।
11 এর কিছু পরে যীশু নায়িন্ নামে একটা গ্রামের দিকে চললেন। তাঁর শিষ্যেরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সংগে সংগে যাচ্ছিলেন।
12 যখন তিনি সেই গ্রামের ফটকের কাছে পৌঁছালেন তখন লোকেরা একজন মৃত লোককে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। যে লোকটি মারা গিয়েছিল সে ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান, আর সেই মা-ও ছিল বিধবা। গ্রামের অনেক লোক সেই বিধবার সংগে ছিল।
13 সেই বিধবাকে দেখে প্রভু মমতায় পূর্ণ হয়ে বললেন, “আর কেঁদো না।”
14 তারপর যীশু কাছে গিয়ে খাট ছুঁলেন। এতে যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়াল। যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমাকে বলছি, ওঠো।”
15 তাতে যে মারা গিয়েছিল সেই লোকটি উঠে বসল এবং কথা বলতে লাগল। যীশু তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
16 এতে সকলের অন্তর ভক্তি ও ভয়ে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের গৌরব করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান নবী উপস্থিত হয়েছেন। ঈশ্বর দয়া করে তাঁর লোকদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।”
17 যীশুর বিষয়ে এই কথা যিহূদিয়া প্রদেশ ও তার আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে গেল।
18-19 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের শিষ্যেরা এই সব ঘটনার কথা যোহনকে জানাল। তখন যোহন তাঁর দু’জন শিষ্যকে ডেকে যীশুর কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, “যাঁর আসবার কথা আছে আপনিই কি তিনি, না আমরা অন্য কারও জন্য অপেক্ষা করব?”
20 সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা করতে পাঠিয়েছেন, ‘যাঁর আসবার কথা আছে আপনিই কি তিনি, না আমরা অন্য কারও জন্য অপেক্ষা করব?”
21 তখন যীশু অনেক লোককে রোগ থেকে ও ভীষণ যন্ত্রণা থেকে সুস্থ করলেন এবং মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করলেন আর অনেক অন্ধ লোককেও দেখবার শক্তি দিলেন।
22 এই সব করবার পরে যীশু যোহনের শিষ্যদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। তাঁকে জানাও যে, অন্ধেরা দেখছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, চর্মরোগীরা শুচি হচ্ছে, বয়রা লোকেরা শুনছে, মৃতেরা বেঁচে উঠছে এবং গরীবদের কাছে সুখবর প্রচার করা হচ্ছে।
23 আর সে-ই ধন্য, যে আমাকে নিয়ে মনে কোন বাধা না পায়।”
24 যোহন যাদের পাঠিয়েছিলেন সেই লোকেরা চলে গেলে পর যীশু লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বলতে লাগলেন, “আপনারা মরু- এলাকায় কি দেখতে গিয়েছিলেন? বাতাসে দোলা নল-খাগড়া?
25 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? সুন্দর কাপড় পরা একজন লোককে কি? যারা দামী দামী কাপড় পরে ও জাঁকজমকের সংগে বাস করে তারা তো রাজবাড়ীতে থাকে।
26 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? কোন নবীকে কি? হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, তিনি নবীর চেয়েও বড়।
27 যোহনই সেই লোক যাঁর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে,‘দেখ, আমি তোমার আগে আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি।সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’
28 আমি আপনাদের বলছি, মানুষের মধ্যে কেউই যোহনের চেয়ে বড় নয়; তবুও ঈশ্বরের রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট সেও যোহনের চেয়ে মহান।”
29 (সব সাধারণ লোকেরা ও কর্-আদায়কারীরা যোহনের প্রচার শুনেছিল এবং তাঁর কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে ঈশ্বরকে ন্যায়বান বলে স্বীকার করে নিয়েছিল।
30 কিন্তু ফরীশীরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন নি বলে নিজেদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে তাঁরা অগ্রাহ্য করেছিলেন)।
31 যীশু আরও বললেন, “তা হলে এই কালের লোকদের আমি কাদের সংগে তুলনা করব? তারা কি রকম?
32 তারা এমন ছেলেমেয়েদের মত যারা বাজারে বসে একে অন্যকে ডেকে বলে, ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশী বাজালাম কিন্তু তোমরা নাচলে না; আমরা বিলাপের গান গাইলাম কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’
33 বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি বা আংগুর-রস খেলেন না বলে আপনারা বলছেন, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে।’
34 আর মনুষ্যপুত্র এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর, কর্-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের বন্ধু।’
35 কিন্তু জ্ঞানের অধীনে যারা চলে তাদের জীবনই প্রমাণ করে যে, জ্ঞান খাঁটি।
36 একজন ফরীশী যীশুকে তাঁর সংগে খাবার নিমন্ত্রণ করলেন। তখন যীশু তাঁর বাড়ীতে গিয়ে ভোজে যোগ দিলেন।
37 সেই গ্রামে একজন খারাপ স্ত্রীলোক ছিল। সেই ফরীশীর ঘরে যীশু ভোজে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে সে একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর নিয়ে আসল।
38 পরে সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল এবং তাঁর পায়ের উপর চুমু দিয়ে সেই আতর ঢেলে দিল।
39 যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি এ দেখে মনে মনে বলতে লাগলেন, “যদি এই লোকটা নবী হত তবে জানতে পারত, কে এবং কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে; স্ত্রীলোকটা তো খারাপ।”
40 যীশু সেই ফরীশীকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলবার আছে।”শিমোন বললেন, “গুরু, বলুন।”
41 যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দু’জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচ শো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার।
42 তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু’জনকেই ক্ষমা করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু’জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?”
43 শিমোন বললেন, “আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ ক্ষমা করা হল সে-ই।”যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।”
44 তারপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার জল দাও নি, কিন্তু সে চোখের জলে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে।
45 তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে।
46 তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে।
47 তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে। যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।”
48 পরে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।”
49 যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, “এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?”
50 যীশু তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি বিশ্বাস করেছ বলে পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।”