1 এক সময়ে যীশু গিনেষরৎ সাগরের পারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য শুনবার জন্য তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিল।
2 এমন সময় তিনি সাগরের পারে দু’টা নৌকা দেখতে পেলেন। জেলেরা সেই নৌকা দু’টা থেকে নেমে তাদের জাল ধুচ্ছিল।
3 তখন যীশু শিমোনের নৌকায় উঠলেন এবং তাঁকে পার থেকে একটু দূরে নৌকাটা নিয়ে যেতে বললেন। তারপর তিনি নৌকায় বসে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
4 কথা শেষ হলে পর যীশু শিমোনকে বললেন, “গভীর জলে গিয়ে মাছ ধরবার জন্য তোমাদের জাল ফেল।”
5 শিমোন বললেন, “গুরু, সারা রাত খুব পরিশ্রম করেও কিছুই ধরতে পারি নি; তবুও আপনার কথাতে আমি জাল ফেলব।”
6 জাল ফেললে পর তাতে এত মাছ পড়ল যে, তাঁদের জাল ছিঁড়বার মত হল।
7 তখন তাঁরা সাহায্যের জন্য ইশারা করে অন্য নৌকার সংগীদের ডাকলেন। তাঁরা এসে দু’টা নৌকায় এত মাছ বোঝাই করলেন যে, সেগুলো ডুবে যাবার মত হল।
8 এ দেখে শিমোন-পিতর যীশুর সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “প্রভু, আমি পাপী; আমার কাছ থেকে চলে যান।”
9 এত মাছ ধরা পড়েছে দেখে শিমোন-পিতর ও তাঁর সংগীরা সবাই আশ্চর্য হলেন।
10 শিমোনের ব্যবসার ভাগীদার যাকোব ও যোহন নামে সিবদিয়ের দুই ছেলেও আশ্চর্য হলেন। তখন যীশু শিমোনকে বললেন, “ভয় কোরো না; এখন থেকে তুমি ঈশ্বরের জন্য মানুষ ধরবে।”
11 তারপর তাঁরা নৌকাগুলো পারে আনলেন এবং সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সংগে চললেন।
12 যীশু একবার একটা গ্রামে গেলেন। সেখানে একজন লোকের সারা গায়ে খারাপ চর্মরোগ ছিল। যীশুকে দেখে সে উবুড় হয়ে পড়ে কাকুতি-মিনতি করে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।”
13 যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।” আর তখনই সে ভাল হয়ে গেল।
14 যীশু তাকে এই আদেশ দিলেন, “এই কথা কাউকে বোলো না বরং পুরোহিতের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও। তার পর শুচি হওয়া সম্বন্ধে মোশি যা উৎসর্গ করবার আদেশ দিয়েছেন তা উৎসর্গ কর। তাতে লোকদের কাছে প্রমাণ হবে তুমি ভাল হয়েছ।”
15 তবুও যীশুর খবর আরও ছড়িয়ে পড়ল। তাঁর কথা শুনবার জন্য ও রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল।
16 যীশু প্রায়ই নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রার্থনা করতেন।
17 একদিন যীশু যখন শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন ফরীশীরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা সেখানে বসে ছিলেন। গালীল প্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম এবং যিহূদিয়া প্রদেশ ও যিরূশালেম শহর থেকে এঁরা এসেছিলেন। রোগীদের সুস্থ করবার জন্য প্রভুর শক্তি যীশুর মধ্যে ছিল।
18 তখন কয়েকজন লোক একজন অবশ-রোগীকে খাটে করে বয়ে আনল। তারা তাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে যীশুর সামনে রাখবার চেষ্টা করল,
19 কিন্তু ভিড়ের জন্য ভিতরে যাবার পথ পেল না। তখন তারা ছাদে উঠল এবং ছাদের টালি সরিয়ে বিছানা সুদ্ধ তাকে লোকদের মাঝখানে যীশুর সামনে নামিয়ে দিল।
20 যীশু তাদের বিশ্বাস দেখে বললেন, “বন্ধু, তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।”
21 এতে ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন, “এই লোকটা কে, যে ঈশ্বরকে অপমান করছে? ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে?”
22 তাঁরা মনে মনে কি চিন্তা করছিলেন যীশু তা বুঝতে পেরে বললেন, “আপনারা মনে মনে কেন ঐ কথা ভাবছেন?
23 কোন্টা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও’?
24 কিন্তু আপনারা যেন জানতে পারেন পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ী চলে যাও।”
25 সেই লোকটি তখনই সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল এবং যে বিছানার উপরে সে শুয়ে ছিল তা তুলে নিয়ে ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে বাড়ী চলে গেল।
26 তাতে সবাই খুব আশ্চর্য হল এবং ভক্তিপূর্ণ ভয়ে ঈশ্বরের গৌরব করে বলল, “আজ আমরা কি আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম!”
27 এর পরে যীশু বাইরে গেলেন এবং কর্ আদায় করবার ঘরে লেবি নামে একজন কর্-আদায়কারীকে বসে থাকতে দেখলেন। যীশু লেবিকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।”
28 তাতে লেবি উঠলেন এবং তাঁর সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন।
29 পরে লেবি যীশুর জন্য তাঁর বাড়ীতে একটা বড় ভোজ দিলেন। তাঁদের সংগে অনেক কর্-আদায়কারী ও অন্য লোকেরা খেতে বসল।
30 তখন ফরীশীরা ও তাঁদের দলের ধর্ম-শিক্ষকেরা বিরক্ত হয়ে যীশুর শিষ্যদের বললেন, “তোমরা কর-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া কর কেন?”
31 যীশু তাঁদের বললেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে।
32 পাপ থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসি নি বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।”
33 পরে সেই ধর্ম-নেতারা যীশুকে বললেন, “যোহনের শিষ্যেরা প্রায়ই উপবাস ও প্রার্থনা করে এবং ফরীশীদের শিষ্যেরাও তা করে, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা কখনও খাওয়া-দাওয়া বাদ দেয় না।”
34 যীশু তাঁদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকদের উপবাস করাতে পারা যায়?
35 কিন্তু এমন সময় আসবে যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে যাওয়া হবে, আর সেই সময়েই তারা উপবাস করবে।”
36 তারপর যীশু শিক্ষা দেবার জন্য তাঁদের কাছে এই উদাহরণ দিলেন: “নতুন জামার টুকরা ছিঁড়ে নিয়ে কেউ পুরানো জামায় তালি দেয় না, কারণ তা করলে সেই নতুন জামাটা তো সে ছিঁড়ে ফেলে; আর সেই নতুন টুকরাটাও পুরানো জামার সংগে মানায় না।
37 টাটকা আংগুর-রস কেউ পুরানো চামড়ার থলিতে রাখে না, রাখলে টাটকা রসে থলিগুলো ফেটে যায়। তাতে রসও পড়ে যায়, থলিগুলোও নষ্ট হয়।
38 টাটকা আংগুর-রস নতুন চামড়ার থলিতেই রাখা উচিত।
39 পুরানো আংগুর-রস খাবার পরে কেউ টাটকা আংগুর-রস খেতে চায় না, কারণ সে বলে, ‘পুরানোটাই ভাল।’”