1 এক সময়ে যীশু কোন একটা জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “প্রভু, বাপ্তিস্মদাতা যোহন যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন তেমনি আমাদেরও আপনি প্রার্থনা করতে শিখান।”
2 যীশু তাঁদের বললেন, “যখন তোমরা প্রার্থনা কর তখন বোলো,‘হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক।তোমার রাজ্য আসুক।
3 প্রত্যেক দিনের খাবার তুমি আমাদেরপ্রত্যেক দিন দাও।
4 আমাদের পাপ ক্ষমা কর,কারণ যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেআমরা তাদের ক্ষমা করি।আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না।’ ”
5 তারপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “মনে কর, মাঝ রাতে তোমাদের মধ্যে একজন তার বন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু, আমাকে তিনটা রুটি ধার দাও।
6 আমার এক বন্ধু পথে যেতে যেতে আমার কাছে এসেছে। তাকে খেতে দেবার মত আমার কিছুই নেই।’
7 তখন ঘরের ভিতর থেকে তার বন্ধু উত্তর দিল, ‘আমাকে কষ্ট দিয়ো না। দরজা এখন বন্ধ আর আমার ছেলেমেয়েরা বিছানায় আমার কাছে শুয়ে আছে। আমি উঠে তোমাকে কিছুই দিতে পারব না।’
8 আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না-ও দেয়, তবু লোকটি বারবার অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে এবং তার যা দরকার তা তাকে দেবে।
9 “এইজন্য আমি তোমাদের বলছি, চাও, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ কর, পাবে; দরজায় ঘা দেও, তোমাদের জন্য খোলা হবে।
10 যারা চায় তারা প্রত্যেকে পায়; যে খোঁজ করে সে পায়; আর যে দরজায় ঘা দেয় তার জন্য দরজা খোলা হয়।
11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কে আছে, যে তার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে, কিম্বা মাছ চাইলে সাপ দেবে,
12 কিম্বা ডিম চাইলে বিছা দেবে?
13 তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে যারা স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মাকে দেবেন এটা কত না নিশ্চয়!”
14 অন্য এক সময়ে যীশু একটা বোবা মন্দ আত্মা দূর করছিলেন। মন্দ আত্মা দূর হয়ে গেলে পর বোবা লোকটা কথা বলতে লাগল। এতে লোকেরা আশ্চর্য হল,
15 কিন্তু কয়েকজন বলল, “মন্দ আত্মাদের রাজা বেল্সবূলের সাহায্যে সে মন্দ আত্মা ছাড়ায়।”
16 অন্য লোকেরা যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য স্বর্গ থেকে একটা চিহ্ন দেখাতে বলল।
17 তাদের মনের কথা বুুঝতে পেরে যীশু বললেন, “যে রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই রাজ্য ধ্বংস হয়, আর তাতে সেই রাজ্যের পরিবারগুলোও ভাগ হয়ে যায়।
18 শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আপনারা বলছেন আমি বেল্সবূলের সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়াই।
19 বেশ ভাল, আমি যদি বেল্সবূলের সাহায্যেই তাদের ছাড়াই তবে আপনাদের লোকেরা কার সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়ায়? আপনারা ঠিক কথা বলছেন কিনা আপনাদের লোকেরাই তা বিচার করবেন।
20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে মন্দ আত্মা ছাড়াই তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো আপনাদের কাছে এসে গেছে।
21 “একজন বলবান লোক সব রকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যখন নিজের ঘর পাহারা দেয় তখন তার জিনিসপত্র নিরাপদে থাকে।
22 কিন্তু তার চেয়ে বলবান কেউ এসে যদি তাকে আক্রমণ করে হারিয়ে দেয় তবে যে অস্ত্রশস্ত্রের উপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর লুট-করা জিনিসগুলো ভাগ করে নেয়।
23 “যদি কেউ আমার পক্ষে না থাকে তবে তো সে আমার বিপক্ষে আছে। যে আমার সংগে কুড়ায় না সে ছড়ায়।
24 “কোন মন্দ আত্মা যখন একজন লোকের মধ্য থেকে বের হয়ে যায় তখন সে বিশ্রামের খোঁজে শুকনা জায়গার মধ্য দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পরে তা না পেয়ে সে বলে, ‘আমি যে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি আবার আমি সেই ঘরেই ফিরে যাব।’
25 ফিরে এসে সেই ঘরটা সে খালি, পরিষ্কার এবং সাজানো দেখতে পায়।
26 তখন সে গিয়ে নিজের চেয়েও খারাপ অন্য আরও সাতটা মন্দ আত্মা সংগে করে নিয়ে আসে এবং সেখানে ঢুকে বাস করতে থাকে। তার ফলে সেই লোকটার প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয়।”
27 যীশু যখন কথা বলছিলেন তখন ভিড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে বলল, “ধন্য সেই স্ত্রীলোক, যিনি আপনাকে গর্ভে ধরেছেন এবং বুকের দুধ খাইয়েছেন।”
28 কিন্তু যীশু বললেন, “এর চেয়ে বরং তারা ধন্য যারা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং সেইমত কাজ করে।”
29 আরও লোক যীশুর চারদিকে জড়ো হতে থাকল। তখন যীশু বললেন, “এই কালের লোকেরা খারাপ। তারা চিহ্নের খোঁজ করে কিন্তু নবী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাদের দেখানো হবে না।
30 নীনবী শহরের লোকদের জন্য যোনা যেমন নিজেই চিহ্ন হয়েছিলেন ঠিক তেমনি করে এই কালের লোকদের জন্য মনুষ্যপুত্র চিহ্ন হবেন।
31 বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবেন, কারণ শলোমন রাজার জ্ঞানের কথাবার্তা শুনবার জন্য তিনি পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে এসেছিলেন; আর দেখুন, এখানে শলোমনের চেয়েও আরও মহান একজন আছেন।
32 বিচারের দিনে নীনবী শহরের লোকেরা উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবে, কারণ যোনার প্রচারের ফলে নীনবীর লোকেরা পাপ থেকে মন ফিরিয়েছিল; আর দেখুন, এখানে যোনার চেয়েও আরও মহান একজন আছেন।
33 “কেউ বাতি জ্বেলে কোন গোপন জায়গায় বা ঝুড়ির নীচে রাখে না বরং বাতিদানের উপরেই রাখে, যেন ভিতরে যারা ঢোকে তারা আলো দেখতে পায়।
34 আপনার চোখ হল আপনার দেহের প্রদীপ। যদি আপনার চোখ ভাল হয় তবে আপনার সমস্ত দেহ আলোতে পূর্ণ হবে, কিন্তু চোখ মন্দ হলে আপনার দেহও অন্ধকারে পূর্ণ হবে।
35 আপনার মধ্যে যে আলো আছে তা আসলে অন্ধকার কি না সেই বিষয়ে সাবধান হোন।
36 আপনার সারা দেহ যদি আলোতে পূর্ণ হয় এবং একটুও অন্ধকার না থাকে তবে তা সম্পূর্ণ আলোময় হবে, ঠিক যেমন বাতির আলো আপনার উপর পড়লে আপনার দেহ আলোময় হয়।”
37 যীশু কথা বলা শেষ করলে পর একজন ফরীশী যীশুকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। তখন যীশু ভিতরে গিয়ে খেতে বসলেন।
38 সেই ফরীশী যখন দেখলেন খাওয়ার আগে যীশু ধর্মের নিয়ম মত হাত ধুলেন না তখন তিনি অবাক হলেন।
39 প্রভু তাঁকে বললেন, “তবে শুনুন, আপনারা, অর্থাৎ ফরীশীরা থালা ও বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু আপনাদের ভিতরটা লোভ ও মন্দতায় ভরা।
40 আপনারা মূর্খ! যিনি বাইরের দিক তৈরী করেছেন তিনি কি ভিতরের দিকও তৈরী করেন নি?
41 আপনাদের থালা-বাটির ভিতরে যা আছে তা-ই বরং ভিক্ষার মত দান করুন; দেখবেন, সব কিছুই আপনাদের কাছে শুচি হবে।
42 “ধিক্ ফরীশীরা! আপনারা ঈশ্বরকে পুদিনা, তেজপাতা ও সব রকম শাকের দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে থাকেন, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসার দিকে মনোযোগ দেন না। আগেরগুলো পালন করবার সংগে সংগে পরেরগুলোও পালন করা আপনাদের উচিত।
43 “ধিক্ ফরীশীরা! সমাজ-ঘরের প্রধান প্রধান আসনে বসতে এবং হাটে-বাজারে সম্মান পেতে আপনারা ভালবাসেন।
44 ধিক্ আপনাদের! আপনারা তো চিহ্ন না দেওয়া কবরের মত। লোকে না জেনে তার উপর দিয়ে হেঁটে যায়।”
45 তখন ধর্ম-শিক্ষকদের মধ্যে একজন যীশুকে বললেন, “গুরু, এই কথা বলে আপনি আমাদেরও অপমান করছেন।”
46 যীশু বললেন, “ধিক্ ধর্ম-শিক্ষকেরা! আপনারা লোকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের সাহায্য করবার জন্য নিজেরা একটা আংগুলও নাড়ান না।
47 “ধিক্ আপনাদের! নবীদের কবর আপনারা নতুন করে গেঁথে থাকেন, অথচ আপনাদের পূর্বপুরুষেরাই তো তাঁদের খুন করেছিল।
48 সেইজন্য আপনাদের পূর্বপুরুষদের কাজের সাক্ষী আপনারাই এবং তাদের সেই কাজ আপনারা মেনেও নিচ্ছেন। একদিকে তারা নবীদের খুন করেছে, অন্যদিকে আপনারা সেই নবীদের কবর গাঁথছেন।
49 এইজন্য ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে এই কথা বলেছেন, ‘আমি তাদের কাছে নবীদের ও প্রেরিতদের পাঠিয়ে দেব। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে তারা খুন করবে এবং অন্যদের উপর অত্যাচার করবে।’
50 এর ফল হল, জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে আরম্ভ করে যতজন নবীকে খুন করা হয়েছে, তাঁদের রক্তের দায়ী হবে এই কালের লোকেরা।
51 হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, হেবলের খুন থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে বেদী এবং পবিত্র স্থানের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল সেই সখরিয়ের খুন পর্যন্ত সমস্ত রক্তের দায়ী হবে এই কালের লোকেরা।
52 “ধিক্ ধর্ম-শিক্ষকেরা! আপনারা জ্ঞানের চাবি নিয়ে গেছেন। নিজেরাও ভিতরে ঢোকেন নি এবং যারা ভিতরে ঢুকতে চাইছিল তাদের ও ঢুকতে দেন নি।”
53-54 তিনি সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময়ে ধর্ম-শিক্ষকেরা এবং ফরীশীরা তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুতা করবার জন্য উঠে-পড়ে লেগে গেলেন। নানা বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তাঁকে কথার ফাঁদে ফেলবার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করতে লাগলেন।