1 এক দিন শাগরেদ-নবীরা আল-ইয়াসাকে বললেন, “দেখুন, যে জায়গায় আমরা আপনার সংগে বসে আলোচনা করি সেই জায়গাটা আমাদের জন্য খুবই ছোট।
2 আপনি অনুমতি দিলে আমরা জর্ডান নদীর কাছে গিয়ে প্রত্যেকে একটা করে খুঁটি যোগাড় করে নিয়ে সেখানে আমাদের জন্য একটা থাকবার জায়গা তৈরী করব।”তিনি বললেন, “আচ্ছা, যাও।”
3 তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “আপনিও আপনার গোলামদের সংগে চলুন।”জবাবে আল-ইয়াসা বললেন, “আচ্ছা, চল।”
4 এই বলে তিনি তাঁদের সংগে গেলেন।তাঁরা জর্ডানের কাছে গিয়ে গাছ কাটতে লাগলেন।
5 তাঁদের মধ্যে একজন যখন গাছ কাটছিলেন তখন তাঁর কুড়ালের লোহার ফলাটা পানির মধ্যে পড়ে গেল। তিনি চিৎকার করে বললেন, “হায়, হায়! হে হুজুর, ওটা যে আমি ধার করে এনেছিলাম।”
6 তখন আল্লাহ্র বান্দা জিজ্ঞাসা করলেন, “ওটা কোথায় পড়েছে?” তিনি জায়গাটা দেখিয়ে দিলে পর আল-ইয়াসা একটা কাঠ কেটে নিয়ে সেখানে ছুঁড়ে ফেললেন এবং তাতে লোহার ফলাটা ভেসে উঠল।
7 তখন তিনি বললেন, “ওটা তুলে নাও।” তাই লোকটি হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিলেন।
8 সেই সময় সিরিয়ার বাদশাহ্ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তিনি তাঁর সেনাপতিদের সংগে পরামর্শ করে বললেন, “অমুক অমুক জায়গায় আমি ছাউনি ফেলব।”
9 তখন আল্লাহ্র বান্দা ইসরাইলের বাদশাহ্কে বলে পাঠালেন, “সাবধান, অমুক জায়গায় যাবেন না, কারণ সিরীয়রা সেখানে যাচ্ছে।”
10 এতে ইসরাইলের বাদশাহ্ আল্লাহ্র বান্দার নির্দেশ-করা জায়গাটায় লোক পাঠিয়ে লোকদের সাবধান করে দিলেন। এইভাবে বাদশাহ্ বারবার নিজেকে রক্ষা করতেন।
11 এতে সিরিয়ার বাদশাহ্ ভীষণ রেগে গেলেন। তাঁর সেনাপতিদের ডেকে তিনি বললেন, “বল, আমাদের মধ্যে কে ইসরাইলের বাদশাহ্র পক্ষে রয়েছে?”
12 তাঁর সেনাপতিদের মধ্যে একজন বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাদের মধ্যে কেউই না; কিন্তু আপনি শোবার ঘরে যে কথা বলেন সেই কথা পর্যন্ত ইসরাইলের নবী আল-ইয়াসা ইসরাইলের বাদশাহ্কে বলে দেন।”
13 তখন বাদশাহ্ এই হুকুম দিলেন, “সে কোথায় আছে তোমরা গিয়ে তা তালাশ করে বের কর যাতে লোক পাঠিয়ে আমি তাকে ধরে আনতে পারি।” পরে খবর আসল যে, তিনি দোথনে আছেন।
14 বাদশাহ্ তখন ঘোড়া, রথ ও একটা বড় সৈন্যদল সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। তারা রাতের বেলায় গিয়ে শহরটা ঘেরাও করল।
15 পরের দিন খুব ভোরে আল্লাহ্র বান্দার চাকর উঠে যখন বাইরে গেল তখন সে দেখতে পেল ঘোড়া ও রথ নিয়ে একদল সৈন্য শহর ঘেরাও করে ফেলেছে। সেই চাকর তখন বলল, “হায়, হায়! হে হুজুর, আমরা কি করব?”
16 জবাবে নবী বললেন, “ভয় কোরো না। যারা আমাদের সংগে আছে তারা ওদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী।”
17 তারপর আল-ইয়াসা এই মুনাজাত করলেন, “হে মাবুদ, তার চোখ খুলে দাও যেন সে দেখতে পায়।” তখন মাবুদ সেই চাকরের চোখ খুলে দিলেন। সে চেয়ে দেখতে পেল আল-ইয়াসার চারপাশে পাহাড়গুলো আগুনের রথ ও ঘোড়ায় ভরা।
18 শত্রুরা যখন আল-ইয়াসার দিকে নেমে আসছিল তখন তিনি মাবুদের কাছে এই মুনাজাত করলেন, “এই লোকগুলোকে তুমি আলোর ঝলকে অন্ধ করে দাও।” আল-ইয়াসার মুনাজাত অনুসারে মাবুদ তাদের অন্ধ করে দিলেন।
19 আল-ইয়াসা তাদের বললেন, “এটা সেই রাস্তাও নয় এবং সেই শহরও নয়। তোমরা আমার পিছনে পিছনে এস; যে লোকের তালাশ তোমরা করছ আমি তার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব।” এই বলে তিনি সামেরিয়াতে তাদের নিয়ে গেলেন।
20 শহরে ঢুকবার পর আল-ইয়াসা বললেন, “হে মাবুদ, এবার ওদের চোখ খুলে দাও যেন ওরা দেখতে পায়।” তখন মাবুদ তাদের চোখ খুলে দিলেন আর তারা দেখতে পেল যে, তারা সামেরিয়ার মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
21 ইসরাইলের বাদশাহ্ তাদের দেখে আল-ইয়াসাকে বললেন, “পিতা, আমি কি ওদের হত্যা করব?”
22 জবাবে তিনি বললেন, “না, ওদের মারবেন না। আপনার নিজের তলোয়ার ও ধনুক দিয়ে আপনি যাদের বন্দী করেছেন তাদের কি হত্যা করবেন? ওদের আপনি খাবার ও পানি দিন, যাতে তারা খেয়েদেয়ে তাদের মালিকের কাছে ফিরে যেতে পারে।”
23 কাজেই বাদশাহ্ তাদের জন্য একটা বড় মেজবানীর আয়োজন করলেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করলে পর তিনি তাদের বিদায় করে দিলেন আর তারা তাদের মালিকের কাছে ফিরে গেল। এতে সিরিয়ার সৈন্যদল ইসরাইলের রাজ্যের মধ্যে লুটপাট করা বন্ধ করে দিল।
24 এর কিছুকাল পরে সিরিয়ার বাদশাহ্ বিন্হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল জমায়েত করলেন এবং তাদের নিয়ে গিয়ে সামেরিয়া ঘেরাও করলেন।
25 তখন শহরে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এই ঘেরাও এতদিন ধরে চলল যে, একটা গাধার মাথা পর্যন্ত প্রায় এক কেজি রূপাতে এবং এক কেজির চার ভাগের এক ভাগ কবুতরের পায়খানা সাত গ্রাম রূপায় বিক্রি হতে লাগল।
26 ইসরাইলের বাদশাহ্ একদিন যখন শহরের দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে তাঁকে বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন।”
27 জবাবে বাদশাহ্ বললেন, “মাবুদ যদি সাহায্য না করেন তবে আমি কোথা থেকে তোমাকে সাহায্য করব? খামার থেকে, না আংগুর মাড়াইয়ের যন্ত্র থেকে?”
28 তারপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে?”স্ত্রীলোকটি বলল, “এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও, কাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’
29 কাজেই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছি। পরের দিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও।’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।”
30 স্ত্রীলোকটির কথা শুনে বাদশাহ্ তাঁর পোশাক ছিঁড়লেন। তিনি তখনও দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। তাতে লোকেরা দেখতে পেল যে, তাঁর পোশাকের তলায় তিনি ছালার চট পরে আছেন।
31 তিনি বললেন, “আজ যদি শাফটের ছেলে আল-ইয়াসার মাথা তাঁর কাঁধের উপর থাকে তবে আল্লাহ্ যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন!”
32 আল-ইয়াসা তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন আর তাঁর সংগে ছিলেন বৃদ্ধ নেতারা। বাদশাহ্ একজন লোককে আল-ইয়াসার কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু লোকটা সেখানে পৌঁছাবার আগেই আল-ইয়াসা বৃদ্ধ নেতাদের বললেন, “আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না সেই খুনী আমার মাথা কেটে ফেলবার জন্য কিভাবে একজন লোককে পাঠাচ্ছে? দেখুন, লোকটা আসলে পর আপনারা দরজাটা বন্ধ করে দেবেন এবং তার সামনে দরজাটা বন্ধই রাখবেন। তার পিছন পিছন কি তার মালিকের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে না?”
33 আল-ইয়াসা তখনও কথা বলছেন এমন সময় সেই লোকটি তাঁর কাছে আসল। তারপর বাদশাহ্ এসে বললেন, “এই বিপদ মাবুদের কাছ থেকেই এসেছে। তবে মাবুদের জন্য আর আমি দেরি করব কেন?”