1 হিষ্কিয় বিশ্বস্তভাবে সব কিছু করবার পরে আশেরিয়ার বাদশাহ্ সন্হেরীব এসে এহুদা আক্রমণ করলেন। তিনি দেয়াল-ঘেরা শহর ও গ্রামগুলো ঘেরাও করলেন, ভাবলেন সেগুলো নিজের জন্য জয় করে নেবেন।
2 হিষ্কিয় দেখলেন সন্হেরীব এসে গেছেন এবং জেরুজালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য মন স্থির করেছেন।
3 এ দেখে তিনি তাঁর সেনাপতিদের ও যোদ্ধাদের সংগে পরামর্শ করে শহরের বাইরের ঝর্ণাগুলোর পানি বন্ধ করে দেবেন বলে ঠিক করলেন। এই কাজে তাঁরা তাঁকে সাহায্য করলেন।
4 অনেক লোক জমায়েত হয়ে সমস্ত ঝর্ণা ও দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির স্রোত বন্ধ করে দিল। তারা বলেছিল, “আশেরিয়ার বাদশাহ্রা এসে কেন এত পানি পাবে?”
5 হিষ্কিয় দেয়ালের সব ভাংগা অংশগুলো এবং উঁচু পাহারা-ঘরগুলো মেরামত করে নিজেকে শক্তিশালী করলেন। এছাড়া সেই দেয়ালের বাইরে তিনি আর একটা দেয়াল তৈরী করলেন এবং দাউদ-শহরের মিল্লো আরও মজবুত করলেন। তিনি অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও ঢাল তৈরী করালেন।
6 তিনি লোকদের উপরে সেনাপতিদের নিযুক্ত করলেন এবং শহরের দরজার চকে তাদের একত্র করে এই কথা বলে উৎসাহ দিলেন,
7 “আপনারা শক্তিশালী ও সাহসী হন। আশেরিয়ার বাদশাহ্ ও তাঁর বিরাট সৈন্যদল দেখে আপনারা ভয় পাবেন না বা হতাশ হবেন না, কারণ তাঁর সংগে যারা আছে তাদের চেয়েও যিনি আমাদের সংগে আছেন তিনি আরও মহান।
8 তাঁর সংগে রয়েছে কেবল মানুষের শক্তি, কিন্তু আমাদের সাহায্য করতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে আমাদের সংগে রয়েছেন আমাদের মাবুদ আল্লাহ্।” লোকেরা এহুদার বাদশাহ্ হিষ্কিয়ের কথা শুনে তাঁর কথার উপর ভরসা করল।
9 পরে আশেরিয়ার বাদশাহ্ সন্হেরীব ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদল লাখীশ ঘেরাও করলেন এবং তাঁর কয়েকজন লোককে তিনি জেরুজালেমে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি এহুদার বাদশাহ্ হিষ্কিয়ের কাছে এবং সেখানে উপস্থিত এহুদার সমস্ত লোকদের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন,
10 “আশেরিয়ার বাদশাহ্ সন্হেরীব বলছেন, ‘তোমরা কিসের উপর ভরসা করে আছ যার দরুন তোমরা ঘেরাও হলেও জেরুজালেমেই থাকবে?
11 খিদে ও পিপাসায় যাতে তোমরা মর তাই হিষ্কিয় এই কথা বলে তোমাদের ভুলাচ্ছে যে, তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্ই আশেরিয়ার বাদশাহ্র হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবে।
12 হিষ্কিয় নিজেই কি পূজার উঁচু স্থান আর বেদীগুলো ধ্বংস করে দেয় নি? এহুদা ও জেরুজালেমের লোকদের কি সে বলে নি যে, মাত্র একটি কোরবানগাহের সামনেই তাদের এবাদত করতে হবে এবং তার উপর ধূপ জ্বালাতে হবে?
13 “ ‘অন্যান্য দেশের সব জাতিদের প্রতি আমি ও আমার পূর্বপুরুষেরা যা করেছি তা কি তোমরা জান না? সেই সব জাতির দেবতারা কি আমার হাত থেকে তাদের দেশ উদ্ধার করতে পেরেছে?
14 এই যে জাতিগুলোকে আমার পূর্বপুরুষেরা ধ্বংস করে ফেলেছেন তাদের সব দেবতাগুলোর মধ্যে কে আমার হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করতে পেরেছে? তাহলে কেমন করে তোমাদের আল্লাহ্ আমার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবে?
15 এখন তোমরা হিষ্কিয়কে এইভাবে তোমাদের ছলনা করতে ও ভুলিয়ে রাখতে দিয়ো না। তোমরা তাকে বিশ্বাস কোরো না, কারণ কোন জাতির বা কোন রাজ্যের দেবতা আমার কিংবা আমার পূর্বপুরুষদের হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করতে পারে নি। তাহলে এটা কত না নিশ্চয় যে, তোমাদের দেবতারা আমার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করতে পারবে না।’ ”
16 সন্হেরীবের লোকেরা মাবুদ আল্লাহ্ ও তাঁর গোলাম হিষ্কিয়ের বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা বলল।
17 এছাড়া সন্হেরীব ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্কে কুফরী করবার জন্য চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে এই কথা লিখলেন, “অন্যান্য দেশের জাতিদের দেবতারা যেমন আমার হাত থেকে তাদের লোকদের উদ্ধার করে নি, ঠিক সেইভাবে হিষ্কিয়ের আল্লাহ্ও আমার হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করবে না।”
18 সন্হেরীবের লোকেরা হিব্রু ভাষায় চিৎকার করে ঐ কথা বলতে লাগল, যাতে জেরুজালেমের যে লোকেরা দেয়ালের উপরে ছিল তারা ভীষণ ভয় পায় আর আশেরিয়ার লোকেরা শহরটা দখল করে নিতে পারে।
19 তারা মানুষের হাতে তৈরী দুনিয়ার সব জাতির দেবতাদের সম্বন্ধে যা বলেছিল জেরুজালেমের আল্লাহ্র বিষয়েও তা-ই বলল।
20 সেইজন্য বাদশাহ্ হিষ্কিয় ও আমোজের ছেলে নবী ইশাইয়া মুনাজাতের মধ্য দিয়ে বেহেশতের আল্লাহ্র কাছে ফরিয়াদ জানাতে লাগলেন।
21 এতে মাবুদ একজন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে দিলেন যিনি আশেরিয়ার বাদশাহ্র ছাউনির মধ্য থেকে সমস্ত যোদ্ধা, নেতা ও সেনাপতিদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেললেন। এতে সন্হেরীব লজ্জা পেয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর দেবতার মন্দিরে গেলে পর তাঁর কয়েকজন ছেলে তাঁকে হত্যা করল।
22 এইভাবে মাবুদ আশেরিয়ার বাদশাহ্ সন্হেরীবের এবং অন্যান্য সকলের হাত থেকে হিষ্কিয়কে ও জেরুজালেমের লোকদের রক্ষা করলেন। তিনি সব দিক দিয়েই তাদের নিরাপদে রাখলেন।
23 অনেকেই জেরুজালেমে মাবুদের উদ্দেশে উপহার নিয়ে আসল এবং এহুদার বাদশাহ্ হিষ্কিয়ের জন্য দামী উপহার আনল। তাতে সেই সময় থেকে সমস্ত জাতির লোক তাঁকে খুব সম্মান করতে লাগল।
24 সেই সময় হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন। হিষ্কিয় মাবুদের কাছে মুনাজাত করলে পর তিনি জবাব দিলেন এবং তাঁকে একটা অলৌকিক-চিহ্ন দিলেন।
25 কিন্তু হিষ্কিয়ের অন্তরে অহংকার দেখা দিল। তাঁর প্রতি যে রকম দোয়া করা হয়েছিল সেই অনুসারে তিনি কাজ করলেন না; এতে তাঁর উপর এবং এহুদা ও জেরুজালেমের উপর মাবুদের রাগ হল।
26 তখন হিষ্কিয় তাঁর দিলের অহংকারের কথা বুঝতে পেরে নিজেকে নত করলেন এবং জেরুজালেমের লোকেরাও তা-ই করল। সেইজন্য হিষ্কিয়ের সময়ে মাবুদের গজব তাদের উপর নেমে আসল না।
27 হিষ্কিয়ের অনেক ধন-সম্পদ ও সম্মান ছিল। তাঁর সোনা-রূপা, মণি-মুক্তা, খোশবু মসলা, ঢাল ও সমস্ত রকম দামী জিনিসপত্র রাখবার জন্য তিনি ধনভাণ্ডার তৈরী করালেন।
28 এছাড়া তিনি শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল রাখবার জন্য ভাণ্ডার-ঘর তৈরী করালেন এবং বিভিন্ন রকম পশুর ও ছাগল-ভেড়ার থাকবার ঘরও তৈরী করালেন।
29 তিনি নিজের জন্য অনেক গ্রাম ও শহর গড়ে তুললেন। তাঁর গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা অনেক হল, কারণ আল্লাহ্ তাঁকে অনেক ধন দিয়েছিলেন।
30 হিষ্কিয় জিহোন ঝর্ণার উপরের মুখ বন্ধ করে দাউদ-শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে পানি নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সব কাজেই সফল হয়েছিলেন।
31 দেশে যে অলৌকিক-চিহ্ন দেখানো হয়েছিল সেই বিষয় জিজ্ঞাসা করবার জন্য যখন ব্যাবিলনের নেতারা রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছিলেন তখন আল্লাহ্ তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্য তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মনে কি আছে তা প্রকাশ পায়।
32 হিষ্কিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর আল্লাহ্-ভয়ের কাজ সম্বন্ধে আমোজের ছেলে নবী ইশাইয়ার দর্শনের বইয়ে এবং “এহুদা ও ইসরাইলের বাদশাহ্দের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে।
33 পরে হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং দাউদের বংশধরদের কবরস্থানের উপরের অংশে তাঁকে দাফন করা হল। তিনি ইন্তেকাল করবার সময় এহুদার সকলে এবং জেরুজালেমের লোকেরা তাঁকে সম্মান দেখাল। তাঁর ছেলে মানশা তাঁর জায়গায় বাদশাহ্ হলেন।