1-2 তখন সোলায়মান বললেন, “মাবুদ, তুমি বলেছিলে তুমি ঘন মেঘে বাস করবে। আমি এখন তোমার জন্য একটা চমৎকার ঘর তৈরী করেছি; এটি হবে তোমার চিরকালের বাসস্থান।”
3 এই বলে বাদশাহ্ একত্র হওয়া সমস্ত বনি-ইসরাইলদের দিকে ঘুরে তাদের দোয়া করলেন। তখন লোকেরা দাঁড়িয়ে ছিল।
4 তারপর তিনি বললেন, “ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্র প্রশংসা হোক। তিনি আমার পিতা দাউদের কাছে নিজের মুখে যা ওয়াদা করেছিলেন তা নিজেই পূর্ণ করলেন। তিনি বলেছিলেন,
5 ‘আমার বান্দাদের মিসর থেকে বের করে আনবার পর নিজেকে প্রকাশ করবার স্থান হিসাবে একটি ঘর তৈরী করবার জন্য আমি বনি-ইসরাইলদের কোন গোষ্ঠীর শহর বেছে নিই নি, কিংবা আমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের উপরে নেতা হবার জন্য কোন লোককেও আমি বেছে নিই নি,
6 কিন্তু এখন আমার বাসস্থান হিসাবে আমি জেরুজালেমকে বেছে নিয়েছি এবং আমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের শাসন করবার জন্য দাউদকে বেছে নিয়েছি।’
7 “ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্র জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা আমার পিতা দাউদের দিলে ছিল।
8 কিন্তু মাবুদ আমার পিতা দাউদকে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা যে তোমার দিলে আছে তা ভাল।
9 তবে ঘরটি তুমি তৈরী করবে না, করবে তোমার ছেলে, যে তোমার নিজের সন্তান। সে-ই আমার জন্য সেই ঘর তৈরী করবে।’
10 “মাবুদ তাঁর ওয়াদা রক্ষা করেছেন। আমার পিতা দাউদ যে পদে ছিলেন আমি সেই পদ পেয়েছি। মাবুদের ওয়াদা অনুসারে আমি ইসরাইলের সিংহাসনে বসেছি এবং ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্র জন্য এই ঘরটি তৈরী করেছি।
11 সেখানে আমি সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রেখেছি যার মধ্যে রয়েছে বনি-ইসরাইলদের জন্য মাবুদের স্থাপন করা ব্যবস্থা।”
12 তারপর সোলায়মান সেখানে একত্র হওয়া বনি-ইসরাইলদের সামনে মাবুদের কোরবানগাহের কাছে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুললেন।
13 তিনি পাঁচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু একটা ব্রোঞ্জের মাচা তৈরী করিয়ে উঠানের মাঝখানে রেখেছিলেন। তিনি সেই মাচার উপর উঠে সমস্ত বনি-ইসরাইলদের সামনে হাঁটু পাতলেন এবং দু’হাত আসমানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
14 “হে আল্লাহ্, ইসরাইলের মাবুদ, বেহেশতে কিংবা দুনিয়াতে তোমার মত মাবুদ আর কেউ নেই। তোমার যে গোলামেরা মনেপ্রাণে তোমার পথে চলে তুমি তাদের পক্ষে তোমার অটল মহব্বতের ব্যবস্থা রক্ষা করে থাক।
15 তোমার গোলাম আমার পিতা দাউদের কাছে তুমি যে ওয়াদা করেছিলে তা তুমি রক্ষা করেছ। তুমি মুখে যা বলেছ কাজেও তা করেছ, আর আজকে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি।
16 “এখন হে ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্, তোমার গোলাম আমার পিতা দাউদের কাছে তুমি যে ওয়াদা করেছিলে তা রক্ষা কর। তুমি বলেছিলে, যদি তাঁর ছেলেরা তাঁর মত করে তোমার শরীয়ত অনুসারে চলবার দিকে মনোযোগ দেয় তবে ইসরাইলের সিংহাসনে বসবার জন্য তাঁর বংশে লোকের অভাব হবে না।
17 হে আল্লাহ্, ইসরাইলের মাবুদ, যে ওয়াদা তুমি তোমার গোলাম দাউদের কাছে করেছিলে তা সফল হোক।
18 “কিন্তু সত্যিই কি আল্লাহ্ দুনিয়াতে মানুষের সংগে বাস করবেন? আসমান, এমন কি, আসমানের সমস্ত জায়গা জুড়েও যখন তোমার স্থান অকুলান হয় তখন আমার তৈরী এই ঘরে কি তোমার জায়গা হবে?
19 তবুও হে আমার মাবুদ আল্লাহ্, তোমার গোলামের মুনাজাত ও অনুরোধে তুমি কান দাও। তোমার কাছে তোমার গোলাম কাকুতি-মিনতি করে যে মুনাজাত করছে তা তুমি শোন।
20 যে জায়গার কথা তুমি বলেছ যে, এখানে তোমার বাসস্থান হবে সেই জায়গার দিকে, অর্থাৎ এই বায়তুল-মোকাদ্দসের দিকে তোমার চোখ দিনরাত খোলা থাকুক। এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার গোলাম যখন মুনাজাত করবে তখন তুমি তা শুনো।
21 এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার গোলাম ও তোমার বান্দা বনি-ইসরাইলরা যখন অনুরোধ করবে তখন তাতে তুমি কান দিয়ো। তোমার বাসস্থান বেহেশত থেকে তুমি তা শুনো এবং তাদের মাফ কোরো।
22 “কোন লোককে অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় করবার দোষে দোষী করা হলে তার নিজের উপর বদদোয়া ডেকে আনবার জন্য যদি তাকে কসম খেতে বাধ্য করা হয় এবং সে গিয়ে তোমার এই ঘরের কোরবানগাহের সামনে সেই কসম খায়,
23 তবে তুমি বেহেশত থেকে সেই কথা শুনো এবং সেই মত কাজ কোরো। তখন তোমার গোলামদের তুমি বিচার করে দোষীর কাজের ফল তার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে তাকে দোষী বলে প্রমাণ কোরো আর নির্দোষকে তার কাজ অনুসারে ফল দিয়ে তাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ কোরো।
24 “তোমার বিরুদ্ধে গুনাহ্ করবার দরুন যখন তোমার বান্দা বনি-ইসরাইলরা শত্রুর কাছে হেরে গিয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে এবং বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমার গৌরব করে তোমার কাছে মুনাজাত ও অনুরোধ করবে,
25 তখন বেহেশত থেকে তুমি তা শুনো এবং তোমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের গুনাহ্ মাফ করে যে দেশ তুমি তাদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছ সেখানে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসো।
26 “তোমার বিরুদ্ধে তোমার বান্দাদের গুনাহ্ করবার দরুন যখন আকাশ বন্ধ হয়ে বৃষ্টি পড়বে না তখন তারা যদি এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার গৌরব করে ও তোমার কাছে মুনাজাত করে এবং তোমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে গুনাহ্ থেকে ফেরে,
27 তবে তুমি বেহেশত থেকে তা শুনো এবং তোমার গোলামদের, অর্থাৎ তোমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের গুনাহ্ মাফ করে দিয়ো। জীবনে ঠিকভাবে চলতে তাদের শিক্ষা দিয়ো এবং সম্পত্তি হিসাবে যে দেশ তুমি তাদের দিয়েছ সেই দেশের উপর বৃষ্টি দিয়ো।
28 “যদি দেশে দুর্ভিক্ষ কিংবা মহামারী দেখা দেয়, যদি ফসল শুকিয়ে-যাওয়া রোগ কিংবা ছাৎলা-পড়া রোগ হয়, যদি ফসলে ফড়িং বা পংগপাল লাগে, যদি শত্রু তাদের কোন শহর ঘেরাও করে- যে কোন রকম বিপদ কিংবা রোগ দেখা দিক না কেন,
29 তখন যদি তোমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের কেউ নিজের যন্ত্রণা ও কষ্ট বুঝে বায়তুল-মোকাদ্দসের দিকে হাত বাড়িয়ে মুনাজাত ও মিনতি করে,
30 তবে তোমার বাসস্থান বেহেশত থেকে তুমি তা শুনো এবং তাকে মাফ কোরো। তার সব কাজ অনুসারে বিচার কোরো, কারণ তুমি তো তার দিলের অবস্থা জান্ত কেবল তুমিই সমস্ত মানুষের দিলের খবর জান।
31 তুমি তা কোরো যাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের তুমি যে দেশ দিয়েছ সেখানে বংশের পর বংশ ধরে তোমার বান্দারা সারা জীবন তোমাকে ভয় করে তোমার পথে চলে।
32 “এছাড়া তোমার বান্দা বনি-ইসরাইল নয় এমন কোন বিদেশী তোমার মহান নাম এবং তোমার শক্তিশালী ও বাড়িয়ে দেওয়া হাতের কথা শুনে যখন দূর দেশ থেকে এসে বায়তুল-মোকাদ্দসের দিকে ফিরে মুনাজাত করবে,
33 তখন তোমার বাসস্থান বেহেশত থেকে তুমি তা শুনো। সে যা চায় তার জন্য তা কোরো যেন দুনিয়ার সমস্ত লোক তোমাকে জানতে পারে এবং তোমার নিজের বান্দা বনি-ইসরাইলদের মত তারাও তোমাকে ভয় করতে পারে আর জানতে পারে যে, আমার তৈরী এই ঘর তোমারই ঘর।
34 “তুমি যখন তোমার বান্দাদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাবে তখন তারা যেখানেই থাকুক না কেন সেখান থেকে যদি তোমার বেছে নেওয়া এই শহরের দিকে ও তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে তোমার কাছে মুনাজাত করে,
35 তবে বেহেশত থেকে তুমি তাদের মুনাজাত ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো।
36 “তারা যখন তোমার বিরুদ্ধে গুনাহ্ করবে- অবশ্য গুনাহ্ করে না এমন লোক নেই- আর তুমি তাদের উপর রাগ করে শত্রুর হাতে তাদের তুলে দেবে ও শত্রুরা তাদের বন্দী করে কাছের বা দূর দেশে নিয়ে যাবে,
37 তখন বন্দী হয়ে থাকা সেই দেশে যদি তারা মন ফিরায় এবং অনুতপ্ত হয়ে তোমাকে অনুরোধ করে বলে, ‘আমরা গুনাহ্ করেছি, অন্যায় করেছি এবং খারাপভাবে চলেছি,’ তবে তুমি তাদের মুনাজাত শুনো।
38 ঐ দেশে যদি তারা মনেপ্রাণে তোমার দিকে ফেরে এবং যে দেশ তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছ সেই দেশের দিকে, তোমার বেছে নেওয়া শহরের দিকে, তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে মুনাজাত করে,
39 তবে তুমি তোমার বাসস্থান বেহেশত থেকে তাদের মুনাজাত ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো। তোমার যে বান্দারা তোমার বিরুদ্ধে গুনাহ্ করেছে সেই বান্দাদের তুমি মাফ কোরো।
40 “হে আমার আল্লাহ্, এই জায়গায় যে সব মুনাজাত করা হবে তার দিকে যেন এখন তোমার চোখ ও কান খোলা থাকে।
41 “হে আল্লাহ্ মাবুদ, এখন তোমার বিশ্রাম-স্থানে এস;তুমি এস, আর তোমার কুদরতের সিন্দুক আসুক।হে আল্লাহ্ মাবুদ,তোমার ইমামেরা উদ্ধারের পোশাক পরুক।তুমি যে সব মেহেরবানী করেছতার জন্য তোমার ভক্তেরা আনন্দ করুক।
42 হে আল্লাহ্ মাবুদ,তোমার অভিষিক্ত বান্দার মুনাজাত তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না;তোমার গোলাম দাউদের প্রতি তুমি যে অটল মহব্বত দেখিয়েছতা মনে করে দেখ।”