1 উদ্ধার-ঈদ ও খামিহীন রুটির ঈদের তখন মাত্র আর দু’দিন বাকী। প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা গোপনে ঈসাকে ধরে হত্যা করবার উপায় খুঁজছিলেন।
2 তাঁরা বললেন, “ঈদের সময়ে নয়; লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে।”
3 ঈসা তখন বেথানিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন। তিনি যখন খাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী ও খাঁটি আতর আনল। পাত্রটা ভেংগে সে ঈসার মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল।
4 সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিরক্ত হয়ে একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এইভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন?
5 এটা বিক্রি করলে তো তিনশো দীনারেরও বেশী হত এবং তা গরীবদের দেওয়া যেত।” এই বলে তাঁরা স্ত্রীলোকটিকে বকাবকি করতে লাগলেন।
6 তখন ঈসা বললেন, “থাম, কেন তোমরা ওকে দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে।
7 গরীবেরা সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, আর যখন ইচ্ছা তখনই তোমরা তাদের সাহায্য করতে পার, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।
8 ও যা পেরেছে তা করেছে। আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে ও আগেই আমার গায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে।
9 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, দুনিয়ার যে কোন জায়গায় আল্লাহ্র দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ করা হবে, সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ওর এই কাজের কথাও বলা হবে।”
10 এর পর এহুদা ইষ্কারিয়োৎ নামে সেই বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন ঈসাকে ধরিয়ে দেবার জন্য প্রধান ইমামদের কাছে গেল।
11 ইমামেরা এহুদার কথা শুনে খুশী হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে কথা দিলেন। তখন এহুদা ঈসাকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।
12 খামিহীন রুটির ঈদের প্রথম দিনে উদ্ধার-ঈদের মেজবানীর জন্য ভেড়ার বাচ্চা জবাই করা হত। তাই সাহাবীরা ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-ঈদের মেজবানী কোথায় গিয়ে আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?”
13 তখন ঈসা তাঁর দু’জন সাহাবীকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা শহরে যাও। সেখানে এমন একজন পুরুষ লোকের দেখা পাবে, যে একটা কলসীতে করে পানি নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তার পিছনে পিছনে যেয়ো।
14 সে যে বাড়ীতে ঢুকবে সেই বাড়ীর কর্তাকে বোলো, ‘ওস্তাদ বলছেন, সাহাবীদের সংগে যেখানে আমি উদ্ধার-ঈদের মেজবানী খেতে পারি আমার সেই মেহমান্তখানাটা কোথায়?’
15 এতে সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে। সব কিছু সেখানেই প্রস্তুত কোরো।”
16 তখন সাহাবীরা গিয়ে শহরে ঢুকলেন, আর ঈসা যেমন বলেছিলেন সব কিছু তেমনই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-ঈদের মেজবানী প্রস্তুত করলেন।
17 সন্ধ্যা হলে পর ঈসা সেই বারোজনকে নিয়ে সেখানে গেলেন।
18 তাঁরা যখন বসে খাচ্ছিলেন তখন ঈসা বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে, আর সে আমার সংগে খাচ্ছে।”
19 সাহাবীরা দুঃখিত হলেন এবং একজনের পরে আর একজন বলতে লাগলেন, “সে কি আমি, হুজুর?”
20 ঈসা তাঁদের বললেন, “সে এই বারোজনের মধ্যে একজন, যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে রুটি ডুবাচ্ছে।
21 ইব্ন্তেআদমের মৃত্যুর বিষয়ে পাক-কিতাবে যা লেখা আছে তিনি সেভাবেই মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়! সেই লোকের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।”
22 খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় ঈসা রুটি নিয়ে আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানালেন এবং তা টুকরা টুকরা করে সাহাবীদের হাতে দিয়ে বললেন, “এই নাও, এটা আমার শরীর।”
23 তারপর তিনি পেয়ালা নিয়ে আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানালেন এবং সাহাবীদের দিলেন। তাঁরা সবাই সেই পেয়ালা থেকে খেলেন।
24 তখন ঈসা তাঁদের বললেন, “এ আমার রক্ত যা অনেকের জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য আল্লাহ্র নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে।
25 তোমাদের সত্যি বলছি, যতদিন আমি আল্লাহ্র রাজ্যে আংগুর ফলের রস আবার নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আর আমি তা খাব না।”
26 এর পরে তাঁরা একটা কাওয়ালী গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।
27 ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পাক-কিতাবে লেখা আছে, ‘আমি পালককে মেরে ফেলব, তাতে মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’
28 তবে আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।”
29 তখন পিতর বললেন, “সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে বাধা আসবে না।”
30 ঈসা তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ ভোর রাতে মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।”
31 কিন্তু পিতর আরও জোর দিয়ে বললেন, “যদি আমাকে আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না যে, আমি আপনাকে চিনি না।” সাহাবীরা সবাই সেই একই কথা বললেন।
32 এর পরে ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আমি যতক্ষণ মুনাজাত করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”
33 এই বলে তিনি পিতর, ইয়াকুব ও ইউহোন্নাকে নিজের সংগে নিলেন এবং মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট পেতে লাগলেন।
34 তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে জেগে থাক।”
35 তার পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে মুনাজাত করলেন যেন সম্ভব হলে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে দূর হয়।
36 তিনি বললেন, “আব্বা, পিতা, তোমার কাছে তো সবই সম্ভব। এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে তুমি নিয়ে যাও। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।”
37 এর পরে তিনি সাহাবীদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন তঁাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন, তুমি ঘুমা"ছ? এক ঘণ্টাও কি জেগে থাকতে পার নি?
38 জেগে থাক ও মুনাজাত কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরের ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু শরীর দুর্বল।”
39 পরে ঈসা আবার গিয়ে সেই একই মুনাজাত করলেন।
40 ফিরে এসে তিনি দেখলেন আবার তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল। সাহাবীরা ঈসাকে কি জবাব দেবেন বুঝলেন না।
41 তৃতীয় বার ফিরে এসে তিনি তাঁদের বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমা"ছ আর বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে। সময় এসে পড়েছে। দেখ, ইব্ন্তেআদমকে এখন গুনাহ্গারদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
42 ওঠো, চল আমরা যাই। যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।”
43 ঈসা তখনও কথা বলছেন, এমন সময় এহুদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান ইমামেরা, আলেমেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন।
44 ঈসাকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে-ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।”
45 তাই এহুদা সোজা ঈসার কাছে গিয়ে বলল, “হুজুর!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল।
46 তখন সেই লোকেরা ঈসাকে ধরল।
47 যাঁরা ঈসার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।
48 ঈসা সেই লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন?
49 আমি তো প্রত্যেক দিনই আপনাদের মধ্যে থেকে বায়তুল-মোকাদ্দসে শিক্ষা দিতাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। অবশ্য কিতাবের কথা পূর্ণ হতে হবে।”
50 সেই সময় সাহাবীরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
51 একজন যুবক কেবল একটা চাদর পরে ঈসার পিছনে পিছনে যাচ্ছিল।
52 লোকেরা যখন তাকে ধরল তখন সে চাদরখানা ছেড়ে দিয়ে উলংগ অবস্থায় পালিয়ে গেল।
53 সেই লোকেরা ঈসাকে নিয়ে মহা-ইমামের কাছে গেল। সেখানে প্রধান ইমামেরা, বৃদ্ধ নেতারা ও আলেমেরা একসংগে জমায়েত হলেন।
54 পিতর দূরে দূরে থেকে ঈসার পিছনে যেতে যেতে মহা-ইমামের উঠানে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে রক্ষীদের সংগে বসে তিনি আগুন পোহাতে লাগলেন।
55 প্রধান ইমামেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা ঈসাকে হত্যা করবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন, কিন্তু কোন সাক্ষ্যই তাঁরা পেলেন না।
56 ঈসার বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
57 তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল,
58 “আমরা ওকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরী এই এবাদত-খানা আমি ভেংগে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে এমন একটা এবাদত-খানা তৈরী করব যা মানুষের তৈরী নয়।’ ”
59 কিন্তু তবুও তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
60 তখন মহা-ইমাম সকলের সামনে দাঁড়িয়ে ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কোন জবাবই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এই লোকেরা এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?”
61 ঈসা কিন্তু জবাব না দিয়ে চুপ করেই রইলেন।মহা-ইমাম আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি গৌরবময় আল্লাহ্র পুত্র মসীহ্?”
62 ঈসা বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র ডান দিকে ইব্ন্তেআদমকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আসমানের মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”
63 এতে মহা-ইমাম তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার?
64 আপনারা তো শুনলেনই যে, ও কুফরী করল। আপনারা কি মনে করেন?”তাঁরা সবাই ঈসাকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন।
65 তখন কয়েকজন তাঁর গায়ে থুথু দিলেন এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মেরে বললেন, “তুই না নবী? কিছু বল্ দেখি!” তারপর রক্ষীরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে চড় মারতে লাগল।
66 পিতর যখন নীচে উঠানে ছিলেন তখন মহা-ইমামের একজন চাকরাণী সেখানে আসল।
67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখল এবং ভাল করে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “আপনিও তো ঐ নাসরতের ঈসার সংগে ছিলেন।”
68 পিতর কিন্তু অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানিও না, বুঝিও না।”এই বলে পিতর বাইরের দরজার কাছে গেলেন, আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল।
69 চাকরাণীটা পিতরকে সেখানে দেখে যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আবার বলল, “এই লোকটি ওদের একজন।”
70 পিতর আবার অস্বীকার করলেন। যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারাও কিছুক্ষণ পর পিতরকে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন, কারণ তুমি তো গালীলের লোক।”
71 পিতর তখন নিজেকে বদদোয়া দিলেন এবং কসম খেয়ে বললেন, “তোমরা যার সম্বন্ধে বলছ তাকে আমি চিনি না।”
72 আর তখনই দ্বিতীয় বার মোরগ ডেকে উঠল। ঈসা যে বলেছিলেন, “মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না,” সেই কথা তখন পিতরের মনে পড়ল। তাতে তিনি কান্নায় ভেংগে পড়লেন।