1 পরে আবার একদিন অনেক লোকের ভিড় হল। এই সব লোকদের কাছে কোন খাবার ছিল না বলে ঈসা তাঁর সাহাবীদের ডেকে বললেন,
2 “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ আজ তিন দিন হল এরা আমার সংগে সংগে আছে, আর এদের কাছে কোন খাবার নেই।
3 যদি আমি এই অবস্থায় এদের বাড়ী পাঠিয়ে দিই তবে তারা পথেই অজ্ঞান হয়ে পড়বে, কারণ এদের মধ্যে অনেকেই অনেক দূর থেকে এসেছে।”
4 সাহাবীরা বললেন, “কিন্তু এই নির্জন জায়গায় এদের খাওয়াবার জন্য কে কোথা থেকে এত রুটি পাবে?”
5 ঈসা জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কাছে কয়টা রুটি আছে?”তাঁরা বললেন, “সাতখানা।”
6 তিনি লোকদের মাটিতে বসতে হুকুম দিলেন। পরে সেই রুটি সাতখানা নিয়ে তিনি আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানিয়ে ভাংলেন এবং লোকদের দেবার জন্য সাহাবীদের হাতে দিলেন আর সাহাবীরা তা লোকদের হাতে দিলেন।
7 সাহাবীদের কাছে কয়েকটা ছোট মাছও ছিল। ঈসা সেই মাছগুলোর জন্যও শুকরিয়া জানালেন এবং তা লোকদের ভাগ করে দেবার জন্য সাহাবীদের বললেন।
8 লোকেরা পেট ভরে খেল। পরে যে টুকরাগুলো পড়ে রইল সাহাবীরা তা তুলে নিয়ে সাতটা টুকরি ভরতি করলেন।
9-10 কমবেশী চার হাজার পুরুষ লোক সেখানে ছিল। এর পরে তিনি লোকদের বিদায় দিলেন এবং সাহাবীদের সংগে একটা নৌকায় উঠে দল্মনুথা এলাকায় গেলেন।
11 সেখানে ফরীশীরা এসে ঈসার সংগে তর্ক করতে লাগলেন এবং তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্য বেহেশত থেকে কোন একটা চিহ্ন দেখতে চাইলেন।
12 এতে ঈসা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “এই কালের লোকেরা চিহ্নের তালাশ করে কেন? আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, কোন চিহ্নই এদের দেখানো হবে না।”
13 তারপর তিনি তাঁদের ছেড়ে আবার নৌকায় উঠে সাগরের অন্য পারে গেলেন।
14 সাহাবীরা সংগে করে রুটি নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। নৌকার মধ্যে তাঁদের কাছে মাত্র একখানা রুটি ছিল।
15 এই সময় ঈসা বললেন, “তোমরা সতর্ক থাক, ফরীশীদের ও হেরোদের খামি থেকে সাবধান হও।”
16 এতে সাহাবীরা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগলেন, “আমাদের কাছে রুটি নেই বলে উনি এই কথা বলছেন।”
17 সাহাবীরা কি বিষয়ে বলছেন তা বুঝতে পেরে ঈসা তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন বলছ যে, তোমাদের রুটি নেই? তোমরা কি এখনও জান না বা বোঝ না? তোমাদের অন্তর কি কঠিন হয়ে গেছে?
18 তোমাদের চোখ থাকতেও কি দেখতে পাও না? কান থাকতেও কি শুনতে পাও না? মনেও কি পড়ে না,
19 যখন আমি পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচখানা রুটি ভেংগেছিলাম তখন কত টুকরি রুটির টুকরা তোমরা কুড়িয়ে তুলেছিলে?”সাহাবীরা জবাব দিলেন, “বারো টুকরি।”
20 ঈসা আবার বললেন, “আমি যখন চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটি ভেংগেছিলাম তখন কত টুকরি রুটির টুকরা তোমরা কুড়িয়ে তুলেছিলে?”তাঁরা বললেন, “সাত টুকরি।”
21 তখন তিনি তাঁদের বললেন, “তাহলে তোমরা কি এখনও বোঝ না?”
22 পরে ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা বৈৎসৈদা গ্রামে গেলেন। সেখানকার লোকেরা একজন অন্ধ লোককে তাঁর কাছে নিয়ে আসল এবং লোকটির গায়ে হাত রাখবার জন্য তাঁকে অনুরোধ করতে লাগল।
23 ঈসা সেই অন্ধ লোকটিকে হাত ধরে গ্রামের বাইরে নিয়ে গেলেন। তার পরে লোকটির চোখে থুথু দিলেন এবং তার গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?”
24 লোকটি তাকিয়ে দেখে বলল, “আমি লোক দেখতে পাচ্ছি; তারা দেখতে গাছের মত, আবার হেঁটেও বেড়াচ্ছে।”
25 ঈসা আর একবার লোকটির চোখের উপরে হাত দিলেন। এইবার তার চোখ খুলে গেল এবং সে দেখবার শক্তি ফিরে পেল। সে পরিষ্কার ভাবে সব কিছু দেখতে লাগল।
26 ঈসা তাকে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেবার সময় বললেন, “বৈৎসৈদা গ্রামে যেয়ো না।”
27 তারপর ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা সিজারিয়া-ফিলিপি শহরের আশেপাশের গ্রামে গেলেন। যাবার পথে তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?”
28 সাহাবীরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া; কেউ কেউ বলে ইলিয়াস নবী; আবার কেউ কেউ বলে আপনি নবীদের মধ্যে একজন।”
29 তখন ঈসা বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”পিতর জবাব দিলেন, “আপনি সেই মসীহ্।”
30 ঈসা তাঁদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা তাঁর সম্বন্ধে কাউকে কিছু না বলেন।
31 পরে ঈসা তাঁর সাহাবীদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, ইব্ন্তেআদমকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। বৃদ্ধ নেতারা, প্রধান ইমামেরা এবং আলেমেরা তাঁকে অগ্রাহ্য করবেন। তাঁকে হত্যা করা হবে এবং তিন দিন পরে তাঁকে মৃত্যু থেকে আবার জীবিত হয়ে উঠতে হবে।
32 এই সব কথা তিনি স্পষ্টভাবেই বললেন। তখন পিতর ঈসাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন।
33 ঈসা মুখ ফিরিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকালেন এবং পিতরকে ধমক দিয়ে বললেন, “শয়তান, আমার কাছ থেকে দূর হও। আল্লাহ্র যা, তা তুমি ভাবছ না, কিন্তু মানুষের যা, তা-ই ভাবছ।”
34 এর পরে তিনি সাহাবীদের আর অন্য লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “যদি কেউ আমার পথে আসতে চায় তবে সে নিজের ইচ্ছামত না চলুক; নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে সে আমার পিছনে আসুক।
35 যে কেউ তার নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য এবং আল্লাহ্র দেওয়া সুসংবাদের জন্য তার প্রাণ হারায়, সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে।
36 যদি কেউ সমস্ত দুনিয়া লাভ করে তার বিনিময়ে তার সত্যিকারের জীবন হারায় তবে তার কোন লাভ নেই,
37 কারণ সত্যিকারের জীবন ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মত কি আছে?
38 এই কালের বেঈমান ও গুনাহ্গার লোকদের মধ্যে যদি কেউ আমাকে নিয়ে আর আমার কথা নিয়ে লজ্জাবোধ করে, তবে ইব্ন্তেআদম যখন পবিত্র ফেরেশতাদের সংগে করে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনিও সেই লোকের সম্বন্ধে লজ্জাবোধ করবেন।”