1 এক দিন এই ঘটনা হল, তালুতের পুত্র যোনাথন তাঁর অস্ত্র-বাহক যুবককে বললেন, চল, আমরা ঐ দিকে ফিলিস্তিনীদের প্রহরী সৈন্যদলের কাছে যাই; কিন্তু তিনি এই কথা তাঁর পিতাকে জানালেন না।
2 তখন তালুত গিবিয়ার প্রান্তভাগে মিগ্রোণে অবস্থিত ডালিম গাছের তলে অবস্থান করছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে অনুমান ছয় শত লোক ছিল।
3 আর আলী, যিনি শীলোতে মাবুদের ইমাম ছিলেন, তাঁর সন্তান পীনহসের সন্তান ঈখাবোদের ভাই অহীটুবের পুত্র যে অহিয়, তিনি এফোদ পরিহিত ছিলেন। আর যোনাথন যে বের হয়ে গেছেন সেই কথা লোকেরা জানত না।
4 যোনাথন যে পাহাড়ী পথ দিয়ে ফিলিস্তিনীদের প্রহরী সৈন্যদলের কাছে যেতে চেষ্টা করলেন, সেই ঘাটের মধ্যস্থলে এক পাশে সুউচ্চ এক শৈল এবং অন্য পাশে সুউচ্চ আর এক শৈল ছিল; তার একটি নাম বোৎসেস ও আর একটির নাম সেনি।
5 তার মধ্যে একটি শৈল উত্তর দিকে মিকমসের অভিমুখে, আর একটি ছিল দক্ষিণ দিকে গেবার অভিমুখে।
6 আর যোনাথন তাঁর অস্ত্রবাহক যুবককে বললেন, চল, আমরা ঐ দিকে খৎনা-না-করানো প্রহরীদলের কাছে যাই; হয় তো মাবুদ আমাদের জন্য কাজ করবেন; কেননা অনেকের দ্বারা হোক বা অল্পের দ্বারা হোক, নিস্তার করতে মাবুদের কোন প্রতিবন্ধক নেই।
7 তখন তাঁর অস্ত্রবাহক বললো, আপনার যা মনে আসে, তা-ই করুন; সেই দিকে ফিরুন, দেখুন, আপনার মনোবাঞ্ছা অনুসারে আমি আপনার সঙ্গে সঙ্গে আছি।
8 যোনাথন বললেন, দেখ, আমরা ঐ লোকদের দিকে অগ্রসর হব, ওদের সামনে দেখা দেব।
9 যদি তারা আমাদের বলে, থাক, আমরা তোমাদের কাছে আসবো, তবে আমরা নিজেদের স্থানে দাঁড়িয়ে থাকব, তাদের কাছে যাব না।
10 কিন্তু যদি বলে, আমাদের কাছে এসো, তবে আমরা যাব, কেননা মাবুদ আমাদের হাতে তাদের তুলে দিয়েছেন; এ-ই আমাদের চিহ্ন হবে।
11 পরে তাঁরা দু’জন ফিলিস্তিনীদের প্রহরীদলের কাছে দেখা দিলে ফিলিস্তিনীরা বললো, দেখ, ইবরানীরা যেসব গর্তে লুকিয়ে ছিল, তা থেকে এখন বের হয়ে আসছে।
12 পরে সেই প্রহরীদলের লোকেরা যোনাথন ও তাঁর অস্ত্রবাহককে বললো, আমাদের কাছে এসো, আমরা তোমাদের কিছু দেখাব। যোনাথন তাঁর অস্ত্রবাহককে বললেন, আমার পিছনে এসো, কারণ মাবুদ ওদেরকে ইসরাইলের অধিকারভুক্ত করেছেন।
13 পরে যোনাথন হামাগুড়ি দিয়ে উঠে গেলেন এবং তাঁর অস্ত্রবাহক তাঁর পিছনে গেল; তাতে সেই লোকেরা যোনাথনের সম্মুখে মারা পড়তে লাগল এবং তাঁর অস্ত্রবাহক তাঁর পিছনে পিছনে তাদের হত্যা করতে লাগল।
14 যোনাথন ও তাঁর অস্ত্রবাহকের কৃত এই প্রথম হত্যাকাণ্ডে এক বিঘার প্রায় অর্ধেক একর পরিমিত ভূমিতে কমবেশি কুড়ি জন নিহত হল।
15 আর শিবিরের মধ্যে, ক্ষেতে ও সমস্ত সৈন্যের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হল, প্রহরী ও বিনাশক-দলগুলোও ভয়ে কাঁপতে লাগল; আর ভূমিকম্প হল; এভাবে তাদের মধ্যে আল্লাহ্ থেকে মহাভয় উপস্থিত হল।
16 তখন বিন্ইয়ামীনের গিবিয়াতে অবস্থিত তালুতের প্রহরীরা চেয়ে দেখলো; আর দেখ, লোকের ভিড় ভেঙ্গে গেল, তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লো।
17 তখন তালুত তাঁর সঙ্গীদের বললেন, একবার লোক গণনা করে দেখ, আমাদের মধ্য থেকে কে গেছে? পরে তারা গণনা করে দেখলো যোনাথন ও তাঁর অস্ত্রবাহক সেখানে নেই।
18 তখন তালুত অহিয়কে বললেন, আল্লাহ্র সিন্দুক এই স্থানে আন; কেননা সেই দিনে আল্লাহ্র সিন্দুক বনি-ইসরাইলদের মধ্যে ছিল।
19 পরে যখন তালুত ইমামের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ফিলিস্তিনীদের সৈন্যদের মধ্যে উত্তরোত্তর কোলাহল বৃদ্ধি পেতে লাগল। তাতে তালুত ইমামকে বললেন, হাত টেনে নাও।
20 আর তালুত ও তাঁর সঙ্গী সমস্ত লোক সমাগত হয়ে যুদ্ধে গমন করলেন, আর, দেখ প্রত্যেকজনের তলোয়ার একে অন্যের প্রতিকূল হওয়াতে অতিশয় কোলাহল হচ্ছিল।
21 আর যে ইবরানীরা আগে ফিলিস্তিনীদের পক্ষ হয়েছিল, যারা চারদিক থেকে তাদের সঙ্গে শিবিরের মধ্যে এসেছিল, তারাও তালুত ও যোনাথনের সঙ্গী ইসরাইলদের সঙ্গে যোগ দিল।
22 আর ইসরাইলের যে সমস্ত লোক পর্বতময় আফরাহীম প্রদেশে লুকিয়ে ছিল, তারাও ফিলিস্তিনীদের পলায়নের সংবাদ শুনে যুদ্ধে তাদের পিছনে তাড়া করতে লাগল।
23 এই ভাবেই মাবুদ ঐ দিনে ইসরাইলকে নিস্তার করলেন এবং বৈৎ-আবনের পার পর্যন্ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো।
24 ঐ দিনে ইসরাইল লোকেরা দুর্দশাপন্ন হয়েছিল, কিন্তু তালুত লোকদেরকে এই কসম করিয়েছিলেন, সন্ধ্যাবেলার আগে, আমি যে পর্যন্ত আমার দুশমনদের প্রতিফল না দিই, সেই পর্যন্ত যে কেউ খাদ্য গ্রহণ করবে, সে বদদোয়াগ্রস্ত হবে। এজন্য লোকদের মধ্যে কেউই খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ করলো না।
25 পরে সকলে বনের মধ্যে গেল, সেখানে ভূমির উপরে মধু ছিল।
26 আর লোকেরা যখন বনে উপস্থিত হল, দেখ, মধু ক্ষরছে, কিন্তু কেউ সেই কসম ভাঙ্গবার ভয়ে তা মুখে তুললো না;
27 কিন্তু যোনাথনের পিতা লোকদের যে কসম করিয়েছিলেন, যোনাথন তা শোনেন নি, তাই তিনি তাঁর হাতে থাকা লাঠির অগ্রভাগ বাড়িয়ে দিয়ে একটি মধুর চাকে ডুবিয়ে হাতে করে মুখে দিলেন; তাতে তাঁর চোখ সতেজ হল।
28 তখন লোকদের মধ্যে এক জন বললো, তোমার পিতা শপথ সহকারে লোকদেরকে এই দৃঢ় হুকুম দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আজ খাদ্য গ্রহণ করবে, সে বদদোয়াগ্রস্ত হবে; কিন্তু সমস্ত লোক ক্লান্ত হয়েছে।
29 যোনাথন বললেন, আমার পিতা লোকদেরকে ভয়ে ব্যাকুল করেছেন; আরজ করি, দেখ, এই একটুখানি মধু মুখে দেওয়াতে আমার চোখ কেমন সতেজ হল।
30 আজ যদি লোকেরা দুশমনদের থেকে পাওয়া লুটের দ্রব্য থেকে যথেষ্ট আহার করতে পেত, তবে আরও সতেজ হত। কেননা এখন ফিলিস্তিনীদের মধ্যে মহাহত্যা হয় নি।
31 ঐ দিনে তারা মিক্মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত ফিলিস্তিনীদেরকে আক্রমণ করলো; আর লোকেরা অতিশয় ক্লান্ত হয়ে পড়লো।
32 পরে তারা লুটদ্রব্যের দিকে দৌড়ে ভেড়া, গরু ও বাছুর ধরে ভূমিতে জবেহ্ করে রক্তসুদ্ধ ভোজন করতে লাগল।
33 তখন কেউ কেউ তালুতকে বললো, দেখুন, লোকেরা রক্তসুদ্ধ ভোজন করে মাবুদের বিরুদ্ধে গুনাহ্ করছে; তাতে তিনি বললেন, তোমরা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছ; এখন আমার কাছে একটি বড় পাথর গড়িয়ে আন।
34 তালুত আরও বললেন, তোমরা চারদিকে গিয়ে তাদেরকে বল, তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গরু ও প্রত্যেকজন যার যার ভেড়া আমার কাছে আন, আর এই স্থানে জবেহ্ করে ভোজন কর; রক্তসুদ্ধ ভোজন করে মাবুদের বিরুদ্ধে গুনাহ্ করো না। তাতে সমস্ত লোক সেই রাত্রে প্রত্যেকে নিজ নিজ গরু সঙ্গে করে এনে সেই স্থানে জবেহ্ করলো।
35 আর তালুত মাবুদের উদ্দেশে একটি কোরবানগাহ্ তৈরি করলেন, তা মাবুদের উদ্দেশে তাঁর নির্মিত প্রথম কোরবানগাহ্।
36 পরে তালুত বললেন, চল, আমরা রাত্রে ফিলিস্তিনীদের পেছন পেছন নেমে গিয়ে প্রভাত পর্যন্ত তাদের দ্রব্য লুট করি এবং তাদের এক জনকেও অবশিষ্ট রাখবো না। তারা বললো, আপনার দৃষ্টিতে যা ভাল মনে হয়, তা-ই করুন। পরে ইমাম বললো, এসো, আমরা এই স্থানে আল্লাহ্র কাছে উপস্থিত হই।
37 তাতে তালুত আল্লাহ্র কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি ফিলিস্তিনীদের পিছনে নেমে যাব? তুমি কি তাদের ইসরাইলের হাতে তুলে দেবে? কিন্তু সেদিন তিনি তাঁকে জবাব দিলেন না।
38 তখন তালুত বললেন, হে লোকদের সমস্ত নেতৃবর্গ, তোমরা কাছে এসো এবং আজকের এই গুনাহ্ কিসে হল তা খুঁজে দেখ।
39 ইসরাইলের উদ্ধারকর্তা জীবন্ত মাবুদের কসম, যদি আমার পুত্র যোনাথনেরই দোষে তা হয়ে থাকে, তবে সে অবশ্য মরবে। কিন্তু সমস্ত লোকের মধ্যে কেউই তাঁকে উত্তর দিল না।
40 পরে তিনি সমস্ত ইসরাইলকে বললেন, তোমরা একদিকে থাক এবং আমি ও আমার পুত্র যোনাথন অন্য দিকে থাকি। তাতে লোকেরা তালুতকে বললো, আপনার বিবেচনায় যা ভাল মনে হয়, তা-ই করুন।
41 পরে তালুত মাবুদকে বললেন, হে ইসরাইলের আল্লাহ্, যথার্থ কি, দেখিয়ে দিন; তখন যোনাথন ও তালুত ধরা পড়লেন, কিন্তু লোকেরা মুক্ত হল।
42 পরে তালুত বললেন, আমার ও আমার পুত্র যোনাথনের মধ্যে গুলিবাঁট কর; তাতে যোনাথন ধরা পড়লেন।
43 তখন তালুত যোনাথনকে বললেন, বল দেখি, তুমি কি করেছ? যোনাথন বললেন, আমি আমার হাতে থাকা লাঠির অগ্রভাগে একটু মধু নিয়ে চেখেছিলাম; তাই আমাকে মরতে হবে।
44 তালুত বললেন, আল্লাহ্ অমুক ও তার চেয়েও বেশি দণ্ড দিন; যোনাথন, তোমাকে অবশ্য মরতে হবে।
45 কিন্তু লোকেরা তালুতকে বললো, ইসরাইলের মধ্যে যিনি এমন মহানিস্তার সাধন করেছেন, সেই যোনাথন কি মরবেন? এমন না হোক, জীবন্ত মাবুদের কসম, তাঁর মাথার একটি কেশও মাটিতে পড়বে না, কেননা উনি আজ আল্লাহ্র সঙ্গে কাজ করেছেন। এভাবে লোকেরা যোনাথনকে রক্ষা করলো, তাঁর মৃত্যু হল না।
46 পরে তালুত ফিলিস্তিনীদের তাড়া করা বন্ধ করে ফিরে আসলেন, আর ফিলিস্তিনীরা স্বস্থানে গমন করলো।
47 ইসরাইলের উপর রাজত্ব গ্রহণ করার পর তালুত সকল দিকে সমস্ত দুশমনের সঙ্গে, অর্থাৎ মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সোবার বাদশাহ্দের ও ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যে কোন দিকে ফিরতেন, সকলের সর্বনাশ ঘটাতেন।
48 তিনি বীরত্বের সঙ্গে কাজ করতেন, আমালেককে আঘাত করলেন এবং লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে ইসরাইলকে উদ্ধার করলেন।
49 যোনাথন, যিশ্বি ও মল্কীশূয় নামে তালুতের তিন পুত্র ছিলেন; আর তাঁর দু’টি কন্যার নাম এরকম— জ্যেষ্ঠার নাম মেরব, কনিষ্ঠার নাম মীখল;
50 আর তালুতের স্ত্রীর নাম অহীনোয়ম, তিনি অহীমাসের কন্যা; এবং তাঁর সেনাপতির নাম অব্নের; ইনি তালুতের চাচা নেরের পুত্র।
51 আর কীশ তালুতের পিতা এবং অব্নেরের পিতা নের অবীয়েলের পুত্র।
52 তালুতের সারা জীবনকাল ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে ঘোরতর যুদ্ধ হল। আর তালুত কোন বলবান পুরুষ বা কোন বীর পুরুষকে দেখলে তাকে তাঁর সৈন্যদলে গ্রহণ করতেন।