1 পরে দাউদ রামাস্থ নায়োৎ থেকে পালিয়ে যোনাথনের কাছে এসে বললেন, আমি কি করেছি? আমার অপরাধ কি? তোমার পিতার কাছে আমার দোষ কি যে, তিনি আমার প্রাণ নিতে চেষ্টা করছেন?
2 যোনাথন তাঁকে বললেন, এমন না হোক; তুমি মারা পড়বে না। দেখ, আমার পিতা আমাকে না জানিয়ে ছোট কি বড় কোন কাজ করেন না; তবে আমার পিতা আমার কাছ থেকে এই কথা কেন গোপন করবেন? এ হতেই পারে না।
3 তাতে দাউদ কসম খেয়ে পুনর্বার বললেন, আমি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়েছি, এই কথা তোমার পিতা খুব ভাল করেই জানেন; এজন্য তিনি বললেন, যোনাথন এই বিষয় না জানুক, পাছে সে দুঃখিত হয়, কিন্তু জীবন্ত মাবুদের কসম ও তোমার জীবিত প্রাণের কসম, মৃত্যু আমার কাছ থেকে মাত্র এক পা দূরে।
4 যোনাথন দাউদকে বললেন, তোমার প্রাণে যা বলে, আমি তোমার জন্য তা-ই করবো।
5 তখন দাউদ যোনাথনকে বললেন, দেখ, আগামীকাল অমাবস্যা, আমাকে বাদশাহ্র সঙ্গে ভোজনে বসতেই হবে; কিন্তু তুমি আমাকে যেতে দাও, আমি তৃতীয় দিন সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত ক্ষেতে লুকিয়ে থাকি।
6 যদি তোমার পিতা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তবে তুমি বলবে, দাউদ তাঁর নগর বেথেলহেমে শীঘ্র যাবার জন্য আমার অনুমতি যাচ্ঞা করলো, কেননা সেই স্থানে তাদের সমস্ত গোষ্ঠীর জন্য বার্ষিক কোরবানী হচ্ছে।
7 তিনি যদি বলেন, ভাল, তবে তোমার এই গোলামের কুশল; নতুবা যদি বাস্তবিক তিনি ক্রুদ্ধ হন, তবে তুমি জানবে, তিনি অমঙ্গল করবেন বলে স্থির করেছেন।
8 অতএব, তুমি তোমার এই গোলামের প্রতি সদয় ব্যবহার কর, কেননা তুমি তোমার সঙ্গে তোমার এই গোলামকে মাবুদের এক নিয়মে আবদ্ধ করেছ। কিন্তু যদি আমার কোন অপরাধ থাকে, তবে তুমিই আমাকে হত্যা কর; তুমি কেন তোমার পিতার কাছে আমাকে নিয়ে যাবে?
9 যোনাথন বললেন, তোমার প্রতি এমন না ঘটুক; বরঞ্চ আমার পিতা তোমার প্রতি অমঙ্গল ঘটাতে স্থির করেছেন, এই কথা যদি আমি নিশ্চয় করে জানতে পারি, তবে কি তোমাকে বলে দেব না?
10 দাউদ যোনাথনকে বললেন, তোমার পিতা যদি তোমাকে নিষ্ঠুর-ভাবে উত্তর দেন তবে কে আমাকে জানাবে?
11 যোনাথন দাউদকে বললেন, চল, আমরা বের হয়ে ক্ষেতে যাই। তাতে তাঁরা দু’জন বের হয়ে ক্ষেতে গেলেন।
12 পরে যোনাথন দাউদকে বললেন, ইসরাইলের আল্লাহ্ মাবুদ সাক্ষী, আগামীকাল বা পরশু অনুমান এই সময়ে পিতার কাছে কথা তুলে দেখব; দেখ, দাউদের পক্ষে ভাল বুঝলে আমি কি তখনই তোমার কাছে লোক পাঠিয়ে তা তোমাকে জানবো না? যদি তোমার অমঙ্গল করতে আমার পিতার মনোবাসনা থাকে,
13 আর আমি তোমাকে তা না জানাই, তবে মাবুদ যোনাথনকে অমুক ও তার চেয়েও বেশি দণ্ড দিন; আর আমি তোমাকে পাঠিয়ে দেব, তাতে তুমি সহিসালামতে যাবে; মাবুদ যেমন আমার পিতার সহবর্তী হয়েছেন, তেমনি তোমারও সহবর্তী থাকুন।
14 আর আমি যদি বেঁচে থাকি, তবে যতদিন জীবিত থাকব তুমি কেবল আমাকেই যে মাবুদের রহম দেখাবে এমন নয়,
15 কিন্তু তুমি আমার কুলের প্রতিও রহম দেখাতে ত্রুটি কখনও করবে না; যখন মাবুদ দাউদের প্রত্যেক দুশমনকে ভূতল থেকে উচ্ছিন্ন করবেন, তখনও না।
16 এভাবে যোনাথন দাউদের কুলের সঙ্গে নিয়ম করলেন; বললেন, আর মাবুদ দাউদের দুশমনদের উপর প্রতিশোধ নেবেন।
17 পরে যোনাথন, দাউদের প্রতি তাঁর যে মহব্বত ছিল, তার দরুন আবার তাঁকে শপথ করালেন, কেননা তিনি নিজের প্রাণের মত তাঁকে ভালবাসতেন।
18 পরে যোনাথন দাউদকে বললেন, আগামীকাল অমাবস্যা; আগামীকাল তোমার আসন শূন্য থাকায় তোমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করা হবে;
19 তুমি পরশু পর্যন্ত থেকে, সেদিন খুব তাড়াতাড়ি নেমে এসে আগের দিন যে স্থানে লুকিয়ে ছিলে সেই স্থানে এষল নামক পাথরের কাছে থাকবে।
20 আমি লক্ষ্য বিদ্ধ করার ছলে তিনটি তীর তার পাশে নিক্ষেপ করবো।
21 আর দেখ, আমার বালকটিকে পাঠাব, বলবো, যাও, তীর কুড়িয়ে আন; আমি যদি বালকটিকে বলি, দেখ তোমার এদিকে তীর আছে, তুলে নাও, তবে তুমি এসো; জীবন্ত মাবুদের কসম, তোমার মঙ্গল, কোন ভয় নেই;
22 কিন্তু আমি যদি বালকটিকে বলি, দেখ, তোমার ওদিকে তীর আছে, তবে তুমি চলে যেও, কেননা মাবুদ তোমাকে বিদায় করলেন,
23 আর দেখ, তোমার ও আমার এই কথাবার্তার বিষয়ে মাবুদ যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্তী।
24 পরে দাউদ ক্ষেতে লুকিয়ে রইলেন, ইতোমধ্যে অমাবস্যা উৎসব উপস্থিত হলে বাদশাহ্ ভোজনে বসলেন।
25 বাদশাহ্ অন্য সময়ের মত তাঁর আসনে অর্থাৎ দেয়ালের নিকটস্থ আসনে বসলেন। যোনাথন উঠে দাঁড়ালেন এবং অব্নের তালুতের পাশে বসলেন; কিন্তু দাউদের স্থান শূন্য থাকলো।
26 তবুও সেদিন তালুত কিছুই বললেন না, কেননা মনে মনে ভাবলেন, তার কিছু হয়েছে, সে হয়তো পাক-সাফ নয়, সে অবশ্য নাপাক হয়ে থাকবে।
27 কিন্তু পরের দিন, মাসের দ্বিতীয় দিনে, দাউদের স্থান শূন্য থাকাতে তালুত তাঁর পুত্র যোনাথনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াসিরের পুত্র গতকাল ও আজ ভোজনে আসে নি কেন?
28 যোনাথন তালুতকে জবাবে বললেন, দাউদ বেথেলহেমে যাবার জন্য আমার কাছে অনেক মিনতি করেছিল;
29 সে বলেছিল, অনুগ্রহ করে আমাকে যেতে দাও, কেননা নগরে আমাদের গোষ্ঠীর একটি কোরবানীর অনুষ্ঠান আছে এবং আমার ভাই আমাকে যেতে হুকুম করেছেন; অতএব আরজ করি, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ লাভ করে থাকি, তবে আমি গিয়ে আমার জ্ঞাতিদের দেখে আসি। এজন্য সে বাদশাহ্র ভোজে আসে নি।
30 তখন যোনাথনের প্রতি তালুতের ক্রোধ প্রজ্বলিত হল, তিনি তাঁকে বললেন, ওহে জারজ সন্তান, বিদ্রোহিনী স্ত্রীর পুত্র, আমি কি জানি না যে, তুই তোর লজ্জা ও তোর মায়ের লজ্জা জন্মাতে ইয়াসির পুত্রকে মনোনীত করেছিস?
31 ফলে ইয়াসির পুত্র যতদিন ভূতলে থাকবে, ততদিন তুই স্থির থাকবি না, তোর রাজ্যও স্থির থাকবে না। অতএব এখন লোক পাঠিয়ে তাকে আমার কাছে নিয়ে আয়, কেননা সে মৃত্যুর সন্তান।
32 তাতে যোনাথন জবাবে তাঁর পিতা তালুতকে বললেন, সে কেন হত হবে? সে কি করেছে?
33 তখন তালুত তাঁকে আঘাত করার জন্য তাঁর দিকে তাঁর বর্শা নিক্ষেপ করলেন; এতে যোনাথন জানতে পারলেন যে, তাঁর পিতা দাউদকে হত্যা করতে মনস্থ করেছেন।
34 তখন যোনাথন মহাক্রুদ্ধ হয়ে আসন থেকে উঠলেন, মাসের দ্বিতীয় দিনে আহার করলেন না; কেননা দাউদের জন্য তাঁর দুঃখ হল, কারণ তাঁর পিতা দাউদকে অপমান করেছিলেন।
35 পরে খুব ভোরে যোনাথন একটি ছোট বালককে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেতে, দাউদের সঙ্গে যে স্থান নির্ধারিত হয়েছিল সেখানে গেলেন।
36 পরে তিনি বালকটিকে বললেন, আমি যে কয়েকটি তীর নিক্ষেপ করবো, তুমি দৌড়ে গিয়ে তা কুড়িয়ে আন। তাতে বালকটি দৌড়ালে তিনি তার ওদিকে পড়বার মত তীর নিক্ষেপ করলেন।
37 আর বালকটি যোনাথনের নিক্ষিপ্ত তীরের কাছে উপস্থিত হলে যোনাথন বালকটিকে ডেকে বললেন, তোমার ওদিকে কি তীর নেই?
38 আবার যোনাথন বালককে ডেকে বললেন, শীঘ্র দৌড়ে যাও, বিলম্ব করো না। তখন যোনাথনের সেই বালক তীরগুলো কুড়িয়ে নিয়ে তাঁর মালিকের কাছে এল।
39 কিন্তু বালকটি কিছুই বুঝল না, কেবল যোনাথন ও দাউদ সেই বিষয় জানতেন।
40 পরে যোনাথন তাঁর তীর ধনুকাদি বালকটিকে দিয়ে বললেন, এইগুলো নগরে নিয়ে যাও।
41 বালকটি চলে যাওয়া মাত্র দাউদ দক্ষিণ দিক্স্থ কোন স্থান থেকে উঠে এসে তিনবার ভূমিতে উবুড় হয়ে পড়ে সালাম করলেন এবং তাঁরা দু’জনে পরস্পর চুম্বন করে কাঁদতে লাগলেন, কিন্তু দাউদ বেশি কাঁদলেন।
42 পরে যোনাথন দাউদকে বললেন, সহিসালামতে যাও, আমরা তো দু’জন মাবুদের নামে এই কসম খেয়েছি যে, মাবুদ যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্তী এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্তী থাকবেন। পরে তিনি উঠে প্রস্থান করলেন, আর যোনাথন নগরে চলে গেলেন।