1 ইস্রায়েলীয়দের দলটা এলীম থেকে আবার যাত্রা শুরু করল। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর দ্বিতীয় মাসের পনের দিনের দিন তারা সিন মরু-এলাকায় গিয়ে পৌঁছাল। এই জায়গাটা ছিল এলীম ও সিনাই পাহাড়ের মাঝখানে।
2 সিন মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের গোটা দলটা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে লাগল।
3 তারা তাঁদের বলল, “মিসর দেশে সদাপ্রভুর হাতে আমরা কেন মরলাম না। সেখানে আমরা মাংসের হাঁড়ি সামনে নিয়ে পেট ভরে রুটি-মাংস খেতাম। আমাদের এই গোটা দলটাকে না খাইয়ে মেরে ফেলবার জন্যই আপনারা আমাদের এই মরু-এলাকার মধ্যে এনেছেন।”
4 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমি এমন করব যাতে তোমাদের জন্য স্বর্গ থেকে বৃষ্টির মত করে খাবার ঝরে পড়ে। লোকেরা প্রতিদিন বাইরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র সেই দিনের খাবার কুড়িয়ে নেবে। তারা আমার নির্দেশ মত চলবে কি না সেই বিষয়ে আমি তাদের পরীক্ষা নেব।
5 সপ্তার ষষ্ঠ দিনে তারা যেন অন্য দিনের চেয়ে দুই গুণ কুড়িয়ে এনে খাবার তৈরী করে।”
6-7 তখন মোশি ও হারোণ সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা যে সব কথা বলেছ তা তিনি শুনেছেন বলেই আজ সন্ধ্যাবেলাতেই তোমরা জানতে পারবে যে, সেই সদাপ্রভুই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন, আর তাঁরই মহিমা তোমরা কাল সকালে দেখতে পাবে। আমরা কে যে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলছ? ”
8 মোশি আরও বললেন, “সন্ধ্যাবেলায় যখন সদাপ্রভু তোমাদের মাংস দেবেন আর সকালবেলায় দেবেন প্রচুর রুটি তখনই তোমরা বুঝবে যে, সদাপ্রভুই তোমাদের মিসর থেকে বের করে এনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যত কথা বলেছ তা সব তিনি শুনেছেন। আমরা কে? এই সব কথা তোমরা আসলে আমাদের বিরুদ্ধে বলছ না, বলছ সদাপ্রভুরই বিরুদ্ধে।”
9 তারপর মোশি হারোণকে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বলতে বললেন, “সদাপ্রভু তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের অনেক কথা বলতে শুনেছেন, কাজেই তোমরা তাঁর সামনে এগিয়ে যাও।”
10 হারোণ যখন ইস্রায়েলীয়দের কাছে কথা বলছিলেন তখন তারা মরু-এলাকার দিকে তাকিয়ে দেখল; আর আশ্চর্য এই যে, সেখানে মেঘের মধ্যে তারা সদাপ্রভুর মহিমা দেখতে পেল।
11 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন,
12 “ইস্রায়েলীয়েরা আমার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলেছে তা আমি শুনেছি। তাদের এই কথা বল যে, তারা সন্ধ্যাবেলায় মাংস খাবে আর সকালবেলায় খাবে পেট ভরে রুটি। এতে তারা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভুই তাদের ঈশ্বর।”
13 সন্ধ্যাবেলায় অনেক ভারুই পাখী এসে তাদের ছাউনি-এলাকাটা ছেয়ে ফেলল। সকালবেলায় দেখা গেল ছাউনির চারপাশটা শিশিরে ঢাকা পড়ে গেছে।
14 যখন সেই শিশির মিলিয়ে গেল তখন মাটিতে মাছের আঁশের মত পাতলা এক রকম জিনিস দেখা গেল। সেগুলো দেখতে ছিল পড়ে থাকা তুষারের মত।
15 তা দেখে ইস্রায়েলীয়েরা একজন অন্যজনকে বলল, “ওগুলো কি? ” ওগুলো যে কি, তা তারা জানত না।তখন মোশি তাদের বললেন, “ওগুলোই সেই রুটি যা সদাপ্রভু তোমাদের খেতে দিয়েছেন।
16 সদাপ্রভু তোমাদের এই আদেশ দিয়েছেন, প্রত্যেকে যেন তার পরিবারের দরকার মত কুড়ায়। তাম্বুর প্রত্যেকের জন্য যেন এক ওমর করে কুড়ানো হয়।”
17 ইস্রায়েলীয়েরা তা-ই করল। কেউ কুড়ালো বেশী, কেউ কুড়ালো কম।
18 কিন্তু ওমরের মাপে দেখা গেল, যারা অনেক কুড়ালো তাদের বেশী হল না আর যারা অল্প কুড়ালো তাদের কম পড়ল না। প্রত্যেকেই পরিবারের দরকার মত তা কুড়িয়েছিল।
19 তারপর মোশি তাদের বললেন, “সকালের জন্য তোমরা এর কিছুই রেখে দিয়ো না।”
20 কিন্তু কেউ কেউ মোশির কথা না শুনে সকালের জন্য কিছু রেখে দিল। তাতে সেগুলোতে পোকা ধরল আর দুর্গন্ধ হয়ে গেল। এই অবস্থা দেখে মোশি তাদের উপর রাগে জ্বলে উঠলেন।
21 লোকেরা প্রত্যেক দিন সকালে যার পরিবারে যতটুকু দরকার ততটুকুই কুড়িয়ে আনত। কিন্তু রোদ কড়া হলে সেগুলো গলে যেত।
22 সপ্তার ছয় দিনের দিন তারা দুই গুণ করে, অর্থাৎ দুই ওমর করে প্রত্যেকের জন্য কুড়াল, আর ইস্রায়েলীয়দের নেতারা এসে সেই কথা মোশিকে জানালেন।
23 তখন মোশি তাঁদের বললেন, “এটা সদাপ্রভুরই কথা। আগামী কাল বিশ্রামবার, সদাপ্রভুরই পবিত্র বিশ্রামবার। কাজেই যতটা সেঁকে নেবার নাও আর যতটুকু সিদ্ধ করবার সিদ্ধ করে নাও; বাকীটা পরের দিন সকালের জন্য রেখে দিয়ো।”
24 মোশির আদেশ মতই তারা সকালের জন্য বাকী অংশটা রেখে দিল। সেই দিন ওগুলোতে গন্ধও হল না, পোকাও ধরল না।
25 মোশি তখন বললেন, “আজ তোমরা ওগুলোই খাও কারণ আজকে সদাপ্রভুর নির্দিষ্ট করা বিশ্রাম দিন। আজকে তোমরা মাঠের মধ্যে ওগুলো দেখতে পাবে না।
26 তোমরা সপ্তার ছয় দিন তা কুড়াবে কিন্তু সাত দিনের দিন তা পাবে না, কারণ সেই দিন হল বিশ্রামবার।”
27 তবুও সপ্তম দিনে কিছু লোক ওগুলো কুড়াবার জন্য বাইরে গেল, কিন্তু কিছুই পেল না।
28 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আর কতদিন তোমরা আমার আদেশ ও নির্দেশ অমান্য করে চলবে?
29 দেখ, তোমাদের জন্য বিশ্রামবারের এই ব্যবস্থা তোমাদের সদাপ্রভুই করেছেন। সেইজন্য ছয় দিনের দিন তিনি দু’দিনের খাবার তোমাদের যোগান দিচ্ছেন। তাই সপ্তম দিনে তোমরা কেউ ঘরের বাইরে যাবে না, ভিতরেই থাকবে।”
30 কাজেই লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিল।
31 ইস্রায়েলীয়েরা সেই খাবারকে বলত মান্না (যার মানে “ওগুলো কি? ”)। এগুলোর আকার ছিল ধনে বীজের মত আর তা দেখতে সাদাটে; তার স্বাদ ছিল মধু দেওয়া পিঠার মত।
32 পরে মোশি বললেন, “সদাপ্রভু আদেশ করেছেন যেন তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য এক ওমর পরিমাণ মান্না তুলে রাখ, যাতে তারা দেখতে পায় সদাপ্রভু মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে আনবার পরে মরু-এলাকায় কি খাবার তোমাদের খেতে দিয়েছিলেন।”
33 মোশি হারোণকে বললেন, “তুমি একটা পাত্রে করে এক ওমর মান্না নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে রাখ যেন বংশের পর বংশ ধরে তা থাকে।”
34 সেই মান্না যাতে বংশের পর বংশ ধরে তোলা থাকে সেইজন্য হারোণ পরে মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে তা নিয়ে রেখেছিলেন।
35 লোকে বাস করে এমন একটা জায়গায়, অর্থাৎ কনান দেশের সীমানায় না আসা পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়েরা চল্লিশ বছর ধরে এই মান্না খেয়েছিল।
36 এক ওমরের মাপ হল এক কেজি আটশো গ্রামের সমান।