যাত্রাপুস্তক 9 SBCL

মিসরের উপর পঞ্চম আঘাত- পশুর মড়ক

1 এর পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে গিয়ে বল যে, ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও।

2 কিন্তু তা না দিয়ে যদি তুমি তাদের ধরেই রাখ,

3 তবে মাঠে তোমার ঘোড়া, গাধা, উট, গরু, ভেড়া, ছাগল, এক কথায় তোমার সব পশুপালের উপর আমি শীঘ্রই নিজের হাতে এক ভীষণ মড়কের ব্যবস্থা করব।

4 কিন্তু আমি ইস্রায়েলীয়দের পশুপালগুলোকে মিসরীয়দের পশুপাল থেকে আলাদা করে দেখব। তাদের যে সব পশু আছে তার একটাও মরবে না।’ ”

5 মড়কটা কখন হবে তা-ও সদাপ্রভু ঠিক করলেন। তিনি বললেন, “কালকেই এই দেশের উপর আমি এটা ঘটাব।”

6 পরের দিন সদাপ্রভু তা-ই করলেন। তাতে মিসরীয়দের সব পশু মরে গেল, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের পাল থেকে একটা পশুও মরল না।

7 ফরৌণ লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, ইস্রায়েলীয়দের একটা পশুও মরে নি। তবুও ফরৌণের মন শক্ত হয়ে রইল; তিনি লোকদের যেতে দিলেন না।

মিসরের উপর ষষ্ঠ আঘাত- ফোড়া

8 তারপর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “চুল্লী থেকে তোমরা কয়েক মুঠো কালি নাও। ফরৌণের চোখের সামনেই মোশি তা আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিক।

9 সেগুলো মিহি ধূলার মত হয়ে সারা মিসর দেশে নেমে আসবে। তাতে সারা মিসর দেশের মানুষ ও পশুর গায়ে ফোড়া উঠে ঘা হয়ে যাবে।”

10 তখন মোশি ও হারোণ চুল্লী থেকে কালি নিয়ে ফরৌণের সামনে দাঁড়ালেন। মোশি তা আকাশে ছুঁড়ে দিলে পর মানুষ ও পশুর গায়ে ফোড়া উঠে ঘা হয়ে গেল।

11 যাদুকরেরা মোশির সামনে দাঁড়াতে পারল না, কারণ অন্যান্য মিসরীয়দের মত তাদেরও ফোড়া হয়েছিল।

12 কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের মন কঠিন করলেন। তাতে সদাপ্রভু যা বলেছিলেন তা-ই হল। মোশি ও হারোণের কথায় ফরৌণ কান দিলেন না।

মিসরের উপর সপ্তম আঘাত- শিলাবৃষ্টি

13 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি খুব সকালে উঠে ফরৌণের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, আর তাকে বলবে যে, ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও,

14 কারণ এর পর তোমার উপরে এবং তোমার কর্মচারী ও লোকদের উপরে আমি আমার সমস্ত আঘাতের ব্যবস্থা করব। তখন তুমি বুঝতে পারবে যে, সারা পৃথিবীতে আমার মত কেউ নেই।

15 এর মধ্যেই আমি আমার শক্তি ব্যবহার করে তোমার ও তোমার লোকদের উপর এমন এক মড়কের ব্যবস্থা করতে পারতাম যাতে তোমরা পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যেতে।

16 কিন্তু আমি তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি যেন তোমাকে আমার শক্তি দেখাতে পারি এবং সারা পৃথিবীতে যেন আমার নাম প্রচারিত হয়।

17 তুমি এখনও আমার লোকদের বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছ আর তাদের যেতে দিচ্ছ না।

18 সেইজন্য কালকে ঠিক এই সময়ে আমি এমন এক ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি পাঠিয়ে দেব যা মিসর দেশের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আর কখনও হয় নি।

19 এইজন্য মাঠে তোমার যত পশু এবং মানুষ আছে লোক পাঠিয়ে তাদের আশ্রয়ের জায়গায় নিয়ে এস। কোন লোক বা পশু ঘরে না এসে যদি মাঠে থেকে যায় তবে শিলের আঘাতে তারা মারা যাবে।’ ”

20 তখন ফরৌণের কর্মচারীদের মধ্যে যারা সদাপ্রভুর কথায় ভয় পেল তারা তাড়াতাড়ি তাদের দাসদের ও পশুপাল ঘরে নিয়ে আসল।

21 কিন্তু যারা তা অগ্রাহ্য করল তারা তাদের দাসদের ও পশুপাল মাঠেই রেখে দিল।

22 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আকাশের দিকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে সারা মিসর দেশের মানুষ, পশু ও মাঠের গাছ-গাছড়ার উপর শিল পড়বে।”

23 তখন মোশি আকাশের দিকে তাঁর লাঠি উঁচু করে ধরলেন। তাতে সদাপ্রভু এমন করলেন যার ফলে মেঘ গর্জন করতে ও শিলাবৃষ্টি হতে লাগল এবং মাটির উপর বাজ পড়তে লাগল। এইভাবেই সদাপ্রভু মিসর দেশের উপর শিলাবৃষ্টি পাঠালেন।

24 শুধু যে কেবল শিল পড়ল তা নয়, তার সংগে সংগে অনবরত বিদ্যুৎ চম্‌কাতে লাগল। মিসর রাজ্যের আরম্ভ থেকে এই পর্যন্ত সারা দেশে এই রকম ভীষণ ঝড় আর কখনও হয় নি।

25 মিসর দেশের মাঠগুলোতে যে সব মানুষ ও পশু ছিল শিল তাদের কাউকে রেহাই দিল না। শিলের আঘাতে মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল এবং গাছের ডালপালা ভেংগে পড়ল।

26 কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা যেখানে থাকত সেই গোশন এলাকায় শিল পড়ল না।

27 ফরৌণ তখন মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “এবার আমি পাপ করেছি। সদাপ্রভু ঠিক কাজ করেছেন। আমি আর আমার লোকেরাই দোষী।

28 তুমি সদাপ্রভুর কাছে মিনতি কর। মেঘের গর্জন ও শিল পড়া যথেষ্ট হয়েছে। এবার আমি তোমাদের যেতে দেব। এখানে আর তোমাদের থাকতে হবে না।”

29 মোশি তাঁকে বললেন, “শহর থেকে বের হয়ে গিয়েই আমি সদাপ্রভুর কাছে হাত মেলে প্রার্থনা করব। তাতে মেঘের গর্জনও থেমে যাবে, শিলও আর পড়বে না। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে, পৃথিবীটা সদাপ্রভুরই।

30 কিন্তু আমি জানি যে, আপনি এবং আপনার কর্মচারীরা সদাপ্রভু ঈশ্বরকে এখনও ভয় করেন না।”

31 শিলাবৃষ্টির দরুন মিসরের সব মসীনা আর যব একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় যবের শীষ বের হয়েছিল আর মসীনা গাছে ফুল এসেছিল,

32 কিন্তু সরস এবং নীরস গমের কোনটাই নষ্ট হয় নি কারণ তখনও সেগুলো পাকবার সময় হয় নি।

33 এর পর মোশি ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেলেন। শহর থেকে বের হয়ে তিনি সদাপ্রভুর কাছে হাত মেলে প্রার্থনা করলেন। তখন মেঘের গর্জন ও শিল পড়া বন্ধ হল। মাটির উপর মুষলধারে বৃষ্টি পড়াও থেমে গেল।

34 কিন্তু ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীরা যখন দেখলেন যে, বৃষ্টি, শিল ও মেঘের গর্জন বন্ধ হয়ে গেছে তখন তাঁরা আবার পাপ করতে লাগলেন। তাঁরা আবার তাদের মন শক্ত করলেন।

35 সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে যেমন বলেছিলেন তেমনি ফরৌণের মন কঠিন হয়ে রইল; তিনি ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলেন না।

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40