1 এর পরে মোয়াবীয়েরা, অম্মোনীয়েরা ও মায়োনীয়দের কিছু লোক যিহোশাফটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসল।
2 তখন কয়েকজন লোক এসে যিহোশাফটকে বলল, “সাগরের ওপারের অরাম দেশ থেকে এক বিরাট সৈন্যদল আপনার বিরুদ্ধে আসছে। তারা হৎসসোন-তামরে, অর্থাৎ ঐন্-গদীতে এসে গেছে।”
3 এতে যিহোশাফট ভয় পেয়ে স্থির করলেন যে, তিনি সদাপ্রভুর কাছে সাহায্য চাইবেন। তিনি যিহূদা দেশের সব জায়গায় উপবাস ঘোষণা করলেন।
4 যিহূদার লোকেরা সদাপ্রভুর সাহায্য চাইবার জন্য এসে একত্র হল; এমন কি, যিহূদার সমস্ত গ্রাম থেকেও লোকেরা এসেছিল।
5 তখন যিহোশাফট সদাপ্রভুর ঘরের নতুন উঠানে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
6 “হে সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, তুমি তো স্বর্গের ঈশ্বর। তুমি সমস্ত জাতির রাজ্যগুলো শাসন করে থাক। ক্ষমতা ও শক্তি তোমারই হাতে এবং কেউ তোমাকে বাধা দিতে পারে না।
7 হে আমাদের ঈশ্বর, তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে এই দেশের বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দিয়ে তুমি তা তোমার বন্ধু অব্রাহামের বংশের লোকদের চিরকালের জন্য দিয়েছ।
8 তারা সেখানে বাস করেছে এবং তোমারই জন্য একটা পবিত্র ঘর তৈরী করে বলেছে,
9 ‘যদি কোন বিপদ আমাদের উপরে আসে- তা যুদ্ধ বা শাস্তি কিম্বা মড়ক অথবা দুর্ভিক্ষ হোক- তবে আমরা তখন এই ঘরের সামনে, অর্থাৎ তোমার সামনে দাঁড়াব, কারণ তুমি এই ঘরে বাস কর। আমাদের কষ্টের সময় আমরা তোমার কাছে কাঁদব, আর তুমি আমাদের কথা শুনে আমাদের উদ্ধার করবে।’
10 “এখন অম্মোন ও মোয়াব এবং সেয়ীর পাহাড়ের লোকেরা এখানে এসেছে। যখন ইস্রায়েলীয়েরা মিসর থেকে বের হয়ে আসছিল তখন তুমি এদের দেশে তাদের ঢুকতে দাও নি। কাজেই তারা তাদের ধ্বংস না করে তাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছিল।
11 অধিকার হিসাবে যে সম্পত্তি তুমি আমাদের দিয়েছ এখন দেখ, তার বদলে তারা কেমন করে সেখান থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিতে আসছে।
12 হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি কি তাদের বিচার করবে না? এই যে বিরাট সৈন্যদল আমাদের আক্রমণ করতে আসছে তাদের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি আমাদের নেই। কি করতে হবে তা আমরা জানি না, কিন্তু আমরা কেবল তোমার দিকে চেয়ে আছি।”
13 সেই সময় যিহূদার সমস্ত লোক তাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও শিশুদের নিয়ে সেখানে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
14 তখন সেই দলের মধ্যে যহসীয়েল নামে আসফের বংশের একজন লেবীয়ের উপর সদাপ্রভুর আত্মা আসলেন। যহসীয়েল ছিলেন সখরিয়ের ছেলে, সখরিয় বনায়ের ছেলে, বনায় যিয়েলের ছেলে, যিয়েল মত্তনিয়ের ছেলে।
15 যহসীয়েল বললেন, “হে রাজা যিহোশাফট ও আপনারা যারা যিহূদা আর যিরূশালেমে বাস করেন, সবাই শুনুন। সদাপ্রভু আপনাদের কাছে এই কথা বলছেন, ‘এই বিরাট সৈন্যদল দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না বা নিরাশ হোয়ো না। এই যুুদ্ধ ঈশ্বরের, তোমাদের নয়।
16 আগামী কাল তোমরা তাদের বিরুদ্ধে বের হবে। তখন তারা সীস নামে পাহাড়ের পথ দিয়ে উঠে আসবে। তোমরা যিরূয়েল নামে মরু-এলাকার কাছে উপত্যকার শেষের দিকে তাদের পাবে।
17 এই যুদ্ধ তোমাদের করতে হবে না। হে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা, তোমরা সারি বেঁধে দাঁড়ায়ো এবং সদাপ্রভু তোমাদের কিভাবে উদ্ধার করেন তা দেখো। তোমরা ভয় কোরো না, নিরাশ হয়ো না। তোমরা কালকে গিয়ে তাদের মুখোমুখি হবে আর সদাপ্রভু তোমাদের সংগে থাকবেন।’ ”
18 তখন যিহোশাফট মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোক ভক্তি জানাবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে মাটিতে উবুড় হল।
19 তারপর কহাতীয় ও কোরহীয় বংশের অনেক লেবীয় উঠে দাঁড়িয়ে খুব জোরে জোরে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করতে লাগল।
20 পরের দিন খুব সকালে তারা তকোয় মরু-এলাকার দিকে রওনা হল। তারা রওনা হবার আগে যিহোশাফট দাঁড়িয়ে বললেন, “হে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা, আমার কথা শুনুন। আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করুন, তাহলে আপনারা স্থির থাকতে পারবেন। তাঁর নবীদের উপর বিশ্বাস রাখুন, তাতে আপনারা সফল হবেন।”
21 যিহোশাফট লোকদের সংগে পরামর্শ করে সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান ও তাঁর মহিমাপূর্ণ পবিত্রতার গৌরব করবার জন্য লোকদের নিযুক্ত করলেন যেন তারা সৈন্যদলের আগে আগে এই কথা বলতে বলতে যায়,“সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর,কারণ তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।”
22-23 লোকেরা যখন গান করতে ও গৌরব করতে লাগল তখন সদাপ্রভু যিহূদার লোকদের সংগে যুদ্ধ করতে আসা অম্মোন ও মোয়াব এবং সেয়ীর পাহাড়ের লোকদের বিরুদ্ধে সৈন্যদের ওৎ পেতে বসিয়ে রাখলেন। সেই সময় অম্মোন ও মোয়াবের লোকেরা সেয়ীর পাহাড়ের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলল। সেয়ীরের লোকদের মেরে ফেলবার পর তারা একে অন্যকে মেরে ফেলতে লাগল। এইভাবে তারা হেরে গেল।
24 যিহূদার লোকেরা মরু-এলাকার উঁচু পাহারা-ঘরে এসে সেই বিরাট সৈন্যদলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে, মাটিতে কেবল মৃত দেহগুলো পড়ে রয়েছে; কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারে নি।
25 তখন যিহোশাফট ও তাঁর লোকেরা লুটের জিনিস আনতে গিয়ে সেই মৃত দেহগুলোর সংগে এত বেশী পরিমাণে জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় ও ধন-রত্ন দেখতে পেল যে, তারা সেগুলো বয়ে নিয়ে যেতে পারল না। লুটের জিনিস বেশী হওয়াতে তা নিয়ে যেতে তাদের তিন দিন লাগল।
26 চতুর্থ দিনে তারা বরাখা উপত্যকায় জড়ো হয়ে সদাপ্রভুর প্রশংসা করল। এইজন্য আজও সেই জায়গাকে বলা হয় বরাখা উপত্যকা (যার মানে “প্রশংসা”)।
27 তারপর যিহোশাফটের পিছনে পিছনে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোক আনন্দ করতে করতে যিরূশালেমে ফিরে আসল, কারণ তাদের শত্রুদের উপরে সদাপ্রভু তাদের জয় দান করেছিলেন।
28 তারা বীণা, সুরবাহার ও তূরী বাজাতে বাজাতে যিরূশালেমে ফিরে এসে সদাপ্রভুর ঘরে গেল।
29 ইস্রায়েলের শত্রুদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু কেমন করে যুদ্ধ করেছেন সেই কথা শুনে অন্যান্য দেশের সমস্ত লোকদের উপর সদাপ্রভু সম্বন্ধে একটা ভয় নেমে আসল।
30 এতে যিহোশাফটের রাজ্য শান্তিতে রইল, কারণ তাঁর ঈশ্বর সব দিকেই তাঁকে শান্তি দিয়েছিলেন।
31 যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়েছিলেন এবং পঁচিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল অসূবা; তিনি ছিলেন শিল্হির মেয়ে।
32 যিহোশাফট তাঁর বাবা আসার পথে চলতেন এবং কখনও সেই পথ ছেড়ে যান নি। সদাপ্রভুর চোখে যা ঠিক তিনি তা-ই করতেন।
33 কিন্তু পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করা হয় নি, কারণ তখনও লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের প্রতি মন স্থির করে নি।
34 যিহোশাফটের অন্যান্য কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হনানির ছেলে যেহূ লিখেছিলেন; তা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে পাওয়া যায়।
35 পরে যিহূদার রাজা যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজা অহসিয়ের সংগে যোগ দিলেন। অহসিয় অন্যায় কাজ করতেন।
36 যিহোশাফট তাঁর সংগে মিলে তর্শীশে যাবার জন্য কতগুলো বড় বড় জাহাজ তৈরী করতে রাজী হলেন। সেগুলো ইৎসিয়োন-গেবরে তৈরী করা হল।