1 বসন্তকালে যখন রাজারা সাধারণতঃ যুদ্ধ করতে বের হন তখন দায়ূদও যুদ্ধ করবার জন্য যোয়াবকে ও তাঁর অন্যান্য সেনাপতিদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের পাঠিয়ে দিলেন। তারা অম্মোনীয়দের ধ্বংস করে রব্বা শহরটা ঘেরাও করল। দায়ূদ কিন্তু যিরূশালেমেই রয়ে গেলেন।
2 তখন একদিন বিকাল বেলায় দায়ূদ তাঁর বিছানা থেকে উঠে রাজবাড়ীর ছাদে বেড়াচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি ছাদের উপর থেকে একজন স্ত্রীলোককে স্নান করতে দেখলেন। স্ত্রীলোকটি দেখতে ছিল খুব সুন্দরী।
3 দায়ূদ স্ত্রীলোকটির খোঁজ নেবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলেন। একজন লোক বলল, “সে তো ইলিয়ামের মেয়ে হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা।”
4 দায়ূদ তাকে নিয়ে আসবার জন্য লোক পাঠালেন। সে তাঁর কাছে আসলে পর দায়ূদ তার সংগে ব্যভিচার করলেন। স্ত্রীলোকটি তখন তার মাসিকের অশুচিতা থেকে শুচি হয়েছিল। এর পর স্ত্রীলোকটি তার বাড়িতে ফিরে গেল।
5 সে যখন বুঝতে পারল যে, সে গর্ভবতী হয়েছে তখন সেই খবর সে দায়ূদকে পাঠাল।
6 তখন দায়ূদ যোয়াবকে এই কথা বলে পাঠালেন, “হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।” এতে যোয়াব তাকে দায়ূদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
7 ঊরিয় আসলে পর দায়ূদ তাকে যোয়াব ও সৈন্যদের ভাল-মন্দের খবর এবং যুদ্ধ কেমন চলছে তা জিজ্ঞাসা করলেন।
8 তারপর তিনি ঊরিয়কে বললেন, “তুমি নিজের বাড়ীতে গিয়ে হাত-পা ধুয়ে বিশ্রাম কর।” ঊরিয় রাজবাড়ী থেকে বের হয়ে গেল আর রাজা তার জন্য কিছু উপহার পাঠিয়ে দিলেন।
9 ঊরিয় কিন্তু নিজের বাড়ীতে গেল না। সে রাজার সমস্ত কর্মচারীদের সংগে রাজবাড়ীর ফটকে শুয়ে রইল।
10 দায়ূদকে সেই কথা জানানো হলে পর দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “তুমি তো যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছ, তবে কেন তোমার বাড়ীতে গেলে না?”
11 ঊরিয় দায়ূদকে বলল, “সাক্ষ্য-সিন্দুক নিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদার সৈন্যেরা তাম্বুতে রয়েছে, আর আমার সেনাপতি যোয়াব ও আপনার লোকেরা খোলা মাঠে ছাউনি ফেলে রয়েছেন। এই অবস্থায় আমি কি করে বাড়ী গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আমার স্ত্রীর সংগে বিছানায় যাব? আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি এমন কাজ কখনও করব না।”
12 তখন দায়ূদ তাকে বললেন, “আজকের দিনটাও তুমি এখানে থাক; কালকে আমি তোমাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেব।” কাজেই ঊরিয় সেই দিনটা এবং তার পরের দিনও যিরূশালেমে রয়ে গেল।
13 দায়ূদ তাকে নিমন্ত্রণ করলে পর সে দায়ূদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করল আর দায়ূদ তাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে তুললেন। কিন্তু রাত হলে ঊরিয় রাজার কর্মচারীদের মধ্যে নিজের বিছানায় শুয়ে রইল, বাড়ী গেল না।
14 পরদিন সকালে দায়ূদ যোয়াবকে একটা চিঠি লিখে ঊরিয়ের হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।
15 তার মধ্যে তিনি এই কথা লিখেছিলেন, “যেখানে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হচ্ছে সেখানে সৈন্যদের সামনের সারিতে ঊরিয়কে পাঠাবে, তারপর তার পিছন থেকে তোমরা সরে যাবে যাতে সে আঘাত পেয়ে মারা যায়।”
16 কাজেই শহর ঘেরাও করবার সময় যোয়াব ঊরিয়কে এমন একটা জায়গায় পাঠালেন যেখানে বিপক্ষের শক্তিশালী যোদ্ধারা ছিল বলে তিনি জানতেন।
17 পরে শহরের লোকেরা বের হয়ে এসে যখন যোয়াবের সংগে যুদ্ধ করতে লাগল তখন দায়ূদের সৈন্যদলের কিছু লোক মারা পড়ল আর সেই সংগে হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গেল।
18-20 যোয়াব লোক পাঠিয়ে যুদ্ধের সমস্ত খবর দায়ূদকে দিলেন। যাকে দিয়ে খবর পাঠানো হচ্ছিল যোয়াব তাকে বললেন, “যুদ্ধের এই খবর রাজার কাছে দিলে পর রাজা হয়তো রাগে জ্বলে উঠে তোমাকে বলবেন, ‘যুদ্ধ করবার জন্য কেন তোমরা শহরের এত কাছে গিয়েছিলে? দেয়ালের উপর থেকে তারা যে তীর ছুঁড়বে তা কি তোমরা জানতে না?
21 কে যিরূব্বেশতের ছেলে অবীমেলককে মেরে ফেলেছিল? একজন স্ত্রীলোক দেয়ালের উপর থেকে যাঁতার উপরের পাথরটা তার উপর ফেলেছিল আর তাতেই তিনি তেবেষে মারা গিয়েছিলেন। কেন তোমরা দেয়ালের এত কাছে গিয়েছিলে?’ যদি তিনি সেই কথা তোমাকে বলেন তবে তুমি তাঁকে বলবে যে, তাঁর দাস হিত্তীয় ঊরিয় মারা গেছে।”
22 সেই লোকটি তখন রওনা হয়ে গেল এবং দায়ূদের কাছে পৌঁছে যোয়াব তাকে যা বলতে পাঠিয়েছিলেন তা বলল।
23 দায়ূদকে সে বলল, “লোকগুলো প্রথমে আমাদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খোলা মাঠে বের হয়ে এসেছিল, কিন্তু আমরা তাদের তাড়া করতে করতে শহরের ফটক পর্যন্ত গিয়েছিলাম।
24 এতে ধনুকধারীরা দেয়ালের উপর থেকে আপনার দাসদের উপর তীর ছুঁড়তে লাগল। তাতে রাজার কিছু লোক মারা পড়েছে। আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়েছে।”
25 দায়ূদ তাকে বললেন, “তুমি যোয়াবকে বলবে সে যেন এতে মন খারাপ না করে, কারণ যুদ্ধের সময় তলোয়ার কাউকেই বাদ দেয় না। শহরটার বিরুদ্ধে আরও ভীষণভাবে যুদ্ধ করে সে যেন সেটা একেবারে ধ্বংস করে ফেলে। এই কথা তুমি যোয়াবকে বলে তাকে উৎসাহ দেবে।”
26 এদিকে ঊরিয়ের স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে শোক করতে লাগল।
27 শোক করবার সময় পার হয়ে যাওয়ার পর দায়ূদ তাকে তাঁর বাড়ীতে আনালেন। সে তাঁর স্ত্রী হল এবং তার একটা ছেলে হল। কিন্তু দায়ূদ যা করেছিলেন তাতে সদাপ্রভু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।