1 কৈসরিয়া শহরে কর্ণীলিয় নামে একজন লোক ইটালীয় সৈন্যদলের শতপতি ছিলেন।
2 যিহূদী না হলেও তিনি ঈশ্বরভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। তিনি গরীবদের অনেক টাকা-পয়সা দান করতেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রায়ই প্রার্থনা করতেন।
3 একদিন বেলা তিনটার সময় তিনি একটা দর্শন পেলেন। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন ঈশ্বরের একজন দূত এসে তাঁকে ডাকছেন, “কর্ণীলিয়।”
4 কর্ণীলিয় ভয় পেয়ে সেই স্বর্গদূতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বলুন, প্রভু।”স্বর্গদূত বললেন, “তোমার প্রার্থনা ও গরীবদের তোমার দানের কথা স্বর্গে পৌঁছেছে এবং ঈশ্বর তা মনে রেখেছেন।
5 এখন তুমি যাফো শহরে লোক পাঠাও, আর শিমোন, যার আর এক নাম পিতর, তাকে ডেকে আন। সমুদ্রের ধারে আর একজন শিমোন থাকে।
6 সে চামড়ার কাজ করে। পিতর সেই শিমোনের বাড়ীতে আছে।”
7 যে স্বর্গদূত কর্ণীলিয়ের সংগে কথা বলছিলেন তিনি চলে গেলে পর কর্ণীলিয় দু’জন চাকর ও একজন সাহায্যকারী সৈন্যকে ডাকলেন। এই সৈন্যটি ঈশ্বরভক্ত ছিল।
8 সমস্ত কথা বুঝিয়ে বলবার পরে কর্ণীলিয় তাদের যাফোতে পাঠিয়ে দিলেন।
9 পরের দিন যখন সেই লোকেরা যাফো শহরের দিকে আসছিল তখন বেলা প্রায় দুপুর। পিতর প্রার্থনা করবার জন্য সেই সময় ছাদে উঠলেন।
10 তখন পিতরের খুব খিদে পেয়েছিল এবং তিনি কিছু খেতে চাইছিলেন। যখন খাবার তৈরী হচ্ছিল তখন পিতর তন্দ্রার মত অবস্থায় ছিলেন।
11 সেই অবস্থায় তিনি দেখলেন, আকাশ খুলে গেছে এবং বড় চাদরের মত কোন একটা জিনিসকে চার কোণা ধরে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
12 সেই চাদরের মধ্যে আছে সব রকম পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং পাখী।
13 তার পরে তিনি শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, “পিতর, ওঠো, মেরে খাও।”
14 পিতর বললেন, “না, না, প্রভু, কিছুতেই না। অপবিত্র বা অশুচি কোন কিছু আমি কখনও খাই নি।”
15 তখন তিনি আবার শুনলেন, “ঈশ্বর যা শুচি করেছেন তাকে তুমি অপবিত্র বোলো না।”
16 এই রকম তিন বার হবার পরে সেই চাদরটা আকাশে তুলে নেওয়া হল।
17 যে দর্শন পিতর পেয়েছিলেন তার অর্থ কি হতে পারে তা তিনি তখনও ভাবছিলেন; এমন সময় কর্ণীলিয়ের পাঠানো লোকেরা শিমোনের বাড়ী খুঁজে পেয়ে ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল।
18 তারপর তারা ডেকে জিজ্ঞাসা করল, “শিমোন, যাঁকে পিতরও বলা হয়, তিনি কি এখানে থাকেন?”
19 পিতর তখনও দর্শনের কথা ভাবছিলেন, এমন সময় পবিত্র আত্মা তাঁকে বললেন, “দেখ, তিনজন লোক তোমার খোঁজ করছে।
20 উঠে নীচে যাও। কোন সন্দেহ না করে তাদের সংগে যাও, কারণ আমিই তাদের পাঠিয়েছি।”
21 তখন পিতর নেমে এসে সেই লোকদের বললেন, “আপনারা যার খোঁজ করছেন আমিই সেই লোক। আপনারা কেন এসেছেন?”
22 সেই লোকেরা বলল, “শতপতি কর্ণীলিয় আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি একজন ধার্মিক লোক এবং তিনি ঈশ্বরকে ভক্তি করেন। সমস্ত যিহূদীরা তাঁর সুনাম করে। ঈশ্বরের একজন দূত তাঁকে আদেশ দিয়েছেন যেন তিনি আপনাকে তাঁর বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে আপনার কথা শোনেন।”
23 তখন পিতর বাড়ীর মধ্যে সেই লোকদের ডেকে আনলেন এবং তাদের থাকবার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলেন।পরের দিন পিতর সেই লোকদের সংগে রওনা হলেন। যাফো শহরের কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইও তাঁর সংগে গেলেন।
24 পরদিন তাঁরা কৈসরিয়াতে পৌঁছালেন। সেই সময় কর্ণীলিয় তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ বন্ধু-বান্ধবদের একত্র করে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
25 পিতর যখন ঘরে ঢুকলেন তখন কর্ণীলিয় তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন।
26 কিন্তু পিতর তাঁকে উঠিয়ে বললেন, “উঠুন, আমি নিজেও তো কেবল একজন মানুষ।”
27 কর্ণীলিয়ের সংগে কথা বলতে বলতে পিতর ভিতরে গিয়ে দেখলেন সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়েছে।
28 তখন তিনি তাদের বললেন, “আপনারা তো জানেন যে, একজন যিহূদীর পক্ষে একজন অযিহূদীর সংগে মেলামেশা করা বা তার সংগে দেখা করা আমাদের ধর্মের আইন-কানুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কাউকে অপবিত্র বা অশুচি বলা আমার উচিত নয়।
29 সেইজন্য যখন আপনারা আমাকে ডেকে পাঠালেন তখন আমি কোন আপত্তি না করেই এসেছি। এখন আমি জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কেন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?”
30 তখন কর্ণীলিয় বললেন, “চার দিন আগে ঠিক এই সময়ে বেলা তিনটায় আমি আমার ঘরে প্রার্থনা করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ উজ্জ্বল কাপড় পরা একজন লোক আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
31 ‘কর্ণীলিয়, ঈশ্বর তোমার প্রার্থনা শুনেছেন এবং গরীবদের তোমার দানের কথা তিনি মনে রেখেছেন।
32 এখন তুমি যাফোতে লোক পাঠাও, আর শিমোন, যাকে পিতরও বলা হয়, তাকে ডেকে আন। সমুদ্রের ধারে যে শিমোন থাকে এবং চামড়ার কাজ করে পিতর তারই বাড়ীতে অতিথি হয়ে আছে।’
33 সেইজন্য আমি তখনই আপনাকে ডেকে আনবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলাম, আর আপনি এসে ভালই করেছেন। এখানে আমরা সবাই এখন ঈশ্বরের সামনে আছি। প্রভু আপনাকে আমাদের কাছে যা বলতে আদেশ দিয়েছেন আমরা তা সবই শুনব।”
34 তখন পিতর বলতে আরম্ভ করলেন, “আমি এখন সত্যিই বুঝতে পারলাম ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান।
35 প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যারা তাঁকে ভক্তি করে এবং তাঁর চোখে যা ঠিক তা-ই করে তিনি তাদের গ্রহণ করেন।
36 ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের কাছে এই সুখবর পাঠিয়েছিলেন যে, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি সকলের প্রভু, তাঁরই মধ্য দিয়ে শান্তি পাওয়া যায়।
37 লোকদের যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা উচিত যোহন সেই কথা প্রচার করবার পরে গালীল থেকে আরম্ভ করে সমস্ত যিহূদিয়াতে যা ঘটেছিল তা আপনারা নিজেরাই জানেন।
38 আপনারা এও জানেন যে, ঈশ্বর নাসরতের যীশুকে পবিত্র আত্মা ও শক্তি দিয়ে অভিষেক করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর সংগে ছিলেন বলে তিনি ভাল কাজ করে বেড়াতেন এবং শয়তানের হাতে যারা কষ্ট পেত তাদের সবাইকে সুস্থ করতেন।
39 “যিহূদীদের দেশে এবং যিরূশালেমে তিনি যা কিছু করেছিলেন আমরা তার সাক্ষী। লোকেরা তাঁকে ক্রুশে টাংগিয়ে মেরে ফেলেছিল।
40 কিন্তু ঈশ্বর তৃতীয় দিনে তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুললেন এবং এমন করলেন যাতে লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়।
41 তবে সকলে তাঁকে দেখতে পায় নি, কিন্তু ঈশ্বর যে সাক্ষীদের আগেই বেছে রেখেছিলেন তারাই তাঁকে দেখতে পেয়েছিল, অর্থাৎ তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার পরে আমরা যারা তাঁর সংগে খাওয়া-দাওয়া করেছি আমরাই তাঁকে দেখতে পেয়েছি।
42 তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা যিহূদীদের কাছে প্রচার করি এবং সাক্ষ্য দিই যে, ঈশ্বর তাঁকেই জীবিত ও মৃতদের বিচারকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করেছেন।
43 সব নবীরাই তাঁর বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তাঁর উপরে যারা বিশ্বাস করে তারা প্রত্যেকে তাঁর গুণে পাপের ক্ষমা পায়।”
44 পিতর তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যারা সেই কথা শুনছিল তাদের সকলের উপরে পবিত্র আত্মা আসলেন।
45 যে যিহূদী বিশ্বাসীরা পিতরের সংগে এসেছিল তারা অযিহূদীদের উপরেও পবিত্র আত্মাকে দান হিসাবে ঢেলে দেওয়া হল দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল।
46 তারা তা বুঝতে পারল কারণ এই অযিহূদীদের তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে ও ঈশ্বরের গৌরব করতে শুনল।তখন পিতর বললেন,
47 “জলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে কি এই লোকদের কেউ বাধা দিতে পারে? তারা তো আমাদেরই মত পবিত্র আত্মাকে পেয়েছে।”
48 তখন তিনি সেই লোকদের যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম দেবার আদেশ দিলেন। পরে তারা পিতরকে তাঁদের কাছে কয়েক দিন থাকতে অনুরোধ করল।