1 যিহূদিয়া প্রদেশ থেকে কয়েকজন লোক সিরিয়া দেশের আন্তিয়খিয়াতে আসলেন এবং বিশ্বাসী ভাইদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন, “মোশির আইন-কানুন মতে তোমাদের সুন্নত করানো না হলে তোমরা কোনমতেই পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পার না।”
2 তাতে পৌল ও বার্ণবার সংগে এই লোকদের ভীষণ কথা কাটাকাটি হল। পরে ঠিক হল যে, পৌল ও বার্ণবা আন্তিয়খিয়ার কয়েকজন বিশ্বাসীকে সংগে নিয়ে যিরূশালেমে যাবেন এবং প্রেরিত্দের ও মণ্ডলীর নেতাদের সংগে এই বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন।
3 আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলী তাঁদের যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। ফৈনিকিয়া আর শমরিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে যাবার সময়ে পৌল ও বার্ণবা লোকদের জানালেন, অযিহূদীরা কিভাবে ঈশ্বরের দিকে ফিরেছে। এই খবর শুনে বিশ্বাসী ভাইয়েরা সকলেই খুব খুশী হলেন।
4 যখন পৌল ও বার্ণবা যিরূশালেমে আসলেন তখন মণ্ডলীর লোকেরা, নেতারা এবং প্রেরিতেরা আগ্রহের সংগে তাঁদের গ্রহণ করলেন। তাঁদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর যা করেছিলেন তা সবই তাঁরা সবাইকে বললেন।
5 ফরীশী দলের কয়েকজন লোক বিশ্বাসী হয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসীরা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “অযিহূদীদের সুন্নত করানো দরকার এবং তারা যেন মোশির আইন-কানুন পালন করে সেইজন্য তাদের আদেশ দেওয়া দরকার।”
6 তখন প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা এই বিষয় চিন্তা করবার জন্য এক জায়গায় মিলিত হলেন।
7 অনেক আলোচনার পর পিতর উঠে তাঁদের বললেন, “ভাইয়েরা, আপনারা তো জানেন যে, অনেক দিন আগে আপনাদের মধ্য থেকে ঈশ্বর আমাকে বেছে নিয়েছিলেন যাতে অযিহূদীরা আমার মুখ থেকে সুখবরের কথা শুনে বিশ্বাস করে।
8 ঈশ্বর সকলের অন্তর জানেন। তিনি আমাদের যেমন পবিত্র আত্মা দান করেছিলেন, অযিহূদীদেরও সেইভাবে পবিত্র আত্মা দান করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, তারাও পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছে।
9 তিনি আমাদের ও তাদের মধ্যে আলাদা বলে কিছুই রাখেন নি, কারণ তারা বিশ্বাস করেছে বলে তিনি তাদেরও অন্তর পরিষ্কার করেছেন।
10 তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষেরা বা আমরা যে বোঝা বইতে পারি নি সেই বোঝা অযিহূদী বিশ্বাসীদের কাঁধে তুলে দিয়ে কেন আপনারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করবার চেষ্টা করছেন?
11 আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রভু যীশুর দয়ায় অযিহূদী বিশ্বাসীরা যেমন পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছে তেমনি আমরাও উদ্ধার পেয়েছি।”
12 তখন সভার সবাই চুপ হয়ে গেলেন এবং পৌল ও বার্ণবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর অযিহূদীদের মধ্যে যে সব আশ্চর্য কাজ করেছিলেন তা তাঁদেরই মুখে শুনতে লাগলেন।
13 তাঁদের কথা বলা শেষ হলে পর যাকোব বললেন, “ভাইয়েরা, শুনুন।
14 ঈশ্বর তাঁর নিজের লোক হবার জন্য অযিহূদীদের মধ্য থেকে কিছু লোককে বেছে নিয়ে দেখিয়েছেন যে, অযিহূদীদের জন্যও তাঁর চিন্তা আছে। এই কথাই শিমোন-পিতর আমাদের বলেছেন।
15 এই কথার সংগে নবীদের কথারও মিল আছে, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে:
16 ‘এর পরে আমি এসে দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার তৈরী করব। যা ধ্বংস হয়ে গেছে তা আবার গাঁথব, আবার তা ঠিক করব;
17 যেন অন্য সব লোকেরা, অর্থাৎ যে সব অযিহূদীদের আমার বলে ডাকা হয়েছে তাঁরা আমার খোঁজ করতে পারে।’ প্রভু, যিনি এই সব কাজ করেন তিনি এই কথা বলছেন।
18 অনেক দিন আগে থেকে এ তাঁর মনের মধ্যে ছিল।”
19 যাকোব আরও বললেন, “এইজন্য আমার মতে যে অযিহূদীরা ঈশ্বরের দিকে ফিরছে তাদের কষ্ট দেওয়া আমাদের উচিত নয়।
20 তার চেয়ে বরং আমরা তাদের কাছে এই কথা লিখি যে, তারা যেন প্রতিমার সংগে যুক্ত সব কিছু থেকে এবং সমস্ত রকম ব্যভিচার থেকে দূরে থাকে, আর গলা টিপে মারা পশুর মাংস এবং রক্ত যেন তারা না খায়।
21 এই আদেশগুলো তাদের দেওয়া ভাল, কারণ মোশি যা বলেছেন তা প্রত্যেক শহরে অনেক অনেক দিন আগে থেকে প্রচার করা হচ্ছে এবং তিনি যা লিখে গেছেন তা প্রত্যেক বিশ্রাববারে সমাজ-ঘরগুলোতে পড়া হচ্ছে।”
22 তখন প্রেরিতেরা, মণ্ডলীর নেতারা এবং মণ্ডলীর অন্য সব লোকেরা ঠিক করলেন যে, তাঁরা নিজেদের কয়েকজন লোককে বেছে নিয়ে পৌল ও বার্ণবার সংগে আন্তিয়খিয়াতে পাঠিয়ে দেবেন। তাঁরা যিহূদা ও সীলকে বেছে নিলেন। এই যিহূদাকে বর্শাব্বা বলে ডাকা হত। বিশ্বাসী ভাইদের মধ্যে এই দু’জন ছিলেন নেতা।
23 তাঁদের সংগে এই চিঠি পাঠানো হল:আন্তিয়খিয়া, সিরিয়া ও কিলিকিয়ার অযিহূদী বিশ্বাসী ভাইদের কাছে আমরা প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা, অর্থাৎ আপনাদের ভাইয়েরা এই চিঠি লিখছি। আপনাদের মংগল হোক।
24 “আমরা শুনতে পেলাম যে, আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন গিয়ে অনেক কথা বলে আপনাদের মন অস্থির করে তুলে কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু আমরা তাদের এই রকম কাজ করতে বলি নি।
25 এইজন্য আমরা সবাই একমত হয়ে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে আমাদের প্রিয় বন্ধু বার্ণবা ও পৌলের সংগে আপনাদের কাছে তাঁদের পাঠালাম।
26 বার্ণবা ও পৌল আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন।
27 আমরা যিহূদা ও সীলকে পাঠালাম যেন আমরা যা লিখছি তা তাঁরা আপনাদের কাছে মুখেও বলেন।
28 পবিত্র আত্মা আর আমরা এটাই ভাল মনে করলাম যে, এই দরকারী বিষয়গুলো ছাড়া আর কোন কিছুর দ্বারা আপনাদের উপর যেন বোঝা চাপানো না হয়।
29 সেই দরকারী বিষয়গুলো হল-আপনারা প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাবেন না, রক্ত খাবেন না, গলা টিপে মারা পশুর মাংস খাবেন না এবং কোন রকম ব্যভিচার করবেন না। এই সব করা থেকে দূরে থাকলে আপনারা ভাল করবেন। বিদায়।”
30 পৌল, বার্ণবা ও সেই লোকদের পাঠানো হলে পর তাঁরা আন্তিয়খিয়াতে গেলেন। সেখানে তাঁরা মণ্ডলীর লোকদের একত্র করে সেই চিঠিখানা তাদের দিলেন।
31 লোকেরা চিঠিটা পড়ল এবং তার মধ্যে যে সান্ত্বনার কথা ছিল তাতে খুশী হল।
32 যিহূদা আর সীল নিজেরাও ছিলেন নবী; সেইজন্য তাঁরা অনেক কথা বলে সেখানকার ভাইদের উৎসাহ দিলেন এবং তাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের শক্তিশালী করে তুললেন।
33-34 আন্তিয়খিয়াতে তাঁরা কিছু দিন কাটালেন। যিরূশালেমের যাঁরা যিহূদা ও সীলকে আন্তিয়খিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, আন্তিয়খিয়ার ভাইয়েরা তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যিহূদা আর সীলকে আবার তাঁদের কাছে ফেরৎ পাঠিয়ে দিল,
35 কিন্তু পৌল আর বার্ণবা আন্তিয়খিয়াতেই রইলেন। সেখানে তাঁরা আরও অনেকের সংগে প্রভুর বাক্য শিক্ষা দিতে ও প্রচার করতে থাকলেন।
36 কিছু দিন পরে পৌল বার্ণবাকে বললেন, “যে সব জায়গায় আমরা প্রভুর বাক্য প্রচার করেছি, চল, এখনই সেই সব জায়গায় ফিরে গিয়ে বিশ্বাসী ভাইদের সংগে দেখা করি এবং তারা কেমন ভাবে চলছে তা দেখি।”
37 তখন বার্ণবা যোহনকে সংগে নিতে চাইলেন। এই যোহনকে মার্ক বলেও ডাকা হত।
38 পৌল কিন্তু তাঁকে সংগে নেওয়া ভাল মনে করলেন না, কারণ মার্ক পাম্ফুলিয়াতে তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের সংগে আর কাজ করেন নি।
39 তখন পৌল ও বার্ণবার মধ্যে এমন মতের অমিল হল যে, তাঁরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। বার্ণবা মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপে গেলেন, আর পৌল সীলকে বেছে নিলেন।
40 তখন আন্তিয়খিয়ার ভাইয়েরা পৌল ও সীলকে প্রভুর দয়ার হাতে তুলে দিলে পর তাঁরা রওনা হলেন।
41 পৌল সিরিয়া ও কিলিকিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে সমস্ত মণ্ডলীগুলোর বিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুললেন।