1 পরে মাবুদের এই কালাম আমার কাছে নাজেল হল,
2 হে মানুষের সন্তান, তুমি জেরুশালেমকে তার ঘৃণার কাজগুলোর কথা জানাও।
3 তুমি বল, সার্বভৌম মাবুদ জেরুশালেমকে এই কথা বলেন, তোমার উৎপত্তি ও জন্মস্থান কেনানীয়দের দেশ, তোমার পিতা আমোরীয় ও মা হিত্তীয়া।
4 তোমার জন্মের বৃত্তান্ত এই; তুমি যেদিন জন্মেছিলে, তোমার নাড়ি কাটা হয় নি এবং তোমাকে পরিষ্কার করার জন্য পানিতে গোসল করান হয় নি, তুমি লবণ মাখানো বা পটিতে বেষ্টিত হও নি।
5 তোমার প্রতি কেউ স্নেহদৃষ্টি করে কৃপা সহকারে এর কোন কাজ করে নি, কিন্তু তুমি জন্মদিনে তোমার স্বাভাবিক ঘৃণাযুক্ত অবস্থায় মাঠে নিক্ষিপ্তা হয়েছিলে।
6 আর আমি তোমার কাছ দিয়ে যাবার সময় তোমাকে তোমার রক্তের মধ্যে ছট্ফট্ করতে দেখলাম এবং তোমাকে বললাম, ‘তুমি নিজের রক্তে লিপ্তা হলেও জীবিত হও,’ হ্যাঁ, তোমাকে বললাম, ‘তুমি নিজের রক্তে লিপ্তা হলেও জীবিত হও।’
7 আমি তোমাকে ক্ষেতের চারার মত অনেক বড় করে তুললাম, তাতে তুমি বৃদ্ধি পেয়ে বড় হয়ে উঠলে, খুব সুন্দরী হয়ে উঠলে, তোমার স্তনযুগল সুগঠিত ও চুল দীর্ঘ হল; কিন্তু তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে।
8 তখন আমি তোমার কাছ দিয়ে যাবার সময় তোমার প্রতি দৃষ্টিপাত করলাম, দেখ, তোমার সময় প্রেমের সময়, এজন্য আমি তোমার উপরে আমার কাপড় মেলে দিয়ে তোমার উলঙ্গতা ঢেকে দিলাম; এবং আমি শপথ করে তোমার সঙ্গে নিয়ম স্থির করলাম, এই কথা সার্বভৌম মাবুদ বলেন, তাতে তুমি আমার হলে।
9 পরে আমি তোমাকে পানিতে গোসল করালাম, তোমার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত ধুয়ে দিলাম, আর তেল লাগিয়ে দিলাম।
10 আর আমি তোমাকে বিচিত্র পোশাক পরালাম, শুশুকের চামড়ার জুতা পরালাম এবং তোমাকে মসীনা কাপড়ে জড়ালাম ও রেশমের কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলাম।
11 পরে তোমাকে নানা গহনা দিয়ে সাজালাম, তোমার হাতে কঙ্কণ ও গলদেশে হার দিলাম।
12 আমি তোমার নাকে নথ, কানে দুল ও মাথায় সুন্দর মুকুট দিলাম।
13 এভাবে তুমি সোনা ও রূপা দিয়ে সাজলে; তোমার কাপড় মসীনা সুতা ও রেশম দ্বারা তৈরি এবং শিল্পকর্মে বিচিত্র হল, তুমি মিহি সুজি, মধু ও তেল ভোজন করতে এবং পরম-সুন্দরী হয়ে অবশেষে রাণীর পদ পেলে।
14 আর তোমার সৌন্দর্যের জন্য জাতিদের মধ্যে তোমার কীর্তি ছড়িয়ে গেল, কেননা আমি তোমাকে যে শোভা দিয়েছিলাম, তা দ্বারা তোমার সৌন্দর্য সিদ্ধ হয়েছিল, এই কথা সার্বভৌম মাবুদ বলেন।
15 পরে তুমি তোমার সৌন্দর্যে নির্ভর করে নিজের সুনামের কারণে জেনাকারিণী হলে; যে কেউ কাছ দিয়ে যেত, তার উপরে তোমার ব্যভিচাররূপ পানি সেচন করতে; সেটা তারই ভোগ্য হত।
16 আর তুমি তোমার কোন কোন কাপড় নিয়ে নিজের জন্য চিত্র বিচিত্র উচ্চস্থলী প্রস্তুত করে তার উপরে পতিতাবৃত্তি করতে; এরকম হওয়া উচিত ছিল না, হবারও কথাও ছিল না।
17 আর আমার সোনা ও আমার রূপা দিয়ে তৈরি যেসব গহনা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম তুমি তা নিয়ে পুরুষাকৃতি মূর্তি তৈরি করে তাদের সঙ্গে জেনা করতে।
18 আর তুমি আমার বিচিত্র পোশাকগুলো নিয়ে তাদেরকে পরাতে এবং আমার তেল ও ধূপ তাদের সম্মুখে রাখতে।
19 আর আমি তোমাকে আমার যে খাদ্য দিয়েছিলাম, যে মিহি সুজি, তেল ও মধু তোমাকে খেতে দিয়েছিলাম, তা তুমি খোশবুর জন্য তাদের সম্মুখে রাখতে; এ-ই করা হত, এই কথা সার্বভৌম মাবুদ বলেন।
20 আর তুমি, আমার জন্য প্রস্তুত তোমার যে পুত্রকন্যাদের, তাদেরকে নিয়ে খাদ্যরূপে ওদের কাছে কোরবানী করেছ।
21 তোমার জেনা কি ক্ষুদ্র বিষয় যে, তুমি আমার সন্তানদেরকেও জবেহ্ করে কোরবানী করেছ ও আগুনের মধ্য দিয়ে গমন করিয়েছ?
22 নিজের সমস্ত ঘৃণার কাজে ও জেনায় মগ্ন হওয়াতে তুমি তোমার যৌবনাবস্থার সেই সময় স্মরণ কর নি, যখন তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে, নিজের রক্তে ছট্ফট্ করছিলে।
23 আর তোমার এসব দুষ্কার্যের পরে— সার্বভৌম মাবুদ বলেন, ধিক্, ধিক্ তোমাকে।
24 তুমি নিজের জন্য উঁচু স্থান নির্মাণ করেছ এবং প্রত্যেক চকে উঁচু স্থান প্রস্তুত করেছ।
25 প্রত্যেক পথের মাথায় তুমি তোমার উঁচু স্থান নির্মাণ করেছ, তোমার সৌন্দর্যকে ঘৃণার বস্তু করেছ, প্রত্যেক পথিকের জন্য নিজের পা খুলে দিয়েছ এবং তোমার বেশ্যাক্রিয়া বাড়িয়ে তুলেছ।
26 আরও তুমি তোমার প্রতিবেশী স্থূলমাংস মিসরীয়দের সঙ্গে জেনা করেছ এবং আমাকে অসন্তুষ্ট করার জন্য তোমার পতিতাবৃত্তি আরও বাড়িয়েছ।
27 এজন্য দেখ, আমি তোমার উপরে হাত বাড়িয়ে তোমার নিরূপিত বৃত্তি খর্ব করলাম; এবং যারা তোমাকে হিংসা করে, যে ফিলিস্তিনীদের কন্যারা তোমার কুকর্মের ব্যবহারে লজ্জিতা হয়েছে, তাদের হাতে তোমাকে তুলে দিলাম।
28 আরও তুমি তৃপ্ত না হওয়াতে আসেরীয়দের সঙ্গে পতিতাবৃত্তি করেছ; কিন্তু তাদের সঙ্গে জেনা করলেও তৃপ্ত হও নি।
29 আর তুমি বাণিজ্যের দেশ কল্দিয়া পর্যন্ত তোমার জেনার কাজ বৃদ্ধি করেছ, কিন্তু এতেও তৃপ্ত হলে না।
30 সার্বভৌম মাবুদ বলেন, তোমার হৃদয় কেমন দুর্বল! তুমি তো এ সব করেছ, এ উদ্ধত পতিতার কাজ;
31 তুমি প্রত্যেক পথের মাথায় তোমার উঁচু স্থান নির্মাণ করেছ, প্রত্যেক চকে তোমার উঁচু স্থান প্রস্তুত করেছ; এতে তুমি পতিতার মত হও নি; তুমি তো পণ অবজ্ঞা করেছ।
32 জেনাকারীণী স্ত্রী! তুমি তোমার স্বামীর পরিবর্তে পরপুরুষকে গ্রহণ করে থাক।
33 লোকে সব পতিতাকেই টাকা দেয়, কিন্তু তুমি তোমার প্রেমিকমাত্রকেই উপহার দিয়েছ এবং তোমার পতিতাবৃত্তিক্রমে তারা যেন সমস্ত দিক থেকে তোমার কাছে আসে, এজন্য তাদেরকে ঘুষ দিয়েছ।
34 এতে অন্যান্য স্ত্রী থেকে তোমার পতিতাবৃত্তি বিপরীত; বস্তুত লোকেরা জেনা করার জন্য তোমার পিছনে যায় না, আর তুমি কিছু পণ না নিয়ে পণ দিয়ে থাক, এতেই তোমার কাণ্ড বিপরীত।
35 অতএব, হে পতিতা, মাবুদের কালাম শোন;
36 সার্বভৌম মাবুদ এই কথা বলেন, তোমার লজ্জাস্থান খুলে দেওয়া হয়েছে এবং তোমার প্রেমিকদের সঙ্গে তোমার জেনা হেতু তোমার উলঙ্গতা অনাবৃত হয়েছে, সেজন্য এবং তোমার সমস্ত ঘৃণার মূর্তির জন্য, আর তুমি তাদেরকে যে রক্ত দিয়েছ, তোমার সন্তানদের সেই রক্তের জন্য,
37 দেখ, আমি তোমার সেসব প্রেমিককে একত্র করবো, যাদের সঙ্গে তুমি মিলিত হয়েছ এবং যাদেরকে তুমি মহব্বত করেছ ও যাদেরকে হিংসা করেছ; তোমার বিরুদ্ধে চারদিক থেকে তাদেরকে একত্র করবো, পরে তাদের সম্মুখে তোমার উলঙ্গতা অনাবৃত করবো, তাতে তারা তোমার সমস্ত উলঙ্গতা দেখবে।
38 আর সতী ধর্মভ্রষ্টা ও রক্তপাতকারিণী স্ত্রীলোকদের বিচারের মত আমি তোমার বিচার করবো এবং ক্রোধ ও অন্তর্জ্বালার রক্ত তোমার উপরে উপস্থিত করবো।
39 আর আমি তাদের হাতে তোমাকে তুলে দেব, তাতে তারা তোমার উঁচু স্থান ভেঙ্গে ফেলবে, তোমার উঁচু স্থানগুলো উৎপাটন করবে, তোমাকে বিবস্ত্রা করবে এবং তোমার গহনাগুলো হরণ করবে; তারা তোমাকে বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী করে রাখবে।
40 আর তারা তোমার বিরুদ্ধে জনসমাজ আনবে, পাথর ছুঁড়ে তোমাকে হত্যা করবে ও নিজ নিজ তলোয়ার দ্বারা বিদ্ধ করবে;
41 এবং তোমার বাড়িগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেবে ও অনেক স্ত্রীলোকের সাক্ষাতে তোমাকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দেবে; এভাবে আমি তোমার জেনার কাজ বন্ধ করাব; তুমি আর পণ দেবে না।
42 আমি তোমার প্রতি আমার ক্রোধ চরিতার্থ করে শান্ত হব, তাতে তোমার উপর থেকে আমার অন্তর্জ্বালা যাবে, আমি ক্ষান্ত হব, আর অসন্তুষ্ট হব না।
43 তুমি তোমার যৌবনাবস্থা স্মরণ কর নি, কিন্তু এসব বিষয়ে আমাকে ক্রুদ্ধ করেছ; এজন্য দেখ, আমিও তোমার কাজের ফল তোমার মাথায় দেব, এই কথা সার্বভৌম মাবুদ বলেন; ঐ সমস্ত ঘৃণার আচরণের পরে তুমি আর কুকর্ম করবে না।
44 দেখ, যে কেউ প্রবাদ ব্যবহার করে, সে তোমার বিরুদ্ধে এই প্রবাদ ব্যবহার করবে, ‘যেমন মা তেমনি কন্যা’।
45 তুমি তোমার মায়ের কন্যা, সেও তার স্বামীকে ও সন্তানদেরকে ঘৃণা করতো; এবং তুমি নিজের বোনদের বোন, তারাও নিজ নিজ স্বামী ও সন্তানদেরকে ঘৃণা করতো; তোমাদের মা হিত্তীয়া ও তোমাদের পিতা আমোরীয় ছিল।
46 তোমার বড় বোন সামেরিয়া, সে তার কন্যাদের সঙ্গে তোমার বামদিকে বাস করে; এবং তোমার ছোট বোন সাদুম, সে তার কন্যাদের সঙ্গে তোমার ডানদিকে বাস করে।
47 কিন্তু তুমি যে তাদের পথে চলেছ ও তাদের ঘৃণার কাজ করেছ, তা নয়, বরং সেটি লঘু বিষয় বলে নিজের সমস্ত আচার-ব্যবহারে তাদের থেকেও ভ্রষ্টা হয়েছ।
48 সার্বভৌম মাবুদ বলেন, আমার জীবনের কসম, তোমার বোন সাদুম ও তার কন্যারা তোমার মত ও তোমার কন্যাদের মত কাজ করে নি।
49 দেখ, তোমার বোন সাদুমের এই অপরাধ ছিল; তার ও তার কন্যাদের অহংকার, খাদ্য সামগ্রীর পূর্ণতা এবং নিশ্চিন্ততাযুক্ত শান্তি ছিল; আর সে দুঃখী ও দরিদ্রের হাত সবল করতো না।
50 তারা অহঙ্কারিণী ছিল ও আমার সাক্ষাতে ঘৃণার কাজ করতো, অতএব আমি তা দেখে তাদেরকে দূর করলাম।
51 আর সামেরিয়া তোমার গুনাহ্র অর্ধেক গুনাহ্ও করে নি, কিন্তু তুমি তোমর ঘৃণার কাজ তাদের থেকেও বেশি বাড়িয়েছ এবং নিজের কৃত সমস্ত ঘৃণার কাজ দ্বারা তোমার বোনদের ধার্মিক প্রতিপন্ন করেছ।
52 তুমিও নিজের অপমান বহন কর, কেননা তুমি তোমার বোনদের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি করেছ; তুমি যেসব গুনাহের কাজ দ্বারা তাদের চেয়ে বেশি ঘৃণার যোগ্য হয়েছ; তাতে তারা তোমার চেয়ে ধার্মিক হয়েছে; তুমিও লজ্জিতা হও, নিজের অপমান বহন কর, কেননা তুমি তোমার বোনদেরকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করেছ।
53 আমি তাদের বন্দীদশা, সাদুম ও তার কন্যাদের বন্দীদশা এবং সামেরিয়া ও তার কন্যাদের বন্দীদশা ফিরাব এবং তাদের মধ্যে তোমার বন্দীদের বন্দীদশা ফিরাব;
54 যেন তুমি তোমার বোনদের সান্ত্বনার কারণ হয়ে, যা যা করেছ, সেসব কাজের জন্য নিজের অপমান বহন করতে ও অপমানিত হতে পার।
55 আর তোমার বোনেরা, সাদুম ও তার কন্যারা, আগের অবস্থা ফিরে পাবে এবং সামেরিয়া ও তার কন্যারা আগের অবস্থা ফিরে পাবে এবং তুমি ও তোমার কন্যারা আগের অবস্থা ফিরে পাবে।
56 তোমার অহঙ্কারের সময়ে তুমি তোমার বোন সাদুমের নাম মুখে আনতে না;
57 তখন তোমার নাফরমানী প্রকাশ পায় নি; যেমন এই সময়ে অরামের কন্যারা ও তার চারদিকের নিবাসিনী সকলে, ফিলিস্তিনীদের কন্যারা, তোমাকে টিটকারি দিচ্ছে; এরা চারদিকে তোমাকে তুচ্ছ করে।
58 তুমি তোমার কুকর্মের ও তোমার ঘৃণার আচরণেরই ভার বহন করেছ, মাবুদ এই কথা বলেন।
59 কেননা সার্বভৌম মাবুদ এই কথা বলেন, তুমি যেরকম কাজ করেছ, আমি তোমার প্রতিও সেই রকমক কাজ করবো; তুমি তো শপথ অবজ্ঞা করে নিয়ম ভঙ্গ করেছ।
60 তবুও তোমার যৌবনকালে তোমার সঙ্গে আমার যে নিয়ম ছিল, তা আমি স্মরণ করবো এবং তোমার পক্ষে চিরস্থায়ী একটি নিয়ম স্থির করবো।
61 তখন তুমি তোমার আচার ব্যবহার স্মরণ করে লজ্জিতা হবে, যখন নিজের বোনদের, নিজের বড় ও ছোট বোনদের গ্রহণ করবে; আর আমি তাদেরকে কন্যাদের মত তোমাকে দেব, কিন্তু তোমার নিয়ম অনুসারে নয়।
62 বাস্তবিক আমিই তোমার সঙ্গে আমার নিয়ম স্থির করবো; তাতে তুমি জানবে যে, আমিই মাবুদ;
63 অভিপ্রায় এই, আমি যখন তোমার অন্যায়গুলো মাফ করবো, তখন তুমি যেন তা স্মরণ করে লজ্জিতা হও ও নিজের অপমানের দরুন আর কখনও মুখ না খোল, এই কথা সার্বভৌম মাবুদ বলেন।