1 আর ইউসুফ তাঁর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে হুকুম করলেন, এই লোকদের বস্তায় যত শস্য ধরে পূর্ণ করে দাও এবং প্রতিজনের টাকা তার বস্তার মুখে রাখ।
2 আর কনিষ্ঠের ছালার মুখে তার শস্য ক্রয়ের টাকার সঙ্গে আমার বাটি অর্থাৎ রূপার বাটি রাখ। তখন সে ইউসুফের উক্ত কথানুসারে কাজ করলো।
3 পর দিন খুব ভোরেই তাঁদের গাধাগুলো সহ তাঁরা বিদায় নিলেন।
4 তাঁরা নগর থেকে বের হয়ে অনেক দূরে যেতে না যেতে ইউসুফ তাঁর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে বললেন, উঠ, ঐ লোকদের পিছনে দৌড়ে গিয়ে তাদের সঙ্গ ধরে বলো, তোমরা উপকারের পরিবর্তে কেন অপকার করলে?
5 আমার মালিক যাতে পান করেন ও যা দিয়ে গণা-পড়ার কাজ করেন, এটি কি সেই বাটি নয়? এই কাজ করে তোমরা অপরাধ করেছ।
6 পরে সে তাঁদের নাগাল পেয়ে সেই কথা বললো।
7 তাঁরা বললেন, হুজুর, কেন এমন কথা বলেন? আপনার গোলামেরা যে এমন কাজ করবে, তা দূরে থাকুক।
8 দেখুন, আমরা নিজ নিজ বস্তার মুখে যে টাকা পেয়েছিলাম, তা কেনান দেশ থেকে পুনর্বার আপনার কাছে এনেছি; তবে আমরা কিভাবে আপনার মালিকের বাড়ি থেকে রূপা কি সোনা চুরি করবো?
9 আপনার গোলামদের মধ্যে যার কাছে তা পাওয়া যায় সে অবশ্যই মরবে এবং আমরাও মালিকের গোলাম হবো।
10 সে বললো, ভাল, তোমাদের কথা অনুসারেই হোক; যার কাছে তা পাওয়া যাবে, সে আমার গোলাম হবে, কিন্তু আর সকলে নির্দোষ হবে।
11 তখন তাঁরা শীঘ্র করে নিজেদের বস্তাগুলো ভূমিতে নামিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ বস্তা খুললেন।
12 আর সে জ্যেষ্ঠ থেকে আরম্ভ করে কনিষ্ঠের বস্তা পর্যন্ত খুঁজে দেখলো, আর বিন্ইয়ামীনের বস্তায় সেই বাটি পাওয়া গেল।
13 তখন তাঁরা তাদের কাপড় ছিঁড়লেন ও নিজ নিজ গর্দভে বস্তা চাপিয়ে নগরে ফিরে গেলেন।
14 পরে এহুদা ও তাঁর ভাইয়েরা ইউসুফের বাড়িতে এলেন; তিনি তখনও সেখানে ছিলেন; আর তাঁরা তাঁর সম্মুখে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন।
15 তখন ইউসুফ তাঁদেরকে বললেন, তোমরা এ কেমন কাজ করলে? আমার মত ব্যক্তি অবশ্য গণনা করতে পারে, তা কি তোমরা জান না?
16 এহুদা বললেন, আমরা মালিকের কাছে কি উত্তর দেব? কি কথা বলবো? কিসেই বা নিজেদের নির্দোষ দেখাব? আল্লাহ্ তাঁর গোলামদের অপরাধ প্রকাশ করেছেন, দেখুন, আমরা ও যার কাছে বাটি পাওয়া গেছে, সকলেই মালিকের গোলাম হলাম।
17 ইউসুফ বললেন, না, এমন কাজ আমি কখনও করবো না; যার কাছে বাটি পাওয়া গেছে, সেই আমার গোলাম হবে, কিন্তু তোমরা সহিসালামতে পিতার কাছে প্রস্থান কর।
18 তখন এহুদা কাছে গিয়ে বললেন, হে মালিক, আরজ করি, আপনার গোলামকে মালিকের কাছে একটি কথা বলতে অনুমতি দিন; এই গোলামের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রজ্বলিত না হোক, কারণ আপনি ফেরাউনের মত।
19 মালিক এই গোলামদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমাদের পিতা কি ভাই আছে?
20 আমরা মালিককে জবাবে বলেছিলাম, আমাদের বৃদ্ধ পিতা আছেন এবং তাঁর বৃদ্ধাবস্থার একটি কনিষ্ঠ পুত্র আছে; তার সহোদরের মৃত্যু হয়েছে; সে-ই মাত্র তার মায়ের অবশিষ্ট পুত্র; তার পিতা তাকে স্নেহ করেন।
21 পরে আপনি এই গোলামদেরকে বলেছিলেন, তোমরা আমার কাছে তাকে আন, আমি তাকে স্বচক্ষে দেখবো।
22 তখন আমরা মালিককে বলেছিলাম, সেই যুবক পিতাকে ছেড়ে আসতে পারবে না, সে পিতাকে ছেড়ে আসলে পিতা মারা যাবেন।
23 তাতে আপনি এই গোলামদেরকে বলেছিলেন, সেই ছোট ভাইটি তোমাদের সঙ্গে না আসলে তোমরা আমার মুখ আর দেখতে পাবে না।
24 আপনার গোলাম যিনি আমার পিতা, তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে মালিকের সেসব কথা বললাম।
25 পরে আমাদের পিতা বললেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু খাদ্যশস্য ক্রয় করে আন।
26 আমরা বললাম, যেতে পারব না; যদি ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে থাকে তবে যাব; কেননা ছোট ভাইটি সঙ্গে না থাকলে আমরা সেই ব্যক্তির মুখ দেখতে পাব না।
27 তাতে আপনার গোলাম, আমার পিতা বললেন, তোমরা জান, আমার সেই স্ত্রী থেকে দু’টি মাত্র সন্তান জন্মে।
28 তাদের মধ্যে এক জন আমার কাছ থেকে প্রস্থান করলো, আর আমি বললাম, সে নিশ্চয় খণ্ড খণ্ড হয়েছে এবং সেই সময় থেকে আমি তাকে আর দেখতে পাই নি।
29 এখন আমার কাছ থেকে একেও নিয়ে গেলে যদি এর কোন বিপদ ঘটে তবে তোমরা শোকে এই বৃদ্ধ অবস্থায় আমাকে এই পাতালে নামিয়ে দেবে।
30 অতএব আপনার গোলাম যিনি আমার পিতা, আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হলে আমাদের সঙ্গে যদি এই যুবক না থাকে, তবে এই যুবকের প্রাণের সঙ্গে তাঁর প্রাণ বাঁধা আছে বলে,
31 যুবকটি নেই দেখলে তিনি মারা পড়বেন; এভাবে আপনার এই গোলামেরা শোকে বৃদ্ধ অবস্থায় আপনার গোলাম আমাদের পিতাকে পাতালে নামিয়ে দেবে।
32 আবার আপনার গোলাম আমি পিতার কাছে এই যুবকটির জামিন হয়ে বলেছিলাম, আমি যদি তাকে তোমার কাছে না আনি, তবে সারা জীবন পিতার কাছে অপরাধী থাকব।
33 অতএব আরজ করি, মালিকের কাছে এই যুবকটির পরিবর্তে আপনার গোলাম আমি মালিকের গোলাম হয়ে থাকি, কিন্তু এই যুবককে আপনি তার ভাইদের সঙ্গে যেতে দিন।
34 কেননা এই যুবকটি আমার সঙ্গে না থাকলে আমি কিভাবে পিতার কাছে যেতে পারি? অন্যথায় পিতার যে বিপদ ঘটবে, তা-ই আমাকে দেখতে হবে।