1 পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, তুমি ফেরাউনের কাছে যাও; কেননা আমি তার ও তার কর্মকর্তাদের অন্তর কঠিন করলাম। আমি তাদের মধ্যে আমার এসব চিহ্ন-কাজ দেখাব,
2 এবং আমি মিসরীয়দের প্রতি যা যা করেছি ও তাদের মধ্যে আমার যে যে প্রমাণ রেখেছি তার বৃত্তান্ত যেন তুমি তোমার পুত্রের ও পৌত্রের কাছে প্রকাশ করতে পার এবং এভাবে তারা জানতে পারবে যে, আমি যে মাবুদ।
3 তখন মূসা ও হারুন ফেরাউনের কাছে গিয়ে বললেন, ইবরানীদের মাবুদ আল্লাহ্ এই কথা বলেন, তুমি আমার সম্মুখে নম্র হতে কত কাল অসম্মত থাকবে? আমার সেবা করার জন্য আমার লোকদেরকে ছেড়ে দাও।
4 কিন্তু যদি আমার লোকদেরকে ছেড়ে দিতে অসম্মত হও, তবে দেখ, আমি আগামীকাল তোমার সীমাতে পঙ্গপাল নিয়ে আসব।
5 তারা ভূতল এমন আচ্ছন্ন করবে যে, কেউ ভূমি দেখতে পাবে না; আর শিলাবৃষ্টি থেকে যা কিছু রক্ষা পেয়েছে ও অবশিষ্ট তোমাদের যা কিছু আছে তা তারা খেয়ে ফেলবে এবং ক্ষেতে উৎপন্ন তোমাদের গাছগুলো খেয়ে ফেলবে।
6 আর তোমার বাড়ি-ঘর ও তোমার সমস্ত কর্মকর্তাদের বাড়ি-ঘর ও সমস্ত মিসরীয় লোকের বাড়ি-ঘর পঙ্গপালে পরিপূর্ণ হবে; দুনিয়াতে তোমার পূর্বপুরুষদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত কখনও তেমন দেখা যায় নি। তখন তিনি মুখ ঘুরিয়ে ফেরাউনের কাছ থেকে বের হয়ে আসলেন।
7 তখন ফেরাউনের কর্মকর্তারা তাঁকে বললো, এই ব্যক্তি কত কাল আমাদের ফাঁদ হয়ে থাকবে? আল্লাহ্ মাবুদের সেবা করার জন্য এদেরকে ছেড়ে দিন; আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না যে, মিসর দেশ ছারখার হয়ে গেল?
8 তখন মূসা ও হারুনকে ফেরাউনের কাছে পুনর্বার নিয়ে আসা হল; আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, যাও, তোমরা গিয়ে তোমাদের আল্লাহ্ মাবুদের সেবা কর; কিন্তু কে কে যাবে?
9 মূসা বললেন, আমরা আমাদের শিশু ও বৃদ্ধদেরকে, আমাদের পুত্রকন্যা এবং গোমেষাদির পালও সঙ্গে নিয়ে যাব, কেননা মাবুদের উদ্দেশে আমাদের উৎসব করতে হবে।
10 তখন ফেরাউন তাঁদেরকে বললেন, যদি আমি তোমাদের ও তোমাদের শিশুদের ছেড়ে দিই তবে মাবুদ তোমাদের সহবর্তী হোন! তোমাদের মনে দুরভিসন্ধি আছে; না, তা কখনও হবে না।
11 মাত্র তোমাদের পুরুষেরা গিয়ে মাবুদের এবাদত করুক; কারণ তোমরা তো এ-ই চাইছো। পরে ফেরাউনের সম্মুখ থেকে তাঁদের দূর করে দেওয়া হল।
12 পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, তুমি মিসর দেশের উপরে পঙ্গপালের জন্য হাত বাড়িয়ে দাও, তাতে তারা মিসর দেশে এসে ভূমির সমস্ত সবুজ লতাগুল্ম ও গাছপালা খেয়ে ফেলবে, শিলাবৃষ্টি যা কিছু রেখে গেছে তা সবই খেয়ে ফেলবে।
13 তখন মূসা মিসর দেশের উপরে তাঁর লাঠিটি বাড়িয়ে ধরলেন, তাতে মাবুদ সমস্ত দিন ও সমস্ত রাত দেশে পূর্বীয় বায়ু বহালেন, আর সকাল হলে পূর্বীয় বায়ু পঙ্গপাল উড়িয়ে নিয়ে আসলো।
14 তাতে সমস্ত মিসর দেশের উপরে পঙ্গপাল এসে বসতে লাগল ও মিসরের সমস্ত সীমাতে পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়লো। তা অত্যন্ত ভয়ানক হল; সেরকম পঙ্গপাল আগে কখনও হয় নি এবং পরেও কখনও হবে না।
15 তারা সমস্ত জায়গা আচ্ছন্ন করে ফেলল, তাতে দেশ অন্ধকার হল এবং ভূমির যে সবুজ লতাগুল্ম ও গাছপালার যে ফল শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়েছিল, সেসব তারা খেয়ে ফেললো; সমস্ত মিসর দেশে গাছ বা ক্ষেতের সমস্ত সবুজ লতাগুল্ম কিছুই রইলো না।
16 তখন ফেরাউন তাড়াতাড়ি মূসা ও হারুনকে ডেকে এনে বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহ্ মাবুদের বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধে গুনাহ্ করেছি।
17 আরজ করি, কেবল এবার আমার গুনাহ্ মাফ কর এবং আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর ছায়াকে দূর করার জন্য তোমাদের আল্লাহ্ মাবুদের কাছে ফরিয়াদ কর।
18 তখন তিনি ফেরাউনের কাছ থেকে বাইরে গিয়ে মাবুদের কাছে ফরিয়াদ জানালেন;
19 আর মাবুদ অতি প্রবল পশ্চিম বায়ু আনলেন, তা পঙ্গ-পালদেরকে উঠিয়ে নিয়ে লোহিত সাগরে তাড়িয়ে দিল, তাতে মিসরের সমস্ত সীমাতে একটা পঙ্গপালও অবশিষ্ট রইলো না।
20 কিন্তু মাবুদ ফেরাউনের অন্তর কঠিন করলেন, আর তিনি বনি-ইসরাইলদেরকে ছেড়ে দিলেন না।
21 পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, তুমি আসমানের দিকে হাত বাড়িয়ে দাও; তাতে মিসর দেশে অন্ধকার হবে ও সেই অন্ধকার সপর্শ করা যাবে।
22 পরে মূসা আসমানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন; তাতে তিন দিন পর্যন্ত সমস্ত মিসর দেশ গাঢ় অন্ধকারে ডুবে রইলো।
23 তিন দিন পর্যন্ত কেউ কারো মুখ দেখতে পেল না এবং কেউ তার স্থান থেকে উঠলো না; কিন্তু বনি-ইসরাইলদের জন্য তাদের বাসস্থানে আলো ছিল।
24 তখন ফেরাউন মূসাকে ডেকে এনে বললেন, যাও, তোমরা গিয়ে মাবুদের সেবা কর; কেবল তোমাদের ভেড়ার পাল ও গরুর পাল থাকুক; তোমাদের শিশুরাও তোমাদের সঙ্গে যাক।
25 মূসা বললেন, আমাদের আল্লাহ্ মাবুদের উদ্দেশে কোরবানী করার জন্য আমাদের হাতে কোরবানী ও পোড়ানো-কোরবানীর দ্রব্য দেওয়া আপনার কর্তব্য।
26 আমাদের সঙ্গে আমাদের পশুও যাবে, একটি খুরও অবশিষ্ট থাকবে না; কেননা আমাদের আল্লাহ্ মাবুদের এবাদত করার জন্য তাদের মধ্য থেকে কোরবানীর জিনিস নিতে হবে এবং কি কি দিয়ে মাবুদের এবাদত করবো তা সেই স্থানে উপস্থিত না হলে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
27 কিন্তু মাবুদ ফেরাউনের অন্তর কঠিন করলেন এবং তিনি তাদের ছেড়ে দিতে সম্মত হলেন না।
28 তখন ফেরাউন তাঁকে বললেন, আমার সম্মুখ থেকে দূর হও, সাবধান, আর কখনও আমার মুখ দর্শন করো না; কেননা যেদিন আমার মুখ দেখবে, সেই দিনই তোমার মরণ হবে।
29 মূসা বললেন, ভালই বলেছেন, আমি আপনার মুখ আর কখনও দেখবো না।