1 ঈসা যখন জানলেন যে, ফরীশীরা শুনেছে, ‘ঈসা ইয়াহিয়ার চেয়ে বেশি সাহাবী করেন এবং বাপ্তিস্ম দেন’—
2 কিন্তু ঈসা নিজে বাপ্তিস্ম দিতেন না, তাঁর সাহাবীরাই দিতেন—
3 তখন তিনি এহুদিয়া ত্যাগ করলেন এবং পুনর্বার গালীলে চলে গেলেন,
4 আর সামেরিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হল।
5 তাতে তিনি শুখর নামক সামেরিয়ার একটি নগরের কাছে গেলেন; ইয়াকুব তাঁর পুত্র ইউসুফকে যে ভূমি দান করেছিলেন, সেই নগর তার নিকটবর্তী।
6 আর সেই স্থানে ইয়াকুবের কূপ ছিল। তখন তিনি পথশ্রান্ত হওয়াতে সেই কূপের পাশেই বসলেন। বেলা তখন অনুমান ষষ্ঠ ঘটিকা। সামেরিয়ার এক জন স্ত্রীলোক সেই কূপ থেকে পানি তুলতে আসল।
7 ঈসা তাকে বললেন, আমাকে পান করার পানি দাও।
8 কেননা তাঁর সাহাবীরা খাদ্য ক্রয় করতে নগরে গিয়েছিলেন।
9 তাতে সামেরীয় স্ত্রীলোকটি বললো, আপনি ইহুদী হয়ে কেমন করে আমার কাছে পান করার পানি চাচ্ছেন? আমি তো সামেরীয় স্ত্রীলোক। —কেননা সামেরীয়দের সঙ্গে ইহুদীদের কোন দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নেই।—
10 জবাবে ঈসা তাকে বললেন, তুমি যদি জানতে, আল্লাহ্র দান কি, আর কে তোমাকে বলছে, ‘আমাকে পান করার পানি দাও’, তবে তাঁরই কাছে তুমি যাচ্ঞা করতে এবং তিনি তোমাকে জীবন্ত পানি দিতেন।
11 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বললো, হুজুর, পানি তুলবার কোন পাত্র আপনার কাছে নেই, কূপটিও গভীর; তবে সেই জীবন্ত পানি কোথা থেকে পেলেন?
12 আমাদের পূর্ব-পুরুষ ইয়াকুব থেকে কি আপনি মহান? তিনিই আমাদেরকে এই কূপ দিয়েছেন, আর এর পানি তিনি নিজে ও তাঁর পুত্ররা পান করতেন, তাঁর পশুপালও পান করতো।
13 জবাবে ঈসা তাকে বললেন, যে কেউ এই পানি পান করে, তার আবার পিপাসা পাবে;
14 কিন্তু আমি যে পানি দেব, তা যে কেউ পান করে, তার পিপাসা আর কখনও হবে না; বরং আমি তাকে যে পানি দেব, তা তার অন্তরে এমন পানির ফোয়ারা হবে, যা অনন্ত জীবন পর্যন্ত উথলে উঠবে।
15 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বললো, হুজুর, সেই পানি আমাকে দিন, যেন আমার পিপাসা না পায় এবং পানি তুলবার জন্য এতটা পথ হেঁটে আসতে না হয়।
16 ঈসা তাকে বললেন, যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে নিয়ে এসো।
17 স্ত্রীলোকটি জবাবে তাঁকে বললো, আমার স্বামী নেই।
18 ঈসা তাকে বললেন, তুমি ভালই বলেছ তোমার স্বামী নেই; কেননা ইতোমধ্যে তোমার পাঁচটি স্বামী হয়ে গেছে, আর এখন তোমার যে আছে, সে তোমার স্বামী নয়; এই কথা সত্যি বলেছ।
19 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বললো, হুজুর, আমি দেখছি যে, আপনি এক জন নবী।
20 আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই পর্বতে এবাদত করতেন, আর আপনারা বলে থাকেন, যে স্থানে এবাদত করা উচিত, সে স্থানটি জেরুশালেমেই আছে।
21 ঈসা তাকে বলেন, হে নারী, আমার কথায় বিশ্বাস কর; এমন সময় আসছে, যখন তোমরা না এই পর্বতে, না জেরুশালেমে পিতার এবাদত করবে।
22 তোমরা যা জান না, তার এবাদত করছো; আমরা যা জানি, তার এবাদত করছি, কারণ ইহুদীদের মধ্য দিয়েই নাজাত পাবার উপায় এসেছে।
23 কিন্তু এমন সময় আসছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত এবাদতকারীরা রূহে ও সত্যে পিতার এবাদত করবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এরকম এবাদতকারীদেরই খোঁজ করেন।
24 আল্লাহ্ রূহ্; আর যারা তাঁর এবাদত করে, তাদেরকে রূহে ও সত্যে এবাদত করতে হবে।
25 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বললো, আমি জানি, মসীহ্, যাঁকে অভিষিক্ত বলে, তিনি আসছেন, তিনি যখন আসবেন, তখন আমাদেরকে সকলই জানাবেন।
26 ঈসা তাকে বললেন, তোমার সঙ্গে কথা বলছি যে আমি, আমিই তিনি।
27 এই সময় তাঁর সাহাবীরা আসলেন এবং আশ্চর্য হলেন যে, তিনি এক জন স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলছেন, তবুও কেউ বললেন না আপনি কি চান? কিংবা, কি জন্য ওর সঙ্গে কথা বলছেন?
28 তখন সেই স্ত্রীলোকটি নিজের কলসী ফেলে রেখে নগরে গেল,
29 আর লোকদেরকে বললো, এসো, এক জন মানুষকে দেখ, আমি যা কিছু করেছি, তিনি সকলই আমাকে বলে দিলেন; তিনিই কি সেই মসীহ্ নন?
30 তারা নগর থেকে বের হয়ে তাঁর কাছে আসতে লাগল।
31 ইতোমধ্যে সাহাবীরা তাঁকে ফরিয়াদ করে বললেন, রব্বি, আহার করুন।
32 কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, খাবারের জন্য আমার এমন খাদ্য আছে, যা তোমরা জান না।
33 অতএব সাহাবীরা পরস্পর বলতে লাগলেন, কেউ কি তাঁকে খাদ্য এনে দিয়েছে?
34 ঈসা তাঁদেরকে বললেন, আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, যেন তাঁর ইচ্ছা পালন করি ও তাঁর কাজ সাধন করি।
35 তোমরা কি বল না, আর চার মাস পরে শস্য কাটার সময় হবে? দেখ, আমি তোমাদেরকে বলছি, চোখ তুলে ক্ষেতের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, শস্য এখনই কাটার মত সাদা রংয়ের হয়েছে।
36 যে কাটে সে বেতন পায় এবং অনন্ত জীবনের জন্য শস্য সংগ্রহ করে; যেন, যে বুনে ও যে কাটে, উভয়ে একত্র আনন্দ করে।
37 কেননা এই স্থলে এই কথা সত্যি, এক জন বুনে, আর এক জন কাটে।
38 আমি তোমাদেরকে এমন শস্য কাটতে প্রেরণ করলাম, যার জন্য তোমরা পরিশ্রম কর নি; অন্যেরা পরিশ্রম করেছে এবং তোমরা তাদের শ্রম-ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছ।
39 সেই নগরের সামেরীয়রা অনেকে সেই স্ত্রীলোকটি যে সাক্ষ্য দিয়েছিল— আমি যা কিছু করেছি, তিনি আমাকে সকলই বলে দিলেন— তার এই কথার জন্য তাঁর উপর ঈমান আনলো।
40 অতএব সেই সামেরিয়েরা যখন তাঁর কাছে আসল, তখন তাঁকে ফরিয়াদ করলো, যেন তিনি তাদের কাছে অবস্থিতি করেন; তাতে তিনি দুই দিন সেখানে অবস্থান করলেন।
41 তখন আরও অনেক লোক তাঁর কথা শুনে তাঁর উপর ঈমান আনলো;
42 আর তারা সেই স্ত্রীলোককে বললো, এখন যে আমরা ঈমান এনেছি, তা তোমার কথা শুনে নয়, কেননা আমরা নিজেরা শুনেছি ও জানতে পেরেছি যে, ইনি সত্যিই দুনিয়ার নাজাতদাতা।
43 সেই দুই দিনের পর তিনি সেখান থেকে গালীলে গমন করলেন।
44 কারণ ঈসা নিজে এই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, নবী নিজের দেশে সমাদর পান না।
45 অতএব তিনি যখন গালীলে আসলেন, তখন গালীলীয়েরা তাঁকে গ্রহণ করলো, কারণ জেরুশালেমে ঈদের সময়ে তিনি যা যা করেছিলেন, সেসব তারা দেখেছিল; কেননা তারাও সেই ঈদে গিয়েছিল।
46 পরে তিনি আবার গালীলের সেই কান্না নগরে গেলেন, যেখানে পানিকে আঙ্গুর-রস করেছিলেন। সেখানে এক জন রাজ-কর্মচারী ছিলেন, তার পুত্র কফরনাহূমে অসুস্থ ছিল।
47 ঈসা এহুদিয়া থেকে গালীলে এসেছেন শুনে তিনি তাঁর কাছে গেলেন এবং ফরিয়াদ জানালেন, যেন তিনি গিয়ে তার পুত্রকে সুস্থ করেন; কারণ সে মৃতপ্রায় হয়েছিল।
48 তখন ঈসা তাকে বললেন, চিহ্ন-কাজ এবং অদ্ভুত লক্ষণ যদি না দেখ, তোমরা কোন মতে ঈমান আনবে না।
49 সেই রাজ-কর্মচারী তাঁকে বললেন, হে প্রভু, আমার ছেলেটি মারা যাবার আগেই আসুন।
50 ঈসা তাকে বললেন, যাও, তোমার পুত্র বাঁচলো। ঈসা সেই ব্যক্তিকে যে কথা বললেন, তিনি তা বিশ্বাস করে চলে গেলেন।
51 তিনি যাচ্ছেন, এমন সময়ে তার গোলামেরা তার কাছে এসে বললো, আপনার বালকটি বাঁচলো।
52 তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ ঘটিকায় তার উপশম আরম্ভ হয়েছিল? তারা তাঁকে বললো, গতকাল সপ্তম ঘটিকার সময়ে তার জ্বর ছেড়ে গেছে।
53 তাতে পিতা বুঝলেন, ঈসা সেই ঘটিকাতেই তাকে বলেছিলেন, তোমার পুত্র বাঁচলো; আর তিনি নিজে ও তার সমস্ত পরিবার ঈসার উপর ঈমান আনলেন।
54 এহুদিয়া থেকে গালীলে আসার পর ঈসা আবার এই দ্বিতীয় চিহ্ন-কাজ করলেন।