1 পরে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেল, কিন্তু ঈসা জৈতুন পর্বতে গেলেন।
2 আর খুব ভোরে তিনি পুনর্বার বায়তুল-মোকাদ্দসে আসলে পর সমস্ত লোক তাঁর কাছে আসল; আর তিনি বসে তাঁদেরকে উপদেশ দিতে লাগলেন।
3 তখন আলেম ও ফরীশীরা একটি স্ত্রীলোককে তাঁর কাছে আনলো যে জেনা করতে গিয়ে ধরা পরেছিল। তাকে মধ্যস্থানে দাঁড় করিয়ে তাঁকে বললো,
4 হুজুর, এই স্ত্রীলোকটা জেনা করা অবস্থায় ধরা পড়েছে।
5 শরীয়তে মূসা এই রকম লোককে পাথর মারবার হুকুম আমাদেরকে দিয়েছেন, তবে আপনি কি বলেন?
6 তারা তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য এই কথা বললো, যেন তাঁর নামে দোষারোপ করার সূত্র পেতে পারে। কিন্তু ঈসা হেঁট হয়ে আঙ্গুল দিয়ে ভূমিতে লিখতে লাগলেন।
7 পরে তারা যখন পুনঃ পুনঃ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল তিনি মাথা তুলে তাদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কোন গুনাহ্ করে নি, সে-ই প্রথমে একে পাথর মারুক।
8 পরে তিনি পুনর্বার হেঁট হয়ে আঙ্গুল দিয়ে ভূমিতে লিখতে লাগলেন।
9 তখন তারা এই কথা শুনে এবং নিজ নিজ বিবেক দ্বারা দোষীকৃত হয়ে, একে একে বাইরে গেল, প্রাচীন লোক থেকে আরম্ভ করে শেষ জন পর্যন্ত চলে গেল; তাতে কেবল ঈসা অবশিষ্ট থাকলেন, আর সেই স্ত্রীলোকটি মধ্যস্থানে দাঁড়িয়েছিল।
10 তখন ঈসা মাথা তুলে, স্ত্রীলোকটি ছাড়া আর কাউকেও দেখতে না পেয়ে, তাকে বললেন, হে নারী, যারা তোমার নামে অভিযোগ করেছিল, তারা কোথায়? কেউ কি তোমাকে দোষী করে নি?
11 সে বললো, না, হুজুর, কেউ করে নি। তখন ঈসা তাকে বললেন, আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন থেকে আর গুনাহ্ করো না।
12 আবার ঈসা লোকদের কাছে কথা বললেন, তিনি বললেন, আমি দুনিয়ার নূর; যে আমাকে অনুসরণ করে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলবে না, কিন্তু জীবনের নূর পাবে।
13 তাতে ফরীশীরা তাঁকে বললো, তুমি তোমার নিজের বিষয়ে নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছ; তোমার সাক্ষ্য সত্যি নয়।
14 জবাবে ঈসা তাদেরকে বললেন, যদিও আমি আমার বিষয়ে নিজে সাক্ষ্য দিই, তবুও আমার সাক্ষ্য সত্যি; কারণ আমি কোথা থেকে এসেছি, কোথায়ই বা যাচ্ছি, তা জানি; কিন্তু আমি কোথা থেকে এসেছি, আর কোথায়ই বা যাচ্ছি, তা তোমরা জান না।
15 মানুষ যেভাবে বিচার করে তোমরাও সেইভাবে বিচার করছো; আমি কারো বিচার করি না।
16 আর যদিও আমি বিচার করি, আমার বিচার সত্যি, কেননা আমি একা নই, কিন্তু আমি আছি এবং পিতা আছেন, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
17 আর তোমাদের শরীয়তেও লেখা আছে, দু’জনের সাক্ষ্য সত্যি।
18 আমি নিজে আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিই, আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।
19 তখন তারা তাঁকে বললো, তোমার পিতা কোথায়? জবাবে ঈসা বললেন, তোমরা আমাকেও জান না, আমার পিতাকেও জান না; যদি আমাকে জানতে, আমার পিতাকেও জানতে।
20 এসব কথা তিনি বায়তুল-মোকাদ্দসে উপদেশ দেবার সময়ে ভাণ্ডার-গৃহে বললেন; এবং কেউ তাঁকে ধরলো না, কারণ তখনও তাঁর সময় উপস্থিত হয় নি।
21 পরে তিনি আবার তাদেরকে বললেন, আমি যাচ্ছি, আর তোমরা আমার খোঁজ করবে ও তোমাদের গুনাহে মারা যাবে; আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানে তোমরা আসতে পার না।
22 তখন ইহুদীরা বললো, এ কি আত্মঘাতী হবে? সেজন্য কি বলছে, আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানে তোমরা আসতে পার না?
23 তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা অধঃস্থানের, আমি ঊর্ধ্বস্থানের; তোমরা এই দুনিয়ার, আমি এই দুনিয়ার নই।
24 কেননা যদি বিশ্বাস না কর যে, আমিই তিনি, তবে তোমাদের গুনাহের মধ্যেই তোমরা মরবে।
25 তখন তারা বললো, তুমি কে? ঈসা তাদেরকে বললেন, তা-ই তো প্রথম থেকে তোমাদেরকে বলছি।
26 তোমাদের বিষয়ে বলবার ও বিচার করার অনেক কথা আছে; যা হোক, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি সত্য এবং আমি তাঁর কাছে যা যা শুনেছি, তা-ই দুনিয়াকে বলছি।
27 তিনি যে তাদেরকে পিতার বিষয়ে বলছিলেন, তা তারা বুঝতে পারল না।
28 তখন ঈসা বললেন, যখন তোমরা ইবনুল-ইনসানকে উঁচুতে তুলবে, তখন জানবে যে, আমিই তিনি, আর আমি নিজের থেকে কিছু করি না, কিন্তু পিতা যেমন আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, সেই অনুসারে এসব কথা বলি।
29 আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন; তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেন নি, কেননা আমি সব সময় তাঁর সন্তোষজনক কাজ করি।
30 তিনি এসব কথা বললে পর অনেকে তাঁর উপর ঈমান আনলো।
31 অতএব যে ইহুদীরা তাঁর উপর ঈমান আনলো, তাদেরকে ঈসা বললেন, তোমরা যদি আমার কথায় স্থির থাক, তা হলে সত্যিই তোমরা আমার সাহাবী;
32 আর তোমরা সেই সত্য জানবে এবং সেই সত্য তোমাদেরকে স্বাধীন করবে।
33 তারা তাঁকে জবাবে বললো, আমরা ইব্রাহিমের বংশ, কখনও কারো গোলাম হই নি; আপনি কেমন করে বলছেন যে, তোমাদেরকে স্বাধীন করা যাবে?
34 ঈসা জবাবে তাদেরকে বললেন, সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ গুনাহ্ করে, সে গুনাহ্র গোলাম।
35 আর গোলাম বাড়িতে চিরকাল থাকে না, পুত্র চিরকাল থাকেন।
36 অতএব পুত্র যদি তোমাদেরকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতভাবে স্বাধীন হবে।
37 আমি জানি, তোমরা ইব্রাহিমের বংশ; কিন্তু আমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করছো, কারণ আমার কালাম তোমাদের অন্তরে স্থান পায় না।
38 আমার পিতার কাছে আমি যা যা দেখেছি, তা-ই বলছি; আর তোমাদের পিতার কাছে তোমরা যা যা শুনেছ, তা-ই করছো।
39 তারা জবাবে তাকে বললো, আমাদের পিতা ইব্রাহিম। ঈসা তাদেরকে বললেন, তোমরা যদি ইব্রাহিমের সন্তান হতে, তবে ইব্রাহিমের মতই কাজ করতে।
40 কিন্তু আল্লাহ্র কাছে সত্য শুনে তোমাদেরকে জানিয়েছি যে আমি, আমাকেই হত্যা করতে চেষ্টা করছো; ইব্রাহিম এরকম করেন নি।
41 তোমাদের পিতার কাজ তোমরা করছো। তারা তাঁকে বললো, আমরা জারজ সন্তান নই; আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি আল্লাহ্।
42 ঈসা তাদেরকে বললেন, আল্লাহ্ যদি তোমাদের পিতা হতেন, তবে তোমরা আমাকে মহব্বত করতে, কেননা আমি আল্লাহ্ থেকে বের হয়ে এসেছি; আমি তো নিজের থেকে আসি নি, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করেছেন।
43 তোমরা কেন আমার কথা বোঝ না? কারণ এই যে, তোমরা আমার কালাম গ্রহণ করতে পার না।
44 তোমরা তোমাদের পিতা শয়তানের এবং তোমাদের পিতার অভিলাষগুলো পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি থেকেই নরহন্তা, কখনও সত্যে বাস করে নি, কারণ তার মধ্যে সত্য নেই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন নিজ থেকেই বলে, কেননা সে মিথ্যাবাদী ও মিথ্যার পিতা।
45 কিন্তু আমি সত্য বলি, তাই তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না।
46 তোমাদের মধ্যে কে আমাকে গুনাহ্গার বলে প্রমাণ করতে পারে? যদি আমি সত্যি বলি, তবে তোমরা কেন আমার উপর ঈমান আন না?
47 যে কেউ আল্লাহ্র, সে আল্লাহ্র কথাগুলো শুনে; এজন্যই তোমরা শোন না, কারণ তোমরা আল্লাহ্র নও।
48 ইহুদীরা জবাবে তাঁকে বললো, আমরা কি ঠিকই বলি না যে, তুমি এক জন সামেরীয় ও তোমাকে বদ-রূহে পেয়েছে?
49 জবাবে ঈসা বললেন, আমাকে বদ-রূহে পায় নি, কিন্তু আমি আমার পিতাকে সমাদর করি, আর তোমরা আমাকে অসম্মান কর।
50 কিন্তু আমি আমার গৌরবের খোঁজ করি না; এক জন আছেন, যিনি খোঁজ করেন ও বিচার করেন।
51 সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, কেউ যদি আমার কথা পালন করে, সে কখনও মৃত্যু দেখবে না।
52 ইহুদীরা তাঁকে বললো, এখন জানলাম, তোমাকে বদ-রূহে পেয়েছে; ইব্রাহিম ও নবীরা ইন্তেকাল করেছেন; আর তুমি বলছো, কেউ যদি আমার কথা পালন করে, সে কখনও মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না।
53 তুমি কি আমাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিমের চেয়ে বড়? তিনি তো ইন্তেকাল করেছেন এবং নবীরাও ইন্তেকাল করেছেন; তুমি নিজের বিষয়ে কি বল?
54 জবাবে ঈসা বললেন, আমি যদি নিজেকে গৌরবান্বিত করি, তবে আমার গৌরব কিছুই নয়; আমার পিতাই আমাকে গৌরবান্বিত করছেন, যাঁর বিষয়ে তোমরা বলে থাক যে, তিনি তোমাদের আল্লাহ্;
55 আর তোমরা তাঁকে জান নি; কিন্তু আমি তাঁকে জানি; আর আমি যদি বলি যে, তাঁকে জানি না, তবে তোমাদেরই মত মিথ্যাবাদী হব; কিন্তু আমি তাঁকে জানি এবং তাঁর কালাম পালন করি।
56 তোমাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম আমার দিন দেখবার আশায় উল্লসিত হয়েছিলেন এবং তিনি তা দেখলেন ও আনন্দ করলেন।
57 তখন ইহুদীরা তাঁকে বললো, তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বছর হয় নি, তুমি কি ইব্রাহিমকে দেখেছ?
58 ঈসা তাঁদেরকে বললেন, সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, ইব্রাহিমের জন্মের আগে থেকেই আমি আছি।
59 তখন তারা তাঁর উপর ছুড়ে মারবার জন্য পাথর তুলে নিল, কিন্তু ঈসা নিজেকে গোপন করে বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বের হয়ে গেলেন।