1 এক দিন বিশ্রামবারে ঈসা শস্য-ক্ষেত দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে তাঁর সাহাবীরা শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।
2 তাতে কয়েক জন ফরীশী বললো, বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয়, তোমরা কেন তা করছো?
3 জবাবে ঈসা তাদেরকে বললেন, দাউদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন, তাও কি তোমরা পাঠ কর নি?
4 তিনি তো আল্লাহ্র গৃহে প্রবেশ করে যে দর্শন-রুটি কেবল ইমামদের ছাড়া আর কারো ভোজন করা উচিত নয়, তা নিয়ে নিজে ভোজন করেছিলেন এবং সঙ্গীদেরকেও দিয়েছিলেন।
5 পরে তিনি তাদেরকে বললেন, ইবনুল-ইনসান বিশ্রামবারের কর্তা।
6 আর এক বিশ্রামবারে তিনি মজলিস-খানায় প্রবেশ করে উপদেশ দিলেন; সেই স্থানে একটি লোক ছিল, যার ডান হাত শুকিয়ে গিয়েছিল।
7 আর তিনি বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না তা দেখবার জন্য আলেমেরা ও ফরীশীরা তাঁর প্রতি দৃষ্টি রাখল, যেন তাঁর নামে দোষারোপ করার সূত্র পায়।
8 কিন্তু তিনি তাদের চিন্তা জানতেন, আর হাত শুকিয়ে যাওয়া সেই ব্যক্তিকে বললেন, উঠ, মাঝখানে দাঁড়াও। তাতে সে উঠে দাঁড়ালো।
9 পরে ঈসা তাদেরকে বললেন, তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, বিশ্রামবারে কি করা উচিত? ভাল করা না মন্দ করা? প্রাণ রক্ষা করা না নাশ করা?
10 তাদের সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করে সেই লোকটিকে বললেন, তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। সে তা-ই করলো, আর তার হাত সুস্থ হল।
11 কিন্তু তারা ক্রোধে পূর্ণ হল, আর ঈসার প্রতি কি করবে, সেই কথা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল।
12 সেই সময়ে তিনি একদিন মুনাজাত করার জন্য বের হয়ে পর্বতে গেলেন, আর আল্লাহ্র কাছে মুনাজাত করতে করতে সমস্ত রাত যাপন করলেন।
13 পরে যখন দিন হল, তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে ডাকলেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে বারো জনকে মনোনীত করলেন, আর তাঁদেরকে ‘প্রেরিত’ নাম দিলেন।
14 শিমোন, যাঁকে তিনি পিতর নামও দিলেন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয় এবং ইয়াকুব ও ইউহোন্না এবং ফিলিপ এবং বর্থলময়,
15 এবং মথি ও থোমা এবং আল্ফেয়ের (পুত্র) ইয়াকুব ও উদ্যোগী আখ্যাত শিমোন,
16 ইয়াকুবের (পুত্র) এহুদা, এবং ঈষ্করিয়োতীয় এহুদা, যে তাঁকে দুশমনদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।
17 পরে তিনি তাঁদের সঙ্গে নেমে একটি সমান ভূমির উপরে গিয়ে দাঁড়ালেন; আর তাঁর অনেক সাহাবী এবং সমস্ত এহুদিয়া ও জেরুশালেম এবং টায়ার ও সিডনের সমুদ্র উপকূল থেকে অনেক লোক উপস্থিত হল;
18 তারা তাঁর কথা শুনবার ও নিজ নিজ রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল এবং যারা নাপাক রূহ্ দ্বারা কষ্ট পাচ্ছিল তারা সুস্থ হল।
19 আর সমস্ত লোক তাঁকে স্পর্শ করতে চেষ্টা করলো, কেননা তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়ে সকলকে সুস্থ করছিল।
20 পরে তিনি তাঁর সাহাবীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বললেন, ধন্য দীনহীনেরা, কারণ আল্লাহ্র রাজ্য তোমাদেরই।
21 ধন্য তোমরা, যারা এখন ক্ষুধিত, কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে। ধন্য তোমরা, যারা এখন কান্নাকাটি কর, কারণ তোমরা হাসবে।
22 ধন্য তোমরা, যখন লোকে ইবনুল-ইনসানের জন্য তোমাদেরকে হিংসা করে, আর যখন তোমাদেরকে পৃথক করে দেয় ও নিন্দা করে এবং তোমাদের নাম মন্দ বলে দূর করে দেয়।
23 সেদিন আনন্দ করো ও নৃত্য করো, কেননা দেখ, বেহেশতে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কেননা তাদের পূর্বপুরুষেরা নবীদের প্রতি তা-ই করতো।
24 কিন্তু ধিক্ তোমাদেরকে, তোমরা যারা ধনবান, কারণ তোমরা তোমাদের সান্ত্বনা পেয়েছ।
25 ধিক্ তোমাদেরকে, যারা এখন পরিতৃপ্ত, কারণ তোমরা ক্ষুধিত হবে; ধিক্ তোমাদেরকে, যারা এখন হাসছো, কারণ তোমরা মাতম করবে ও কাঁদবে।
26 ধিক্ তোমাদেরকে, যখন সকল লোকে তোমাদের সুখ্যাতি করে, কারণ তাদের পূর্বপুরুষেরা ভণ্ড নবীদের প্রতি তা-ই করতো।
27 কিন্তু তোমরা যে শুনছো, আমি তোমাদেরকে বলি, তোমরা নিজ নিজ দুশমনদেরকে মহব্বত করো; যারা তোমাদেরকে হিংসা করে, তাদের মঙ্গল করো;
28 যারা তোমাদেরকে বদদোয়া দেয়, তাদেরকে দোয়া করো; যারা তোমাদেরকে নিন্দা করে, তাদের জন্য মুনাজাত করো।
29 যে তোমার এক গালে চড় মারে, তার দিকে অন্য গালও পেতে দিও; এবং যে তোমার কোর্তা তুলে নেয়, তাকে জামাও নিতে বারণ করো না।
30 যে কেউ তোমার কাছে কিছু চায়, তাকে দিও; এবং যে তোমার দ্রব্য নিয়ে যায়, তার কাছে তা আর চেয়ো না।
31 আর তোমরা যেমনটি ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাদের প্রতি সেই রকম ব্যবহার করো।
32 আর যারা তোমাদেরকে মহব্বত করে, তাদেরকেই মহব্বত করলে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পেতে পার? কেননা, গুনাহ্গার লোকেরাও, যারা তাদেরকে মহব্বত করে, তারাও তাদেরকে মহব্বত করে।
33 আর যারা তোমাদের উপকার করে, যদি তাদের উপকার কর, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পেতে পার?
34 গুনাহ্গার লোকেরাও তা-ই করে। আর যাদের কাছে পাবার আশা থাকে, যদি তাদেরকেই ধার দাও, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পেতে পার? গুনাহ্গার লোকেরাও গুনাহ্গার লোকদেরকে ধার দেয়, যেন সেই পরিমাণে ফিরে পায়।
35 কিন্তু তোমরা নিজ নিজ দুশমনদেরকে মহব্বত করো, তাদের ভাল করো এবং কখনও নিরাশ না হয়ে ধার দিও, তা করলে তোমাদের মহাপুরস্কার হবে এবং তোমরা সর্বশক্তিমানের সন্তান হবে, কেননা তিনি অকৃতজ্ঞদের ও দুষ্টদের প্রতিও কৃপাবান।
36 তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু, তোমরাও তেমনি দয়ালু হও।
37 আর তোমরা বিচার করো না, তাতে তোমাদেরও বিচার করা হবে না; আর দোষী করো না, তাতে তোমাদেরও দোষী করা হবে না। তোমরা ছেড়ে দিও, তাতে তোমাদেরও ছেড়ে দেওয়া যাবে।
38 দান কর, তাতে তোমাদেরকেও দেওয়া যাবে; লোকে প্রচুর পরিমাণে চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে নিয়ে, উপ্চে পড়বার মত করে তোমাদের কোলে দেবে; কারণ তোমরা যেভাবে মেপে দাও, সেভাবে তোমাদের জন্যও মাপা যাবে।
39 আর তিনি তাদেরকে একটি দৃষ্টান্তও বললেন, অন্ধ কি অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? উভয়েই কি গর্তে পড়বে না?
40 ছাত্র শিক্ষক থেকে বড় নয়, কিন্তু যে কেউ পরিপক্ক হয়, সে তার শিক্ষকের মত হবে।
41 আর তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে, তা-ই কেন দেখছো, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে কড়িকাঠ আছে, তা কেন ভেবে দেখছো না?
42 তোমার চোখে যে কড়িকাঠ আছে, তা যখন দেখছো না, তখন তুমি কেমন করে আপন ভাইকে বলতে পার, ভাই, এসো, আমি তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই? তোমার নিজের চোখে যে কড়িকাঠ আছে, তা তো তুমি দেখছো না! হে ভণ্ড, আগে নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠ বের করে ফেল, তারপর তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে, তা বের করার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে।
43 কারণ এমন ভাল গাছ নেই, যাতে মন্দ ফল ধরে এবং এমন মন্দ গাছও নেই, যাতে ভাল ফল ধরে।
44 স্ব স্ব ফল দ্বারাই প্রত্যেক গাছ চেনা যায়; লোকে তো কাঁটাবন থেকে ডুমুর সংগ্রহ করে না এবং কাঁটাঝোপ থেকে আঙ্গুর ফল সংগ্রহ করে না।
45 ভাল মানুষ তার হৃদয়ের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভালই বের করে এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার থেকে মন্দই বের করে; যেহেতু হৃদয়ের উপচয় থেকে তার মুখ কথা বলে।
46 আর তোমরা কেন আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু, বলে ডাক, অথচ আমি যা যা বলি, তা কর না?
47 যে কেউ আমার কাছে এসে আমার কথা শুনে পালন করে, সে কার মত তা আমি তোমাদেরকে জানাচ্ছি।
48 সে এমন এক ব্যক্তির মত, যে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে খনন করলো, খুঁড়ে গভীর করলো ও পাথরের উপরে ভিত্তিমূল স্থাপন করলো; পরে বন্যা আসলে সেই বাড়ির উপর দিয়ে পানির স্রোত বেগে বয়ে গেল, কিন্তু তা হেলাতে পারল না, কারণ তা উত্তমরূপে নির্মিত হয়েছিল।
49 কিন্তু যে শুনে পালন না করে, সে এমন এক ব্যক্তির মত, যে মাটির উপরে কোন ভিত্তিমূল ছাড়াই বাড়ি নির্মাণ করলো; পরে পানির স্রোত বেগে বয়ে সেই বাড়িতে লাগল, আর অমনি তা পড়ে গেল এবং সেই বাড়ি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।