যিরমিয় 31 SBCL

1 সদাপ্রভু বলছেন, “সেই সময় আমি ইস্রায়েলের সব গোষ্ঠীরই ঈশ্বর হব, আর তারা আমার লোক হবে।”

2 সদাপ্রভু আরও বলছেন, “ইস্রায়েলীয়েরা যখন বিশ্রাম পাবার জন্য যাচ্ছিল তখন যারা যুদ্ধের হাত থেকে বেঁচেছিল তারা মরু-এলাকায় আমার দয়া পেয়েছিল।”

3 সেই সময় ইস্রায়েলীয়েরা বলেছিল যে, সদাপ্রভু দূর থেকে তাদের দেখা দিয়েছিলেন। তখন সদাপ্রভু তাদের বলেছিলেন, “অশেষ ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের ভালবেসেছি; অটল ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের কাছে টেনেছি।”

4 এখন তিনি বলছেন, “হে কুমারী ইস্রায়েল, আমি তোমাকে আবার গড়ে তুলব, তাতে তুমি আবার গড়ে উঠবে। তুমি আবার তোমার খঞ্জনি নেবে এবং আনন্দকারীদের সংগে নাচতে যাবে।

5 শমরিয়ার পাহাড়ে আবার তুমি আংগুর ক্ষেত করবে; যারা ক্ষেত করবে তারা তার ফল খাবে।

6 এমন একদিন আসবে যখন ইফ্রয়িমের পাহাড়ের উপরে পাহারাদারেরা চেঁচিয়ে বলবে, ‘চল, আমরা সিয়োনে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে যাই।’ ”

7 সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা যাকোবের জন্য খুশী মনে গান কর; সবচেয়ে সেরা জাতির জন্য আনন্দধ্বনি কর। তোমরা প্রশংসা করে বল, ‘হে সদাপ্রভু, তোমার লোকদের, ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকদের উদ্ধার কর।’

8 দেখ, আমি উত্তরের দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে আসব আর পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে তাদের জড়ো করব। তাদের মধ্যে থাকবে অন্ধ, খোঁড়া, গর্ভবতী মা এবং প্রসব ব্যথা ওঠা স্ত্রীলোক; মস্ত বড় একটা দল ফিরে আসবে।

9 তারা কাঁদতে কাঁদতে আসবে; আমি যখন তাদের ফিরিয়ে আনব তখন তারা প্রার্থনা করতে করতে আসবে। সমান পথ দিয়ে আমি জলের স্রোতের কাছে তাদের চালিয়ে নিয়ে আসব; সেখানে তারা উছোট খাবে না, কারণ আমি ইস্রায়েলের, অর্থাৎ ইফ্রয়িমের পিতা আর সে আমার প্র্রথম সন্তান।

10 “হে জাতিরা, আমার বাক্য শোন; তোমরা দূরের দেশগুলোতে এই কথা ঘোষণা কর, ‘যিনি ইস্রায়েলকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি তাদের জড়ো করবেন এবং রাখালের মত করে তাঁর পাল রক্ষা করবেন।’

11 আমি সদাপ্রভুই যাকোবকে ছাড়িয়ে আনব এবং তাদের চেয়েও শক্তিশালীদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করব।

12 তারা এসে সিয়োনের উঁচু জায়গায় আনন্দধ্বনি করবে; আমার দেওয়া প্রচুর শস্য, নতুন আংগুর-রস, তেল, ভেড়া ও গরুর পালের বাচ্চা পেয়ে তারা আনন্দ করবে। তারা হবে ভাল করে জল দেওয়া বাগানের মত; তারা আর দুর্বল হবে না।

13 কুমারী মেয়েরা নাচবে ও আনন্দ করবে, যুবক এবং বুড়ো লোকেরাও বাদ যাবে না। আমি তাদের শোক খুশীতে বদলে দেব; দুঃখের বদলে আমি তাদের দেব সান্ত্বনা ও আনন্দ।

14 সব কিছু প্রচুর পরিমাণে দিয়ে আমি পুরোহিতদের পূর্ণ করব, আর আমার লোকেরা আমার আশীর্বাদে তৃপ্ত হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”

15 সদাপ্রভু বলছেন, “রামায় বিলাপ ও ভীষণ কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে; রাহেল তার সন্তানদের জন্য কাঁদছে, কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না, কারণ তারা আর নেই।

16 তোমার কান্নাকাটি থামাও ও চোখের জল মোছ, কারণ তোমার কাজের পুরস্কার তুমি পাবে। তারা শত্রুদের দেশ থেকে ফিরে আসবে।

17 কাজেই তোমার ভবিষ্যতের জন্য আশা আছে। তোমার ছেলেমেয়েরা নিজেদের দেশে ফিরে আসবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।

18 “আমি অবশ্যই ইফ্রয়িমের এই কাতর স্বর শুনেছি, ‘তুমি আমাকে অবাধ্য বাছুরের মত করে শাসন করেছ, আর তার ফলে আমি শাস্তি পেয়েছি। আমাকে ফিরাও, তাতে আমি ফিরব, কারণ তুমিই আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু।

19 আমি বিপথে যাওয়ার পর দুঃখিত হয়ে ফিরলাম, বুঝতে পেরে বুক চাপড়ালাম। আমি লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করলাম, কারণ আমার যুবা বয়সের পাপের জন্য আমাকে অসম্মানিত হতে হয়েছে।’

20 ইফ্রয়িম কি আমার প্রিয় পুত্র নয়? সে কি সেই সন্তান নয় যাকে দেখে আমি খুশী হই? যদিও আমি প্রায়ই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছি কিন্তু তবুও আমি তাকে সব সময় মনে রাখি। সেইজন্যই আমার প্রাণ তার জন্য কাঁদে; তার জন্য আমার খুব মমতা আছে।

21 “তোমরা রাস্তায় রাস্তায় পথ নির্দেশ-করা চিহ্ন দাও ও খুঁটি স্থাপন কর। যে পথে তুমি গিয়েছিলে সেই রাজপথের কথা মনে রাখ। হে কুমারী ইস্রায়েল, ফিরে এস, তোমার সব শহরে তুমি ফিরে এস।

22 হে বিপথে যাওয়া কন্যা, আর কতকাল তুমি ঘুরে বেড়াবে? আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে একটা নতুন ব্যাপার ঘটিয়েছি, তা হল, স্ত্রীলোক পুরুষকে ঘেরাও করবে।”

23 ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমি যখন বন্দীদশা থেকে লোকদের ফিরিয়ে আনব তখন যিহূদা দেশ ও তার শহরগুলোর লোকেরা আবার বলবে, ‘হে সততাপূর্ণ বাসস্থান, হে পবিত্র পাহাড়, সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন।’

24 সেই লোকেরা যিহূদা ও তার সব শহরগুলোতে বাস করবে এবং চাষীরা ও যারা তাদের পশুপাল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারাও সেখানে থাকবে।

25 আমি ক্লান্তদের সতেজ করে তুলব এবং দুর্বলদের অন্তর শক্তিশালী করব।”

26 তখন আমি জেগে উঠে চারপাশে তাকালাম। আমার ঘুম আমার কাছে আরামের ছিল।

27 সদাপ্রভু বলছেন, “সময় আসছে যখন আমি ইস্রায়েল ও যিহূদা দেশে লোকদের ও পশুদের চারার মত লাগিয়ে দেব।

28 আমি যেমন করে তাদের উপ্‌ড়ে, ভেংগে ও ছুঁড়ে ফেলবার দিকে এবং তাদের উপর ধ্বংস ও বিপদ আনবার দিকে খেয়াল রেখেছিলাম তেমনি করে তাদের গড়ে তুলবার ও চারার মত লাগিয়ে দেবার দিকেও খেয়াল রাখব।

29 সেই সময় লোকেরা আর বলবে না, ‘বাবারা টক আংগুর খেয়েছে, কিন্তু সন্তানদের দাঁত টকে গেছে।’

30 তার বদলে প্রত্যেকে নিজের পাপের জন্যই মরবে; যে টক আংগুর খাবে তার নিজের দাঁতই টকে যাবে।”

31 সদাপ্রভু বলছেন, “সময় আসছে যখন আমি ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের জন্য একটা নতুন ব্যবস্থা স্থাপন করব।

32 মিসর দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের আমি হাত ধরে বের করে আনবার সময় তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম এই নতুন ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থার মত হবে না। আমি যদিও তাদের স্বামীর মত ছিলাম তবুও তারা আমার ব্যবস্থা ভেংগেছিল।

33 পরে আমি ইস্রায়েলীয়দের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করব তা হল, আমার আইন-কানুন আমি তাদের মনের মধ্যে রাখব এবং তাদের অন্তরেও তা লিখে রাখব। আমি তাদের ঈশ্বর হব আর তারা আমারই লোক হবে।

34 নিজের প্রতিবেশীকে এবং নিজের ভাইকে কেউ এই বলে আর কখনও শিক্ষা দেবে না, ‘সদাপ্রভুকে চিনতে শেখ,’ কারণ সবাই আমাকে চিনবে। সেইজন্য আমি তাদের অন্যায় ক্ষমা করব, তাদের পাপ আর কখনও মনে রাখব না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”

35 যিনি দিনের বেলা সূর্যকে আর রাতের বেলা চাঁদ ও তারাকে আলো দেবার জন্য হুকুম দেন, যিনি সমুদ্রকে তোলপাড় করেন যাতে তার ঢেউগুলো গর্জন করে, যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু,

36 তিনি বলছেন, “যদি এই নিয়মগুলো আমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় তবে ইস্রায়েলীয়েরাও জাতি হিসাবে আমার সামনে থেকে শেষ হয়ে যাবে।

37 যদি উপরের মহাকাশকে মাপা যায় এবং নীচে পৃথিবীর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় তবে ইস্রায়েলীয়েরা যা করেছে তার জন্য আমি তাদের অগ্রাহ্য করতে পারি। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”

38 সদাপ্রভু বলছেন, “সেই সময় আসছে যখন আমার জন্য হননেল-দুর্গ থেকে কোণার ফটক পর্যন্ত এই শহরটা আবার গড়ে তোলা হবে।

39 মাপের দড়ি সেখান থেকে সোজা গারেব পাহাড় পর্যন্ত টানা হবে এবং তারপর ঘুরে গোয়াতে যাবে।

40 গোটা উপত্যকাটা যেখানে মৃতদেহ ও ছাই ফেলা হয় এবং পূর্ব দিকে ঘোড়া-ফটকের কোণা পর্যন্ত কিদ্রোণ উপত্যকার সমস্ত মাঠ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হবে। শহরটাকে আর কখনও উপ্‌ড়ে ফেলা বা ধ্বংস করা হবে না।”

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52