1 যিরমিয় যখন সমস্ত লোকদের কাছে কথা বলছিলেন তখন মত্তনের ছেলে শফটিয়, পশ্হূরের ছেলে গদলিয়, শেলিমিয়ের ছেলে যিহূখল ও মল্কিয়ের ছেলে পশ্হূর তা শুনল।
2 যিরমিয় বলছিলেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘যে কেউ এই শহরে থাকবে সে হয় যুদ্ধে না হয় দুর্ভিক্ষে কিম্বা মড়কে মারা যাবে, কিন্তু যে কেউ বাবিলীয়দের কাছে যাবে সে মরবে না। সে তার প্রাণ কোনমতে বাঁচাতে পারবে।
3 এই শহর নিশ্চয়ই বাবিলের রাজার সৈন্যদলের হাতে দিয়ে দেওয়া হবে; তারা এটা অধিকার করবে।’ ”
4 তখন রাজকর্মচারীরা রাজাকে বললেন, “এই লোকটিকে মেরে ফেলা উচিত। যে সব সৈন্যেরা ও লোকেরা এই শহরে রয়ে গেছে সে এই সব কথা বলে তাদের হতাশ করে দিচ্ছে। সে এই লোকদের মংগল না চেয়ে অমংগল চাইছে।”
5 উত্তরে রাজা সিদিকিয় বললেন, “সে তো আপনাদের হাতেই রয়েছে; রাজা আপনাদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না।”
6 তখন তাঁরা যিরমিয়কে ধরে রাজার ছেলে মল্কিয়ের কূয়াতে ফেলে দিলেন। এই কূয়াটা ছিল পাহারাদারদের উঠানের মধ্যে। তাঁরা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে সেই কূয়াতে নামিয়ে দিলেন। সেখানে জল ছিল না, কেবল কাদা ছিল; আর যিরমিয় সেই কাদার মধ্যে ডুবে যেতে লাগলেন।
7 কিন্তু রাজবাড়ীর একজন কর্মচারী কূশীয় এবদ-মেলক শুনতে পেলেন যে, যিরমিয়কে কূয়াতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজা তখন বিন্যামীন ফটকে বসে ছিলেন।
8 এবদ-মেলক রাজবাড়ী থেকে বের হয়ে রাজাকে গিয়ে বললেন,
9 “হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা নবী যিরমিয়ের প্রতি যা করেছে তা অন্যায়। তারা তাঁকে কূয়াতে ফেলে দিয়েছে; তিনি সেখানে খিদেয় মারা যাবেন, কারণ শহরে আর রুটি নেই।”
10 তখন রাজা কূশীয় এবদ-মেলককে এই আদেশ দিলেন, “তুমি এখান থেকে ত্রিশজন লোক সংগে নাও এবং নবী যিরমিয়কে তুলে আন যেন তিনি মারা না যান।”
11 তখন এবদ-মেলক সেই লোকদের সংগে নিয়ে রাজবাড়ীর ধনভাণ্ডারের নীচের একটা ঘরে গেলেন। তিনি সেখান থেকে কতগুলো পুরানো ও ছেঁড়া কাপড় নিয়ে সেগুলো দড়ি দিয়ে সেই কূয়ার মধ্যে যিরমিয়ের কাছে নামিয়ে দিলেন।
12 কূশীয় এবদ-মেলক যিরমিয়কে বললেন, “এই পুরানো ও ছেঁড়া কাপড়গুলো আপনি আপনার বগলে দিন যাতে আপনি দড়িতে ব্যথা না পান।” যিরমিয় তা-ই করলেন।
13 তখন তারা দড়ি দিয়ে তাঁকে টেনে সেই কূয়া থেকে তুলে আনল। এর পর যিরমিয় পাহারাদারদের উঠানেই রইলেন।
14 তারপর রাজা সিদিকিয় লোক পাঠিয়ে নবী যিরমিয়কে সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবার তৃতীয় স্থানে ডেকে আনলেন। রাজা যিরমিয়কে বললেন, “আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, আমার কাছ থেকে কিছুই লুকাবেন না।”
15 তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “আমি যদি আপনাকে বলি তবে তো আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। আর আমি যদি আপনাকে পরামর্শ দিই তবে আপনি আমার কথা শুনবেন না।”
16 এতে রাজা সিদিকিয় গোপনে যিরমিয়ের কাছে শপথ করে বললেন, “যিনি আমাদের শ্বাসবায়ু দিয়েছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমি আপনাকে মেরে ফেলব না বা যারা আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছে তাদের হাতেও আপনাকে তুলে দেব না।”
17 তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি যদি বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে হার স্বীকার কর তবে তোমার প্রাণ বাঁচবে এবং এই শহরও পুড়িয়ে দেওয়া হবে না; তুমি ও তোমার পরিবার বাঁচবে।
18 কিন্তু যদি বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে হার স্বীকার না কর তবে এই শহর বাবিলীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে এবং তারা এটা পুড়িয়ে দেবে; আর তুমি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।’ ”
19 রাজা সিদিকিয় তখন যিরমিয়কে বললেন, “যে সব যিহূদী বাবিলীয়দের কাছে গেছে আমি তাদের ভয় করি, কারণ বাবিলীয়েরা হয়তো আমাকে তাদের হাতে তুলে দেবে আর তারা আমার সংগে খারাপ ব্যবহার করবে।”
20 উত্তরে যিরমিয় বললেন, “তারা আপনাকে তুলে দেবে না। আমি আপনাকে যা বলি তা করে সদাপ্রভুর বাধ্য হন। তাহলে আপনার ভাল হবে, আপনার প্রাণ বাঁচবে।
21 কিন্তু যদি হার মানতে অস্বীকার করেন তবে সদাপ্রভু আমার কাছে যা প্রকাশ করেছেন তা এই-
22 যিহূদার রাজার রাজবাড়ীর বাকী স্ত্রীলোকদের বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই স্ত্রীলোকেরা আপনাকে বলবে, ‘তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তোমাকে বিপথে নিয়ে গেছে, তোমাকে হারিয়ে দিয়েছে। কাদায় তোমার পা ডুবে গেছে; তোমার বন্ধুরা তোমাকে ত্যাগ করেছে।’
23 আপনার সব স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বাবিলীয়দের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না বরং বাবিলের রাজার হাতে ধরা পড়বেন, আর এই শহর পুড়িয়ে দেওয়া হবে।”
24 তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “এই কথাবার্তার বিষয় কেউ যেন না জানে, জানলে আপনি মারা পড়বেন।
25 যদি রাজকর্মচারীরা শোনে যে, আমি আপনার সংগে কথা বলেছি, আর তারা এসে আপনাকে বলে, ‘তুমি রাজাকে যা বলেছ এবং রাজা তোমাকে যা বলেছেন তা আমাদের বল; আমাদের কাছ থেকে লুকায়ো না, লুকালে আমরা তোমাকে মেরে ফেলব,’
26 তবে আপনি তাদের বলবেন, ‘আমি রাজাকে মিনতি করছিলাম আমাকে যেন যোনাথনের বাড়ীতে ফিরে না পাঠান, কারণ সেখানে পাঠালে আমি মারা যাব।’ ”
27 রাজকর্মচারীরা সকলে যিরমিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে পর রাজা তাঁকে যে কথা বলতে আদেশ করেছিলেন যিরমিয় তাদের সেই সব কথাই বললেন। তখন তাঁরা তাঁকে আর কিছু বললেন না, কারণ রাজার সংগে তাঁর কথাবার্তা কেউই শোনে নি।
28 যতদিন না বাবিলীয়েরা যিরূশালেম দখল করল ততদিন যিরমিয় পাহারাদারদের সেই উঠানেই রইলেন।