1 যীশু উপাসনা-ঘর থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে উপাসনা-ঘরের দালানগুলো দেখাবার জন্য তাঁর কাছে আসলেন।
2 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা তো এই সব দেখছ, কিন্তু আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।”
3 পরে যীশু যখন জৈতুন পাহাড়ে বসে ছিলেন তখন শিষ্যেরা গোপনে তাঁর কাছে এসে বললেন, “আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে এবং কি রকম চিহ্নের দ্বারা বুঝা যাবে আপনার আসবার সময় ও যুগ শেষ হবার সময় হয়েছে?”
4 উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়,
5 কারণ অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মশীহ,’ এবং অনেক লোককে ঠকাবে।
6 তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না, কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয়।
7 এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে।
8 কিন্তু এই সব কেবল যন্ত্রণার আরম্ভ।
9 “সেই সময়ে লোকে তোমাদের কষ্ট দেবার জন্য ধরিয়ে দেবে এবং তোমাদের খুন করবে। আমার জন্য সব লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে।
10 সেই সময়ে অনেকেই পিছিয়ে যাবে এবং একে অন্যকে ধরিয়ে দেবে ও ঘৃণা করবে।
11 অনেক ভণ্ড নবী এসে অনেককে ঠকাবে।
12 দুষ্টতা বেড়ে যাবে বলে অনেকের ভালবাসা খুব কমে যাবে।
13 কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে উদ্ধার পাবে।
14 সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য স্বর্গ- রাজ্যের সুখবর সারা জগতে প্রচার করা হবে এবং তার পরেই শেষ সময় উপস্থিত হবে।
15 “নবী দানিয়েলের মধ্য দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসের কথা বলা হয়েছিল তা তোমরা পবিত্র জায়গায় রাখা হয়েছে দেখতে পাবে। (যে পড়ে সে বুঝুক।)
16 সেই সময় যারা যিহূদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যাক।
17 যে ছাদের উপরে থাকবে সে ঘর থেকে জিনিসপত্র নেবার জন্য নীচে না নামুক।
18 ক্ষেতের মধ্যে যে থাকবে সে তার গায়ের চাদর নেবার জন্য না ফিরুক।
19 তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে!
20 প্রার্থনা কর যেন শীতকালে বা বিশ্রামবারে তোমাদের পালাতে না হয়।
21 তখন এমন মহাকষ্ট হবে যা জগতের আরম্ভ থেকে এই সময় পর্যন্ত কখনও হয় নি এবং হবেও না।
22 সেই কষ্টের দিনগুলো যদি ঈশ্বর কমিয়ে না দিতেন তবে কেউই বাঁচত না। কিন্তু তাঁর বাছাই করা লোকদের জন্য ঈশ্বর সেই দিনগুলো কমিয়ে দেবেন।
23 “সেই সময়ে যদি কেউ তোমাদের বলে, ‘দেখ, মশীহ এখানে’ কিম্বা ‘দেখ, মশীহ ওখানে,’ তবে তা বিশ্বাস কোরো না;
24 কারণ তখন অনেক ভণ্ড মশীহ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য ও চিহ্ন-কাজ করবে যাতে সম্ভব হলে ঈশ্বরের বাছাই করা লোকদেরও তারা ঠকাতে পারে।
25 দেখ, আমি আগেই তোমাদের এই সব বলে রাখলাম।
26 “সেইজন্য লোকে যদি তোমাদের বলে, ‘তিনি মরু-এলাকায় আছেন,’ তোমরা বাইরে যেয়ো না। যদি বলে, ‘তিনি ভিতরের ঘরে আছেন,’ বিশ্বাস কোরো না।
27 বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব দিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চম্কে যায় মনুষ্যপুত্রের আসা সেইভাবেই হবে।
28 যেখানে মৃতদেহ থাকবে সেখানেই শকুন এসে একসংগে জড়ো হবে।
29 “সেই সময়কার কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না।
30 এমন সময় আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন পৃথিবীর সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা মনুষ্যপুত্রকে শক্তি ও মহিমার সংগে মেঘে করে আসতে দেখবে।
31 জোরে জোরে তূরী বেজে উঠবে আর সংগে সংগে মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই দূতেরা পৃথিবীর এক দিক থেকে অন্য দিক পর্যন্ত চার দিক থেকে তাঁর বাছাই করা লোকদের একসংগে জড়ো করবেন।
32 “ডুমুর গাছ দেখে শিক্ষা লাভ কর। যখন তার ডালপালা নরম হয়ে তাতে পাতা বের হয় তখন তোমরা জানতে পার যে, গরমকাল কাছে এসেছে।
33 সেইভাবে তোমরা এই সব ঘটনা দেখলে পর বুঝতে পারবে যে, মনুষ্যপুত্র কাছে এসে গেছেন, এমন কি, দরজায় উপস্থিত।
34 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যখন এই সব হবে তখনও এই কালের কিছু লোক বেঁচে থাকবে।
35 আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে।
36 “সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না, স্বর্গের দূতেরাও না, পুত্রও না; কেবল পিতাই জানেন।
37 “নোহের সময়ে যে অবস্থা হয়েছিল মনুষ্যপুত্রের আসবার সময়ে ঠিক সেই অবস্থাই হবে।
38 বন্যার আগের দিনগুলোতে নোহ জাহাজে না ঢোকা পর্যন্ত লোকে খাওয়া-দাওয়া করেছে, বিয়ে করেছে এবং বিয়ে দিয়েছে।
39 যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেই পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারল না। মনুষ্যপুত্রের আসাও ঠিক সেই রকমই হবে।
40 তখন দু’জন লোক মাঠে থাকবে; একজনকে নেওয়া হবে এবং অন্যজনকে ফেলে যাওয়া হবে।
41 দু’জন স্ত্রীলোক জাঁতা ঘুরাবে; একজনকে নেওয়া হবে, অন্যজনকে ফেলে যাওয়া হবে।
42 “তাই বলি, তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসবেন তা তোমরা জান না।
43 তবে তোমরা এই কথা জেনো, ঘরের কর্তা যদি জানতেন কোন্ সময় চোর আসবে তাহলে তিনি জেগেই থাকতেন, নিজের ঘরে তিনি চোরকে ঢুকতে দিতেন না।
44 সেইজন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না সেই সময়েই মনুষ্যপুত্র আসবেন।
45 “সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস কে, যাকে তার মনিব তাঁর অন্যান্য দাসদের ঠিক সময়ে খাবার দেবার ভার দিয়েছেন?
46 সেই দাস ধন্য, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন।
47 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি সেই দাসকেই তাঁর সমস্ত বিষয়-সম্পত্তির ভার দেবেন।
48 কিন্তু ধর, সেই দাস দুষ্ট, আর সে মনে মনে বলল, ‘আমার মনিব আসতে দেরি করছেন।’
49 সেই সুযোগে সে তার সংগী-দাসদের মারধর করতে লাগল এবং মাতালদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করে মদ খেতে লাগল।
50 কিন্তু যেদিন ও যে সময়ের কথা সেই দাস চিন্তাও করবে না, জানবেও না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন।
51 তখন তিনি তাকে কেটে দু’টুকরা করে ভণ্ডদের মধ্যে তার স্থান ঠিক করবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।