1 পরে যীশু নৌকায় উঠে সাগর পার হয়ে নিজের শহরে আসলেন।
2 লোকেরা তখন বিছানায় পড়ে থাকা একজন অবশ-রোগীকে তাঁর কাছে আনল। সেই লোকদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই রোগীকে বললেন, “সাহস কর। তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।”
3 এতে কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক মনে মনে বলতে লাগলেন, “এই লোকটা ঈশ্বরকে অপমান করছে।”
4 যীশু তাঁদের মনের চিন্তা জেনে বললেন, “আপনারা মনে মনে মন্দ চিন্তা করছেন কেন?
5 কোন্টা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও’?
6 আপনারা যেন জানতে পারেন এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ- রোগীকে বললেন, “ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ী যাও।”
7 তখন সে উঠে তার বাড়ীতে চলে গেল।
8 লোকে এই ঘটনা দেখে ভয় পেল, আর ঈশ্বর মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন বলে ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল।
9 যীশু যখন সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে কর্ আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। যীশু তাঁকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন।
10 এর পরে যীশু মথির বাড়ীতে খেতে বসলেন। তখন অনেক কর্- আদায়কারী ও খারাপ লোক এসে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সংগে খেতে বসল।
11 তা দেখে ফরীশীরা যীশুর শিষ্যদের বললেন, “তোমাদের গুরু কর্-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেন কেন?”
12 এই কথা শুনে যীশু বললেন, “যারা সুস্থ আছে তাদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই, বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে।
13 ‘আমি দয়া দেখতে চাই, পশু-উৎসর্গ নয়’-পবিত্র শাস্ত্রের এই কথার মানে কি, তা গিয়ে খুঁজে বের করুন। যারা ধার্মিক তাদের আমি ডাকতে আসি নি, বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।”
14 পরে যোহনের শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “আমরা ও ফরীশীরা এত উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা উপবাস করেন না কেন?”
15 যীশু তাঁদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকেরা দুঃখ প্রকাশ করতে পারে? কিন্তু সময় আসছে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সময় তারা উপবাস করবে।
16 “কেউ পুরানো জামায় নতুন কাপড়ের তালি দেয় না, কারণ পরে সেই পুরানো কাপড় থেকে নতুন তালিটা ছিঁড়ে আসে আর তাতে সেই ছেঁড়াটা আরও বড় হয়।
17 পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ টাটকা আংগুর-রস রাখে না। রাখলে থলিগুলো ফেটে গিয়ে সেই রস পড়ে যায় আর থলিগুলোও নষ্ট হয়। লোকে নতুন চামড়ার থলিতেই টাটকা আংগুর-রস রাখে; তাতে দু’টাই রক্ষা পায়।”
18 যীশু লোকদের যখন এই সব কথা বলছিলেন তখন একজন যিহূদী নেতা তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে প্রণাম করে বললেন, “আমার মেয়েটা এইমাত্র মারা গেছে। কিন্তু আপনি এসে তার উপর হাত রাখুন, তাতে সে বেঁচে উঠবে।”
19 তখন যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা উঠে তাঁর সংগে গেলেন।
20 সেই সময় একজন স্ত্রীলোক পিছন থেকে যীশুর কাছে এসে তাঁর চাদরের কিনারা ছুঁলো। স্ত্রীলোকটি বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল।
21 সে মনে মনে ভাবছিল, যদি সে কেবল তাঁর কাপড়টা ছুঁতে পারে তাহলেই ভাল হয়ে যাবে।
22 যীশু ফিরে তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, “সাহস কর। তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ।” সেই সময় থেকেই স্ত্রীলোকটি সুস্থ হল।
23 এর পরে যীশু সেই যিহূদী নেতার বাড়ীতে গেলেন। সেখানে তিনি দেখলেন, যারা বাঁশী বাজায় তারা রয়েছে এবং লোকেরা হৈচৈ করছে।
24 এতে যীশু বললেন, “তোমরা বাইরে যাও। মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।” এই কথা শুনে তারা হাসাহাসি করতে লাগল।
25 লোকদের বের করে দেওয়া হলে পর তিনি ভিতরে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরলেন। তাতে সে উঠে বসল।
26 এই ঘটনার কথা সেই এলাকার সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।
27 যীশু সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময় দু’জন অন্ধ লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “দায়ূদের বংশধর, আমাদের দয়া করুন।”
28 যীশু ঘরে ঢুকলে পর সেই অন্ধ লোকেরা তাঁর কাছে আসল। তখন তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি এই কাজ করতে পারি?”তারা বলল, “হ্যাঁ প্রভু, করি।”
29 তিনি তাদের চোখ ছুঁয়ে বললেন, “তোমরা যেমন বিশ্বাস করেছ তোমাদের প্রতি তেমনই হোক।”
30 আর তখনই তাদের চোখ খুলে গেল। যীশু খুব কঠোরভাবে তাদের বললেন,
31 “দেখো, কেউ যেন জানতে না পারে।” কিন্তু তারা বাইরে গিয়ে সেই এলাকার সমস্ত জায়গায় তাঁর খবর ছড়িয়ে দিল।
32 সেই দু’জন লোক যখন চলে যাচ্ছিল তখন লোকেরা মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন বোবা লোককে যীশুর কাছে আনল।
33 যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ছাড়াবার পর লোকটা কথা বলতে লাগল। তাতে সবাই আশ্চর্য হয়ে বলল, “ইস্রায়েল দেশে আর কখনও এই রকম দেখা যায় নি।”
34 তখন ফরীশীরা বললেন, “সে মন্দ আত্মাদের রাজার সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়ায়।”
35 যীশু শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে যিহূদীদের সমাজ- ঘরে শিক্ষা দিতে ও স্বর্গ-রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। এছাড়া তিনি লোকদের সব রকম রোগও ভাল করলেন।
36 লোকদের ভিড় দেখে তাদের জন্য তাঁর মমতা হল, কারণ তারা রাখালহীন ভেড়ার মত ক্লান্ত ও অসহায় ছিল।
37 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ফসল সত্যিই অনেক কিন্তু কাজ করবার লোক কম।
38 সেইজন্য ফসলের মালিকের কাছে অনুরোধ কর যেন তিনি তাঁর ফসল কাটবার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন।”