1 এই সব কথার শেষে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন,
2 “তোমরা তো জান আর দুই দিন পরেই উদ্ধার-পর্ব, আর মনুষ্যপুত্রকে ক্রুশে দেবার জন্য ধরিয়ে দেওয়া হবে।”
3-4 সেই সময়ে মহাপুরোহিত কাইয়াফার বাড়ীতে প্রধান পুরোহিতেরা ও যিহূদীদের বৃদ্ধ নেতারা একত্র হলেন এবং যীশুকে গোপনে ধরে এনে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করলেন।
5 তবে তাঁরা বললেন, “পর্বের সময়ে নয়; তাতে লোকদের মধ্যে হয়তো গোলমাল শুরু হবে।”
6 যীশু যখন বৈথনিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক তাঁর কাছে আসল।
7 সেই স্ত্রীলোকটি একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী আতর এনেছিল। যীশু যখন খেতে বসলেন তখন সে তাঁর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল।
8 শিষ্যেরা তা দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “এই দামী জিনিসটা কেন নষ্ট করা হচ্ছে?
9 এটা তো অনেক দামে বিক্রি করে টাকাটা গরীবদের দেওয়া যেত।”
10 যীশু এই কথা বুঝতে পেরে শিষ্যদের বললেন, “তোমরা এই স্ত্রীলোকটিকে দুঃখ দিচ্ছ কেন? সে তো আমার প্রতি ভাল কাজই করেছে।
11 গরীবেরা তো সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।
12 সে আমার দেহের উপর এই আতর ঢেলে দিয়ে আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করেছে।
13 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, জগতের যে কোন জায়গায় সুখবর প্রচার করা হবে সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য তার এই কাজের কথাও বলা হবে।”
14 তখন সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে শিষ্যটি প্রধান পুরোহিতদের কাছে গিয়ে বলল,
15 “যীশুকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিলে আপনারা আমাকে কি দেবেন?”প্রধান পুরোহিতেরা ত্রিশটা রূপার টাকা গুণে তাকে দিলেন।
16 তার পর থেকেই যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।
17 খামিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-পর্বের ভোজ আমাদের কোথায় প্রস্তুত করতে বলেন?”
18 যীশু বললেন, “শহরের মধ্যে গিয়ে ঐ লোককে বল যে, গুরু বলছেন, ‘আমার সময় কাছে এসে গেছে। আমার শিষ্যদের সংগে আমি তোমার বাড়ীতেই উদ্ধার-পর্ব পালন করব।’ ”
19 যীশু শিষ্যদের যে আদেশ দিয়েছিলেন শিষ্যেরা সেইভাবেই উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
20 পরে সন্ধ্যা হলে যীশু সেই বারোজন শিষ্যকে নিয়ে খেতে বসলেন।
21 খাবার সময়ে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।”
22 এতে শিষ্যেরা খুব দুঃখিত হয়ে একজনের পর একজন যীশুকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “সে কি আমি, প্রভু?”
23 উত্তরে তিনি তাঁদের বললেন, “যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে হাত দিচ্ছে সে-ই আমাকে ধরিয়ে দেবে।
24 মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যেভাবে লেখা আছে ঠিক সেইভাবে তিনি মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে মনুষ্যপুত্রকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয়! সেই মানুষের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।”
25 যে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল সেই যিহূদা বলল, “গুরু, সে কি আমি?”যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক কথাই বললে।”
26 খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় যীশু রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে তিনি সেই রুটি টুকরা টুকরা করলেন এবং শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও; এ আমার দেহ।”
27 এর পরে তিনি পেয়ালা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ও সেটা শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “পেয়ালার এই আংগুর-রস তোমরা সবাই খাও,
28 কারণ এ আমার রক্ত যা অনেকের পাপের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য ঈশ্বরের নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে।
29 আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে যতদিন আমি আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সংগে আংগুর ফলের রস নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আমি আর তা খাব না।”
30 পরে তাঁরা একটা গান গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।
31 পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আজ রাতে আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমি পালককে মেরে ফেলব, তাতে পালের মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’
32 কিন্তু আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।”
33 তখন পিতর তাঁকে বললেন, “আপনাকে নিয়ে সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে কখনও বাধা আসবে না।”
34 যীশু তাঁকে বললেন, “কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ ভোর রাতে মোরগ ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।”
35 পিতর যীশুকে বললেন, “আমাকে যদি আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না, আমি আপনাকে চিনি না।” অন্য শিষ্যেরা সবাই সেই একই কথা বললেন।
36 পরে যীশু শিষ্যদের সংগে গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন এবং শিষ্যদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”
37 এই বলে তিনি পিতর আর সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সংগে নিয়ে গেলেন। তাঁর মন দুঃখে ও কষ্টে ভরে উঠতে লাগল।
38 তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানেই থাক আর আমার সংগে জেগে থাক।”
39 পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং প্রার্থনা করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে দূরে যাক। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, তোমার ইচ্ছামতই হোক।”
40 এর পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “এ কি! আমার সংগে এক ঘণ্টাও কি তোমরা জেগে থাকতে পারলে না?
41 জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরে ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”
42 তিনি ফিরে গিয়ে দ্বিতীয় বার প্রার্থনা করে বললেন, “পিতা আমার, আমি গ্রহণ না করলে যদি এই দুঃখের পেয়ালা দূর না হয় তবে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”
43 তিনি ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল।
44 তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে গিয়ে তৃতীয় বার সেই একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন।
45 পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ আর বিশ্রাম করছ? দেখ, সময় এসে পড়েছে, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে।
46 ওঠো, চল, আমরা যাই। দেখ, যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।”
47 যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এদের পাঠিয়েছিলেন।
48 যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল; সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব সে-ই সেই লোক; তোমরা তাকে ধরবে।”
49 তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু, মংগল হোক।” এই কথা বলেই সে যীশুকে চুমু দিল।
50 যীশু তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, কর।”সংগে সংগেই লোকেরা এসে যীশুকে ধরল।
51 যাঁরা যীশুর সংগে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং তার ঘায়ে মহাপুরোহিতের দাসের একটা কান কেটে ফেললেন।
52 তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ছোরা খাপে রাখ। ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার ঘায়েই মরে।
53 তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতাকে ডাকলে তিনি এখনই আমাকে হাজার হাজার স্বর্গদূত পাঠিয়ে দেবেন না? কিন্তু তাহলে পবিত্র শাস্ত্রের কথা কিভাবে পূর্ণ হবে?
54 শাস্ত্রে তো লেখা আছে এই সব এভাবেই ঘটবে।”
55 পরে যীশু লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? আমি প্রত্যেক দিনই উপাসনা-ঘরে বসে শিক্ষা দিতাম, আর তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি।
56 কিন্তু এই সব ঘটল যাতে পবিত্র শাস্ত্রে নবীরা যা লিখেছেন তা পূর্ণ হয়।” শিষ্যেরা সবাই তখন যীশুকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।
57 যারা যীশুকে ধরেছিল তারা তাকে মহাপুরোহিত কাইয়াফার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা একসংগে জড়ো হয়েছিলেন।
58 পিতর দূরে থেকে যীশুর পিছনে পিছনে মহাপুরোহিতের উঠান পর্যন্ত গেলেন এবং শেষে কি হয় তা দেখবার জন্য ভিতরে ঢুকে রক্ষীদের সংগে বসলেন।
59 যীশুকে মেরে ফেলবার উদ্দেশ্যে প্রধান পুরোহিতেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা মিথ্যা সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন।
60 অনেক মিথ্যা সাক্ষী উপস্থিতও হয়েছিল, তবুও তাঁরা ঠিকমত কোন সাক্ষ্যই পেলেন না। শেষে দু’জন লোক এগিয়ে এসে বলল,
61 “এই লোকটা বলেছিল, সে ঈশ্বরের ঘরটা ভেংগে ফেলে তিন দিনের মধ্যে আবার তা তৈরী করে দিতে পারে।”
62 তখন মহাপুরোহিত উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি কোন উত্তর দেবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?”
63 যীশু কিন্তু চুপ করেই রইলেন।মহাপুরোহিত আবার তাঁকে বললেন, “তুমি জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য দিয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মশীহ, অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র কি না।”
64 তখন যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা মনুষ্যপুত্রকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।”
65 তখন মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ ঈশ্বরকে অপমান করল। আমাদের আর সাক্ষীর কি দরকার? এখনই তো আপনারা শুনলেন, সে ঈশ্বরকে অপমান করল।
66 আপনারা কি মনে করেন?”তাঁরা উত্তর দিলেন, “এ মৃত্যুর উপযুক্ত।”
67 তখন লোকেরা যীশুর মুখে থুথু দিল এবং ঘুষি ও চড় মারল।
68 তারা বলল, “এই মশীহ, বল্ তো দেখি, কে তোকে মারল?”
69 সেই সময় পিতর বাইরের উঠানে বসে ছিলেন। একজন চাকরাণী তাঁর কাছে এসে বলল, “গালীলের যীশুর সংগে তো আপনিও ছিলেন।”
70 কিন্তু পিতর সকলের সামনে অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানি না।”
71 এর পরে পিতর বাইরে ফটকের কাছে গেলেন। তাঁকে দেখে আর একজন চাকরাণী সেখানকার লোকদের বলল, “এই লোকটা নাসরতের যীশুর সংগে ছিল।”
72 তখন পিতর শপথ করে আবার অস্বীকার করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে চিনি না।”
73 যে লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা কিছুক্ষণ পরে পিতরকে এসে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন; তোমার ভাষাই তোমাকে ধরিয়ে দিচ্ছে।”
74 তখন পিতর নিজেকে অভিশাপ দিলেন এবং শপথ করে বলতে লাগলেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।” আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল।
75 তখন পিতরের মনে পড়ল যীশু বলেছিলেন, “মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।” আর পিতর বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন।