1 ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের আরম্ভ।
2 নবী যিশাইয়ের বইয়ে ঈশ্বরের বলা এই কথা লেখা আছে:দেখ, তোমার আগেআমি আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি।সে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।
3 মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে,তোমরা প্রভুর পথ ঠিক কর,তাঁর রাস্তা সোজা কর।
4 সেই কথামতই বাপ্তিস্মদাতা যোহন মরু-এলাকায় গিয়ে লোকদের বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন এবং প্রচার করছিলেন যেন লোকে পাপের ক্ষমা পাবার জন্য পাপ থেকে মন ফিরায় ও বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে।
5 তাতে যিহূদিয়া প্রদেশ ও যিরূশালেম শহরের সবাই বের হয়ে যোহনের কাছে আসতে লাগল। তারা যখন পাপ স্বীকার করল তখন যোহন যর্দন নদীতে তাদের বাপ্তিস্ম দিলেন।
6 যোহন উটের লোমের কাপড় পরতেন এবং তাঁর কোমরে চামড়ার কোমর-বাঁধনি ছিল।
7 তিনি পংগপাল আর বনমধু খেতেন। তিনি যা প্রচার করতেন তা এই, “আমার পরে একজন আসছেন। তিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী। উবুড় হয়ে তাঁর জুতার ফিতা খুলবার যোগ্যও আমি নই।
8 আমি তোমাদের জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মাতে তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন।”
9 সেই সময়ে যীশু গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে আসলেন, আর যোহন তাঁকে যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম দিলেন।
10 জল থেকে উঠে আসবার সংগে সংগেই যীশু দেখলেন, আকাশ চিরে গেছে এবং পবিত্র আত্মা কবুতরের মত হয়ে তাঁর উপর নেমে আসছেন।
11 সেই সময় স্বর্গ থেকে এই কথা শোনা গেল, “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুব সন্তুষ্ট।”
12 এর পরেই যীশুকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় মরু-এলাকায় যেতে হল।
13 সেই মরু-এলাকায় চল্লিশ দিন ধরে শয়তান যীশুকে লোভ দেখিয়ে পাপে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগল। সেখানে অনেক বুনো জন্তু ছিল, আর স্বর্গদূতেরা যীশুর সেবা-যত্ন করতেন।
14 যোহন জেলখানায় বন্দী হবার পরে যীশু গালীল প্রদেশে গেলেন। সেখানে তিনি এই কথা বলে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করতে লাগলেন,
15 “সময় হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে। আপনারা পাপ থেকে মন ফিরান এবং এই সুখবরে বিশ্বাস করুন।”
16 একদিন যীশু গালীল সাগরের পার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি শিমোন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়কে সাগরে জাল ফেলতে দেখলেন। সেই দু’জন ছিলেন জেলে।
17 যীশু তাঁদের বললেন, “আমার সংগে চল। আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করব।”
18 তখনই তাঁরা জাল ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন।
19 সেখান থেকে কিছু দূরে গেলে পর তিনি সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহনকে দেখতে পেলেন। তাঁরা তাঁদের নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন।
20 যীশু তাঁদের দেখামাত্র ডাক দিলেন, আর তাঁরা তাঁদের বাবা সিবদিয়কে মজুরদের সংগে নৌকায় রেখে যীশুর সংগে গেলেন।
21 যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূম শহরে গেলেন। পরে বিশ্রামবারে যীশু সমাজ-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।
22 লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
23 সেই সময় মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোক সেই সমাজ-ঘরের মধ্যে ছিল।
24 সে চিৎকার করে বলল, “ওহে নাসরতের যীশু, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে; আপনিই তো ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।”
25 যীশু তখন সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।”
26 সেই মন্দ আত্মা তখন লোকটাকে মুচ্ড়ে ধরল এবং জোরে চিৎকার করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল।
27 এই ঘটনা দেখে লোকেরা এমন আশ্চর্য হল যে, তারা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল, “এই সব কি ব্যাপার? এই অধিকার-ভরা নতুন শিক্ষাই বা কি? এমন কি, মন্দ আত্মাদেরও তিনি আদেশ দেন আর তারা তাঁর কথা শুনতে বাধ্য হয়।”
28 এতে গালীল প্রদেশের সব জায়গায় যীশুর কথা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল।
29 পরে তাঁরা সমাজ-ঘর থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। যাকোব এবং যোহনও তাঁদের সংগে ছিলেন।
30 শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল বলে তিনি শুয়ে ছিলেন। যীশু আসামাত্রই তাঁর কথা তাঁকে বলা হল।
31 তখন যীশু তাঁর কাছে গিয়ে হাত ধরে তাঁকে তুললেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল এবং তিনি তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
32 সেই দিন সূর্য ডুবে গেলে পর সন্ধ্যাবেলা লোকেরা সব রোগীদের ও মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের যীশুর কাছে আনল।
33 শহরের সব লোক তখন সেই বাড়ীর দরজার কাছে এসে জড়ো হল।
34 যীশু অনেক রকমের রোগীকে সুস্থ করলেন এবং অনেক মন্দ আত্মা ছাড়ালেন। তিনি মন্দ আত্মাদের কথা বলতে দিলেন না, কারণ সেই মন্দ আত্মারা জানত তিনি কে।
35 পরদিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতেই যীশু উঠলেন এবং ঘর ছেড়ে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন।
36 শিমোন ও তাঁর সংগীরা যীশুকে খুঁজছিলেন।
37 পরে তাঁকে খুজে পেয়ে বললেন, “সবাই আপনাকে খুঁজছে।”
38-39 যীশু তাঁদের বললেন, “চল, আমরা কাছের গ্রামগুলোতে যাই যেন আমি সেখানেও প্রচার করতে পারি, কারণ সেইজন্যই তো আমি এসেছি।” এইভাবে যীশু গালীলের সব জায়গায় গিয়ে যিহূদীদের সমাজ- ঘরগুলোতে প্রচার করলেন এবং মন্দ আত্মা দূর করলেন।
40 পরে একজন চর্মরোগী যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।”
41 লোকটির উপর যীশুর খুব মমতা হল। তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।”
42 আর তখনই তার চর্মরোগ ভাল হয়ে গেল।
43 যীশু তখনই তাকে বিদায় করলেন, কিন্তু তার আগে তাকে কড়াকড়িভাবে বললেন,
44 “দেখ, এই কথা কাউকে বোলো না। তুমি বরং পুরোহিতের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও আর শুচি হবার জন্য মোশি যে উৎসর্গের আদেশ দিয়েছেন তা উৎসর্গ কর। এতে পুরোহিতদের কাছে প্রমাণ হবে যে, তুমি ভাল হয়েছ।”
45 সেই লোকটি কিন্তু বাইরে গিয়ে সব জায়গায় এই খবর ছড়াতে লাগল। তার ফলে যীশু কোন গ্রামে আর খোলাখুলিভাবে যেতে পারলেন না। তাঁকে নির্জন জায়গায় থাকতে হল; তবুও লোকেরা সব জায়গা থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল।