1 তারপর যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গালীল সাগর পার হয়ে গেরাসেনীদের এলাকায় গেলেন।
2 যীশু নৌকা থেকে নামতেই মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোক কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে আসল।
3 লোকটা কবরস্থানেই থাকত এবং শিকল দিয়েও কেউ আর তাকে বেঁধে রাখতে পারত না।
4 তার হাত-পা প্রায়ই শিকল দিয়ে বাঁধা হত, কিন্তু সে শিকল ছিঁড়ে ফেলত এবং পায়ের বেড়ী ভেংগে ফেলত। কেউই তাকে সামলাতে পারত না।
5 সে দিনরাত কবরে কবরে ও পাহাড়ে পাহাড়ে চিৎকার করে বেড়াত এবং পাথর দিয়ে নিজেই নিজের গা কাটত।
6-7 যীশুকে দূর থেকে দেখে সে দৌড়ে এসে তাঁকে প্রণাম করল, আর সে চিৎকার করে বলল, “মহান ঈশ্বরের পুত্র যীশু, আমার সংগে আপনার কি দরকার? ঈশ্বরের দিব্য, আপনি আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না।”
8 সে এই কথা বলল কারণ যীশু তাকে বলেছিলেন, “মন্দ আত্মা, এই লোকটির মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।”
9 যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?”সে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।”
10 সে যীশুকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন।
11 সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল।
12 মন্দ আত্মারা যীশুকে মিনতি করে বলল, “ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।”
13 যীশু অনুমতি দিলে পর সেই মন্দ আত্মারা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পালের মধ্যে প্রায় দু’হাজার শূকর ছিল।
14 যারা শূকর চরাচ্ছিল তারা তখন পালিয়ে গিয়ে গ্রামে এবং তার আশেপাশের সব জায়গায় এই খবর দিল। তখন লোকেরা দেখতে আসল কি হয়েছে।
15 তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যাকে অনেকগুলো মন্দ আত্মায় পেয়েছিল সেই লোকটা কাপড়-চোপড় পরে সুস্থ মনে বসে আছে। এ দেখে লোকেরা ভয় পেল।
16 এই ঘটনা যারা দেখেছিল তারা সেই মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকটার বিষয় ও সেই শূকরগুলোর বিষয় লোকদের জানাল।
17 এতে লোকেরা যীশুকে অনুরোধ করতে লাগল যেন তিনি তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যান।
18 যীশু যখন নৌকায় উঠছিলেন তখন যাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল সেই লোকটি তাঁর সংগে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল।
19 কিন্তু যীশু তাঁকে এই বলে বিদায় করলেন, “তুমি তোমার বাড়ীতে ফিরে যাও এবং প্রভু তোমার জন্য কত বড় কাজ করেছেন ও তোমার উপর কত দয়া দেখিয়েছেন তা গিয়ে তোমার বাড়ীর লোকদের বল।”
20 লোকটি তখন চলে গেল এবং যীশু তার জন্য কত বড় কাজ করেছেন তা দিকাপলি এলাকায় বলে বেড়াতে লাগল। তাতে সবাই আশ্চর্য হল।
21 যীশু যখন নৌকায় করে আবার সাগরের অন্য পারে গেলেন তখন তাঁর চারপাশে অনেক লোক এসে ভিড় করল। তিনি তখনও সাগরের পারে ছিলেন।
22 সেই সময় যায়ীর নামে যিহূদী সমাজ-ঘরের একজন নেতা সেখানে আসলেন এবং যীশুকে দেখে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে পড়লেন।
23 তিনি যীশুকে মিনতি করে বললেন, “আমার মেয়েটা মারা যাবার মত হয়েছে। আপনি এসে তার উপর আপনার হাত রাখুন; তাতে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।”
24 তখন যীশু তাঁর সংগে চললেন। অনেক লোক যীশুর সংগে সংগে যাচ্ছিল এবং তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিল।
25 সেই ভিড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল।
26 অনেক ডাক্তারের হাতে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিল, আর তার যা কিছু ছিল সবই সে খরচ করেছিল, কিন্তু ভাল হবার বদলে দিন দিনই তার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল।
27 যীশুর বিষয় শুনে সে ভিড়ের মধ্যেই যীশুর ঠিক পিছনে এসে তাঁর চাদরটা ছুঁলো,
28 কারণ সে ভেবেছিল যদি কেবল তাঁর কাপড় সে ছুঁতে পারে তাহলেই সে ভাল হয়ে যাবে।
29 যীশুর চাদরটা ছোঁয়ার সংগে সংগেই তার রক্তস্রাব বন্ধ হল এবং সে তার নিজের দেহের মধ্যেই বুঝল তার অসুখ ভাল হয়ে গেছে।
30 যীশু তখনই বুঝলেন তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে। সেইজন্য তিনি ভিড়ের চারদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে আমার কাপড় ছুঁলো?”
31 তাঁর শিষ্যেরা বললেন, “আপনি তো দেখছেন লোকে আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, আর তবুও আপনি বলছেন, কে আপনাকে ছুঁলো?”
32 এই কাজ কে করেছে তা দেখবার জন্য তবুও যীশু চারদিকে তাকাতে লাগলেন।
33 সেই স্ত্রীলোকটির যা হয়েছে তা বুঝে সে কাঁপতে কাঁপতে এসে যীশুর পায়ে পড়ল এবং সব বিষয় জানাল।
34 যীশু তাঁকে বললেন, “মা, তুমি বিশ্বাস করেছ বলে সুস্থ হয়েছ। শান্তিতে চলে যাও, তোমার আর এই কষ্ট না হোক।”
35 যীশু তখনও কথা বলছিলেন, এমন সময় সেই সমাজ-ঘরের নেতা যায়ীরের ঘর থেকে কয়েকজন লোক এসে যায়ীরকে বলল, “আপনার মেয়েটা মারা গেছে; গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না।”
36 সেই লোকগুলোর কথা শুনে যীশু যায়ীরকে বললেন, “ভয় করবেন না, কেবল বিশ্বাস করুন।”
37 যীশু কেবল পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহনকে তাঁর সংগে নিলেন।
38 পরে যায়ীরের বাড়ীতে এসে তিনি দেখলেন খুব গোলমাল হচ্ছে। লোকেরা জোরে জোরে কান্নাকাটি করছে।
39 যীশু ভিতরে গিয়ে লোকদের বললেন, “আপনারা কেন গোলমাল ও কান্নাকাটি করছেন? মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।”
40 এই কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল। তখন যীশু তাদের সবাইকে ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। তারপর তিনি মেয়েটির মা-বাবা এবং তাঁর সংগের শিষ্যদের নিয়ে মেয়েটি যে ঘরে ছিল সেই ঘরে ঢুকলেন।
41-42 মেয়েটির বয়স ছিল বারো বছর। যীশু মেয়েটির হাত ধরে বললেন, “টালিথা কুম্,” অর্থাৎ “খুকী, তোমাকে বলছি, ওঠো।” আর তখনই মেয়েটি উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল। এতে তাঁরা খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
43 এই ঘটনার কথা কাউকে না জানাবার জন্য যীশু কড়া আদেশ দিলেন এবং মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন।